এই বর্ষায় আকাশজুড়ে মেঘ-মেদুরতা। সারা দিন মুষলধারা বইছে। ঝিরিঝিরি বর্ষণের অবিরত ধারায় জলের শীতলা এসে মাঝে মাঝে ঝাঁপটা দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষণিক পর পর মেঘ তার ছন্দায়িত শব্দে আরও বরিষণের জানান দিচ্ছে। তাই বর্ষার জলে নিজেকে আজ সমর্পণ করলাম। বেড়িয়ে পড়লাম বৃষ্টিস্নানে। মাঠ পেরিয়ে বন। মেঠোপথ ধরে ছুটে ছুটে বৃষ্টির ছোঁয়া উপভোগ করলাম।
বর্ষার জলে অবগাহন করলাম। আর প্রকৃতির রূপছন্দে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। এখন বর্ষায় উজ্জীবিত গাছেরা। জলের স্নিন্ধ ছোঁয়ায় তার সতেজতা এবং রূপলাবণ্য ফিরে পেয়েছে। প্রকৃতির নৈসর্গিকতা ও মিষ্টতা সর্বত্র বিরাজিত।
এই বর্ষায় যৈবতীকন্যা তার জানালা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার জলে এক ভিন্ন রকম শিহরণ বয়ে যাচ্ছে তার পুরো অবয়বজুড়ে।
বর্ষার জলের ছিটা তার ভেতরটা শীতল করে দিচ্ছে। চোখ চলে যাচ্ছে দূরে কোথাও। পাশের পদ্মবিলে হাওয়ায় ঝিরিঝিরি ফোটা পড়ে জলে তরঙ্গ সৃষ্টির এক অপরূপ মায়াময় আবহ তৈরি হচ্ছে। তার চোখ সরাতে পারছে না। চোখের দৃষ্টিতে একটি ভেজা কাক দেখতে পেল। কদমের ডালে অনবরত ভিজে চলেছে কালো কাক।
কদমের মোহময়ী ঘ্রাণের দ্যুতি চারদিকে ছড়িয়ে পাগল করা পরিবেশ তৈরি করেছে। যৈবতীকন্যার মনটাও যেন ছট ফট করছে। ভরা বর্ষায় ভরা যৌবনা মন কী করে ঘরে থাকে। ছুটে যেতে মন চায়। বর্ষার জলে শরীরের সমস্ত অনুভূতি বিলিয়ে দিতে চায়। তবে ঘর ছাড়া হলে যে আর ঘরে ফেরা হবে না যৈবতীকন্যার। দূরে আরও দূরে কোথাও বন-বাদাড়ের সবুজ অরণ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলবে সে। পাখ-পাখালির সঙ্গে সখ্য গড়বে।
উড়ে যাওয়া বনের পাখির মতো কারও ডানা মেলে দিগ্বিদিক ঘুরবে। পাখি হয়ে খাঁচায় বন্দি হতে তার মন সায় দেয় না। ভরা যৌবনায় বর্ষার জলে নিজেকে বিলিয়ে দিতে মন চায়। অদূরে বর্ষায় বিলের স্বচ্ছ জলে মাছে মাছে জলকেলি করছে। একে অপরের সঙ্গে ভাববিনিময় করছে। জল শূন্যতার খরালিতে পড়ে তৃষিত তিতিক্ষায় বর্ষার জলে এত দিন অপেক্ষায় ছিল যৈবতীকন্যার মতো। এখন জলের ছোঁয়ায় আনন্দ-উল্লাসে জলের তলে একে অপরের সঙ্গী হচ্ছে।
পাতায় পাতায় টুনটুনি পাখি লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। বেগুন গাছের পোকামাকড় ধরে খাচ্ছে। যেখানে বৃষ্টির পানি জমে আছে তাতে একটু শরীরটা ভিজিয়ে নিচ্ছে। অপরূপ এ দৃশ্য শুধু বর্ষার প্রকৃতিতেই মেলে।
মেঘের পসরা আকাশজুড়ে। কালো-সাদা মেঘ পেজো তুলার মতো ছোটাছুটি করছে। বৃষ্টির জলে বাগান ভিজে গিয়ে তার মাটি কাদার সোদামাখা ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। চারদিক যেন নিস্তব্ধ নির্জনতায় ভরে আছে।
দূরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির প্লাবিত জলে কৈশোরের দল দাপাদাপি করছে। কেউ আবার খরস্রোতা নদীর পাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
আবার পাড়ে উঠে লাফ দিচ্ছে স্বচ্ছ জলের ওপর। আনন্দ-কোলাহল ঘিরে আছে কৈশোরের জল-জলালি। বর্ষার জলে অনেক সৃষ্টি সুখের উল্লাস মেলে। তবে বৃষ্টি হলে পুকুরের পানি নিচ থেকে উষ্ণ হয়ে ওঠে। তাতে শরীরের ভেতর একটা আরাম আরাম রোধ অনুভূতি আসে। বালক-বালিকারা অদম্য সময়ে জীবনের নতুনত্ব খুঁজে পায় বর্ষার জলে।