
এক দশকের বেশি সময় আত্মগোপনে থাকার পর জনসম্মুখে এসেছেন ‘সিজার’খ্যাত সিরীয় গোয়েন্দা।পতিত স্বৈরাচার বাশার আল-আসাদের আমলে প্রতিবাদকারীদের অত্যাচারের উদ্দেশে পরিচালিত নির্যাতনকেন্দ্রের ছবি প্রকাশের জন্য খ্যাত এই গোয়েন্দার পরিচয় প্রকাশের পর হইচই পড়ে গেছে আন্তর্জাতিক মহলে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সিজারের আসল পরিচয় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু অ্যাজেন্সি।
জানা গেছে, ফরিদ আল-মাধান নামে সিরীয় সামরিক বাহিনীর সাবেক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞই আদতে সিজার।
আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফরিদ জানান, তিনি ২০১৪ সালে আসাদ সরকারের নির্যাতনকেন্দ্রের হাজারখানেক গোপন ছবি ফাঁস করেছেন। এই ছবিগুলোতে তৎকালীন সরকারের গণহত্যা, অত্যাচার ও গুমের প্রমাণ আসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে।
সিরিয়ার দারা শহরের অধিবাসী ফরিদ দামেস্কের সামরিক পুলিশ বাহিনীর ফরেনসিক এভিডেন্স বিভাগে কাজ করতেন। কর্মরত অবস্থায় তিনি সরকারি বাহিনীর অত্যাচারে নিহতদের তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি অত্যাচারকেন্দ্রের ছবি জমা করেন।
সাক্ষাৎকারে ২০১১ সালে দারা শহরে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের অত্যাচারে মৃত্যুর বিষয়টি স্মরণ করেন তিনি।
২০১১ সালের পর থেকে অত্যাচারের তীব্রতা ও নিহতের সংখ্যা নাটকীয় হারে বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে জায়গাসংকুলান না হওয়ায় মেজ্জাহ্ সামরিক হাসপাতালের পার্কিং লটে মরদেহ স্তূপ করে আসাদ প্রশাসন, জানান তিনি।
প্রত্যেক বন্দিকে নামের বদলে সংখ্যা দিয়ে ডাকা হতো জানিয়ে ফরিদ বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অত্যাচারে নিহতদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদরোগ বা ফুসফুসের রোগ দেখানো হতো।’
সামরিক বাহিনীতে কাজ করার সময় নিজের কাপড় ও পাউরুটির ভেতরে মেমরি কার্ড লুকিয়ে রাখতেন ফরিদ।
এ ছাড়া সামরিক পরিচয়পত্রের পাশাপাশি একটি ভুয়া বেসামরিক পরিচয় তৈরি করেছিলেন তিনি। এসবের মাধ্যমে টানা প্রায় তিন বছর বন্দিশালার ছবি তুলে জমা করেছিলেন, আল-জাজিরাকে জানান আল-মাধান।
বর্তমানে ফরিদ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। জর্ডান সীমান্ত হয়ে দেশত্যাগের পর কাতারে স্থায়ী হন তিনি। ‘কাতারের একটি আইনি সংস্থার মাধ্যমে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে আমি মামলা দায়ের করি।’, বলেন সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা।
গেল বছর ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদ পালানোর পর প্রায় ২৫ বছরে সংঘটিত অত্যাচারের বিচার চায় আন্তর্জাতিক মহল। ফরিদের দেওয়া প্রমাণাদি আসাদের বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র: আনাদোলু অ্যাজেন্সি, আল-জাজিরা
নাইমুর/