রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ চতুর্থ বছরে পদার্পণ করবে কিছুদিনের মধ্যেই। এই সংকট মোকাবিলায় চীনের সহায়তা চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধরত দুপক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় চীন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে মত তার।
এ পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মারপ্যাঁচ নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদ মাধ্যম সিএনএন।
গত মাসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ট্রাম্প বলেন, ‘আশা করি চীন এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে আমাদের প্রচেষ্টায় যোগ দেবে।’ এ বিষয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনিপিংয়ের সঙ্গে ফোনকলে কথা হয়েছে বলেও জানান তিনি। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের ‘ঘনিষ্ট সম্পর্ক’ কাজে লাগিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব মেটানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে নিজেদের নিরপেক্ষ দাবি করলেও চীনের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন রাশিয়ার জন্যই বরাদ্দ থাকে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে বেইজিং প্রশাসন আদৌ শক্ত অবস্থান গ্রহণ করবে কি না-নিশ্চিত নন বিশ্লেষকরা।
পশ্চিমা রাষ্ট্রের বিপরীতে চীনের অবস্থান টিকিয়ে রাখার পেছনে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ পর্যায়ে দেশটি মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে যাবে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এ ছাড়া সম্প্রতি চীনা পণ্য আমদানিতে ট্রাম্পের ১০ শতাংশ শুল্কারোপের কারণে ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্ক আরও ঘোলাটে হয়ে পড়েছে।
তবে বিশ্লেষকদের একটি ধারা বলছে, চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমাতে ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হতে পারেন শি।
মার্কিন থিংকট্যাংক স্টিমসন সেন্টারের ইউন সান বিষয়টিতে আলোকপাতের এক পর্যায়ে বলেন, ‘মধ্যস্থতার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নতির আশা দেখালে বেইজিং প্রস্তাব লুফে নেবে।’ তবে, মিত্ররাষ্ট্র রাশিয়াকেও হেলা করতে পারবে না চীন।
এদিকে আগামী শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মিউনিখে অবস্থিত নিরাপত্তা সম্মেলনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আলোচনার একটি মুখ্য বিষয় হবে। এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা।
এ সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স সাক্ষাৎ করবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে। তার কাছে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন চীনা প্রতিনিধি দলও।
সম্প্রতি ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন অর্থসহায়তা বন্ধের হুমকির পর সমর্থনের বিনিময়ে দেশের দুর্লভ খনিজ সম্পদ ট্রাম্পকে অর্পণ করেছেন জেলেনস্কি।
এ পরিস্থিতিতে শান্তি আলোচনায় ট্রাম্পের অবস্থান কী হবে-স্পষ্ট হতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরাও। তবে ইউক্রেনের পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হিসেবে ইউক্রেনের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।
বিশ্লেষকদের মত, চীন-সমর্থিত চুক্তি বাস্তবায়িত হলে অধিকৃত অঞ্চল ছাড়তে রাজি হবে না রাশিয়া। এ ক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতি হবে না। বরং, কিছুদিন শান্ত থেকে পুনরায় শুরু হবে সহিংসতা।
আগামী কয়েক সপ্তাহই বলে দেবে চলমান যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কোন দিকে গড়াবে। সূত্র: সিএনএন
নাইমুর/