বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরা। ছবি: সংগৃহীত
আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানায় আবিষ্কৃত হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরক খণ্ড। সম্প্রতি কানাডিয়ান মাইনিং কোম্পানি লুকারা ডায়মন্ড করপোরেশনের মালিকাধীন ‘কারোয়ে ডায়মন্ড মাইন’ নামের খনি থেকে ২ হাজার ৪৯২ ক্যারেটের হীরাটি পাওয়া গেছে। খনিটি বতসোয়ানার রাজধানী গাবোরোনের প্রায় ৫০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এই হীরা খনি থেকে উত্তোলনে এক্স-রে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
হীরাটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হলেও এটি এ-যাবৎ বতসোয়ানায় পাওয়া সবচেয়ে বড় আকারের হীরা। এই হীরক খণ্ড ১৯০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত ৩ হাজার ১৬ ক্যারেটের কলিন্যান ডায়ামন্ডের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম। অবশ্য কলিন্যানের আকার এখন আর প্রাথমিক অবস্থায় নেই। এটি নয়টি আলাদা আলাদা ভাগে ব্রিটিশ রাজকীয় মুকুটে শোভা বাড়াচ্ছে।
লুকারা ডায়মন্ড করপোরেশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব বতসোয়ানার কারোয়ে ডায়মন্ড মাইন খনি থেকে এই হীরা আবিষ্কৃত হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় রাফ হীরাগুলোর একটি। লুকারা হীরকটির মূল্য বা গুণমান সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেনি। তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে লুকারার একটি সূত্র জানিয়েছে, হীরাটির দাম ৪ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি হতে পারে।
লুকারা প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ল্যাম্ব এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা এই অসাধারণ ২ হাজার ৪৯২ ক্যারেটের হীরা আবিষ্কারের জন্য আনন্দিত। এটি ২০১৭ সালে স্থাপন করা মেগা ডায়মন্ড রিকভারি এক্স-রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে শনাক্ত করা হয়েছে, যা বড় ও উচ্চ মূল্যের হীরা শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এতে আকরিক চূর্ণ প্রক্রিয়ার সময় রত্নপাথর ভেঙে যায় না।’ কোম্পানির প্রকাশিত ছবি দেখে বোঝা যায়, হীরাটি হাতের তালুর সমান।
চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট মোকগওয়েটসি মাসিসি এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হীরাটি সবার সামনে তুলে ধরেন। ইউরোপের বৃহত্তম অনলাইন হীরার জুয়েলার্স ‘সেভেনটি সেভেন ডায়মন্ডস’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক টোবিয়াস কোরমিন্ড নিশ্চিত করেছেন, এটি কলিন্যানের পর আবিষ্কৃত বৃহত্তম হীরক খণ্ড।
তিনি বলেন, ‘এই আবিষ্কার মূলত নতুন প্রযুক্তির কারণে সম্ভব হয়েছে, যা বড় হীরাগুলোকে টুকরা টুকরা না করে মাটি থেকে বের করে আনতে কাজ করে। তাই আমরা সম্ভবত এখন থেকে আরও এরকম হীরা দেখতে পাব।’
বতসোয়ানা বিশ্বের বৃহত্তম হীরক উত্তোলনের জন্য অন্যতম। দেশটিতে বিশ্বের মোট হীরার ২০ শতাংশ উত্তোলিত হয়। এ দেশের প্রধান আয়ের উৎস হীরা, যা এর সামগ্রিক ঘরোয়া আয়ের ৩০ শতাংশ এবং রপ্তানির আয়ের ৮০ শতাংশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশটি গত মাসে খনির মালিকানা সংক্রান্ত নতুন একটি আইন প্রস্তাব করেছে। যেখানে বলা হচ্ছে, বিদেশি কোম্পানিগুলো পুরোপুরি মালিকানা ধরে রাখতে পারবে না। সরকার যদি কেনার সিদ্ধান্ত না নেয় তবে স্থানীয় কোম্পানির কাছে ২৪ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে হবে।
এই হীরা আবিষ্কারের ঘোষণার আগে, বতসোয়ানায় আবিষ্কৃত বৃহত্তম হীরাটি ছিল ১ হাজার ৭৫৮ ক্যারেটের, যা ২০১৯ সালে কারোয়ে খনিতে পাওয়া যায়। এটির নাম দেওয়া হয়েছিল সেওয়েলো। ফরাসি ফ্যাশন ব্র্যান্ড ফরাসি ফ্যাশন ব্র্যান্ড লুই ভিটন বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে এটি কিনে ছিল।
লুকারা ২০২১ সালে বতসোয়ানায় একই এক্স-রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরেকটি ১ হাজার ১৭৪ ক্যারেটের হীরা আবিষ্কার করেছিল।