সূর্যের আরও কাছে যাচ্ছে পার্কার সোলার প্রোব। ছবি: সংগৃহীত
নাসার মহাকাশযান পার্কার সোলার প্রোব মানুষের তৈরি কোনো বস্তু হিসেবে সূর্যের সবচেয়ে কাছে যাচ্ছে। গত বুধবার এই যান শুক্র গ্রহের মহাকর্ষীয় টানকে কাজে লাগিয়ে নিজের গতি ও পথ পরিবর্তন করেছে। এই মহাকর্ষীয় বলের সহায়তায় মহাকাশযানটি সূর্যের আরও কাছাকাছি যেতে সক্ষম হবে। একই সঙ্গে মহাকাশযানটি আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলবে।
পার্কার সোলার প্রোবকে সূর্যের বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বাইরের স্তর বা আউটার করোনা গবেষণার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই মহাকাশযান সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩৮ দশমিক ৬ লাখ মাইল দূর দিয়ে অতিক্রম করবে। এর আগে কোনো মানবসৃষ্ট বস্তু সূর্যের এত কাছে পৌঁছায়নি। এই অভূতপূর্ব নিকটবর্তী অবস্থান থেকে পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের প্লাজমা ও সৌরঝড়ের মতো বিভিন্ন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করবে।
মেরিল্যান্ডের গ্রিনবেল্টে অবস্থিত নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের পার্কার সোলার প্রোব প্রকল্পের বিজ্ঞানী অ্যাডাম সাবো এই মিশনকে প্রকৌশলের বড় ধরনের অর্জন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, এই মিশনের মাধ্যমে সূর্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। সৌরজগতের গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষমতা বাড়বে।
পার্কার সোলার প্রোবের এই অভিযান সৌর পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এই মিশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা সূর্যের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ, সৌরঝড়ের উৎপত্তি ও এর প্রভাব সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন। এই তথ্য পৃথিবীকে সৌরঝড়ের প্রভাব থেকে রক্ষায় নতুন প্রযুক্তি বিকাশে সাহায্য করবে।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর যানটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছাবে, যাকে পেরিহেলিয়ন বলা হয়। এই সময় প্রায় তিন দিনের জন্য নাসার মিশন কন্ট্রোলের সঙ্গে মহাকাশযানটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৭ ডিসেম্বর যানটি একটি সংকেত পাঠিয়ে যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করবে। এ সময়ের মধ্যে যানটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
নাসার মতে, পার্কার সোলার প্রোব এই কক্ষপথে তার মিশনের বাকি সময় কাটাবে। একই দূরত্বে আরও দুটি পেরিহেলিয়ন সম্পন্ন করবে।
পুরো মিশনের সময় ধরে পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের আরও কাছে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে নাসার পার্কার সোলার প্রোব প্রথমবারের মতো সূর্যের প্রায় ২ দশমিক ৬৫ কোটি মাইলের মধ্যে গিয়ে ‘হেলিওস ২’ মহাকাশযানের ১৯৭৬ সালে গড়া রেকর্ড ভেঙেছিল। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রোবটি সূর্যের প্রায় ৪৫ দশমিক ১ লাখ মাইলের মধ্যে গিয়ে নিজস্ব রেকর্ড ভাঙে। এবার এটি সূর্যের আরও কাছে ৩৮ দশমিক ৬ লাখ মাইলের মধ্যে পোঁছাবে। এটি পার্কার প্রোবের জন্য সূর্যের কাছে তৃতীয়বারের মতো রেকর্ড ভাঙার ঘটনা ঘটবে।
ভেনাস ফ্লাইবাইটি হবে প্রোবের সপ্তম ও শেষবারের মতো এই গ্রহের পাশ দিয়ে যাওয়া। ২০২০ সালের তৃতীয় ফ্লাইবাই-এর সময় প্রোবের ‘ওয়াইড-ফিল্ড ইমেজার ফর পার্কার সোলার প্রোব’ (ডব্লিউআইএসপিআর) ক্যামেরা শুক্র গ্রহের ঘন মেঘের স্তর ভেদ করে জ্বলন্ত পৃষ্ঠের ছবি ধারণ করেছে। জন হপকিন্স অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স ল্যাবরেটরির মহাকাশ বিজ্ঞানী নোয়াম আইজেনবার্গ বলেন, ‘এই ক্যামেরা শুক্র গ্রহের মেঘের মধ্যদিয়ে তার পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতা দেখতে সক্ষম।’
শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠের ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরও জানতে গবেষকরা আগামী বুধবারের ফ্লাইবাইটি থেকে নতুন তথ্য আশা করছেন।