বিশ্বের প্রথম বেসরকারি মহাকাশ স্টেশন ‘হেভেন-ওয়ান’ আগামী বছর উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুতি চলছে। এই স্টেশনে রয়েছে ঘুমানোর জন্য বিলাসবহুল বড় আকারের বিছানা, আধুনিক জিম ও ম্যাপেল কাঠের সামগ্রী। মহাকাশে বসবাসের অভিজ্ঞতাকে আরও আরামদায়ক করতে ‘ভাস্ট’ নামের যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা এই স্টেশন তৈরি করেছে। যেখানে ডিজাইনার পিটার রাসেল-ক্লার্ক বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
অনেকের শৈশবে স্বপ্ন থাকে মহাকাশ ভ্রমণ, তবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) বাস্তবে জীবনযাপন করা বেশ কঠিন। নাসার দুই মহাকাশচারী সম্প্রতি সেখানে আটকে পড়ার সময় দেখা যায়, আইএসএস খুবই সংকীর্ণ। যেখানে এর বাসিন্দারা ফোনবুথ আকারের শোয়ার ঘরে ঘুমান, ভ্যাকুয়াম-চালিত টয়লেট ব্যবহার করেন। একই অন্তর্বাস কয়েক সপ্তাহ পরে থাকতে বাধ্য হন। তবে হেভেন-ওয়ানের উদ্ভাবনী নকশা মহাকাশ ভ্রমণকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে।
হেভেন-ওয়ানের ডিজাইনার পিটার রাসেল-ক্লার্ক। যিনি বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের সঙ্গেও কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘শূন্য মাধ্যাকর্ষণে মহাকাশচারীদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। আমাদের লক্ষ্য ছিল একটি কার্যকর ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা।’ এই ইন্টেরিয়র ডিজাইন সম্পূর্ণ নতুন এবং মহাকাশচারীদের স্বাচ্ছন্দ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।
বাইরে থেকে দেখতে এটি অন্যান্য মহাকাশযানের মতো হলেও, এর অভ্যন্তরীণ কাঠামো আইএসএস থেকে অনেক বেশি আরামদায়ক হবে। ম্যাপল কাঠের ইন্টেরিয়র ডিজাইন ও নরম আবরণ ক্রুদের নিরাপত্তার জন্য সহায়ক হবে, যখন তারা মাধ্যাকর্ষণের কারণে শূন্যে ভাসতে থাকবেন।
হেভেন-ওয়ানে চারটি ব্যক্তিগত ক্রু কোয়ার্টার রয়েছে, যা মূল করিডরের ওপরে ও নিচে অবস্থিত। এই কক্ষগুলো আইএসএসের তুলনায় কিছুটা বড়। এগুলো মহাকাশচারীদের জন্য বিশ্রাম নেওয়ার উপযোগীভাবে তৈরি করা হয়েছে। ভাস্ট জানিয়েছে, এই কক্ষগুলোতে মহাকাশচারীরা পোশাক পরিবর্তন, বিনোদন ও স্বাচ্ছন্দ্যে বিশ্রাম নিতে পারবেন। একই সঙ্গে পৃথিবীতে থাকা প্রিয়জনদের সঙ্গে স্পেসএক্স স্টারলিংক সংযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন।
ভবিষ্যৎ মহাকাশচারীরা হেভেন-ওয়ানে অবস্থান করার সময় মহাকাশের সুন্দর অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারবেন, যা মহাকাশে দীর্ঘকালীন ভ্রমণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ঘুমানো চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে ভাস্টের নতুন পেটেন্ট করা ‘সিগনেচার স্লিপ সিস্টেম’ দিয়ে সেই সমস্যার সমাধান করতে যাচ্ছে। ভাস্ট দাবি করেছে, এই সিস্টেমে থাকা বিছানায় পাশে কিংবা উল্টো হয়ে ঘুমানো উভয়ের জন্যই আরামদায়ক হবে।
হেভেন-ওয়ান মহাকাশ স্টেশনের রয়েছে ‘কমন এরিয়া’ নামে ২৪ ঘনমিটারের প্রধান জায়গা। এটি মাল্টিফাংশনাল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। এখানে মহাকাশচারীরা খাবার খেতে, ব্যায়াম করতে, ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করতে ও বিশ্রাম নিতে পারবেন। এই কমন এরিয়ায় একটি ভাঁজযোগ্য টেবিল রয়েছে, যা ব্যবহারের পর মেঝেতে ভাঁজ করে রাখা যায়। এ ছাড়াও মহাকাশচারীরা বড় পর্যবেক্ষণ জানালা দিয়ে পৃথিবী দেখতে পারবেন।
ব্যায়াম ও শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখার জন্য হেভেন-ওয়ানে রয়েছে অত্যাধুনিক জিম। যেখানে রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। এই সিস্টেমে থাকা স্টেশন অ্যাঙ্কর ব্যায়ামের জন্য কাস্টমাইজ করা যাবে। এটি কঙ্কাল, পেশি এবং কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস বজায় রাখতে সক্ষম এবং লিনিয়ার ও রোটেশনাল উভয় ধরনের ব্যায়াম পরিচালনা করা যাবে।
ভাস্ট কোম্পানির মহাকাশ স্টেশনটির ডিজাইনে সহায়তা করেছেন নাসার অভিজ্ঞ মহাকাশচারী অ্যান্ড্রু ফুয়েস্টেল । যিনি আইএসএসে ২২৫ দিনের বেশি সময় কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মহাকাশে মাইক্রোগ্র্যাভিটি মানুষের শরীরকে কীভাবে প্রভাবিত করে, তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এ থেকে আমি শিখেছি মহাকাশে জীবনযাপন ও কাজের জন্য সরল ও কার্যকরী ডিজাইন শুধু বিলাসিতা নয়, বরং এটি অপরিহার্য উপাদান।’
ফুয়েস্টেল আরও বলেন, ‘আমরা আইএসএসে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি, হেভেন-ওয়ানের ডিজাইনে সেগুলোর সমাধান করতে চেয়েছি। দীর্ঘমেয়াদে মহাকাশে নিজেকে ভালোভাবে রাখার সক্ষমতা তৈরি করা সত্যিই অসাধারণ।’
হেভেন-ওয়ান স্টেশন তৈরির মোট খরচ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে ভাস্ট জানিয়েছে, স্টেশন উৎক্ষেপণের আগে মার্কিন মুদ্রায় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। সূত্র: ডেইলি মেইল