
দীর্ঘ ১৯ বছর আইনি লড়াইয়ের পর হাইকোর্টের নির্দেশে বেদখল হওয়া ২০ একর জমি ফিরে পাচ্ছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার আলতাফুন বেগম (৭৮) নামে এক বৃদ্ধা।
হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি যাবিদ হোসেন গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) যৌথভাবে এ রায় ঘোষণা করেন।
আলতাফুন বেগম পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলারহাট ইউনিয়নের বীরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, আলতাফুন বেগমকে তার স্বামী খামির উদ্দিন প্রধান ১৯৭২ সালে মোহরানা হিসেবে ২০ একর জমি লিখে দেন। ২০০৫ সালে মারা যান খামির উদ্দিন প্রধান। স্বামী মারা যাওয়ার সাত দিন পর আলতাফুনের সতিনের ছেলে (স্বামীর আরেক বিয়ে করা স্ত্রীর ছেলে) রাজিউল ইসলাম প্রধান সেই জমির জাল দলিল ও খতিয়ান তৈরি করে পুরো জমি দখল করে নেন। জমির দখল ফিরে পেতে আলতাফুন বেগম পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বাধ্য হয়ে ২০০৭ সালে জমি ফিরে পেতে পঞ্চগড় জেলা আদালতে একটি মামলা করেন। পরে আদালতে রাজিউল ইসলাম জাল সনদ ও খতিয়ান উপস্থাপন করলে আদালত জাল দলিল শনাক্ত করেন। ২০১৩ সালে আদালত আলতাফুনকে জমি ফিরিয়ে দিতে রায় দেন। কিন্তু জমি ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান রাজিউল ইসলাম। জমির দখল না ছেড়ে তিনি বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে জমি ভোগলদখল করতে থাকেন। সেই সঙ্গে জমি দখলে রাখতে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর গত সোমবার বৃদ্ধা আলতাফুনকে জমি ফিরিয়ে দিতে রায় দেন হাইকোর্ট।
এ মামলায় বৃদ্ধার পক্ষে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান ও বিবাদীপক্ষে রাশেদুজ্জামান বসুনিয়া আইনজীবী হিসেবে লড়াই করেন।
বিবাদী রাজিউল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘আমি এই জমি ৪৫ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছি। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার সৎমা জানায় আমার বাবা নাকি তাকে এই ২০ একর জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। আমি কারও জমি দখল করিনি। আমার বাবা আমাকে জমি দিয়েছেন, আমি ভোগদখল করে আসছি। পরে আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন তিনি। মামলার রায় তিনি পেলে আমি আপিল করি। হাইকোর্টের আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আমি আবারও আপিল করব। আমি কারও জমি দখল করিনি।’
বৃদ্ধা আলতাফুন বেগম বলেন, ‘জমি ফেরত পেতে আমি পঞ্চগড় আদালতে মামলা করি। নিম্ন আদালতের বিচারক আমাকে জমি ফিরিয়ে দিতে রায় দেন। কিন্তু সেই জমি আমাকে ফেরত না দিয়ে ভোগদখল করেছে রাজিউল। কৌশলে জাল দলিল তৈরির অপবাদ থেকে বাঁচতে তিনি হাইকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন। দীর্ঘ ১৯ বছর পর আমি জমি ফিরে পেতে যাচ্ছি, তাই আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান বলেন, ‘আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। দীর্ঘ লড়াই শেষে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। হাইকোর্ট নিম্ন আদালতকে জমি ফিরিয়ে দিতে এবং আদালতে বিবাদীপক্ষের জাল দলিল উপস্থাপন করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।’