ইমন হোসেন গাজী নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদের আদালত এই আদেশ দেন।
একই দিন ব্যবসায়ী ইশতিয়াক মাহমুদকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় অভিনেত্রী শমী কায়সার ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গান বাংলার চেয়ারম্যান কৌশিক হোসেন তাপসকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াকের আদালত এই আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, ইমন হোসেন গাজী হত্যা মামলায় গত ২ নভেম্বর আদালত রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ও জুনায়েদ আহমেদ পলককে সাত দিনের রিমান্ড দেন। রিমান্ড শেষে গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক মো. মাহাবুল ইসলাম। পরে তিনি মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ওই তিনজনকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশ দেন আদালত।
গত ২২ আগস্ট রাশেদ খান মেনন, ২৬ আগস্ট ইনু এবং ১৪ আগস্ট পলককে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার চিটাগাং রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ইমন হোসেন গাজী। ওই ঘটনায় তার ভাই আনোয়ার হোসেন এই মামলা করেন।
আদালত সূত্র আরও জানায়, ব্যবসায়ী ইশতিয়াক মাহমুদকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় গত ৬ নভেম্বর আদালত শমী কায়সার ও কৌশিক হোসেন তাপসের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানার উপপরিদর্শক মৃত্যুঞ্জয় পণ্ডিত মিঠুন। তিনি মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত শমী কায়সার ও তাপসকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশ দেন আদালত।
গত ৩ নভেম্বর তাপসকে ও ৫ নভেম্বর শমী কায়সারকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, হয়, গত ১৮ জুলাই কোট সংস্কার আন্দোলনে ইশতিয়াক মাহমুদসহ অন্যরা অংশ নেন। এ সময় উত্তরা পূর্ব থানাধীন আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাইস্কুলের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইশতিয়াকের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। এ সময় তার পেটে, পিঠে, হাতে, মাথায় গুলি লাগে। পরে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর ইশতিয়াক মাহমুদ মামলা করেন।
অন্যদিকে মাহাদী হাসান পান্থ হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মুক্তিযোদ্ধা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহাদ আলী ওরফে পানি আহাদ (৫৫) ও কদমতলী থানা আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইকবাল হোসেনকে (৫৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাত ৩টার দিকে কদমতলী থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপি জানায়, গত ১৯ জুলাই বিকেলে কদমতলী থানার রায়েরবাগ স্বপ্ন সুপার শপের সামনের সড়কে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেন মাহাদী হাসান পান্থ। এ সময় আন্দোলনকারীদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মাহাদী গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় গত ৮ নভেম্বর মাহাদীর বাবা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
কুমিল্লায় আ.লীগের ২ নেতা গ্রেপ্তার
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল ঝাউতলা ও কান্দিরপাড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহারের ভাতিজা কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর সাহরীন সায়ের ও কুমিল্লা মহানগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া।
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তিনটি করে মামলা রয়েছে।
গোপালগঞ্জে আ.লীগ কর্মী গ্রেপ্তার
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় মেহেদী হাসান রাসেল (৩৫) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে কাশিয়ানী উপজেলার ছোট খাগড়াবাড়িয়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাসেল ওই গ্রামের মৃত বালা মিয়ার ছেলে।
কাশিয়ানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফি উদ্দিন খান জানান, দিদার হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি মেহেদী হাসান রাসেল। রাসেল নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। রাসেলের বিরুদ্ধে কাশিয়ানী থানায় একাধিক চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।
হবিগঞ্জে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৯ জনকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় যুবলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রেখাছ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রেখাছ মিয়া বানিয়াচং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বানিয়াচং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখন পর্যন্ত ৯ ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট বানিয়াচংয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশের গুলিতে শিশুসহ ৯ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হন। এ সংঘর্ষে এক সাংবাদিক ও এক পুলিশ সদস্যও প্রাণ হারান।
২২ আগস্ট নিহত শিশু হাসানের বাবা বাদী হয়ে এই ঘটনায় ১৬০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।