ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সাহিত্যসভার এ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩২ পিএম
আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৪ পিএম
সাহিত্যসভার এ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

রক্তাক্ত স্বাধীনতা 
মো. আশতাব হোসেন 

তুমি এসেছিলে রক্তের সাগর পারি দিয়ে  
রুগ্ন কঙ্কাল শরীরে বিধস্ত পথ ধরে, 
আজও হয়নি আলোকোজ্জ্বল অবস্থান তোমার। 
হে স্বাধীনতা তুমি এসেছিলে ছুটে
এক হিংস্র বাঘের মুখ থেকে ক্ষতবিক্ষত শরীরে
না শুকাতেই ক্ষতচিহ্ন তোমার 
আবার শিকার হলে খ্যাপা ক্ষুধার্ত শৃগাল কবলে! 
হে স্বাধীনতা তুমি এখন বন্দি 
তৃষ্ণাতুর শৃগাল খাঁচায়,
সে শৃগাল তোমার হাড়গোড় কম্পিত হৃদপিণ্ড রেখে
আগে খাচ্ছে চামড়া মাংস গরম রক্ত,
আমরা তোমার অসহায়ত্বের কাছে নতজানু
পারছি না তোমাকে উদ্ধার করতে খালি হাতে! 
হে স্বাধীনতা ভয় পেও না ধৈর্য ধরো 
যতই হোক তোমার পতাকা রক্তিম ঝাঁঝরা 
রক্তের প্রতিটি ছিদ্র থেকে জন্ম লাভ করবে
তীব্র দাহের অগণন অগ্নিশিখা! 
অপেক্ষা করো হে স্বাধীনতা নিগুঢ় অন্ধকারে
তোমাকে আলোর ঝরনাধারায় স্নান করাতে 
খেপেছে বুকে বিরহের আগুন রক্তের ঝড় নিয়ে, 
তোমাকে মুক্ত করবেই তারা জেনে নাও
তুমি মুক্ত হবে আসবেই তোমার সোনালি দিন, 
তুমি অপেক্ষা করো হে কঙ্কাল স্বাধীনতা! 

 

এ কেমন জীবন
মো. আলমামুন হোসেন 

তোমাকে ভাবতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ি প্রতিনিয়ত ভাবনাগুলো এলোমেলো হয়ে যায়।
আচ্ছা তুমি কি আদৌ জীবনের নিয়মে আছ,
শূন্যতাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা কি সম্ভব? 
মিথ্যার আড়ালে চাপা পড়ে যায় যত সত্য।

সম্পর্কের মৃত্যু হয়ে গেছে;
ফাটল ধরে দীর্ঘ দেয়াল নীরবে দিয়েছে উঁকি। 
ব্যর্থ জীবনে বেঁচে থাকার ছক কাটি অনিশ্চিত, 
দিনশেষে পথ হারিয়ে ফেলি চিরচেনা আঙিনায়। 
তবে শূন্যতাই হোক জয়ের লক্ষ্য,  
যদি থেমে যাই এ যাত্রায়, অভিযোগ রইল না আর 
জেনে রেখো মানুষ বারবার থেমে যায়; প্রতীক্ষার প্রহর গুনে।

 

দূরতম দিগন্ত 
মোখতারুল ইসলাম মিলন 

অবশ্যম্ভাবী ক্লান্তি আঁকড়ে ধরে,  
অনড় পথের প্রান্তে দাঁড়িয়ে,  
নির্ভারতা যেন দূরতম দিগন্তে বিলীন,  
নিঃশব্দে অপেক্ষার দুর্ভেদ্য দেয়ালে।  
প্রত্যাশার ভারে মন ক্লিষ্ট,  
অপ্রতিরোধ্য সময়ের প্রতিধ্বনি।  
অচঞ্চল হৃদয়ের গভীরে জমে থাকা  
অনুপ্রেরণার অপরিহার্য আহ্বান।  
নিরবধি সংগ্রামের প্রতিটা ধাপে,  
অধিকার জমাট বাঁধে প্রতিঘাতের ক্ষণে,  
অবিনশ্বর আত্মবিশ্বাসের শিখা জ্বলে,  
তবুও অদম্য সেই চলার প্রান্তে।

 

বদলের আওয়াজ
সুজন সাজু 

বিবর্ণ রোদ মেঘের লুকোচুরি 
স্থির দাঁড়ানো বট গাছ,
দীঘির জলতরঙ্গে পদ্ম দোলে
আড়ালে রবি আজ।
স্বয়ং ঈশ্বরে দেখাচ্ছে লীলা 
বৃষ্টির শাড়িতে রূপ,
ঝাঁঝালো ঝলকে চিত্র আঁকা 
নৈঋত দিকেতে ডুব।
ক্লান্ত দ্বীপে গোধূলি নামে আজ,
নূপুরের নৃত্যে বদলের আওয়াজ।

 

নিরীহ শরৎ
মান্নান নূর

বিকলাঙ্গ শরৎ ডুকরে ডুকরে কাঁদে
যথাযোগ্য শিশির নেই ধুয়ে দিতে প্রাতে
শিউলির পা।
বিরহরাতে নিরীহ শরৎ চিঠি লিখে
কাঁপা হাতে জ্যোৎস্না-তারায়,
উড়ো চিঠি উড়ে উড়ে ঢেউ ভেঙে
আঁচড়ে পড়ে কাশের ডেরায়,
যেখানে থাকে না প্রেম, থাকে না দোলে ওঠা নদীর দুকূল
লুটেরা লুটে নেয় কাশবন মাটি,
পাখির পালক ছেঁড়ে, ছেঁড়ে শুভ্র ভালোবাসা
ছেঁড়ে সাদা মেঘ আকাশ সমান।
মেঘদূত উবু হয়ে থুথু দেয়, ঘৃণা ছোড়ে স্তরে স্তরে গজিয়ে ওঠা অসভ্য সমাজ।

 

সরলছায়া
দালান জাহান 

ঈশ্বরের হাত ধরে অসংখ্য ইঁদুর 
পৌঁছে গেছে পাহাড়ের ছাদে
তারা এখনো চূড়ায় দাঁড়িয়ে হাততালি দেয়
বাঁশি বাজলে নেচে ওঠে দাঁত কামড়ায়।
একদিনের প্রার্থনা ভাঙা সরলছায়ারা 
হারিয়ে যায় লাল পাসপোর্টে। 
ক্ষতের কাগজে শব্দহীন কালো কান্না
উপোস ভোরে জলদৌড়ে আসে শিমুল ফুলের বিয়ে। 
মায়ের হাত থেকে রেখাগুলো কেড়ে নিয়ে 
তারা কুকুরকে দিয়ে দেয়
মস্তিষ্ক ছিঁড়ে ছিঁড়ে পালন করে বিশুদ্ধ মৃত্যু উৎসব। 
মুমূর্ষু ক্যালেন্ডার থেকে 
পৃথিবীতে নেমে এসেছে পতন দিবস 
আমি আকাশকে বলে দিয়েছি 
আমি ঈশ্বরকে বলে দিয়েছি 
আপনার ইঁদুরগুলো থামান। ইঁদুরগুলো নিয়ন্ত্রণহীন।

 

খণ্ড এক মেঘের আকাশ
চিরঞ্জীব চ্যাটার্জী

ঐ যে খণ্ড এক মেঘের  আকাশ,         
খুব সকালে ঘুম ভেঙে হয়তো সে আষাঢ় হবে-
হতে পারে শ্রাবণের অঝোর মায়াও;
হতে পারে, 
এমনও সে হতে জানে নীলাদ্রি নিরুপম!
ঐ এক খণ্ড মেঘের আকাশও বোঝে,
ও যে জানে কতটা কান্না হলে তবে সবুজ হাসে-
কতটা কান্না হলে তবে রোদ হয় উনুনে-উনুনে।
ঐ যে এক খণ্ড মেঘের আকাশও ডুবে গেলে-
ও জানে,
অনেক কান্নারে সে তো মরে যেতে হবে-
মৃয়মাণ হতে হবে অনেক মায়ার সবুজেরে...
উনুনের রোদে-রোদে অরুন্ধতী চোখে দেবে দেখা জিজ্ঞাসা অপার; 
              
ওগো তুমি খণ্ড এক মেঘের আকাশ, 
আবার কখন তুমি তাই মোর আকাশ আষাঢ়!
আবার কখন তুমি সে গো মোর শ্রাবণ আঁধার!

 

পড়ন্ত বিকেলে
এম এ রহমান

একদিন হঠাৎই আপনার মনে হবে
আপনি একটা
একমুখী রাজপথে দৌড়াচ্ছেন
পড়ন্ত বিকেলে শেষ রোদটুকু
আপনার সামনে দৌড়াচ্ছে
তাকে ছুঁতে চাইবেন অথচ পারবেন না
পা অনেক ভারী হয়ে যাচ্ছে
আপনি থামতে চাইবেন
কিন্তু সামন-পেছনে দ্রুত যান
ডানে বামে তাকাবেন
কিন্তু দাঁড়াতে পারবেন না
আপনার ভেতরে অনেক যাত্রী
নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই
পেছনের সিটে বসে আছেন আপনি
শরীরের জমে থাকা ক্লান্তি
মাঝে মাঝে কেউ খুলে দেবে
আপনি দাঁড়াতে চাইবেন
অথচ পারবেন না

একদিন দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎই 
দেখবেন আপনি কোথাও নেই
আপনার বরাদ্দের সিটটিও পূর্ণ...

 

কেন যে বোকার মতো
মেহেদী ইকবাল 

বেদনাকে বলেছি যাব না
যতই তীক্ষ্ণ হোক চঞ্চু তোমার
যত পার ঠোকরাও
কাঠ নয়, স্পর্শকাতর শরীরে আমার
রক্তাক্ত আহত কর
শুষে নাও টপ টপ ঝরে পড়া রক্তের ফোঁটা।

না, উঠব না কঁকিয়ে আমি যন্ত্রণায়
ঠোকরাও আনন্দে তুমি বিরতিহীন
তীক্ষ্ণ ঠোঁটে ছিঁড়ে নাও মাংসপিণ্ড 
যদি চাও ছিদ্র কর
বুকের এইখানে ঠুকরে যাও হৃদয় আমার।

না, যাব না যাব না কিছুতে আমি
কেন যে বোকার মতো 
রক্তবর্ণ চোখ

আমাকে দেখাও ভয়!

 

শঙ্খপাড়ের হেলেন
গাজী গিয়াস উদ্দিন 

শঙ্খ তুমি নীল থেকে 
নদীর উত্তরাধিকার দুঃখ মেলাও
এককালে লোক ভুলে কষ্টের শোক
যখন ইহকাল বেদনার পিরামিড!

বিজ্ঞানের ছায়াতলে বিরহের অববাহিকায় 
স্মৃতি-সম্রাজ্ঞী প্রেয়সীর সকাল বিকাল 
নশ্বর এত সুন্দর 
স্বর্ণলতা রূপে- পারফিউমে এশিয়া ঐশ্বরিয়ায়
পুরুষের চোখে পোড়ানো অন্তর্জাল, 

আজ তোমার কম্পিত স্মরণ 
খুঁজে আনে যন্ত্রণার অবিনশ্বর 
দুমড়ে-মুচড়ে হিয়া চোখজুড়ে শঙ্খের বিরহিণী পাল।

হিংসার নিষ্ঠুর প্রায়শ্চিত্ত করুক 
না ভাঙুক কুসংস্কার ঝড়ে পাখির বাসা,

সেসব চিত্তদাহ বিরহ ছড়ানো পথে 
প্রণয়ের বিদগ্ধ বিস্ময় শঙ্খের হরিণী হেলেন।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৭ পিএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

বিনিময়
সাত্ত্বিক দাস

আকাশজুড়ে ধুধু মাঠ,
ওই, আকাশে নক্ষত্রের নাচ, ও পাড়ার বারোয়ারি তলায়।
নির্ঘুম পেঁচার দল, ঘুম চোখে মাথা নাড়ে নিঃসংকোচে
নক্ষত্রের আলোয়, আমার মাথার ভিড়।
পোড়া ভাতের গন্ধে, একাকী ছায়ামূর্তি,
নিরুপায় চোখে চেয়ে আছে, সম্মুখ পানে
কী দেবে বিনিময়ে?
দুই মুঠো ভাত, 
প্রেম, ভালোবাসা, আদুরে হাত।
না কি, মৃত্যু যন্ত্রণা।।

 


দগ্ধ হৃদয়ের খোঁজ
সুমনা আফরিন

তার কোথাও একটা শূন্যতা ছিল
হয়তো শূন্যতায় ভরা কুঠরি ছিল
হয়তো তাতে
নিচ্ছিদ্র যন্ত্রণায় ভরা কোনো দুঃখবাক্স ছিল।

তার বাক্সে হয়তো কালো ও নীল কলম ছিল
কলমে কালি ছিল কম
হৃদয়ে কথার গুরুভার থাকলেও
সব কথা হস্তাক্ষর পায়নি।

তার জন্য সংরক্ষিত সবুজ কালির
সতর্কতার লাল কালির 
বল পেনের কোনো কমতি ছিল না।

তার চোখ বলত
ফাউন্টেন পেনের
অভিলাষ তার নেই।
বাসনা কেবল একটা শূন্য ডাকবাক্সের
শূন্য খাতার অধিকারী
একজন দগ্ধ মানুষের।

তার চোখে খোঁজ ছিল
কোনো পোড়া চোখের
পোড়া চোখের দগ্ধ হৃদয়ই পারে
পৌরহিত্যে করে
বুকের জগদ্দল পাথর নামাতে
দগ্ধ জনের অসীম শূন্যতা ঘোঁচাতে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ এএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

ফেরারি নারী
মোহামেদ সাইফুল হাসান

কৃত্তিকা তারার আবির্ভাব হেমন্তের পশ্চিমাকাশে
মৃদুমন্দ শীত নীরবতার গহিন অন্ধ রাতে,
বাঁশির সকরুণ আওয়াজ বাউল গানের সুরে 
টিনের চালে বেদনাতুর শিশির ঝরার শব্দ 
ছাতিমের গন্ধে অতীতের উঁকি তৃষিত অন্তরে,
পুরো একটি বছরের দূরত্ব, হলো দেড় কোটি সমান
অতিথি পাখিরাও চলে এল আপন দেশ ছেড়ে
শুধু ফেরারিদের ফিরে আসার নাম নেই!

 


শক্তি
রজব বকশী 

প্রতিটি মানুষ এক একটি প্রদীপ 
হোক না সে অন্ধ কিংবা অন্ধকারে একা 
তথাপি জ্বলতে থাকে 
দৃশ্য-দৃশ্যান্তর

এই শক্তির প্রাচীন ব্যবহারে পড়ে থাকে কেউ 
কেউবা নতুন করে পথ খুঁজে ফেরে 
কেবলি নিজের জন্য নয় 
সামগ্রিক চৈতন্যের বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ে ভাবতে শেখায় 

এই জেগে থাকা আর জাগানোর গান
আপন সত্তায় প্রতিস্থাপনের টেকনিক স্বপ্ন টাওয়ার
অন্যরকম বোধের আকরিক সংকেত পাঠায়
মানবিক মূল্যবোধে মেধা প্রতিভার এক একটি নক্ষত্র 

এই সভ্যতার আলোকিত মনিটরে ভেসে ওঠে 
ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে যে পাওয়াগুলো জয়ধ্বনি করে
সেই আলোয় নিজেকে নতবৃক্ষ হতে দেখা যায়
তারই ইতিহাস পাঠে মনোযোগী আমাদের সময়ের ঢেউ 

 


ক্লিওপেট্রার রোমাঞ্চকর প্রেম 
সাগর আহমেদ 

ক্লিওপেট্রার হাতে সোমরসে শরাব পাত্র 
গলায় প্যাঁচানো সদন্তে সাপ,

তার খিলখিল হাসিতে ছলনার রং 
দেশ, মহাদেশ পেরিয়ে জুলিয়াস সিজার 
পেল তবে পাপ?

এল গৃহযুদ্ধ, এল বিদেশি শক্তি, বিশ্বাসঘাতকতা 
হারেমের দেয়ালে তবু প্রেম আলপনা,
ক্লিওপেট্রার এক হাতে প্রেম, অন্য হাতে যুদ্ধ 
ফণীমনসার রাতে দারুণ উন্মাদনা।

প্রেম, বিরহ, ছলনায় ক্লিওপেট্রা, জুলিয়াস সিজার 
স্থিত যুগে যুগে,
সে এক রোমাঞ্চ কাব্য
উন্মাতাল সর্বগ্রাসী যৌবন সম্ভোগে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ 
মিনহাজ উদ্দিন শপথ 

রোদের হ্যাঙ্গারে শুকাই 
গত রাতের ভেজা চোখ 
স্যাঁতস্যাঁতে স্বপ্নের পর্দা
তোমার কাছ থেকে ফিরে আসার পর মনে হলো 
বাগানের ফুলগুলো আজ
অযথাই সৌরভে সারাৎসার। 

অন্ধের কাছে সব ইন্দ্রিয় দক্ষতার কথা 
জানতে চেয়ো না কখনো আর
আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ

 

 


জখমিপ্রেম
মোজাম্মেল সুমন

অতঃপর তুমি
নির্বিঘ্নে পবিত্র হৃদয়ের ভূমি
থেকে হারিয়ে যাওয়াতে
শূন্যতার হাওয়াতে
একাকিত্বের ছায়া জমতে জমতে
ভালো থাকা কমতে কমতে
আমার নিগড়ে পড়ার
চোখের অশ্রুজল বিগড়ে মরার
প্রতিধ্বনিতে বরফ
হয়ে নিশ্চুপ থাকলেও আমার তরফ
থেকে এখনো কিঞ্চিৎ লুকাইনি
অথবা শুকাইনি
বলে প্রতিনিয়ত বোবাকষ্ট প্রপাতের
দৃশ্য বেদনার প্রভাতের
মতো ফোটে
আর জীবনে জোটে
জখমিপ্রেমের অসহ্য ভগ্নাংশ
কিংবা নিষ্পেষিত অহেতুক স্বপ্নাংশ
যার প্রকৃত মানে
বেঁচে থাকা ক্রমাগত জীবন্মৃতের পানে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

ঐশ্বর্য সুখ-হেমন্তকাল 
পবিত্র মহন্ত জীবন 

সাদারঙে মেঘবালিকা ভেসে বেড়ায় আকাশে...
শীতের সকাল, উল্টো হেমন্তের খোলাহাওয়া 
হিমায়িত কুয়াশায় চাদরে ঢেকে যায় রোদ্দুর।
বাঁশপাতার ফাঁকে টুপটাপ শিশির জলফোঁটা...
সোনা মাটির সবুজবীথি, ফসলের মৌ সুগন্ধ
হেমন্তের আগমন নবান্ন সুখ, ক্যানভাসে ভাসে।
ফড়িংভেজা সকাল চুঁইয়ে চুঁইয়ে টুপটুপ বৃষ্টি
দূর্বাঘাসের ডগায় শিশিরের টলোমলো 
হলুদ রং ছোঁয়াতে বসে ঐশ্বর্য সুখ, আনন্দকাল...
মৌমাছি ফুলে ফুলে মধুভরা হেমন্তকাল
কাঁচাপাকা ফসিল মাঠ, কাজে ব্যস্ত কৃষাণ
গ্রামবাংলার কাদামাটির হাঁড়ি বানায় পাল...
শিল্পের সাবলীল জলছবি হেমন্তকাল।

 

 

রোদের ডাকপিওন
মতিউর রহমান

মৃত সকালের চৌকাঠে পা রেখে দেখি…
শীত আর কুয়াশায় লেখা চিঠি হাতে ডাকপিওন
চিঠির খাম খুলি
কিছু কান্না আর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ
অস্ফুটে গোঙায়
প্রেমিকার চুলে সূর্যাস্তের রং মুছে
যে দিন গত হয়েছিল
ফিরে ফিরে আসে
আমি শীত-কুয়াশা উপেক্ষা করে
দিনরাত সেলাই করি আলুথালু জীবন, যাপনের ছেঁড়া জামা
একটু একটু করে পুবালি আকাশ হলুদ হয়
দূরে দেখি, রোদের ডাকপিওন
পায়ে পায়ে হেঁটে আসে আমার আঙিনায়।

তবু কেউ নেই

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬ পিএম
তবু কেউ নেই

কেউ ছিল না এমন তো নয়
কেউ তো ছিল।
তবু কেউ নেই, কেউ কোথাও নেই!
ওই সুদূরে ভেসে ওঠে খুব চেনামুখ
তবু মনে হয় অচেনা, ভীষণ অচেনা!
জীবনের গল্পগুলো মায়ায় আচ্ছন্ন
এক ধূসর কালো বিরহী উপসংহার।
গোধূলির রং ছুঁয়ে নেমে আসা রাত
নির্ঘুম জোনাকির মতো আলো জ্বেলে
অপেক্ষায় থাকা নিবিড় উষ্ণ অনুভব
বাতাসের বুকে হাস্নাহেনার সৌরভ।
ওই নগ্ন আঁধার ভুলে গেছে প্রতিশ্রুতি
ফিরে আসে নীল খামে বিরহ চিরকুট।
বুকের যত কথা নির্বাক অপাঙ্‌ক্তেয়
ব্যথার অসুখে ক্ষত হয় হৃৎঅন্তঃপুর।