ছায়াপথের দ্রুতগতির তারকাগুলো হয়তো বুদ্ধিমান এলিয়েনদের নিয়ন্ত্রণে চলছে। নতুন এক গবেষণাপত্রে এমন সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, উন্নত কোনো এলিয়েন সভ্যতা তাদের তারকা বা নক্ষত্রব্যবস্থা ব্যবহার করে মহাকাশে ভ্রমণ করতে পারে।
বেলজিয়ামের ভ্রিজে ইউনিভার্সিটির দর্শনের গবেষক ক্লেমেন্ট ভিদাল তার সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রস্তাব করেছেন, উন্নত কোনো সভ্যতা তাদের নক্ষত্র বা নক্ষত্রজোড়াকে (বাইনারি স্টার সিস্টেম) মহাকাশযানের মতো ব্যবহার করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা সম্পদ অনুসন্ধান, মহাকাশ আবিষ্কার বা কোনো সুপারনোভার মতো মহাজাগতিক বিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।
বিদ্যমান তারকাকে মহাকাশযানে রূপান্তর করার একটি সুবিধা হলো, তারা নিজেদের গ্রহসহ পুরো ব্যবস্থা বহন করতে পারবে। নক্ষত্র থেকে একমুখী বিকিরণ বা বাষ্পীভবন ঘটিয়ে এটি সম্ভব হতে পারে। এভাবে নক্ষত্র ও এর গ্রহমণ্ডলীকে একটি নতুন গ্যালাক্টিক গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
এর আগে বিজ্ঞানীরা ‘হাইপারভেলোসিটি’ নামের অত্যন্ত দ্রুতগতির তারাগুলোর ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। এই গবেষণায় তারা জানতে চেয়েছেন, এলিয়েনরা কি এই তারাগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে এত দ্রুতগতিতে চালিত করছে? তবে এখন পর্যন্ত কোনো তারার গতিতে কৃত্রিম হস্তক্ষেপের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে ভিদাল নতুন তথ্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন, অধিকাংশ তারকা একা থাকে না, বরং বাইনারি সিস্টেমে থাকে। এর মানে, আমরা সম্ভবত কৃত্রিমভাবে গতি বাড়ানো তারাগুলোর অর্ধেক এখনো খুঁজে পাইনি। এমনকি বাইনারি সিস্টেমের নক্ষত্রগুলো একক তারকার চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা দিতে পারে। তবে এই গবেষণাপত্রটি এখনো কোনো বিজ্ঞান সাময়িকীতে পর্যালোচনা বা প্রকাশিত হয়নি।
ভিদালের গবেষণায় একটি মডেল সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেখানে একটি নিউট্রন তারা ও একটি নিম্ন-ভরের তারা কাছাকাছি কক্ষপথে অবস্থান করছে। এমন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য বেশি সুবিধাজনক।
ভিদাল তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, এলিয়ান সভ্যতাকে তারকার থেকে পদার্থ নির্গত করার উপায় বের করতে হবে। এটি অসম চৌম্বক ক্ষেত্র থেকে হতে পারে অথবা তারার পৃষ্ঠে অসম উত্তাপ সৃষ্টি করে এমন কোনো যন্ত্র থেকে হতে পারে। যাইহোক, লক্ষ্য হবে তারার একদিকে অন্য দিকের তুলনায় বেশি পরিমাণে পদার্থ নির্গত করা। এটি ট্রাস্ট বা চাপ তৈরি করবে, যা বাইনারি সিস্টেমকে বিপরীত দিকে ঠেলে দেবে।
যদি এলিয়েনরা কোনো নিউট্রন তারার ওপর বা কাছাকাছি শক্তিশালী যন্ত্র স্থাপন করে, তবে তারার শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে তারা পুরো বাইনারি সিস্টেমকে নির্দিষ্ট দিকে চালিত করতে পারবে। এমনকি যন্ত্রটি চালু বা বন্ধ করে নির্দিষ্ট সময়ে চালু রেখে কক্ষপথ পরিবর্তন করাও সম্ভব।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, মহাবিশ্বে এমন কিছু বাস্তব নক্ষত্র ব্যবস্থা আছে, যা এই বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করছে। উদাহরণ হিসেবে ‘ব্ল্যাক উইডো’ পালসার পিএসআর জে০৬১০-২১০০ ও ‘রেডব্যাক’ পালসার পিএসআর জে২০৪৩+১৭১১-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর গতি বেশ দ্রুত, তবে এগুলোর ক্ষেত্রে এলিয়েন প্রযুক্তির প্রভাব থাকার সম্ভাবনা খুব কম। তবুও এসব ব্যবস্থা গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
এই তত্ত্ব এখনো প্রমাণিত নয়, এটা নিয়ে আরও গবেষণা দরকার। তবে এটি এলিয়েন সভ্যতা ও তাদের সম্ভাব্য প্রযুক্তির বিষয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এমন অনুসন্ধান মহাবিশ্বের অজানা দিক উন্মোচনে সাহায্য করবে। সূত্র: লাইভ সায়েন্স