সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে পুরুষ মশারাও নারী মশার মতো রক্তপিপাসু হতে পারে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে করা এক গবেষণায় এমন তথ্য ওঠে এসেছে। এ তথ্য ‘শুধু নারী মশারাই কামড়ায়, রক্ত চুষে ও রোগ ছড়ায়’, আর তখন ‘পুরুষ মশারা ফুলের মধু পান করে’ এমন প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। এই অনুসন্ধান ইঙ্গিত দেয় যে, পুরুষ মশারা সম্পূর্ণ নির্দোষ নয়। তারাও রোগবালাই ছড়াতে সামান্য হলেও ভূমিকা রাখতে পারে।
গত ৮ অক্টোবর প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাধারণত রক্ত চুষতে আগ্রহী নয় এমন পুরুষ কিউলেক্স টারসালিস ও এডিস ইজিপ্টি মশারা যখন আর্দ্রতা কম থাকে এবং চিনি পায় না তখন রক্ত চোষে।
যুক্তরাষ্ট্রের পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির কীটতত্ত্ববিদ জেসন রাসগনের ল্যাবে এক স্নাতক শিক্ষার্থী লক্ষ করেন যে, আর্দ্রতা কমিয়ে তাদের সাধারণ মধুর খাদ্য সরিয়ে নেওয়া হলে কিছু পুরুষ মশা কখনো কখনো একটি পাতলা কৃত্রিম ঝিল্লির মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করে।
রাসগন জানতে চেয়েছিলেন, তৃষ্ণার্ত পুরুষ মশারা মানুষের রক্ত নেওয়ার চেষ্টা করে কি না, তাই তিনি পুরুষ মশা থাকা একটি খাঁচায় তার হাত ঢুকিয়ে দেখেন। পানি নাগাল পাওয়া পুরুষ মশাগুলো তাকে বেশির ভাগই উপেক্ষা করে, কিন্তু পানি না পাওয়া পুরুষ মশাগুলো তার ত্বকে বসে এবং রক্ত চোষার চেষ্টা চালায়। এমনকি একটি পুরুষ মশা তাকে কামড়ায়ও। রাসগন বলেন, ‘এই মশার কামড় কেবল ত্বকের প্রথম স্তরে প্রবেশ করেছিল। এতে আমি হতবাক হয়েছিলাম এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটবে আশা করিনি।’
পুরুষ মশার দীর্ঘ নলাকার মুখাংশ এতটা গভীরভাবে প্রবেশ করতে সক্ষম নয় যে, তারা রক্ত টানতে পারে। তবে রাসগনের পোষা বিড়ালের দেওয়া একটি আঁচড় তাকে পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়। এতে করে তিনি পুরুষ মশারা অন্যভাবে রক্ত পেতে পারে কি না, তাও জানতে পারেন। যথারীতি, পানি না পাওয়া পুরুষ মশাগুলো সেই খোলা ক্ষত থেকে রক্ত পান করে।
তবে অন্য একটি পরীক্ষায় দেখা যায়, জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত এডিস ইজিপ্টি পুরুষ মশাগুলোর মধ্যে যেগুলো আর্দ্রতা অনুভব করতে অক্ষম তারা কম আর্দ্র পরিস্থিতিতেও রক্ত গ্রহণের প্রবণতা দেখায়নি। এই ফলাফলগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, পুরুষ মশারা সম্ভবত তাদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য রক্তের দিকে ঝুঁকতে পারে।
আগের একটি গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, রক্ত পুরুষ কিউলেক্স কুইঙ্কেফ্যাসিয়াটাস মশার জন্য বিষাক্ত এবং বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে, সব পুরুষ মশাই রক্ত হজমের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত। কিন্তু রাসগনের পরীক্ষায় দেখা যায়, রক্ত গ্রহণ করা পুরুষ কিউলেক্স টারসালিস মশাগুলো রক্ত না পাওয়া মশার মতোই দীর্ঘ সময় বাঁচে। বরং তুলনামূলক বেশি সময়ও তারা বেঁচে ছিল। সূত্র: সায়েন্স নিউজ