সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা করা হয়েছে। হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা এসব মামলায় হাসিনা ছাড়াও সাবেক চার মন্ত্রী, পাঁচ সাবেক সংসদ সদস্যসহ ৫৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ও মাদারীপুর আদালতে দুটি ও গত বুধবার রাতে রাজশাহীর পুঠিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়।
ঢাকা: গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) গেটের সামনে রিকশাচালক সোহাগ গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় গতকাল তার বাবা মো. নুরুল ইসলাম ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। মামলায় শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সাবেক তিন মন্ত্রীসহ ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিচারক আরফাতুল রাকিবের আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে বনানী থানা পুলিশকে তা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মো. আতিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, শেখ সেলিম, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও হারুন অর রশিদ। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিদের নির্দেশে সোহাগকে গুলি করা হয়েছে।
রাজশাহী: দীর্ঘ ৯ বছর পর স্বামী মজির উদ্দিনকে হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন স্ত্রী মোসা. মাছুফা বেগম। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক এমপি রায়হানুল হকসহ ১৮১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে পুঠিয়া থানায় মামলাটি করা হয়। মামলার বাদী মাছুফা চারঘাট উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের চাচি।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি রাজশাহীর পুঠিয়ায় ২০দলীয় রাজনৈতিক জোট আয়োজিত সংবিধান ও গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আসামিরা দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ধারাল অস্ত্রসহ হামলা করেন। এতে ঘটনাস্থলে মজির উদ্দিন নিহত হন।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই ঘটনায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ ও নিহতের স্ত্রী মাছুফা পৃথক অভিযোগ দিয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে মাছুফার মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদারীপুর: কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী দিপ্ত দে-কে (২২) হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালসহ ২৭ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে মাদারীপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক হুমায়ুন কবির সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলাটি নথিভুক্ত করতে নির্দেশ দেন।
নিহত দিপ্ত দে মাদারীপুর শহরের মাস্টার কলোনি এলাকার স্বপন দের ছেলে ও মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূর-ই আলম লিটন চৌধুরী, মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী, মাদারীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা শহরের শকুনী লেক এলাকায় এলে আসামিরা দিপ্তকে গুলি করেন ও কুপিয়ে আহত করেন। একপর্যায়ে দিপ্ত লেকের পানিতে পড়ে যান। ওই দিন দুপুরে লেক থেকে দিপ্তর লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মাদারীপুর সদর থানার ওসি এএইচএম সালাহ উদ্দিন বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
খাগড়াছড়িতে সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা: এদিকে আমাদের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে মাটিরাঙ্গা থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী তরিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। এ মামলায় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাসহ আওয়ামী লীগের ১৮৯ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাটিরাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.শরীফ।
মামলা এজাহারে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে আসামিরা তরিকুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশে হামলা করেন।
এ সময় তারা ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করে শরীরের বিভিন্ন অংশ জখম করেন।
পরে তরিকুল সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও হামলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন তিনি।