চট্টগ্রামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। এটিই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে হওয়া প্রথম মামলা। এর আগে তার বিরুদ্ধে সারাদেশে ৫টি মামলা হয়।
এই মামলায় চসিকের দুই কাউন্সিলর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাও রয়েছেন।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে মহানগরের চান্দগাঁও থানায় মামলাটি করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিতে নিহত কলেজছাত্র তানভীর ছিদ্দিকীর (১৯) চাচা মোহাম্মদ পারভেজ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে তানভীরকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, চসিকের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এসরারুল হক, ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, ১৬ নম্বর চকবাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বাবর আলী, যুবলীগ নেতা মো. কাইসার, মাহবুব আলম, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফ, নোমান শরীফ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিউদ্দীন ফরহাদ, মো. দেলোয়ার, মো. জালাল, মো. ফরিদ, সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মো. তাহসীন, সিটি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হোসাইন অভি, এইচ এম মিঠু, নুরুল আলম প্রকাশ কালা বদা, আরিফ ইফতেখার রশিদ, ওসমান গণি, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইলিয়াছ বাবুল, মাইনুল ইসলাম শরীফ, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জিয়াউদ্দীন আরমান, যুগ্ম সম্পাদক মনির উদ্দিন, যুবলীগ নেতা মো. ফিরোজ, মো. জাফর, জাফর আলম, মনছুর আবেদীন, আবুল হাসনাত, মোহাম্মদ সুমন উদ্দীন, বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মিজান সিকদার, যুবলীগ নেতা মো. শোয়াইবসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বাদীর ভাতিজা তানভীর ছিদ্দিকী গত ১৮ জুলাই দুপুর আড়াইটায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সাথে অংশ নেয়। ওইদিন শিক্ষার্থীরা মহানগরের মুরাদপুর এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান করেন।
পরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে একইদিন বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে আসামিরা অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনসহ চাপাতি, কিরিচ ও মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হাজির হয়। এরপর তারা ওয়াপদা অফিসের দিক থেকে এসে তানভীর ছিদ্দিকীসহ শিক্ষার্থীদেরকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ ও এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে তানভীরসহ অনেক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। সেদিন আহত তানভীরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির খবরের কাগজকে বলেন, গত ১৮ জুলাইয়ের ঘটনায় তানভীর নামে একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ তুলে নিহতের চাচা থানায় বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
ওসি আরও বলেন, মামলাটি তদন্তভার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ছাবেদ আলীর উপর অর্পণ করা হয়েছে।
গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহানগরের বহদ্দারহাট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ওইদিন শিক্ষার্থী, পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। গুলিবিদ্ধ হয় অনেকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনজন। তাদের মধ্যে একজন হলেন এই তানভীর সিদ্দিকী।
চট্টগ্রাম ব্যুরো/অমিয়/