সিলেটে গৃহশিক্ষকের ক্ষোভ থেকেই শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন (৫) হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছে পুলিশ। আলোচিত এই হত্যার পেছনে আর কোনো কারণ আছে কি না, তা উদঘাটনে গ্রেপ্তার চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শামসুল আরেফিন জিহাদ ভূঁইয়া চার আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে সিলেট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী মো. আবু জাহের বাদল পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিলেটের কোর্ট ইন্সপেক্টর জামসেদ আলম খবরের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে অংশ নেন বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল খালিক, মো. আশিক উদ্দিন, খায়রুল আলম বকুল ও রাজন দেব। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন শহীদুল ইসলাম।
গতকাল রবিবার (১০ নভেম্বর) নিখোঁজের সাত দিন পর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার নিখোঁজ শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার ভোর ৪টার দিকে তাদের বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ডোবা থেকে মুনতাহার লাশ সরানোর সময় প্রতিবেশী আলিফজানকে (৫৫) হাতেনাতে আটক করে স্থানীয় জনতা। এরপর অভিযুক্ত আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরা হচ্ছেন মুনতাহার গৃহশিক্ষক শামীমা বেগম মার্জিয়া (২৫), ইসলাম উদ্দিন (৪০), নাজমা বেগম (৩৫)। চারজনকে সোমবার আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বীরদল গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে মুনতাহা আক্তার জেরিন ৩ নভেম্বর বেলা ৩টার দিকে নিখোঁজ হয়। খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান না পেয়ে ওই দিন রাতে কানাইঘাট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মুনতাহার বাবা। এরপর স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও ফেসবুকে মুনতাহার সন্ধান চেয়ে ছবিসহ তথ্যাবলি প্রকাশ করা হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। মুনতাহার সন্ধান না পেয়ে তার বাবা শামীম আহমদ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মুনতাহাকে অপহরণ করেছে বলে কানাইঘাট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, মামলার পরই রবিবার রাতে সন্দেহমূলকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশু মুনতাহার গৃহশিক্ষক ও প্রতিবেশী শামীমা বেগম মার্জিয়াকে থানায় নেয় পুলিশ। এ সময় তার আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে মার্জিয়ার বাড়িতে মুনতাহার সন্ধানে তল্লাশি চালান স্থানীয়রা। ভোর ৪টার দিকে মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশে তল্লাশি চালানোর একপর্যায়ে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হয়ে বাড়ির পাশে পুকুরপাড়ে আসতে দেখেন মুনতাহার স্বজনরা। এ সময় তাকে আটকাতে চাইলে সে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরে স্থানীয়রা গিয়ে কাদামাটি মাখা মুনতাহার লাশ দেখতে পান। এ সময় মার্জিয়ার মাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। মুনতাহাকে হত্যার অভিযোগে রবিবার কানাইঘাট থানায় দায়ের করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, গৃহশিক্ষকতা থেকে বাদ দেওয়ার ক্ষোভে মার্জিয়া এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ কথা মার্জিয়া নিজেও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে ঘটনার কারণ ও বিস্তারিত মার্জিয়া আদালতে বলবেন বলে জানানোয় হত্যার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, সেটিও আলোচনায় এসেছে।
সিলেটের কোর্ট ইন্সপেক্টর জামসেদ আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘হত্যার কারণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত আর কেউ আছে কি না, এসব বিষয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আসামিদের আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা চাওয়ামাত্র রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।’
এদিকে নিখোঁজ মেয়ের লাশ পাওয়ার পর থেকে মুনতাহার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। মুনতাহা নিখোঁজের পর এক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছিল শুধু মুনতাহার ছবি আর তাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি। তুচ্ছ কারণকে কেন্দ্র করে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে হতবাক সিলেটসহ গোটা দেশের মানুষ। মুনতাহার প্রবাসী ভাই ও আত্মীয়রা মুনতাহার মৃত্যুতে তাদের কষ্টের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন। দেশ ও প্রবাসে অনেকেই ছোট্ট মুনতাহার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মানুষের নিষ্ঠুরতার কারণে। অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।