ঢাকা ২৭ মাঘ ১৪৩১, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ মাঘ ১৪৩১

পানি থেকে ন্যানোপ্লাস্টিক দূর করার সহজ উপায়

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:১০ এএম
পানি থেকে ন্যানোপ্লাস্টিক দূর করার সহজ উপায়
এক লিটার বোতলজাত পানিতে থাকতে পারে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার প্লাস্টিক কণা। ছবি: সংগৃহীত

প্লাস্টিক দূষণ শুধু পরিবেশ নয়, আমাদের শরীরের জন্যও ভয়ংকর ক্ষতির কারণ হতে পারে। পানি ও খাবারের সঙ্গে আমাদের দেহে প্রবেশ করে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানোপ্লাস্টিক। এগুলো হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, শুধু এক লিটার বোতলজাত পানিতে থাকতে পারে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার প্লাস্টিক কণা, যার ৯০ শতাংশ ন্যানোপ্লাস্টিক। 

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ন্যানোপ্লাস্টিক দূর করার একটি সহজ পদ্ধতি হলো পানি ফুটিয়ে পান করা। চীনের গুয়াংজু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও জিনান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, পানি ফুটিয়ে পান করলে কিছু ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ন্যানোপ্লাস্টিক দূর করা সম্ভব। জিনান বিশ্ববিদ্যালয় ও গুয়াংজু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি লেটারস জার্নালে।

পদ্ধতি  

গবেষণায় বলা হয়েছে, সাধারণ ট্যাপের পানি ৫ মিনিট ফোটালে ৮০ শতাংশ ন্যানোপ্লাস্টিক দূর হতে পারে। তবে পানির উৎস ও মান অনুযায়ী এই কার্যকারিতা ভিন্ন হতে পারে। বুড়িগঙ্গার পানি আর সাধারণ ট্যাপের পানি নিশ্চয় এক রকম নয়। 

গবেষণার প্রধান এড জেং বলেছেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশে সরাসরি ট্যাপের পানি পান করার প্রচলন রয়েছে। ফলে ন্যানোপ্লাস্টিকসহ ক্ষতিকর উপাদান সরাসরি শরীরে প্রবেশ করে। কিন্তু একটু সচেতন হলে সহজে এ বিপদ এড়ানো যায়।’ 

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতা 

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে পানি ফুটিয়ে পান করার সংস্কৃতি রয়েছে। তবে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে মানুষ সরাসরি ট্যাপের পানি ব্যবহার করেন, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিজ্ঞানীদের তৈরি একটি ম্যাপে দেখা যায়, পানি না ফুটিয়ে সরাসরি ট্যাপের পানি পান করেন বেশির ভাগ মানুষ। ফুটানো পানি পান করা অঞ্চলে ন্যানোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। 

মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতি

মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।  ন্যানোপ্লাস্টিক দূর করার জন্য পানি ফুটিয়ে পান করা একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। তবে এটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। পাশাপাশি মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতির সুনির্দিষ্ট প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

ধূমপান না করেও ফুসফুস ক্যানসার: কারণ বায়ুদূষণ

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৫ এএম
ধূমপান না করেও ফুসফুস ক্যানসার: কারণ বায়ুদূষণ
বিশ্বব্যাপী ধূমপান না করেও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী ধূমপান না করেও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রোগের অন্যতম কারণ হতে পারে বায়ুদূষণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ক্যানসার গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) মতে, কখনো সিগারেট বা তামাক সেবন না করেও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এখন ঘটছে। ফুসফুসের ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী ক্যানসারজনিত মৃত্যুর পঞ্চম সর্বোচ্চ কারণ।

বায়ুদূষণ ও অ্যাডেনোকার্সিনোমা বাড়াচ্ছে ঝুঁকি 
ধূমপান না করা ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যাডেনোকার্সিনোমা নামে এক ধরনের ক্যানসার দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে এই ক্যানসার ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি ল্যানসেট রেসপিরেটরি মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত আইএআরসির গবেষণা অনুসারে, ২০২২ সালে বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ২ লাখ মানুষ অ্যাডেনোকার্সিনোমায় আক্রান্ত হয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষ করে চীনে বায়ুদূষণের কারণে অ্যাডেনোকার্সিনোমার হার সবচেয়ে বেশি ছিল। 

ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত ও ঝুঁকি কমানোর তাগিদ 
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক সাক্ষাৎকারে আইএআরসির ক্যানসার সার্ভিল্যান্স শাখার প্রধান ও গবেষণা দলের প্রধান ড. ফ্রেডি ব্রে বলেন, এই ফলাফল ফুসফুসের ক্যানসারের পরিবর্তিত ঝুঁকির কারণ পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। যেসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধূমপানকে ফুসফুসের ক্যানসারের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, সেখানে বায়ুদূষণের মতো সম্ভাব্য কারণগুলো চিহ্নিত করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, ‘ধূমপানের হার কমে যাওয়ার ফলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ধূমপান করেন না এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্তের হার বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তার ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতে অ্যাডেনোকার্সিনোমার প্রকোপ কমবে কি না।’

বিশ্বজুড়ে ফুসফুসের ক্যানসার এখনো সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর কারণ হিসেবে রয়ে গেছে। ২০২২ সালে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। তবে সাম্প্রতিক দশকে ক্যানসারের ধরনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। 

নারীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের হার বাড়ছে 
আইএআরসি জানিয়েছে, ফুসফুসের ক্যানসারের চারটি প্রধান উপপ্রকারের মধ্যে অ্যাডেনোকার্সিনোমা পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে।

২০২২ সালের তথ্যমতে, বিশ্বে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ৫৯ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল অ্যাডেনোকার্সিনোমা। ২০২০ সালে এই হার যথাক্রমে ৩৯ শতাংশ ও ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ ছিল। আইএআরসি জানিয়েছে, অ্যাডেনোকার্সিনোমা ধূমপান না করা ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

যদিও গত ৪০ বছরে বেশির ভাগ দেশে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের হার কমেছে, তবে নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা উল্টো বাড়ছে। বর্তমানে পুরুষদের মধ্যে ক্যানসারের হার বেশি হলেও, ২০২২ সালে ৯ লাখ নারী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ২০২৩ সালে দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, কীভাবে যুক্তরাজ্যে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো পুরুষদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের এখন স্তন ক্যানসারের মতো ফুসফুসের ক্যানসার নিয়েও সতর্ক হওয়া উচিত। 

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কৌশল 
ধূমপানের ধরন ও বায়ুদূষণের মাত্রা ক্যানসারের ঝুঁকিকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, বায়ুদূষণের সঙ্গে অ্যাডেনোকার্সিনোমার সংযোগ রয়েছে। তবে ধূমপান ছাড়া বিশ্বব্যাপী ঠিক কত শতাংশ ফুসফুসের ক্যানসার বায়ুদূষণের কারণে হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে প্রমাণ থেকে জানা যায় এটি বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ সম্পর্কে আরও জানার জন্য চেষ্টা করছেন। বিজ্ঞানীরা এখন আরও গভীরভাবে গবেষণা করছেন, ধূমপান ছাড়াও কী কী কারণ এ রোগের জন্য দায়ী। 

গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘বায়ুদূষণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আংশিকভাবে অ্যাডেনোকার্সিনোমার ক্রমবর্ধমান প্রাধান্যকে ব্যাখ্যা করে, যা বিশ্বব্যাপী ধূমপান না করা ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ৫৩ থেকে ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী।’

ব্রে বলেন, কীভাবে ফুসফুসের ক্যানসার এবং অন্তর্নিহিত ঝুঁকির কারণগুলো বিকশিত হচ্ছে? আমরা কীভাবে বিশ্বব্যাপী ফুসফুসের ক্যানসারকে সর্বোত্তমভাবে প্রতিরোধ করতে পারি সে সম্পর্কে সূত্র সরবরাহ করে এই গবেষণা।’

গবেষকরা মনে করেন, ফুসফুসের ক্যানসার ও এর ঝুঁকির পরিবর্তনশীল ধরন বোঝার মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। ড. ব্রে বলেন, ‘ধূমপানের অভ্যাস পরিবর্তন ও বায়ুদূষণের মাত্রা কমানো- এ দুটি কৌশল ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতিনির্ধারকদের এখন উচ্চ ঝুঁকির জনগোষ্ঠীর জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ ও বায়ুদূষণ প্রতিরোধ নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

চিলি থেকে উদ্ধার বিপন্ন ব্যাঙ জন্ম দিল ব্যাঙাচি

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৫ এএম
চিলি থেকে উদ্ধার বিপন্ন ব্যাঙ জন্ম দিল ব্যাঙাচি
বিপন্ন প্রজাতির ‘ডারউইনস ফ্রগ’। ছবি: সংগৃহীত

চিলির একটি প্রত্যন্ত জাতীয় উদ্যান থেকে উদ্ধার করা ‘ডারউইনস ফ্রগ’ নামে পরিচিত বিপন্ন প্রজাতির ব্যাঙ কয়েক ডজন ব্যাঙাচি জন্ম দিয়েছে যুক্তরাজ্যের লন্ডন চিড়িয়াখানায়। প্রাণী সংরক্ষণবিদরা বিশেষভাবে তৈরি একটি ঘরে তাদের প্রাকৃতিক আবহাওয়া অনুসরণ করে রাখার ফলে এ প্রজাতির ব্যাঙের বংশবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে।  

প্রাণঘাতী ছত্রাকের আক্রমণ  
২০২৩ সালে চিলির চিলো দ্বীপের টানটাউকো পার্কে পর্যবেক্ষণের সময় দেখা যায়, ডারউইনস ফ্রগের সংখ্যা ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গবেষকরা নিশ্চিত হন, প্রাণঘাতী কাইট্রিড ছত্রাক সংক্রমণ এ বিপর্যয়ের কারণ। ডারউইনস ফ্রগের শেষ অবশিষ্টকেও হুমকির মধ্যে ফেলেছে এই ছত্রাক। বিশ্বব্যাপী উভচর প্রাণীর জন্য সবচেয়ে সংক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হয় কাইট্রিড ছত্রাক। ইতোমধ্যে ৯০টিরও বেশি প্রজাতির ব্যাঙের বিলুপ্তির জন্য দায়ী এই ছত্রাক। 

জুওলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের (জেডএসএল) গবেষক ড. আন্দ্রেস ভ্যালেনজুয়েলা-সানচেজ বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারলাম পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের কিছু করতে হবে। আমাদের একটি জরুরি উদ্ধার অভিযান চালাতে হবে।’

জরুরি উদ্ধার অভিযান  
২০২৩ সালের অক্টোবরে পাঁচ দিনের অভিযানে ৫৫টি ডারউইন ব্যাঙ সংগ্রহ করা হয়। স্থানীয় গাইডরা ব্যাঙের ডাক নকল করে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করতে সাহায্য করেন। উদ্ধারকৃত ব্যাঙগুলোর মধ্যে ১১টি ছিল পুরুষ, যারা ইতোমধ্যে তাদের মুখের ভেতরে ভ্রূণ বহন করছিল। 

ডারউইন ব্যাঙের প্রজনন পদ্ধতি ব্যতিক্রম। স্ত্রী ব্যাঙ বনভূমিতে ডিম পাড়ে, যা পুরুষ ব্যাঙ নিষিক্ত করে। দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর পুরুষ ব্যাঙ এগুলো মুখে সংগ্রহ করে এবং স্বরতন্ত্রের থলিতে রাখে। সেখানে ব্যাঙাচি ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয় এবং পরে ছোট ব্যাঙ হিসেবে জন্ম নেয়।  

উদ্ধারকৃত ব্যাঙদের পরীক্ষা করতে চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোর একটি পরীক্ষাগারে তাদের ত্বকের নমুনা পাঠানো হয়। পরীক্ষায় দুটি ব্যাঙের সংক্রমণ ধরা পড়লেও বাকি ৫৩টি ব্যাঙ সুস্থ ছিল। এর পর তাদের প্রায় ১৩ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে লন্ডনে নিয়ে আসা হয়।  

নতুন পরিবেশে বংশবৃদ্ধি  
লন্ডনে পৌঁছানোর পর ব্যাঙগুলোকে চিড়িয়াখানায় বিশেষভাবে তৈরি একটি নিরাপদ কক্ষে রাখা হয়েছে। যেখানে তাদের স্বাভাবিক পরিবেশের মতো ঠাণ্ডা তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আলো ও গাছপালা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে পুরুষ ব্যাঙগুলো ব্যাঙাচিদের মুক্ত করে, যার ফলে ৩৩টি ব্যাঙের ছানা জন্ম নেয়। প্রতিটির আকার ছিল মাত্র ৫ মিলিমিটার। 

ভ্যালেনজুয়েলা-সানচেজ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন প্রথম প্রজন্মের ব্যাঙ রয়েছে, যা এখানে জন্ম নিয়েছে। এটি সংরক্ষণ প্রচেষ্টার একটি বড় অর্জন ছিল।’ গবেষকরা এখন ব্যাঙগুলোর প্রজনন ও কাইট্রিড ছত্রাকের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে এই প্রজাতিকে তাদের নিজ আবাসস্থলে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়।

২০৩২ সালে পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে ‘সিটি-কিলার’ গ্রহাণু

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:১৪ পিএম
২০৩২ সালে পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে ‘সিটি-কিলার’ গ্রহাণু
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে ‘২০২৪ ওয়াইআর৪’ নামের গ্রহাণু। ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে একটি বিশাল গ্রহাণু। নাসার বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি গ্রহাণুটি খুঁজে পেয়েছেন, যা ২০৩২ সালে পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে। নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘২০২৪ ওয়াইআর৪ (2024 YR4)’ নামের গ্রহাণুটির ১ দশমিক ২ শতাংশ আশঙ্কা রয়েছে পৃথিবীতে আঘাত হানার। যদিও এটি মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করার মতো বড় নয়, তবে এটি একটি শহরকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

নাসার অ্যাস্টেরয়েড টেরেস্ট্রিয়াল-ইমপ্যাক্ট লাস্ট অ্যালার্ট সিস্টেমের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর গ্রহাণুটিকে শনাক্ত করা হয়েছে। গবেষকদের ধারণা, এটি যদি পৃথিবীতে আঘাত হানে, তা হলে একটি সম্পূর্ণ নগরী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। 

২০২৪ ওয়াইআর৪ গ্রহাণুর ব্যাস প্রায় ৫৫ মিটার, এর মানে এটি এতটাই ছোট যে পৃথিবীতে আঘাত করলে মানবসভ্যতা ধ্বংস হওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে না। তবে এর ধাক্কায় বিশাল বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, এটি আঘাতের পর প্রায় ৮ মেগাটন শক্তি নির্গত করবে, যা জাপানের হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত পরমাণু বোমার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। 

বর্তমানে গ্রহাণুটি পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তবে আগামী ৫০ বছরে এটি পৃথিবীর বেশ কয়েকবার কাছাকাছি আসবে। প্রথমবার এটি ২০২৮ সালের শেষদিকে পৃথিবীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে। এর পর ২০৩২ থেকে ২০৭৪ সালের মধ্যে মোট ছয়বার পৃথিবীর খুব কাছাকাছি আসবে গ্রহাণুটি। 

সবচেয়ে বড় ঝুঁকির সময় হতে পারে ২০৩২ সালের ২২ ডিসেম্বর। নাসার তথ্য অনুযায়ী, এই সময় গ্রহাণুটির পৃথিবীতে আঘাত হানার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি রয়েছে। 

এ সমস্ত কারণে ২০২৪ ওয়াইআর৪ গ্রহাণুটিকে টুরিনো ইমপ্যাক্ট হ্যাজার্ড স্কেলে লেভেল ৩-এ রাখা হয়েছে। এই সিস্টেমটি বিজ্ঞানীরা কোনো গ্রহাণুর হুমকির মাত্রা নির্ধারণ করতে ব্যবহার করেন। এই স্কেলে লেভেল ৩ মানের গ্রহাণুটিকে জনসাধারণ ও কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ। তবে সাধারণত এই পর্যায়ের গ্রহাণুগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লেভেল ০-তে নেমে আসে, যার অর্থ সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রায় শূন্য হয়ে যায়। 

এ ধরনের মহাজাগতিক হুমকি ঠেকাতে নাসা ও অন্যান্য মহাকাশ সংস্থা প্রতিরক্ষামূলক প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছে। সম্প্রতি ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট মিশনের মাধ্যমে গ্রহাণুর গতিপথ পরিবর্তনের পরীক্ষা করা হয়েছে।  

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০২৪ ওয়াইআর৪ গ্রহাণু ডাইনোসর যুগের ধ্বংসকারী বিশাল গ্রহাণুর মতো বিপজ্জনক না, যা ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে মেক্সিকোতে (বর্তমানে) আঘাত করেছিল। তবে এটি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কারণ, মহাকাশের যেকোনো পরিবর্তন ভবিষ্যতে এর গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে।  সূত্র: লাইভ সায়েন্স

আইএসএস-এ আটকে পড়া নভোচারীদের উদ্ধারে ট্রাম্পের উদ্যোগ

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম
আইএসএস-এ আটকে পড়া নভোচারীদের উদ্ধারে ট্রাম্পের উদ্যোগ
মার্কিন নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) আটকেপড়া দুই মার্কিন নভোচারীকে ফিরিয়ে আনতে স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের ওপর ভরসা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

গত বছরের ৫ জুন বোয়িংয়ের তৈরি স্টারলাইনার মহাকাশযানে চড়ে আইএসএসে গিয়েছিলেন নাসার দুই নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। আট দিনের মিশন শেষে তাদের পৃথিবীতে ফেরার কথা থাকলেও স্টারলাইনার মহাকাশযান ফুটো হয়ে হিলিয়াম গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে এবং ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে তারা প্রায় আট মাস ধরে মহাকাশ স্টেশনে আটকে আছেন। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ককে দ্রুত মহাকাশ স্টেশনে আটকেপড়া দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনতে বলেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে লিখেছেন, ‘স্পেসএক্স শিগগিরই আইএসএসে আটকে থাকা দুই মার্কিন নভোচারীকে ফিরিয়ে আনার মিশন শুরু করবে। ইলন শিগগিরই এর জন্য কাজ করবে। আশা করি, তারা নিরাপদে ফিরবেন। শুভকামনা ইলন!!!’

ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যত দ্রুত সম্ভব দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা ২০২৪ সালের জুন থেকে মহাকাশ স্টেশনে রয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এতদিন তাদের অসহায় অবস্থায় রেখেছে, যা ভয়ংকর।

তবে নাসার দাবি, নভোচারীরা আইএসএসে সুস্থ আছেন এবং গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যেই স্পেসএক্সের ক্রু-৯ মিশনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।  কবে নাগাদ তাদের ফেরানোর অভিযান শুরু হবে, তা স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প কিংবা নাসা। সূত্র: এনডিটিভি

১৯০০ বছর পুরোনো পাণ্ডুলিপিতে মিলল রোমান আমলের মামলার নথি

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১২ পিএম
১৯০০ বছর পুরোনো পাণ্ডুলিপিতে মিলল রোমান আমলের মামলার নথি
ইসরায়েলে পাওয়া এক প্রাচীন প্যাপিরাস। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলে পাওয়া এক প্রাচীন প্যাপিরাসের পাণ্ডুলিপি অনুবাদে উঠে এসেছে রোমান সাম্রাজ্যের সময়কার অপরাধ ও দাস মালিকানার তথ্য। এটি প্রায় ১ হাজার ৯০০ বছর পুরোনো। গবেষকদের মতে, এটি জুডিয়ায় (বর্তমান ইসরায়েল) রোমান শাসনামলের সবচেয়ে বিস্তারিত আদালতের নথি, যাতে যিশুর বিচার ছাড়া অন্য কোনো মামলার বিষয়ে এত সুস্পষ্ট তথ্য রয়েছে।

২০১৪ সালে ইসরায়েল অ্যান্টিকুইটিজ অথরিটির ডেড সি স্ক্রোলস ইউনিটে সংরক্ষিত প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সাজানোর সময় গবেষকরা জুডিয়ান মরুভূমিতে পাওয়া একটি দীর্ঘ প্যাপিরাসের সন্ধান পান। এটিকে মূলত প্রাচীন আরবি উপভাষা ‘নাবাতিয়ান’ ভাষার লেখা বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে হিব্রু ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেমের বিশেষজ্ঞ হানাহ কটন পরীক্ষা করে জানান, এটি আসলে গ্রিক ভাষায় লেখা।

পরবর্তী এক দশকে গবেষক দল ১৩৩ লাইনের দীর্ঘ এই নথিটি বিশ্লেষণ করেন। তাদের গবেষণা চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি জার্নাল টাইকিতে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন, প্যাপিরাসটিতে রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট হ্যাড্রিয়ানের (১১৭-১৩৮ খ্রিষ্টাব্দ) শাসনামলে একটি মামলার প্রক্রিয়ার তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে। এটি বার কোখবা বিদ্রোহের (১৩২ খ্রিষ্টাব্দ) আগে রোমান শাসিত জুডিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই মামলায় বলা হয়েছে, গাদালিয়াস ও সাওলাস নামের দুই ব্যক্তি জাল কাগজপত্র তৈরি করে দাস কেনাবেচার মাধ্যমে রোমান সাম্রাজ্যের কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। গবেষকদের মতে, রোমান আইনে জালিয়াতি ও কর ফাঁকি গুরুতর অপরাধ ছিল, যার শাস্তি কঠোর শ্রমদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড হতে পারত।

প্যাপিরাসে দাস কেনাবেচার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে, যা প্রাচীন ইহুদিরা দাস মালিকানা করতেন কি না, এই বিতর্কিত প্রশ্নের একটি প্রমাণ হতে পারে। এতে উল্লেখ রয়েছে, সাওলাস ও তার পিতা একাধিক দাসের মালিক ছিলেন। তবে ওই দাসেরা নিজেরাও ইহুদি ছিলেন কি না, তা নথিতে স্পষ্ট নয়।

গবেষকদের মতে, প্যাপিরাসটির অনেক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পুরো মামলার ফলাফল জানা সম্ভব হয়নি। কোথায় বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছিল, অভিযুক্তরা রোমান নাগরিক ছিলেন কি না, এসব তথ্য অনুপস্থিত প্যাপিরাসে।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, বার কোখবা বিদ্রোহের সময় আতঙ্কে এর মালিক এটি জুডিয়ার মরুভূমির গুহায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। সেখানেই এটি প্রায় দুই সহস্রাব্দ ধরে ডেড সি স্ক্রোলসের অন্যান্য নথির সঙ্গে সংরক্ষিত ছিল। 
গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কার প্রাচীন জুডিয়ার আইন, অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করেছে। সূত্র: লাইভ সায়েন্স