
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজ্য সভায় আলোচনা হয়েছে।
রাজ্যসভায় কেরালার সিপিএম সংসদ সদস্য জন ব্রিট্টাস এ বিষয়ে মোদি সরকারের অবস্থান জানতে চান। তিনি এ বিষয়ে সরকারের কাছে তিনটি প্রশ্ন করেন। প্রশ্ন তিনটি হলো ১. বাংলাদেশ কী তাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে? ২. যদি চেয়ে থাকে তবে প্রত্যর্পণের জন্য কী কী কারণ দেখিয়েছে? ৩. ভারত সরকার এ সম্পর্কে কী জবাব দিয়েছে ঢাকাকে?
খবরে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিংহ এ বিষয়ে ভারত সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। বলেন, ‘এখনো বাংলাদেশকে এ বিষয়ে কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাজ্যসভাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ দাবি করেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে আসার আগে বাংলাদেশে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার ভিত্তিতে এই প্রত্যর্পণ দাবি করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ বিষয়ে কোনো জবাব এখনো পাঠানো হয়নি।’
জানা গেছে, হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ডিসেম্বরে নয়াদিল্লিকে ‘কূটনৈতিক চিঠি’ পাঠায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। একাধিক অপরাধে হাসিনা অভিযুক্ত বলে দাবি করা হয় ওই চিঠিতে। ওই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছিল ভারত সরকার।
এর আগে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশের একটি চিঠি তারা পেয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য এখনই করা যাবে না। আগে ওই চিঠির বৈধতা যাচাই করতে চায় নয়াদিল্লি। কোনো দেশের অন্তর্বর্তী সরকার অন্য রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের কাছে কোনো রাজনৈতিক নেতার প্রত্যর্পণ চাইলে, আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সেই প্রক্রিয়ায় সময় লাগতে পারে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের ৬ মাস পূর্ণ হয় গত ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার। ওই দিন রাতে শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য প্রচারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা ঢাকায় ৩২ ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযো করা হয়েছে। এই অবস্থায় শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি বেশ জোরালো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, ভারত থেকে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বিবৃতি দিচ্ছেন। এর ফলে বাংলাদেশের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে চুপ থাকার জন্য ভারতকে লিখিতভাবে অনুরোধও করেছে ঢাকা। তলব করা হয় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার পবন বাধেকে। বর্তমান পরিস্থিতি কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের আবার অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।