গা ছমছমে পরিবেশ, অন্ধকার ও নিঝুম চারপাশ। এমন অবস্থায় থাকলে আপনার মনে হতে পারে, পেছনে কেউ নেই তো? কেউ উঁকি মারছে না তো? ভয়ে বুক দুরুদুরু করবে আপনার। এ পরিস্থিতিতে এরকম মনে হয়নি এমন মানুষ বিরল। আসলে ভয়টা কীসে? ভূতে? তা হলে কি ভূতের অস্তিত্ব রয়েছে?
ভূত আছে এমনটি ভেবে অনেকে রাতে ঘুমোতে পারেন না। অনেকে তো স্বচক্ষে দেখেছেন বলেও দাবি করে থাকেন। এই ভূত নিয়ে রয়েছে শত শত তত্ত্ব। কিন্তু ভূত কি সত্যি আছে? এ নিয়ে কী বলছে গবেষণা?
ভূত নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্যারি মার্কোভস্কি এক নতুন কথা শোনালেন ভূত নিয়ে। জানালেন, অনেকেই জীবনে কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। আর সে কারণে প্রায়ই ভূতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন। ভূতদের প্রায় সবসময়ই অস্পষ্ট পরিস্থিতিতে দেখা যায়, যেমন আবছা আলোতে বা যখন সবে ঘুম থেকে জেগে উঠে মানুষ বা ঘুমের সময় যখন মানুষের ইন্দ্রিয়গুলো সঠিকভাবে কাজ করে না তখন।
তার আরও ব্যাখ্যা, মানুষ যখন ভুতুড়ে বাড়িগুলো দেখতে যায় তখন তারা সেখানে ভূত আছে বলে আশা করেই জায়গাটি পরিদর্শন করে। তারা এমন সব বিষয় অনুভব করে যেগুলোকে প্রায়শই ভূতের কাজ বলে মনে করা হয়। গবেষকরা বলছেন, বেশির ভাগ মানুষ ভূত-সম্পর্কিত ঘটনার সম্মুখীন হয় ম্লান আলো, ভীতিকর পরিবেশ এবং ঘুমের অভাবের কারণে। তাই বলা যায়, বিজ্ঞান আরও একবার দাবি করল, ভূত বলে কিছু নেই, সবটাই মনের ভুল বা দুর্বল মনের পরিচয়।
এর আগে ২০১৪ সালে, নেদারল্যান্ডসের গবেষকদের একটি দলও অলৌকিক কার্যকলাপের অস্তিত্ব আছে কি না তা নিয়ে গবেষণা করেছিল। তাতে উঠে আসে, যারা ভূতে বিশ্বাস করেন তারা অনেকেই ধর্মপ্রাণ ছিলেন, আবার কেউ ধর্মবিশ্বাসী না হয়েও অতিপ্রাকৃত জিনিসে বিশ্বাসী ছিলেন। সেই গবেষণায় উঠে আসে, মানুষ প্রায়ই টিভি শো ও চলচ্চিত্র দেখার পরে এই ধরনের ঘটনা নিয়ে নিজের মনে এক ধরনের ছবি আঁকেন।
লন্ডনের গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানোম্যালিস্টিক সাইকোলজি রিসার্চ ইউনিটের প্রধান ড. ক্রিস ফ্রেঞ্চ। তিনি অনেক ভূত দেখার গল্পের পেছনের কারণ হিসেবে স্লিপ প্যারালাইসিসকে তুলে এনেছেন, যেটাকে বাংলায় কেউ কেউ ‘বোবায় ধরা’ বলে থাকেন। মানুষ যখন তার ঘুমের একটা বিশেষ পর্যায়ে র্যাপিড আই মুভমেন্টে (আরইএম) পৌঁছায়, তখন আর মস্তিষ্ক শরীরকে নড়াচড়ার সংকেত পাঠায় না। আর ঠিক এই সময়টায় মানুষ কখনো জেগে উঠলেও নড়াচড়া করতে পারে না। স্লিপ প্যারালাইসিসের অন্যান্য কিছু স্বাভাবিক লক্ষণ হলো, মনে হবে কেউ আপনার ঘরে আছে অথবা আপনাকে চেপে ধরে আছে। আর যেহেতু র্যাপিড আই মুভমেন্টের সময়টায় মানুষ সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখে তাই এ সময় হ্যালুসিনেশন বা দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে। সূত্র: আজকাল।