ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রিয় সুনীলবাবু

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম
আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫৩ পিএম
প্রিয় সুনীলবাবু
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

অচীনপুরে কেমন আছো জানি না। তবে তোমার প্রতি আমার যে ভালোবাসার তীব্রতা, সেই ভালোবাসাগুলো জানান দিয়ে যায়, সুনীল বাবুরা কখনো খারাপ থাকতে পারে না। অমরত্বের যে হেমলক তুমি পান করেছো, তা তোমাকে অনন্তকাল স্বর্গের সিংহাসনে বসিয়ে রাখবে, এ আমার অগাধ বিশ্বাস! তোমাকে চর্মচক্ষুতে একটাবার দেখার সুযোগ হলো না, আমৃত্যু এ আক্ষেপ আমাকে পোড়াবে।

খুব ইচ্ছে করে কলকাতার ম্যান্ডেভিল গার্ডেনসের পারিজাত ফ্ল্যাটে ছুটে যাই, সেখানে আজও তুমি জীবন্ত হয়ে আছো। ইচ্ছে করে তোমার অস্তিত্বকে ছুঁয়ে দিয়ে আসি সেখানে গিয়ে। তোমার সহধর্মিণী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তোমাকে নিয়ে অনেক অনেক গল্প করার ইচ্ছে জাগে জানো। কিন্তু চাইলেই যে অনেককিছু সম্ভব হয় না। ছোট হয়ে জন্মানোর এ এক অভিশাপ!

আচ্ছা সুনীলবাবু, তোমার প্রিয় পদ্মা নদীটা আজো যে একেক সন্ধ্যেয় তোমার জন্য কাঁদে, তুমি কী ভিনগ্রহ থেকে শুনতে পাও সেই কান্নার আওয়াজ? দেশভাগের কষ্ট তোমাকে কী প্রবলভাবে ছুঁয়ে গেছে, তোমার অনেক লেখা পড়ে জেনেছি। ভীষণ ইচ্ছে, মৃত্যুর আগে যদি দেখে যেতে পারতাম দুটো দেশ আবার এক হয়ে গেছে, কাঁটাতারের বেড়াটাকে উপড়ে ফেলা হয়েছে, আবার হিন্দু মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুধুমাত্র মানুষের পরিচয়ে বেঁচে থাকছে! এমনটা হওয়ার নয় জানি, তবু ভীষণভাবে স্বপ্ন দেখি। মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা পাশাপাশি থাকলে যতোটা সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা হয়, তামাম দুনিয়ার সৌন্দর্য জড়ো করলেও এরচেয়ে বেশি সুন্দর হবে না!

একটামাত্র ছোট্ট পৃথিবী, তার মধ্যে কেন এত দেশভাগ, কাঁটাতারের বেড়া, এ হিসেব আমি বুঝি না। অস্থায়ী মানবজনমে কেন সবাই ভালোবেসে একসঙ্গে পথ চলতে পারে না, বলতে পারো? তুমি নিজে দেশভাগ হতে দেখেছো, আমার চেয়ে তোমার যন্ত্রণা অনেক বেশি। তুমি নিজেও এ বাস্তবতার শিকার। কিন্তু আমি না দেখেও দেশভাগের যন্ত্রণা যতোটা অনুভব করি, আমার এত বছরের জীবনে এর চেয়ে বেশি যন্ত্রণাবোধ অন্য কোনো কারণে হয়নি কখনো!

দেশভাগের পর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তুমি এপার বাংলায় বহুবার এসেছো, এমনকি ওপার বাংলাকে ভালোবাসলেও কোনোদিন তাকে জন্মভূমির স্বীকৃতি দিতে কিংবা নিজের দেশ ভাবতে পারোনি, আমি জানি। দেশভাগের পর একবার যখন তুমি তোমার মাদারীপুরের সেই মাঈজপাড়া গ্রামে গিয়েছিলে, কেউ তোমাকে চিনতে পারেনি। সেই বাঁশ বাগান, বেগুন লঙ্কার ক্ষেত, ঘাসফুল, সন্ন্যাসীর মতো নদী, মায়াবতী সন্ধ্যে, কিছুই ছিলো না সেখানে। তোমার উঠোনের সেই লম্বা গাছের ডালে আর পেঁচা ডাকে না, জানো। তোমার মায়ের রান্নাঘর, কুপির আলোয় ছোট্ট সংসারের ছায়া, সন্ন্যাসী নদীর কিনারের সেই বাড়ি সবটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে আজ। সবটা জুড়ে অদ্ভূত এক পবিত্র শূন্যতা!

আমি জানি, তুমি ভিনগ্রহে বসেও পদ্মানদীর সেই স্টিমারের ভেঁপু, বর্ষার জলে ভেজা কচুরিপানা উঠোন, আড়িয়াল খাঁর তীর ধরে ছুটে বেড়ানো দুরন্ত কৈশোর, বাড়ির গাছপালা, পাখির বাসা, নির্জন পুকুর ঘাট, তুলসি তলা, সুপুরি গাছের সারি, মাটির দেয়ালে গাঁথা তোমার সেই বাড়ি, বাঁশের সাঁকো, পড়শি নদী, তোমার সেই জ্যোৎস্না মাখানো গ্রাম, সবকিছু খুব মিস করো। আজ আর পদ্মানদীতে মাঝরাত্রিরে কোনো নৌকা থেকে ভিনদেশি মাঝির গান ভেসে আসে না। শিশির পতনের নীরবতাগুলো কবেই হারিয়ে গেছে। তোমার দেখা সেই বাঁশের সাঁকোটাও ভেঙে গেছে কবে। উঠোনের জামরুল গাছটাও নেই, তোমার স্বপ্নে দেখা সেই ফৈজুদ্দিন নামের নৌকার মাঝিটাও মারা গেছে, তোমার মায়ের শেষ সম্বল দু'গাছা সোনার চুড়ি বন্ধক নিয়েছিলো যে চেতন স্যাকড়া, সেও জীবনের লেনাদেনা শেষ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। পাটক্ষেতে ফিসফিসানি, দিঘীতে ডুবন্ত চাঁদ দেখে মুগ্ধ হওয়া, ঝুরো বৃষ্টিতে দাপিয়ে বেড়ানো, উদ্দাম কৈশোর, প্রযুক্তির আবির্ভাবে এ সবকিছু হারিয়ে গেছে মাঈজপাড়া থেকে। গোয়ালঘরের পাশে মাঝরাতে যে বোবা কালা ভূতপ্রেত ডাকতো বলে তুমি ভয় পেতে, আধুনিক মানুষ আজ তাকে কুসংস্কার ভাবে।

তোমার কোমর ভাঙা প্রভা পিসীমা মারা গেছে সেই কবে। তোমার বাতাবি নেবুর গাছটাও মরে গেছে তোমার শোকে। ভরা বর্ষায় রান্নাঘর ডুবে গেলো বলে চিৎকার করা তোমার ঠাকুমা গত হয়েছে তোমারও আগে। তার ফ্রেমে বন্দী ছবি দেখে কত মন খারাপ হতো তোমার, কত নস্টালজিয়ায় ভুগতে তুমি, আমি জানি। তোমার ঠাকুর্দা মারা গিয়েছিলো তোমারও জন্মেরও আগে। তবু তুমি তোমার ঠাকুর্দাকে কল্পনায় নিজের মতো করে একটা অবয়ব দিতে। ভাবতে, তোমার ঠাকুর্দা হুঁকো হাতে দাওয়ায় বসে আছে, কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেলেই সে ভাবতো হয়তো তোমার বাবা ঘরে ফিরেছে। শহরে মাস্টারি করে সংসার চালানো তোমার বাবাকে আমি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই, তিনি একজন সত্যিকারের সংগ্রামী বাবা। আর তোমার আত্মত্যাগী মা, যে কিনা সংসারের স্বচ্ছলতার প্রয়োজনে নিজের শেষ সম্বলটুকু বন্ধক রেখেছিলো, সে দেবী হয়ে আমার হৃদয়ের মন্দিরে চির জাগ্রত!

রাজা-ভাত-খাওয়া ইস্টিশনে তুমি জীবনে একবারই তক্ষকের ডাক শুনেছিলে, মনে আছে সুনীল? সেই ডাকটা তোমার মনে এমনভাবে গেঁথে গিয়েছিলো যে, পরবর্তী জীবনে তুমি স্বপ্ন দেখতে বারবার খালের ধারে বটবৃক্ষে এক তক্ষকের বাসা, যে রোজ ঠিক সাত বার ডাকতো, একবারো ভুল হতো না কোনোদিন। আরো কত কী স্বপ্নে দেখতে তুমি, কিন্তু শেষ অব্দি ঘুমভেঙে নিজেকে আবিষ্কার করতে ম্যান্ডেভিল গার্ডেনসের সেই পারিজাত ফ্ল্যাটে। আজ আর দেশে বন্যা হলে কেউ জলপাইগুঁড়ি, মালদার দিকে আশ্রয়ের জন্য ছুটে যায় না, একটা কাঁটাতারের বেড়া শুষে নিয়েছে সমস্ত অধিকার। আর তোমার জীবদ্দশাতেই তুমি দেখে গেছো, তোমার সেই মাঈজপাড়া গ্রাম শুধু বদলেই যায়নি, বদলে গেলেও মেনে নিতে পারতে, কিন্তু তোমার সেই গ্রামটা একেবারে শূন্যে বিলীন হয়ে গেছে। আর কোনো চেনা মানুষ নেই সেখানে, কে কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না। এখন আর শেষ বিকেলে তোমার সেই চিরচেনা পুকুরঘাটে কোনো গ্রাম্য নারী জল সইতে যায় না। তোমার হাসাহাসির খোরাক যোগানো সেই শান্তি আর বিন্তী যমজ পিসী দেশভাগের পর কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না!

তোমার যে বন্ধু আজানের শব্দ শুনে জেগে উঠতো, যার সাথে তুমি অনেক ঝগড়া করতে, যে গাব গাছে উঠে তোমাকে ডাব পেড়ে খাওয়াতো, সেই বন্ধু 'আনোয়ার' যার নাম, তাকে তুমি হারিয়ে ফেলেছিলে ঐ খেলার বয়সেই, নদীতে তোমাদের গ্রামের অনেকটা অংশ ভেঙে গিয়েছিলো বলে। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তুমি তোমার ঐ বন্ধুকে কতটা যত্ন করে মনে রেখেছিলে, সে খবর আমি জানি!

তোমাদের গ্রামে এসে যখন তুমি কোনো চেনাজনকে খুঁজে পাওনি, কান্নায় দমবন্ধ হয়ে এসেছিলো তোমার, অনেক চেনা নাম ধরে ডাকতে ইচ্ছে করেছিলো কিন্তু তুমি পারোনি। এ যে কী ভীষণ যন্ত্রনার! রাজ্জাক হাওলাদার নামের লোকটা, যার জন্মের আগেই তুমি মাঈজপাড়া ত্যাগ করেছিলে, যার সাথে তোমার কোনো সম্পর্কই ছিলো না, তবু তাকে দেখে তোমার খুব আপন মনে হয়েছিলো, শুধু সে মাঈজপাড়ার সন্তান বলে। শেঁকড়ের টান তো এমনই হয় সুনীলবাবু!

একবার তোমার এক সঙ্গীকে নিয়ে যখন তুমি মাঈজপাড়া যাচ্ছিলে সে তোমায় বলেছিলো, 'যে নার্সিংহোমে জন্মায়, সে কী বারবার সেখানে ফিরে আসে?' তুমি সেদিন তার কথার কোনো উত্তর দাওনি। আসলে শেঁকড়ের টান টা উপলব্ধি করার বিষয়, এটা কাউকে ব্যাখ্যা করে বোঝানো যায় না!

তোমার সেই গ্রামের কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই, এ নিয়ে ভীষণ কষ্ট তোমার। শুনেছি, ছেলেকে পড়াতে বসালেই তুমি তার চোখে গল্পে গল্পে সেই গ্রামের ছবি এঁকে দেওয়ার চেষ্টা করতে। তুমি চাইতে, সে তোমার জন্মস্থানকে মনে রাখুক। তোমার ছেলে কতটুকু মনে রেখেছে জানি না, তবে তোমার সেই গ্রামটাকে আমি ছবির মতো মনের খু্ব গভীরে এঁকে রেখেছি। খুব ইচ্ছে হয় জানো, তোমার সেই জন্মস্থান তোমার পূণ্যভূমি মাঈজপাড়া ছুটে যেতে। যদি একবার সেই মাঈজপাড়ার মাটি মাথায় ছোঁয়াতে পারতাম, জীবন ধন্য হয়ে যেতো। কিন্তু তুমিই তো বলেছো, মাঈজপাড়ার কোনো চিহ্নই এখন আর অবশিষ্ট নেই। তাই আমারও আর যাওয়া হয়নি কোনোদিন। প্রসঙ্গক্রমে তোমার একটা কবিতা মনে পড়ে গেলো-

"বগুড়া রোড, বাঁকের মুখে বাড়ি
টালির চাল, কাঁঠাল গাছের ছায়া
কালকাসুন্দি, হেলেঞ্চার বেড়া
শীতের রোদে ছড়িয়ে আছে মায়া।
সদর দ্বার অনেকখানি খোলা,
কেউ কি আছে? বাগান বেঁচে আছে,
নরম মাটি, মৃদু পায়ের ছাপ,
ইস্টিকুটুম পাখিটি নিম গাছে।
কবির বাড়ি, কবি এখন নেই,
শতাব্দীও ফুরিয়ে এলো ক্রমে,
বাতাসে ওড়ে ছিন্ন ইতিহাস,
জীবন ভাঙে ইতিহাসের ভ্রমে।
কবির বাড়ি, কবি এখন নেই,
তাহলে আর ভেতরে কেন যাওয়া,
একটা ভ্রমর গুণগুণোচ্ছে একা,
শব্দটুকুই পাওয়ার মতোন পাওয়া"

ভালো থেকো সুনীলবাবু। তোমাকে আরো অনেক কথা বলা বাকি। অন্য চিঠিতে বলবো নাহয়! আজ তবে আসি।

ইতি
মোহনা জাহ্নবী

 

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৭ পিএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

বিনিময়
সাত্ত্বিক দাস

আকাশজুড়ে ধুধু মাঠ,
ওই, আকাশে নক্ষত্রের নাচ, ও পাড়ার বারোয়ারি তলায়।
নির্ঘুম পেঁচার দল, ঘুম চোখে মাথা নাড়ে নিঃসংকোচে
নক্ষত্রের আলোয়, আমার মাথার ভিড়।
পোড়া ভাতের গন্ধে, একাকী ছায়ামূর্তি,
নিরুপায় চোখে চেয়ে আছে, সম্মুখ পানে
কী দেবে বিনিময়ে?
দুই মুঠো ভাত, 
প্রেম, ভালোবাসা, আদুরে হাত।
না কি, মৃত্যু যন্ত্রণা।।

 


দগ্ধ হৃদয়ের খোঁজ
সুমনা আফরিন

তার কোথাও একটা শূন্যতা ছিল
হয়তো শূন্যতায় ভরা কুঠরি ছিল
হয়তো তাতে
নিচ্ছিদ্র যন্ত্রণায় ভরা কোনো দুঃখবাক্স ছিল।

তার বাক্সে হয়তো কালো ও নীল কলম ছিল
কলমে কালি ছিল কম
হৃদয়ে কথার গুরুভার থাকলেও
সব কথা হস্তাক্ষর পায়নি।

তার জন্য সংরক্ষিত সবুজ কালির
সতর্কতার লাল কালির 
বল পেনের কোনো কমতি ছিল না।

তার চোখ বলত
ফাউন্টেন পেনের
অভিলাষ তার নেই।
বাসনা কেবল একটা শূন্য ডাকবাক্সের
শূন্য খাতার অধিকারী
একজন দগ্ধ মানুষের।

তার চোখে খোঁজ ছিল
কোনো পোড়া চোখের
পোড়া চোখের দগ্ধ হৃদয়ই পারে
পৌরহিত্যে করে
বুকের জগদ্দল পাথর নামাতে
দগ্ধ জনের অসীম শূন্যতা ঘোঁচাতে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ এএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

ফেরারি নারী
মোহামেদ সাইফুল হাসান

কৃত্তিকা তারার আবির্ভাব হেমন্তের পশ্চিমাকাশে
মৃদুমন্দ শীত নীরবতার গহিন অন্ধ রাতে,
বাঁশির সকরুণ আওয়াজ বাউল গানের সুরে 
টিনের চালে বেদনাতুর শিশির ঝরার শব্দ 
ছাতিমের গন্ধে অতীতের উঁকি তৃষিত অন্তরে,
পুরো একটি বছরের দূরত্ব, হলো দেড় কোটি সমান
অতিথি পাখিরাও চলে এল আপন দেশ ছেড়ে
শুধু ফেরারিদের ফিরে আসার নাম নেই!

 


শক্তি
রজব বকশী 

প্রতিটি মানুষ এক একটি প্রদীপ 
হোক না সে অন্ধ কিংবা অন্ধকারে একা 
তথাপি জ্বলতে থাকে 
দৃশ্য-দৃশ্যান্তর

এই শক্তির প্রাচীন ব্যবহারে পড়ে থাকে কেউ 
কেউবা নতুন করে পথ খুঁজে ফেরে 
কেবলি নিজের জন্য নয় 
সামগ্রিক চৈতন্যের বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ে ভাবতে শেখায় 

এই জেগে থাকা আর জাগানোর গান
আপন সত্তায় প্রতিস্থাপনের টেকনিক স্বপ্ন টাওয়ার
অন্যরকম বোধের আকরিক সংকেত পাঠায়
মানবিক মূল্যবোধে মেধা প্রতিভার এক একটি নক্ষত্র 

এই সভ্যতার আলোকিত মনিটরে ভেসে ওঠে 
ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে যে পাওয়াগুলো জয়ধ্বনি করে
সেই আলোয় নিজেকে নতবৃক্ষ হতে দেখা যায়
তারই ইতিহাস পাঠে মনোযোগী আমাদের সময়ের ঢেউ 

 


ক্লিওপেট্রার রোমাঞ্চকর প্রেম 
সাগর আহমেদ 

ক্লিওপেট্রার হাতে সোমরসে শরাব পাত্র 
গলায় প্যাঁচানো সদন্তে সাপ,

তার খিলখিল হাসিতে ছলনার রং 
দেশ, মহাদেশ পেরিয়ে জুলিয়াস সিজার 
পেল তবে পাপ?

এল গৃহযুদ্ধ, এল বিদেশি শক্তি, বিশ্বাসঘাতকতা 
হারেমের দেয়ালে তবু প্রেম আলপনা,
ক্লিওপেট্রার এক হাতে প্রেম, অন্য হাতে যুদ্ধ 
ফণীমনসার রাতে দারুণ উন্মাদনা।

প্রেম, বিরহ, ছলনায় ক্লিওপেট্রা, জুলিয়াস সিজার 
স্থিত যুগে যুগে,
সে এক রোমাঞ্চ কাব্য
উন্মাতাল সর্বগ্রাসী যৌবন সম্ভোগে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ 
মিনহাজ উদ্দিন শপথ 

রোদের হ্যাঙ্গারে শুকাই 
গত রাতের ভেজা চোখ 
স্যাঁতস্যাঁতে স্বপ্নের পর্দা
তোমার কাছ থেকে ফিরে আসার পর মনে হলো 
বাগানের ফুলগুলো আজ
অযথাই সৌরভে সারাৎসার। 

অন্ধের কাছে সব ইন্দ্রিয় দক্ষতার কথা 
জানতে চেয়ো না কখনো আর
আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ

 

 


জখমিপ্রেম
মোজাম্মেল সুমন

অতঃপর তুমি
নির্বিঘ্নে পবিত্র হৃদয়ের ভূমি
থেকে হারিয়ে যাওয়াতে
শূন্যতার হাওয়াতে
একাকিত্বের ছায়া জমতে জমতে
ভালো থাকা কমতে কমতে
আমার নিগড়ে পড়ার
চোখের অশ্রুজল বিগড়ে মরার
প্রতিধ্বনিতে বরফ
হয়ে নিশ্চুপ থাকলেও আমার তরফ
থেকে এখনো কিঞ্চিৎ লুকাইনি
অথবা শুকাইনি
বলে প্রতিনিয়ত বোবাকষ্ট প্রপাতের
দৃশ্য বেদনার প্রভাতের
মতো ফোটে
আর জীবনে জোটে
জখমিপ্রেমের অসহ্য ভগ্নাংশ
কিংবা নিষ্পেষিত অহেতুক স্বপ্নাংশ
যার প্রকৃত মানে
বেঁচে থাকা ক্রমাগত জীবন্মৃতের পানে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

ঐশ্বর্য সুখ-হেমন্তকাল 
পবিত্র মহন্ত জীবন 

সাদারঙে মেঘবালিকা ভেসে বেড়ায় আকাশে...
শীতের সকাল, উল্টো হেমন্তের খোলাহাওয়া 
হিমায়িত কুয়াশায় চাদরে ঢেকে যায় রোদ্দুর।
বাঁশপাতার ফাঁকে টুপটাপ শিশির জলফোঁটা...
সোনা মাটির সবুজবীথি, ফসলের মৌ সুগন্ধ
হেমন্তের আগমন নবান্ন সুখ, ক্যানভাসে ভাসে।
ফড়িংভেজা সকাল চুঁইয়ে চুঁইয়ে টুপটুপ বৃষ্টি
দূর্বাঘাসের ডগায় শিশিরের টলোমলো 
হলুদ রং ছোঁয়াতে বসে ঐশ্বর্য সুখ, আনন্দকাল...
মৌমাছি ফুলে ফুলে মধুভরা হেমন্তকাল
কাঁচাপাকা ফসিল মাঠ, কাজে ব্যস্ত কৃষাণ
গ্রামবাংলার কাদামাটির হাঁড়ি বানায় পাল...
শিল্পের সাবলীল জলছবি হেমন্তকাল।

 

 

রোদের ডাকপিওন
মতিউর রহমান

মৃত সকালের চৌকাঠে পা রেখে দেখি…
শীত আর কুয়াশায় লেখা চিঠি হাতে ডাকপিওন
চিঠির খাম খুলি
কিছু কান্না আর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ
অস্ফুটে গোঙায়
প্রেমিকার চুলে সূর্যাস্তের রং মুছে
যে দিন গত হয়েছিল
ফিরে ফিরে আসে
আমি শীত-কুয়াশা উপেক্ষা করে
দিনরাত সেলাই করি আলুথালু জীবন, যাপনের ছেঁড়া জামা
একটু একটু করে পুবালি আকাশ হলুদ হয়
দূরে দেখি, রোদের ডাকপিওন
পায়ে পায়ে হেঁটে আসে আমার আঙিনায়।

তবু কেউ নেই

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬ পিএম
তবু কেউ নেই

কেউ ছিল না এমন তো নয়
কেউ তো ছিল।
তবু কেউ নেই, কেউ কোথাও নেই!
ওই সুদূরে ভেসে ওঠে খুব চেনামুখ
তবু মনে হয় অচেনা, ভীষণ অচেনা!
জীবনের গল্পগুলো মায়ায় আচ্ছন্ন
এক ধূসর কালো বিরহী উপসংহার।
গোধূলির রং ছুঁয়ে নেমে আসা রাত
নির্ঘুম জোনাকির মতো আলো জ্বেলে
অপেক্ষায় থাকা নিবিড় উষ্ণ অনুভব
বাতাসের বুকে হাস্নাহেনার সৌরভ।
ওই নগ্ন আঁধার ভুলে গেছে প্রতিশ্রুতি
ফিরে আসে নীল খামে বিরহ চিরকুট।
বুকের যত কথা নির্বাক অপাঙ্‌ক্তেয়
ব্যথার অসুখে ক্ষত হয় হৃৎঅন্তঃপুর।