জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরির অভিযোগে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি করেন দুদকের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম।
অপর চার আসামি হলেন- ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সাবেক পরিচালক মো. ফজলুল হক, সাবেক পরিচালক মুন্সী মুয়ীদ ইকরাম, পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের টেকনিক্যাল ম্যানেজার সাহেনা হক।
দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বেনজীর আহমেদ পুলিশ সদর দপ্তরে ডিআইজি, অতিরিক্ত আইজিপির পদমর্যাদায় র্যাবের মহাপরিচালক ও ডিএমপি কমিশনার পদে দায়িত্ব পালনের সময় সরকারি চাকরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও পাসপোর্টের জন্য আবেদনপত্রে পেশা হিসেবে ‘প্রাইভেট সার্ভিস’ দেখান। তিনি জালজালিয়াতি-প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিভাগীয় অনাপত্তিপত্র (এনওসি) ছাড়া মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এবং ই-পাসপোর্টের (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট) সংগ্রহ করেন। তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে দিয়ে নবায়নসহ অন্তত ৫টি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। অপর আসামিরা তার দাপ্তরিক পরিচয় সম্পূর্ণভাবে জেনেও বিভাগীয় অনাপত্তি সনদ (এনওসি) সংগ্রহ ও যাচাই না করে পরস্পর যোগসাজশে ব্যক্তিগত লাভের জন্য অবৈধভাবে বেনজীর আহমেদকে পাসপোর্ট দিয়েছেন। পাসপোর্টগুলো হলো E0017616, AA1073252, BC0111070, BM0828141 এবং B00002095।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, বেনজীর আহমেদ ২০১০ সালের ১৪ অক্টোবর হাতে লেখা পাসপোর্ট সমর্পণ করে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে এমআরপি পাসপোর্ট নেন। এই পাসপোর্টেও তার পেশা উল্লেখ ছিল কেবল ‘সার্ভিস’। অথচ তিনি তখন ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার। এই পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ না হতেই এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে দ্বিতীয় এমআরপি নেন। এই পাসপোর্টের আবেদনে পেশার স্থলে তিনি লেখেন ‘প্রাইভেট সার্ভিস’। ওই সময়েও তিনি ডিএমপির কমিশনার ছিলেন। এই পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। দ্বিতীয় এমআরপির মেয়াদ শেষ হওয়ার আড়াই বছর আগে তিনি ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৃতীয় এমআরপি নেন। এটিতেও পেশা প্রাইভেট সার্ভিস। ২০২০ সালের ৪ মার্চ বেনজীর আহমেদ ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। সেখানেও পেশা প্রাইভেট সার্ভিস। সে সময় তিনি ছিলেন আইজিপি। ওই দিনই দুপুর ১২টা ৪৬ মিনিটে গুলশানে বেনজীরের বাসায় গিয়ে ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের মোবাইল টিমের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর শাহেনা হক তার বায়োমেট্রিক, আইরিশ, ছবি তুলে এনে ই-পাসপোর্ট সার্ভারে আপলোড করেন। সাইদুর নামের আরেক অপারেটর বেলা ৩টা ৫১ মিনিটে আবেদনটি সার্ভারে সাবমিট করেন। মাসুম আবু নামের অপারেটর ৩টা ৫৬ মিনিটে আবেদনটি যাচাই করেন। বিকেল ৪টা ৬ মিনিটে আবেদনটি অনুমোদন করেন আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন। পরদিন ই-পাসপোর্টটি প্রিন্টে চলে যায়। ই-পাসপোর্ট বাস্তবায়নকারী জার্মান কোম্পানি ভেরিডোজ জার্মানি থেকে প্রিন্ট করে আনার পর ওই বছরের ১ জুন একজন এএসপি পাসপোর্টটি বুঝে নেন। শাহেনা হক বর্তমানে জার্মানিতে ওই কোম্পানিতে কর্মরত।