ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সাহিত্যসভার এ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫০ পিএম
আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫১ পিএম
সাহিত্যসভার এ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

হৃদয়ক্ষরণ 
সারমিন চৌধুরী 

একাকিত্বের লড়াই করেছি নিজের সাথে
যেন আশাহীন শুকনো কাঠের তাপে নিরন্তর 
পুড়েছি ব্যর্থতার ভীষণ দহনে চিতাসম।
কথার নিষ্ঠুর আঘাতে টুকরো হয়েছে কাচের বুক
নিত্য অশ্রুঅনলে ডুবে কেটেছে সুদীর্ঘ রাত,
জানি না আর কতকাল বইব নিয়তির বোঝা 
এত অনাদর, অবহেলা, অবজ্ঞা কেন পাচ্ছি?
কেড়ে নেওয়া অধিকার বঞ্চিত প্রেমের যন্ত্রণায়।
তাহলে আমি কি প্রেমের মিছিলে পিছিয়ে পড়া,
ভালোবাসার মানচিত্রে এক সত্যের পরাজয়?

আপনা আপনিই কতই না কথা বলি
অনুতাপের গ্লানিতে ঝুঁকে থাকি লতার মতো 
কত ব্যথা, ভুল আর ক্লান্তি জমে বুকের অলিন্দে 
কেন ডুকরে কেঁদে ওঠে অভিমানী মন? 
কে বা রাখে তার খোঁজ এক পলক উঁকি মেরে,
দিনের আলোয় কান্না লুকিয়ে মুখে রাখি হাসি। 
এই চোখ জানে প্রিয়হারা রাতে কতটা ক্ষরণে
নিজেকে নিঃশেষ হতে দেখি খুবই কাছ থেকে।
ভস্ম হলো শোক মাংসের গুদামে আগুন পুষে।
দ্বিধার জ্বরে কাঁপছে মন, অন্ধকার চারপাশ,
আজ ভাতঘুম ঘোরে জেঁকে বসেছে মৃত্যু অসুখ।


রান্নাবান্না 
সায়্যিদ লুমরান 

তোমারও নিজস্ব একটা পৃথিবী আছে। তবে এর কোনো ভৌগোলিক 
সীমা এবং দ্রাঘিমা নেই।

সেই গ্রহে-
ইচ্ছে হলেই মধ্য দুপুরে সূর্য ডুবিয়ে দিতে পার দীর্ঘ এক ঘুম,
অথবা হতে পার কোনো মৃত বা জীবিতের মুখোমুখি।

ডেকেও আনতে পার শ্রাবণের মাঝামাঝি পৌষকে,
যদি তোমার হঠাৎ শীতের রোদ্দুরকে খুব বেশি মনে পড়ে যায়।

এবং নীল নকশাও আঁকতে পার ঈশ্বরকে হত্যার, আর রূপান্তরের
পর হয়ে উঠতে পার- প্রতিনিধি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী। 


হিমঘরে মানবতা
মো. আশতাব হোসেন 

রাতের নিস্তব্ধতা নীরবে কাঁদে
আঁধারের সিঁড়িতে বসে, 
যুগের কৃষ্ণ বাতাস সর্বাঙ্গে জ্বলে
কে থামায় কান্না! সবাই নিদ্রামগ্ন। 

সাথে ভস্ম হচ্ছে মায়ামমতা বোধ 
জ্ঞানের গাদায় ধরেছে আগুন, 
মরীচিকার ধাঁধায় সওয়ার মাঝিমাল্লা 
উদর হচ্ছে বিশালাকার গুদাম। 

চাই আর চাই শব্দে পালায় হিংস্র প্রাণী
তারাও অসহায়ত্ব ব্যক্ত করে ফিসফিস করে, 
এ যুগ বড় বেসামাল বিবেক নির্বাসনে 
মানবতা কফিনবন্দি হিমঘরে।


হীনচেতা
মুহাম্মাদ শাফীউল ইসলাম

রঙের তুলি যদি না আঁকে অন্যায়ের ছবি
তোমার কলম যদি না লেখে পেষণ কাহিনি,
তবে তুমি কীসের শিল্পী আর কীসের কবি
নরাধম, হীনচেতা তুমি স্বার্থান্বেষী লোভী।
তোমার রঙের তুলি আঁকে না শহিদের ছবি
কলমে ওঠে আসে না ন্যায়ের প্রতিচ্ছবি,
তুমি আবার সমাজের দর্পণ, রাষ্ট্রের খুঁটি!
তোমার প্রতি নিকুচি এ জাতীর শত কোটি।
ফেব্রুয়ারি এলে তুমি চেতনাধারী বাঙালি
হাতকাটা ব্লাউজ আর ক্লিভেজ রানি
শেভ করা পুরু গোঁফ নিয়ে মেলায় ঘোরাঘুরি,
লেখক কি-বা কবি নয় মীর জাফরের উত্তরসূরি।
আর কিছু আছে একুশ এলে চেতনায় বাঙালি
লম্বা লম্বা দাড়ি-মোচ ঝাঁকিয়ে আওড়ায় বুলি,
ক্রান্তিকালে কুলুপ এঁটে নিশ্চুপ চেয়ে রয়
একাডেমি পদক কি-বা মেডেলের আশায়।


মেঘবতী শ্রাবণ
জাহিদ হোসেন

আজ সোনাঝরা বৃষ্টির গানে মোহিত বিকেল
বর্ষার ছন্দে জীবনের গান গায়।
তবুও কদম কেয়ার সুশোভিত রূপে
পৃথিবী রাঙিয়ে চলে অভিনব
বর্ষার নব নব অভিবাদন।
আকাশ সমস্ত পৃথিবীজুড়ে মেঘবতী শ্রাবণের
প্রচারণা করে বৃষ্টির বিজ্ঞাপন।
তাই পৃথিবী এত সুন্দর-
শুধু আমাদের চাঁদবনে জেগে থাকে
কদম পূর্ণিমায় বৃষ্টির ঘ্রাণ।


সন্ধ্যাবেলায় সমুদ্র কথন-১
আরজাত হোসেন 

ফুরালো যে দিন,
এক কোনে কনক কান্তি, নিস্তেজ স্বর্ণাভা।
ওগো শেষ বেলা, থেকো কিছুক্ষণ।
আকাশে ছটাক মেঘ, বলি...
আবির কি গো সন্ধ্যা নামাই?
ঢেউয়ের পরে ঢেউ মিলে যায়।
যখনই নদী ও জলধির মিথুন, আজন্মের মতন
বলি, শুনো গো...
সে শ্লোক ভরা ঢেউয়ের, আড়ালে কথন।
সে বালুকাবেলা, বিস্তৃত ঝিনুক মেলা...
ওগো শেষ বেলা, থেকো কিছুক্ষণ।
ওপারে অকূল পাথার এই পারে জল গড়ায়! 
নাও সাগর, কিছু দুখ তোমায় দিলাম।
বেসামাল আঁখি তার, 
বেলা দেখো গো... 
আকাশে কত আবির ছড়ায়।
দুই হাত মেলে দেখি, ফুরফুরে হাওয়ায় ভাসি। 
না না, এখনো আঁধার নামেনি, 
চোখে জল ছিল তাই, ঝাঁপসা দেখেছিলাম।
সাগর, এ কেমন তোমার রূপ?
দুঃখীকে বিষাদের গর্জন দেখাও
আর সুখীকে দেখাও আনন্দ অশ্রু।
এ কেমন তোমার রূপ!!


নিঃসঙ্গ কবুতর
মো. জাহিদ হাসান 

গোধূলি নেমে আসে পৃথিবীর বুকে, প্রশান্তি নেই চোখে, অশান্ত চারদিক, 
পিপাসায় কাতর প্রাণ এক, ঘুরে বেড়ায় দিগ্বিদিক।

পুরনো মোবাইল ফোন আর, একখানা কবিতার
বই নিয়ে হাতে,
সপ্তাহখানেক ধরে কারফিউ দেশজুড়ে, 
প্রাণভরে নিঃশ্বাস হয় না নেওয়া আর, পুরনো বন্ধুর সাথে,
পুরনো পথে।

লেকের পাড়েও নেই পুরনো সে ভিড়,
দেখা যায় না জোড়া জোড়া কবুতর, 
শোনা যায় না মিলনের সুরে গাওয়া পাখিদের কিচিরমিচির।


বিপ্লব
আব্দুর রহমান রুদ্র 

একটা মুক্ত আকাশ কিনবে বলে
রক্ত ঢালে বুকের
সহস্র স্বাধীনচেতা পাখি
হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে বেড়ায় 
অগনিত স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের মিছিল 
বুকের রক্তে লেখা মুক্ত আকাশের দাবি

কালের স্রোতে ভেসে গেছে বহু অত্যাচারী
ভাসবে আবার স্বৈরাচারী 

আকাশ পথ সংস্কারের দাবি রাখা পাখি
স্বৈরাচারের লেলিহান দৃষ্টিতে হয় রাজাকার
তবে হোক সে রাজাকার, হোক দেশদ্রোহী 
মুক্ত আকাশ কিনবে এবার রক্তের দামে
মুক্ত আকাশ কিনবে এবার মৃত্যুর বিনিময়ে 

ডানা মেলে ওড়ার জন্য মহাকাশে
বিপ্লবের প্রয়োজন ফের!


প্রত্যাশায় বেঁচে থাকব
মেজবাহ উদ্দিন

শরীরের অর্ধাংশ জলে ডুবে আছে
নক্ষত্র চোখে জ্বেলে দিয়েছি আলো
নরম মাটির শরীর আর কত সয়
পাতার বিন্যাসে ছিল কত মনোরম
পাখির উল্লাস ছিল বৃক্ষের ডালায় ডালায়
অবান্তর আজ পত্রপল্লবে।

আমার শরীরজুড়ে বেদনার কোলাহল
শিশুর চিৎকার পশুপাখির ক্রন্দন
আমি কী করে পরিপূর্ণ ডুবে যাই
আমার জেগে উঠতে হবে
সীমাহীন প্রত্যাশার বীজ আমার বুকে
ধারণ করে আমি বেঁচে থাকব।

এ দুর্বহ দুর্যোগে অটল বিশ্বাসে
এ শরীরে সব সয়ে যাব।
অনেক প্রত্যাশা নিয়ে বেঁচে রয়েছি
আজও বেঁচে থাকব।


সাবধান 
মাসুম মোরশেদ

ভুলে
দরজা রেখেছ খুলে!
পরে
কেউ আচমকা ঢোকে ঘরে!
আরে,
হয়তো ক্ষতি হতে পারে!
না, না,
যত হোক না চেনাজানা।
কিংবা
জানাশোনা হলে কিইবা!
কত?
উদাহরণ আছে শত।
বলি,
দেখেশুনে একটু চলি।


তোমার চুলের খোঁপা 
আল মামুন রিটন

সমৃদ্ধ হোক তোমার চুলের খোঁপা
এই নাও আরও দুটো কলমিফুল।
চাইলে নীল মেঘ এনে দেব নিমেষে 
অথবা লাল গোলাপ সদ্য ফোটা!
নদীর ঢেউ দিতে পারি - চাও যদি
খোঁপার ভাঁজে নাচুক প্রজাপতি
ভিন্ন ভিন্ন ঢঙে, ভিন্ন কিছু রঙের।
জরির ছটা দেব নাকি এক চিমটি
অথবা বকুল ফুলের সাদা পাপড়ি?
অপরুপা হয়ে উঠুক খোঁপার খাঁজ
ভাঁজে দিতে পারি কবিতার পঙ্‌ক্তি
নেবে নাকি আরও কিছু শব্দগুচ্ছ?
দেব এনে রাতের জোনাকি খুঁজে
অথবা চিকচিক উজ্জ্বল তারাগুলো?
তোমার খোঁপা তোমার মতোই হাসুক
সবাই তোমার খোঁপার টানেই মাতুক!

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৭ পিএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

বিনিময়
সাত্ত্বিক দাস

আকাশজুড়ে ধুধু মাঠ,
ওই, আকাশে নক্ষত্রের নাচ, ও পাড়ার বারোয়ারি তলায়।
নির্ঘুম পেঁচার দল, ঘুম চোখে মাথা নাড়ে নিঃসংকোচে
নক্ষত্রের আলোয়, আমার মাথার ভিড়।
পোড়া ভাতের গন্ধে, একাকী ছায়ামূর্তি,
নিরুপায় চোখে চেয়ে আছে, সম্মুখ পানে
কী দেবে বিনিময়ে?
দুই মুঠো ভাত, 
প্রেম, ভালোবাসা, আদুরে হাত।
না কি, মৃত্যু যন্ত্রণা।।

 


দগ্ধ হৃদয়ের খোঁজ
সুমনা আফরিন

তার কোথাও একটা শূন্যতা ছিল
হয়তো শূন্যতায় ভরা কুঠরি ছিল
হয়তো তাতে
নিচ্ছিদ্র যন্ত্রণায় ভরা কোনো দুঃখবাক্স ছিল।

তার বাক্সে হয়তো কালো ও নীল কলম ছিল
কলমে কালি ছিল কম
হৃদয়ে কথার গুরুভার থাকলেও
সব কথা হস্তাক্ষর পায়নি।

তার জন্য সংরক্ষিত সবুজ কালির
সতর্কতার লাল কালির 
বল পেনের কোনো কমতি ছিল না।

তার চোখ বলত
ফাউন্টেন পেনের
অভিলাষ তার নেই।
বাসনা কেবল একটা শূন্য ডাকবাক্সের
শূন্য খাতার অধিকারী
একজন দগ্ধ মানুষের।

তার চোখে খোঁজ ছিল
কোনো পোড়া চোখের
পোড়া চোখের দগ্ধ হৃদয়ই পারে
পৌরহিত্যে করে
বুকের জগদ্দল পাথর নামাতে
দগ্ধ জনের অসীম শূন্যতা ঘোঁচাতে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ এএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

ফেরারি নারী
মোহামেদ সাইফুল হাসান

কৃত্তিকা তারার আবির্ভাব হেমন্তের পশ্চিমাকাশে
মৃদুমন্দ শীত নীরবতার গহিন অন্ধ রাতে,
বাঁশির সকরুণ আওয়াজ বাউল গানের সুরে 
টিনের চালে বেদনাতুর শিশির ঝরার শব্দ 
ছাতিমের গন্ধে অতীতের উঁকি তৃষিত অন্তরে,
পুরো একটি বছরের দূরত্ব, হলো দেড় কোটি সমান
অতিথি পাখিরাও চলে এল আপন দেশ ছেড়ে
শুধু ফেরারিদের ফিরে আসার নাম নেই!

 


শক্তি
রজব বকশী 

প্রতিটি মানুষ এক একটি প্রদীপ 
হোক না সে অন্ধ কিংবা অন্ধকারে একা 
তথাপি জ্বলতে থাকে 
দৃশ্য-দৃশ্যান্তর

এই শক্তির প্রাচীন ব্যবহারে পড়ে থাকে কেউ 
কেউবা নতুন করে পথ খুঁজে ফেরে 
কেবলি নিজের জন্য নয় 
সামগ্রিক চৈতন্যের বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ে ভাবতে শেখায় 

এই জেগে থাকা আর জাগানোর গান
আপন সত্তায় প্রতিস্থাপনের টেকনিক স্বপ্ন টাওয়ার
অন্যরকম বোধের আকরিক সংকেত পাঠায়
মানবিক মূল্যবোধে মেধা প্রতিভার এক একটি নক্ষত্র 

এই সভ্যতার আলোকিত মনিটরে ভেসে ওঠে 
ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে যে পাওয়াগুলো জয়ধ্বনি করে
সেই আলোয় নিজেকে নতবৃক্ষ হতে দেখা যায়
তারই ইতিহাস পাঠে মনোযোগী আমাদের সময়ের ঢেউ 

 


ক্লিওপেট্রার রোমাঞ্চকর প্রেম 
সাগর আহমেদ 

ক্লিওপেট্রার হাতে সোমরসে শরাব পাত্র 
গলায় প্যাঁচানো সদন্তে সাপ,

তার খিলখিল হাসিতে ছলনার রং 
দেশ, মহাদেশ পেরিয়ে জুলিয়াস সিজার 
পেল তবে পাপ?

এল গৃহযুদ্ধ, এল বিদেশি শক্তি, বিশ্বাসঘাতকতা 
হারেমের দেয়ালে তবু প্রেম আলপনা,
ক্লিওপেট্রার এক হাতে প্রেম, অন্য হাতে যুদ্ধ 
ফণীমনসার রাতে দারুণ উন্মাদনা।

প্রেম, বিরহ, ছলনায় ক্লিওপেট্রা, জুলিয়াস সিজার 
স্থিত যুগে যুগে,
সে এক রোমাঞ্চ কাব্য
উন্মাতাল সর্বগ্রাসী যৌবন সম্ভোগে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ 
মিনহাজ উদ্দিন শপথ 

রোদের হ্যাঙ্গারে শুকাই 
গত রাতের ভেজা চোখ 
স্যাঁতস্যাঁতে স্বপ্নের পর্দা
তোমার কাছ থেকে ফিরে আসার পর মনে হলো 
বাগানের ফুলগুলো আজ
অযথাই সৌরভে সারাৎসার। 

অন্ধের কাছে সব ইন্দ্রিয় দক্ষতার কথা 
জানতে চেয়ো না কখনো আর
আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ

 

 


জখমিপ্রেম
মোজাম্মেল সুমন

অতঃপর তুমি
নির্বিঘ্নে পবিত্র হৃদয়ের ভূমি
থেকে হারিয়ে যাওয়াতে
শূন্যতার হাওয়াতে
একাকিত্বের ছায়া জমতে জমতে
ভালো থাকা কমতে কমতে
আমার নিগড়ে পড়ার
চোখের অশ্রুজল বিগড়ে মরার
প্রতিধ্বনিতে বরফ
হয়ে নিশ্চুপ থাকলেও আমার তরফ
থেকে এখনো কিঞ্চিৎ লুকাইনি
অথবা শুকাইনি
বলে প্রতিনিয়ত বোবাকষ্ট প্রপাতের
দৃশ্য বেদনার প্রভাতের
মতো ফোটে
আর জীবনে জোটে
জখমিপ্রেমের অসহ্য ভগ্নাংশ
কিংবা নিষ্পেষিত অহেতুক স্বপ্নাংশ
যার প্রকৃত মানে
বেঁচে থাকা ক্রমাগত জীবন্মৃতের পানে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

ঐশ্বর্য সুখ-হেমন্তকাল 
পবিত্র মহন্ত জীবন 

সাদারঙে মেঘবালিকা ভেসে বেড়ায় আকাশে...
শীতের সকাল, উল্টো হেমন্তের খোলাহাওয়া 
হিমায়িত কুয়াশায় চাদরে ঢেকে যায় রোদ্দুর।
বাঁশপাতার ফাঁকে টুপটাপ শিশির জলফোঁটা...
সোনা মাটির সবুজবীথি, ফসলের মৌ সুগন্ধ
হেমন্তের আগমন নবান্ন সুখ, ক্যানভাসে ভাসে।
ফড়িংভেজা সকাল চুঁইয়ে চুঁইয়ে টুপটুপ বৃষ্টি
দূর্বাঘাসের ডগায় শিশিরের টলোমলো 
হলুদ রং ছোঁয়াতে বসে ঐশ্বর্য সুখ, আনন্দকাল...
মৌমাছি ফুলে ফুলে মধুভরা হেমন্তকাল
কাঁচাপাকা ফসিল মাঠ, কাজে ব্যস্ত কৃষাণ
গ্রামবাংলার কাদামাটির হাঁড়ি বানায় পাল...
শিল্পের সাবলীল জলছবি হেমন্তকাল।

 

 

রোদের ডাকপিওন
মতিউর রহমান

মৃত সকালের চৌকাঠে পা রেখে দেখি…
শীত আর কুয়াশায় লেখা চিঠি হাতে ডাকপিওন
চিঠির খাম খুলি
কিছু কান্না আর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ
অস্ফুটে গোঙায়
প্রেমিকার চুলে সূর্যাস্তের রং মুছে
যে দিন গত হয়েছিল
ফিরে ফিরে আসে
আমি শীত-কুয়াশা উপেক্ষা করে
দিনরাত সেলাই করি আলুথালু জীবন, যাপনের ছেঁড়া জামা
একটু একটু করে পুবালি আকাশ হলুদ হয়
দূরে দেখি, রোদের ডাকপিওন
পায়ে পায়ে হেঁটে আসে আমার আঙিনায়।

তবু কেউ নেই

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬ পিএম
তবু কেউ নেই

কেউ ছিল না এমন তো নয়
কেউ তো ছিল।
তবু কেউ নেই, কেউ কোথাও নেই!
ওই সুদূরে ভেসে ওঠে খুব চেনামুখ
তবু মনে হয় অচেনা, ভীষণ অচেনা!
জীবনের গল্পগুলো মায়ায় আচ্ছন্ন
এক ধূসর কালো বিরহী উপসংহার।
গোধূলির রং ছুঁয়ে নেমে আসা রাত
নির্ঘুম জোনাকির মতো আলো জ্বেলে
অপেক্ষায় থাকা নিবিড় উষ্ণ অনুভব
বাতাসের বুকে হাস্নাহেনার সৌরভ।
ওই নগ্ন আঁধার ভুলে গেছে প্রতিশ্রুতি
ফিরে আসে নীল খামে বিরহ চিরকুট।
বুকের যত কথা নির্বাক অপাঙ্‌ক্তেয়
ব্যথার অসুখে ক্ষত হয় হৃৎঅন্তঃপুর।