প্রকৃতিতে বর্ষাকালে আকাশ থাকে অনেক খিটমিটে এবং রোষে,
বলতে গেলে ঘন কালো মেঘের পাহাড় স্বীয় সীমানায় যেন পোষে।
চোখের একটু পলকে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায় জলস্ফীতির বর্ষা,
খেটে খাওয়া মানুষের কাছে বন্যা অত্যন্ত এক ধারাল ভীতির বর্শা।
দিনে যেমন রাতেও তেমন অনর্গলভাবে ঠিক বৃষ্টির ধারা ঝরে,
চকচকানো খোলাজলে মাছগুলো আনন্দে সুখে শুধু লাফালাফি করে।
গুড়ুম গুড়ুম ডাকে আকাশটা যেন বাঁধভাঙা জলের বিপদ খেলা,
ঝোড়ো বাতাসে গরিব মানুষের দুলতে থাকে বাঁশ ও টিন ঘরের চালা।
আলোর পৃথিবী কালো হয়ে কান্নার করুণ শব্দে ভরে চারপাশে,
যেদিকে তাকাই জলে থই থই করে- চোখ ফেরাতে যেন জলে বাড়ি ভাসে!
বাঁচার জন্যে অনেকে কোনোমতেই জীবন নিয়েই বেড়িয়ে পড়ে,
জলের ঘূর্ণিপাকেতে মুরগিগুলো কিছুক্ষণ ঝাপটাতে ঝাপটাতে মরে।
জলের স্রোতে ভেসে যায় গ্রামের পুকুরে থাকা নানা জাতের মাছগুলো,
আর হারিয়ে যায় হাঁসের বাচ্চা! মুখ থুবড়েই পড়ে থাকে পাকুড় গাছগুলো।
গরু-ছাগল ভেসে যায় জলে- ভাগ্য পরিহাসে মরে পোয়াতি নারীও,
ঈশ্বর মুখ লুকিয়েই হাসে- মানুষের সাথে ধরেছে নির্দয় আড়িও।
এক নিমিষে বাড়ে জলরাশি! করুণ ভয়ার্তে মানুষ খুব হতবাক,
মরণের শোক সংবাদ যেন মাথার ওপর- কাক পাখির কত ডাক।
বৃদ্ধ কিংবা শিশু মরা মানুষেরা ভাসে জলে- শকুনে খায় ঠুকরে ঠুকরে,
এমন বিমূঢ়ে দৃশ্য দেখে বুকের ভেতরটা কাঁদতে থাকে ডুকরে ডুকরে।
কারও কারও রাত কিংবা দিন কাটছে নৌকায় অথবা কলাগাছের ভেলায়,
কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছে ঘরের চালায়- অতিরিক্ত জলের ঠেলায়।
ঘরের শুকনো ধান ভেসে গেছে জলে- কচি চারাসহ ডুবে গেছে ভুঁই,
বন্যার গর্ভে জীবন- জল আয়নায় এত কষ্ট কোথায় লুকিয়ে থুই?
অনাহারি আজ বানভাসি- অভাবে কঙ্কাল দেহে বেঁধেছে রোগের বাসা,
ভিটেমাটি জলে গেছে- থেমে গেছে জীবনের সাজানো রঙিন আশা।
বন্যায় মানবতার জন্যে সরকারি সাহায্য এসেছিল যতটুকু,
পিশাচ নেতাদের কুকৌশলে বানভাসি যারা- তারা পায়নি ততটুকু।
রাস্তাঘাট ডুবে গেছে- সকালের সূর্যটাও ছড়ায় না আলো মোটে,
সহায় হও হে মহান রব- বানভাসি মানুষের মুখে যেন হাসি ফোটে।
‘মানুষ তো মানুষের জন্য, ফের মানবতাও’ এসো তাই পাশে দাঁড়াই,
বানভাসি মানুষগুলোকে সাহায্য সহযোগিতা করে দুটো হাত বাড়াই।