হৃদয়ক্ষরণ
সারমিন চৌধুরী
একাকিত্বের লড়াই করেছি নিজের সাথে
যেন আশাহীন শুকনো কাঠের তাপে নিরন্তর
পুড়েছি ব্যর্থতার ভীষণ দহনে চিতাসম।
কথার নিষ্ঠুর আঘাতে টুকরো হয়েছে কাচের বুক
নিত্য অশ্রুঅনলে ডুবে কেটেছে সুদীর্ঘ রাত,
জানি না আর কতকাল বইব নিয়তির বোঝা
এত অনাদর, অবহেলা, অবজ্ঞা কেন পাচ্ছি?
কেড়ে নেওয়া অধিকার বঞ্চিত প্রেমের যন্ত্রণায়।
তাহলে আমি কি প্রেমের মিছিলে পিছিয়ে পড়া,
ভালোবাসার মানচিত্রে এক সত্যের পরাজয়?
আপনা আপনিই কতই না কথা বলি
অনুতাপের গ্লানিতে ঝুঁকে থাকি লতার মতো
কত ব্যথা, ভুল আর ক্লান্তি জমে বুকের অলিন্দে
কেন ডুকরে কেঁদে ওঠে অভিমানী মন?
কে বা রাখে তার খোঁজ এক পলক উঁকি মেরে,
দিনের আলোয় কান্না লুকিয়ে মুখে রাখি হাসি।
এই চোখ জানে প্রিয়হারা রাতে কতটা ক্ষরণে
নিজেকে নিঃশেষ হতে দেখি খুবই কাছ থেকে।
ভস্ম হলো শোক মাংসের গুদামে আগুন পুষে।
দ্বিধার জ্বরে কাঁপছে মন, অন্ধকার চারপাশ,
আজ ভাতঘুম ঘোরে জেঁকে বসেছে মৃত্যু অসুখ।
রান্নাবান্না
সায়্যিদ লুমরান
তোমারও নিজস্ব একটা পৃথিবী আছে। তবে এর কোনো ভৌগোলিক
সীমা এবং দ্রাঘিমা নেই।
সেই গ্রহে-
ইচ্ছে হলেই মধ্য দুপুরে সূর্য ডুবিয়ে দিতে পার দীর্ঘ এক ঘুম,
অথবা হতে পার কোনো মৃত বা জীবিতের মুখোমুখি।
ডেকেও আনতে পার শ্রাবণের মাঝামাঝি পৌষকে,
যদি তোমার হঠাৎ শীতের রোদ্দুরকে খুব বেশি মনে পড়ে যায়।
এবং নীল নকশাও আঁকতে পার ঈশ্বরকে হত্যার, আর রূপান্তরের
পর হয়ে উঠতে পার- প্রতিনিধি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী।
হিমঘরে মানবতা
মো. আশতাব হোসেন
রাতের নিস্তব্ধতা নীরবে কাঁদে
আঁধারের সিঁড়িতে বসে,
যুগের কৃষ্ণ বাতাস সর্বাঙ্গে জ্বলে
কে থামায় কান্না! সবাই নিদ্রামগ্ন।
সাথে ভস্ম হচ্ছে মায়ামমতা বোধ
জ্ঞানের গাদায় ধরেছে আগুন,
মরীচিকার ধাঁধায় সওয়ার মাঝিমাল্লা
উদর হচ্ছে বিশালাকার গুদাম।
চাই আর চাই শব্দে পালায় হিংস্র প্রাণী
তারাও অসহায়ত্ব ব্যক্ত করে ফিসফিস করে,
এ যুগ বড় বেসামাল বিবেক নির্বাসনে
মানবতা কফিনবন্দি হিমঘরে।
হীনচেতা
মুহাম্মাদ শাফীউল ইসলাম
রঙের তুলি যদি না আঁকে অন্যায়ের ছবি
তোমার কলম যদি না লেখে পেষণ কাহিনি,
তবে তুমি কীসের শিল্পী আর কীসের কবি
নরাধম, হীনচেতা তুমি স্বার্থান্বেষী লোভী।
তোমার রঙের তুলি আঁকে না শহিদের ছবি
কলমে ওঠে আসে না ন্যায়ের প্রতিচ্ছবি,
তুমি আবার সমাজের দর্পণ, রাষ্ট্রের খুঁটি!
তোমার প্রতি নিকুচি এ জাতীর শত কোটি।
ফেব্রুয়ারি এলে তুমি চেতনাধারী বাঙালি
হাতকাটা ব্লাউজ আর ক্লিভেজ রানি
শেভ করা পুরু গোঁফ নিয়ে মেলায় ঘোরাঘুরি,
লেখক কি-বা কবি নয় মীর জাফরের উত্তরসূরি।
আর কিছু আছে একুশ এলে চেতনায় বাঙালি
লম্বা লম্বা দাড়ি-মোচ ঝাঁকিয়ে আওড়ায় বুলি,
ক্রান্তিকালে কুলুপ এঁটে নিশ্চুপ চেয়ে রয়
একাডেমি পদক কি-বা মেডেলের আশায়।
মেঘবতী শ্রাবণ
জাহিদ হোসেন
আজ সোনাঝরা বৃষ্টির গানে মোহিত বিকেল
বর্ষার ছন্দে জীবনের গান গায়।
তবুও কদম কেয়ার সুশোভিত রূপে
পৃথিবী রাঙিয়ে চলে অভিনব
বর্ষার নব নব অভিবাদন।
আকাশ সমস্ত পৃথিবীজুড়ে মেঘবতী শ্রাবণের
প্রচারণা করে বৃষ্টির বিজ্ঞাপন।
তাই পৃথিবী এত সুন্দর-
শুধু আমাদের চাঁদবনে জেগে থাকে
কদম পূর্ণিমায় বৃষ্টির ঘ্রাণ।
সন্ধ্যাবেলায় সমুদ্র কথন-১
আরজাত হোসেন
ফুরালো যে দিন,
এক কোনে কনক কান্তি, নিস্তেজ স্বর্ণাভা।
ওগো শেষ বেলা, থেকো কিছুক্ষণ।
আকাশে ছটাক মেঘ, বলি...
আবির কি গো সন্ধ্যা নামাই?
ঢেউয়ের পরে ঢেউ মিলে যায়।
যখনই নদী ও জলধির মিথুন, আজন্মের মতন
বলি, শুনো গো...
সে শ্লোক ভরা ঢেউয়ের, আড়ালে কথন।
সে বালুকাবেলা, বিস্তৃত ঝিনুক মেলা...
ওগো শেষ বেলা, থেকো কিছুক্ষণ।
ওপারে অকূল পাথার এই পারে জল গড়ায়!
নাও সাগর, কিছু দুখ তোমায় দিলাম।
বেসামাল আঁখি তার,
বেলা দেখো গো...
আকাশে কত আবির ছড়ায়।
দুই হাত মেলে দেখি, ফুরফুরে হাওয়ায় ভাসি।
না না, এখনো আঁধার নামেনি,
চোখে জল ছিল তাই, ঝাঁপসা দেখেছিলাম।
সাগর, এ কেমন তোমার রূপ?
দুঃখীকে বিষাদের গর্জন দেখাও
আর সুখীকে দেখাও আনন্দ অশ্রু।
এ কেমন তোমার রূপ!!
নিঃসঙ্গ কবুতর
মো. জাহিদ হাসান
গোধূলি নেমে আসে পৃথিবীর বুকে, প্রশান্তি নেই চোখে, অশান্ত চারদিক,
পিপাসায় কাতর প্রাণ এক, ঘুরে বেড়ায় দিগ্বিদিক।
পুরনো মোবাইল ফোন আর, একখানা কবিতার
বই নিয়ে হাতে,
সপ্তাহখানেক ধরে কারফিউ দেশজুড়ে,
প্রাণভরে নিঃশ্বাস হয় না নেওয়া আর, পুরনো বন্ধুর সাথে,
পুরনো পথে।
লেকের পাড়েও নেই পুরনো সে ভিড়,
দেখা যায় না জোড়া জোড়া কবুতর,
শোনা যায় না মিলনের সুরে গাওয়া পাখিদের কিচিরমিচির।
বিপ্লব
আব্দুর রহমান রুদ্র
একটা মুক্ত আকাশ কিনবে বলে
রক্ত ঢালে বুকের
সহস্র স্বাধীনচেতা পাখি
হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে বেড়ায়
অগনিত স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের মিছিল
বুকের রক্তে লেখা মুক্ত আকাশের দাবি
কালের স্রোতে ভেসে গেছে বহু অত্যাচারী
ভাসবে আবার স্বৈরাচারী
আকাশ পথ সংস্কারের দাবি রাখা পাখি
স্বৈরাচারের লেলিহান দৃষ্টিতে হয় রাজাকার
তবে হোক সে রাজাকার, হোক দেশদ্রোহী
মুক্ত আকাশ কিনবে এবার রক্তের দামে
মুক্ত আকাশ কিনবে এবার মৃত্যুর বিনিময়ে
ডানা মেলে ওড়ার জন্য মহাকাশে
বিপ্লবের প্রয়োজন ফের!
প্রত্যাশায় বেঁচে থাকব
মেজবাহ উদ্দিন
শরীরের অর্ধাংশ জলে ডুবে আছে
নক্ষত্র চোখে জ্বেলে দিয়েছি আলো
নরম মাটির শরীর আর কত সয়
পাতার বিন্যাসে ছিল কত মনোরম
পাখির উল্লাস ছিল বৃক্ষের ডালায় ডালায়
অবান্তর আজ পত্রপল্লবে।
আমার শরীরজুড়ে বেদনার কোলাহল
শিশুর চিৎকার পশুপাখির ক্রন্দন
আমি কী করে পরিপূর্ণ ডুবে যাই
আমার জেগে উঠতে হবে
সীমাহীন প্রত্যাশার বীজ আমার বুকে
ধারণ করে আমি বেঁচে থাকব।
এ দুর্বহ দুর্যোগে অটল বিশ্বাসে
এ শরীরে সব সয়ে যাব।
অনেক প্রত্যাশা নিয়ে বেঁচে রয়েছি
আজও বেঁচে থাকব।
সাবধান
মাসুম মোরশেদ
ভুলে
দরজা রেখেছ খুলে!
পরে
কেউ আচমকা ঢোকে ঘরে!
আরে,
হয়তো ক্ষতি হতে পারে!
না, না,
যত হোক না চেনাজানা।
কিংবা
জানাশোনা হলে কিইবা!
কত?
উদাহরণ আছে শত।
বলি,
দেখেশুনে একটু চলি।
তোমার চুলের খোঁপা
আল মামুন রিটন
সমৃদ্ধ হোক তোমার চুলের খোঁপা
এই নাও আরও দুটো কলমিফুল।
চাইলে নীল মেঘ এনে দেব নিমেষে
অথবা লাল গোলাপ সদ্য ফোটা!
নদীর ঢেউ দিতে পারি - চাও যদি
খোঁপার ভাঁজে নাচুক প্রজাপতি
ভিন্ন ভিন্ন ঢঙে, ভিন্ন কিছু রঙের।
জরির ছটা দেব নাকি এক চিমটি
অথবা বকুল ফুলের সাদা পাপড়ি?
অপরুপা হয়ে উঠুক খোঁপার খাঁজ
ভাঁজে দিতে পারি কবিতার পঙ্ক্তি
নেবে নাকি আরও কিছু শব্দগুচ্ছ?
দেব এনে রাতের জোনাকি খুঁজে
অথবা চিকচিক উজ্জ্বল তারাগুলো?
তোমার খোঁপা তোমার মতোই হাসুক
সবাই তোমার খোঁপার টানেই মাতুক!