ঢাকা ৩১ ভাদ্র ১৪৩১, রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বৃদ্ধ মায়ের ভাঙা চশমাটা আর ঠিক হলো না!

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪৭ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৪:২০ পিএম
বৃদ্ধ মায়ের ভাঙা চশমাটা আর ঠিক হলো না!
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

শাশুড়ি : বউমা কোথায় তুমি, একটু এদিকে আসবা?
বউ : কী হইছে, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই এত চেঁচামিচি শুরু করতেছেন কেন?
শাশুড়ি : বউমা ক্ষুধা লাগছে কিছু দিবা? 
বউ : আপনার টেবিলে না মুড়ি আছে, মুড়ি খান।
শাশুড়ি : আজ একসঙ্গে দুইটা দাঁত খুব ব্যথা করতেছে, মুখে মুড়ি নাড়তে কষ্ট হয়। বাসায় অন্যকিছু থাকলে দাও।
বউ : পানি আছে তো নাকি? মুড়ি পানিতে ভিজিয়ে খান।
শাশুড়ি : কী ঠাণ্ডা পড়তেছে দেখেছো? ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুড়ি খাব কীভাবে বল?
বউ : ঘরে আর কিছুই নাই। মুড়ি খাইতে পারলে খান, না হয় চুপ থাকেন। কিছুক্ষণ পর রান্না হয়ে যাবে, রান্না হলে ভাত খাইয়েন।
শাশুড়ি : বউমা একটু চিনি দাও, মুড়ি পানিতে ভিজিয়েছি, চিনি ছাড়া কি মুড়ি খাওয়া যায় বলো? কেমন পানসে পানসে লাগে! একদম বিস্বাদ!
বউ : কী সুন্দর কইরা কয় বিস্বাদ! এত শুদ্ধ কওনের কী আছে? আর শুনেন, চার দিন ঘরে চিনি নাই। টাকা শেষ হয়ে গেছে, এজন্য চিনি আনতে পারছি না।
শাশুড়ি : আচ্ছা বউমা, না থাকলে আর কী করবা। ঠিক আছে আমি চিনি ছাড়াই খেতে পারব, তুমি তাড়াতাড়ি রান্না কর। গতকাল তোমার রান্নাবান্না করতে করতে অনেক লেট হয়ে গেছে যার কারণে আমার নাতি না খেয়ে স্কুলে গেছে।
বউ : কী দরদ দেখাচ্ছে! মনে হয় আমার সন্তানের জন্য আমার চেয়ে তার দরদ বেশি! যতসব ঢং! এই আপনে চুপ থাকেন তো, একটু রান্না করতে দেন। আপনার সঙ্গে বকবক করুম, না রান্না করুম। উফ কী বিরক্ত!
শাশুড়ি : ঠিকই তো, আমি তোমাকে খুব বিরক্ত করতেছি। আর কিছুই কমু না মা, তুমি রান্না কর।

দুপুরবেলা বউমার মোবাইলে কল আসে। তখন বউমা ঘরে ছিল না। বৃদ্ধ মা চশমাটা চোখে দিয়ে মোবাইলে আসা কল রিসিভ করল।

ছেলে : হ্যালো, মা কেমন আছো তুমি?
মা : হ্যাঁ বাবা খুব ভালো। তুমি কেমন আছো?
ছেলে : মা আমিও খুব ভালো। আর শুনো আগামী মাসের ১ তারিখ নতুন একটা ব্যবসা করতে যাচ্ছি, তুমি দোয়া কইরো। মা : হ্যাঁ বাবা, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করবেন। ঠিকমতো চলাফেরা করবা। আর পারলে বউমাকে কিছু টাকা বাড়িয়ে দিও। ঘরে চিনি নাই, নাতি তো অনেক মিষ্টির পাগল। আজ চারদিন নাকি চিনি শেষ হয়ে গেছে।
ছেলে : মা গত মাসে ১৮ হাজার টাকা দিয়েছি। বাড়িতে তিনজন মানুষ এই টাকা দিয়েও হয় না? ঠিক আছে সামনের মাসে দুই হাজার টাকা বাড়িয়ে দেব। আর শুনো, তোমার বউমা কোথায়?
মা : বউমা সারাদিন কাজ করে কিছুক্ষণ আগে গোসল করতে গেছে।
ছেলে : আপনার কোনো সমস্যা হয় নাতো মা?
মা : না বাবা, আমি ভালোই আছি। বাবা তুমি খাবার ঠিকমতো খাও তো?
ছেলে : হ্যাঁ মা ঠিকমতো খাই। আচ্ছা শুনো ডিউটির সময় হয়ে যাচ্ছে আমি গেলাম।

কিছুদিন পর বৃদ্ধ মায়ের চশমাটা ভেঙে যায়। চশমার জন্য কোরআন শরিফ পড়তে পারছেন না। বউমাকে দুইদিন চশমার কথা বলেছে, বউমা হ্যাঁ বা না কিছুই বলেনি। আজ তৃতীয় দিন আবার একই কথা।

শাশুড়ি : বউমা আজ দুইদিন কোরআন শরিফ পড়তে পারছি না। চশমাটা যদি ঠিক করে দিতে?
বউ : আপনার ছেলে আজকে মাত্র টাকা পাঠাইছে। ব্যাংক থেকে টাকা না উঠালে কীভাবে চশমা ঠিক করব?
শাশুড়ি : আচ্ছা আজকে তো ব্যাংকে যাবে, আমার চশমাটা নিয়ে যেও, একটু ঠিক করে আনলে আমি কোরআন শরিফ পড়তে পারব।
বউ : দেন (রাগে)। 

কিছুক্ষণ পর বউমা বাজারে যায় এবং ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে মাসিক বাজার করে বাসায় চলে আসে। চশমাটা আর ঠিক করতে মনে ছিল না। এদিকে বউমার বড় ভাই কবির সাহেবের কিছু টাকা প্রয়োজন। টাকার জন্য বোনকে কল দিলে তিনি বিকাশ করে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠিয়ে দেন। বউমা বাসায় গিয়ে বাজার থেকে নেওয়া সবকিছু গোছালেন। শাশুড়ি তখন ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুম থেকে উঠে হাসি মুখে বউমার কাছে চশমাটা চাইলেন। 

শাশুড়ি : বউমা কখন আসছো বাজার থেকে?
বউ : এক ঘণ্টা হয়ে গেছে।
শাশুড়ি : মা চশমাটা দাও, জোহরের নামাজ পড়ে কোরআন শরিফ পড়ব। আজ দুইদিন কোরআন শরিফ পড়তে পারি না।
বউ : আম্মা চশমাটা ঠিক করতে মনে ছিল না।
শাশুড়ি : কী কও মা!
বউ : সত্যি মনে ছিল না।
শাশুড়ি : আচ্ছা মনে না থাকলে আর কী করবা? ঠিক আছে কালকে নিয়া ঠিক করে দিও।
বউ : আম্মা টাকা তো সব শেষ। দুই হাজার টাকা আছে ওই টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল দিতে হবে। আর বড় ভাই একটা সমস্যায় পড়ে গেছে, ভাইকে কিছু টাকা ধার দিছি। বড় ভাই টাকা দিলে আপনার চশমা ঠিক করে দেব।
শাশুড়ি : তোমার ভাই কখন টাকা দেয় না দেয় ঠিক আছে কী! পারলে কারও কাছ থেকে দুই তিনশত টাকা ধার নিয়ে আগামীকাল চশমাটা ঠিক করে দিও।
বউ : এত তাড়াহুড়ো করার কী আছে? সামনের মাসে না হয় নতুন একটা কিনে দেব।
শাশুড়ি : তুমি বুঝবা কী? তোমার যা ইচ্ছে তাই কর। আমি কিছুই বলব না।

মনে কষ্ট নিয়ে কিছু না বলেই চলে গেলেন। যাওয়ার সময় ছোট্ট করে ‘আল্লাহ’ শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন। এই শব্দটার অর্থ বউমার বোঝার ক্ষমতা হয়নি। রাতে কল আসে বাবার বাড়ি থেকে। বউমার ছোট বোনকে দেখতে ছেলেপক্ষ আসবে। সেখানে তার থাকাটা জরুরি। মা ও ছোট বোনের অনুরোধে পরদিন বউমা তার বাবার বাড়ি যায়। সঙ্গে শাশুড়ি আর ছোট্ট ছেলে মিয়াদ। যাওয়ার পথে দুর্ভাগ্যক্রমে বাস দুর্ঘটনায় সবাই আহত হয়। বৃদ্ধ মা আর মিয়াদের তেমন কিছুই হয়নি। কিন্তু বউমার চোখে ভাঙা গ্লাস লেগে জীবনের তরে অন্ধ হয়ে যায়! এখন বউমা অবশ্য চশমা পরে। খুব বড় মাপের চশমা। কিন্তু চোখে দেখার যোগ্যতা চিরতরে শেষ হয়ে যায়।

ভাগ্য মানুষকে কোথায় নিয়ে যায় তা আল্লাহ জানেন। যে মানুষটা বৃদ্ধ শাশুড়ির ভাঙা চশমা ঠিক করে দিতে চায়নি। আজ সে মোটা কালো চশমা চোখে দিয়ে হাঁটে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বোঝার তৌফিক দান করেন আমিন।

ঘামের গ্রাফিতি

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ পিএম
ঘামের গ্রাফিতি

ভেতরে বৃষ্টি- বাইরে তুমুল স্রোত
হাওয়াদের অটোক্র্যাটিক পাখনা ভাঙছে বাতাসে-
মৃত্যুর ভেতরে গান! উপড়ানো আঙুলের পাখনায় 
ফুটছে পাখিদের জন্মোৎসব 

মানুষ জেগে গেলে হাওয়ারা খুলে রাখে পায়ের পাতা

রক্তের ভেতরে দৌড়ে আসে জিজ্ঞাসাচিহ্ন-
মুক্তির করতলে ঘামের গ্রাফিতি-
বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মুহূর্তেরা বারুদের ঘ্রাণে
একে যায় নতুন বাংলাদেশ।

সংশোধন

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩১ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ পিএম
সংশোধন

কোনো একদিন কাদাময় পথে হাঁটতে গিয়ে
দু-এক ফোঁটা কাদা ছিটকে এসে বসে গেল বুকের ভেতর
সেই থেকে আমি ধোয়া-ধোয়া-ধোয়া
শত ধোয়ার তুলসীপাতা হতে চেয়ে
কতবার শ্রাবণের মেঘে দিয়েছি সাঁতার
কতবার সূর্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
নিজেকে আমূল ঝল্সে নিয়েছি।

কষ্টি পাথর। আমার কষ্টি
এভাবে আর কতকাল নিজেকে পোড়ালে বলো
বিশুদ্ধ মানুষ হব আমি?...

রাধাচূড়া

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ পিএম
রাধাচূড়া

হরিৎ প্রাচীরে লালচে-হলুদ ফুল 
পাপড়ির ভাঁজে ঝলমলে দ্যুতি ছড়াচ্ছে, 
রাজন্যের তাজ স্বরূপ সূবর্ণ তার কেশর সজ্জা
ডাল যেন মরকত মণি, পাংশুবর্ণ তার কায়া
নিজেতে মগ্ন পথিকে ভাবে অমূলক প্রহসন,
দূষিত নগরীর অভিমুখে রূপচর্চার আয়োজন
বৃক্ষকূলের পাতাঝরা এক অভিসম্পাত; 
চারদিকে যেন ঝলসানো চৈত্রের খরা। 
বিদেশিনী গুল্মের রঙ্গন সমাহারে নেই তৃষ্ণা 
নিজের সৌন্দর্য বিলিয়ে দেয় অকপটে 
মানুষের হৃদয়ে শুভ্রতা দিতে সে ছাড়িল কানন 
লোকালয়ে এসে গড়েছে সে আশ্রয়,
রূপের লাবণ্যের গড়িমসি নেয় এক চিলতে
কল্পনায় সে কনক কিংবা কৃষ্ণচূড়ার সহোদরা! 
খচিত সেই নগর রূপসীর নাম রাধাচূড়া।

পদচিহ্ন

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৯ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
পদচিহ্ন

কাগজের মলাটে
    তোমার হৃদয়ের ভাঁজে-ভাঁজে 
থাকে, অনাহত জীবন...

    চোখের মাঝে রক্ত ঝরে
অঝোরে চারপাশে,
     পৃথিবীর বুকে রক্তচোষা দেয়াল...

মাটির ফুল ফুটেছে 
     পরিত্যক্ত অট্টালিকায়
তোমাদের চোখের আড়ালে,
      এই শহরের বুকে রেখে যায়
 কত পদচিহ্ন...
        নিজেরই অজান্তে।

সম্বোধন

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
সম্বোধন

জনাব,
আজ শুক্রবার, আমি তো ছুটিতে,
লইব সময় খানিক ঘুম থেকে উঠিতে!
আপনি কি জেগেছেন নাকি শয্যায়?
কীভাবে যে বলিব কিঞ্চিৎ লজ্জায়!
প্রাতঃকাজ সারিয়া একটু বেলায়
যখন বেরোবেন টানিতে বিড়িখানা,
মুঠোফোনে লইবেন খবর, ঘটিয়াছে কিছু কি-না!
না না তেমন তাড়া নেই, ধীরে লইলেই হইবে
যখন বিষয়টা সবাই সবিস্তারে কইবে!
চঞ্চল করিবেন না মন, কহিলাম বলে কথাটা
বুঝিবেন যেন, এটাই হলো সততা!
জ্ঞানীগুণীরা সবাই চলিয়াছে ধীরে
আমরা কেন হারাইয়া যাইব, বর্তমানের ভিড়ে?
যে বোঝে সে অপেক্ষা করিবে আমার মুখপানে
আমি যে অনন্য, গুণীমান্যিরা তা জানে!
আবারও বলি, ভাইসাব
সময় করিয়া যদি লইতেন খবর
সর্বজনের উপকার হইত জবর!