
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার সে পরিকল্পনা নিয়ে নাখোশ খোদ তার দলের লোকজনই। দলের ভেতরেই তৈরি হয়েছে বিভক্তি। এক ভাগ তাকে সমর্থন জানালেও আরেক ভাগ করছে জোর সমালোচনা।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন ট্রাম্প। পরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান যে, গাজাকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে চান এবং সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের তিনি অন্য কোথাও পাঠাতে চান।
ট্রাম্পের বক্তব্যের পরপরই আন্তর্জাতিক মহল থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়। কংগ্রেসে থাকা কিছু রিপাবলিকান এর বিরোধিতাও করেন। অথচ এদের অনেকেই ট্রাম্পের বিদেশি সহায়তা বন্ধ ও কেন্দ্রীয় কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো বিষয়গুলোতে সায় দিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের এমন পরিকল্পনায় নাখোশ আইনপ্রণেতারা বলেন, তারা এখনো দ্বিরাষ্ট্র সমাধান চাইছেন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের জন্য। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘসময় ধরেই ওই কূটনীতির ওপর নির্ভর করেছে। অনেক আইনপ্রণেতা আবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ খরচ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় সেনা পাঠানোর বিরোধিতা করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পল বলেন, ‘আমি মনে করেছিলাম যে আমরা আমেরিকা প্রথম নীতির জন্য ভোট দিয়েছিলাম। আমাদের আরেকটি দখলদারত্বে জড়িয়ে আমাদের সম্পদ ধ্বংস ও সেনাদের রক্তপাত ঘটানোর কোনো দরকার নেই।’
কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে রিপাবলিকানরা। ডেমোক্র্যাটরা সরাসরি ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস ভ্যান হলেন বলেছেন, এটি আরেক নামে জাতিগত নির্মূল কর্মকাণ্ড। রিপাবলিকান সিনেটর জেরি মোরান বলেন, দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বাতিল করে দেওয়া সম্ভব না। এটি এমন কিছু না যা নিয়ে একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
সিনেটর লিসা মুরকোয়স্কি বলেন, ওই অঞ্চলে সেনা পাঠানোর কথাও আমি মাথায় আনতে চাই না। কারণ, এই চিন্তাটাই ভীতিকর। তবে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, এ পরিকল্পনা দৃঢ় এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ। জনসন আরও জানান, তিনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।
ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি নতুন বিদেশি সংশ্লিষ্টতা গড়ে তোলা ও আজীবন ধরে চলা যুদ্ধ এড়াবেন। এ ছাড়া রয়টার্সের করা এক জরিপের ফলাফল বলছে, ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের মানুষও পছন্দ করবেন না। এমনকি রিপাবলিকান ভোটাররাও না। ট্রাম্পের শপথের পর জানুয়ারি ২০-২১ তারিখে করা হয় ওই জরিপ। সে সময় নিজের এই পরিকল্পনা জানাননি ট্রাম্প।
তবে জরিপে একটা প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভূখণ্ড দখলে নেবে, তা মানুষ সমর্থন করবেন কি না। উত্তরে বেশির ভাগই এর বিরোধিতা করেছেন। মাত্র ১৫ শতাংশ রিপাবলিকান ভোটার এই চিন্তাভাবনা পছন্দ করেছেন।
সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুনে বলেছেন, ওই অঞ্চলে তিনি শান্তি ও স্থিরতা আনার পক্ষে। কিন্তু প্রতিটি পরিকল্পনাই ভালোভাবে যাচাই করে দেখতে হবে।
বার্লিনে বিক্ষোভ
এদিকে, ট্রাম্প গাজা সংক্রান্ত পরিকল্পনা জানানোর পর গত বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জার্মানির বার্লিনে বিক্ষোভ হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র পাঠানোর চিন্তা ও গাজার দখল নেওয়ার প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জনতা।
বার্লিনে পটসডামের প্লাটজে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তাদের হাতে ছিল ফিলিস্তিনি পতাকা ও ব্যানার। সেখানে লেখা ছিল, নির্বাসনকে না বলুন, পশ্চিম তীরে আগ্রাসন রুখে দিন। ট্রাম্প ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও স্লোগান দিতে শোনা যায় অনেককে।
এক বিক্ষোভকারী জানান, ফিলিস্তিনিরা সরে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাদেরকে সরিয়ে দেওয়ার সব চেষ্টায় বাধা দিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজাবাসী মিসরে পালিয়ে যায়নি। তারা লড়াই করবে এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করবে।
আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, গাজা নিয়ে না ভেবে, ট্রাম্পের উচিত ফ্লোরিডার দিকে মনোযোগ দেওয়া। তিনি আরও বলেন, গাজা কোনো রিয়েল এস্টেট না। সেখানকার মানুষ নিজেদের মাটি ছেড়ে যাবে না। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, রয়টার্স