ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

কবিতা

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ পিএম
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ পিএম
কবিতা

জীবনস্রোত 

সুমন রেজা 

ক্ষণজন্মা শৈবালের মতো জীবন
জোয়ার-ভাটার আকর্ষণ, বিকর্ষণে
এ কূল-ও কূল ঘুরে-ফিরে অবশেষে
বানভাসি স্রোতে মিশে যায় নিয়মে

একফোঁটা ছন্দের খোঁজে এ যাত্ৰা
কখনো হয় না নিয়তির মতো মসৃণ
জেনেও, অন্ধের মতো এ ছুটে চলা
শুধু খুঁজে ফেরে জীবনের শিল্পকলা

পরজীবী সময়কে নিজের করে নিতে
ছাড়তে হয় কত প্রিয় সুখময় আশ্ৰয়
দীর্ঘ হয় প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সমীকরণ
চুকে যায় লেনদেন, শরীরের হয় মরণ।

বিবাহবার্ষিকী

সাবিত্রী সাহা 

বছর ঘুরে শ্রাবণ এসেছে বন্ধন দৃঢ় হয়েছে। 
শ্রাবণ ঘুরে ঘুরে আসুক পাকাচুলে সিঁদুর দিই
তোমার নামে শঙ্খ পরি
তুমি আমি একসাথে বুড়ো হই।
ডায়াবেটিস মাপি, চশমার পাওয়ার বদল করি, 
তুমি আমার আমি তোমার হাতের লাঠি হই
কে আগে কে পরে, যাবার দিন গোনার আগে এ বন্ধন জন্ম-জন্মান্তরের হোক অভিলাষ রাখি।

জাগো বাঙালি ছাত্র-জনতা 

রুমানা আক্তার রত্না  

জাগো বাঙালি জাগো, বীরের বেশে 
এই বাংলায় আবার অস্ত্র ধরো
বিদ্যাপীঠে আছে যত সন্ত্রাসীর চেলা
শিকড়সহ উপরে ফেলো!
প্রতিরোধের প্রতিবাদে একতা গড়ো
আর কতকাল বোধির হয়ে  
দেখবে এদের ছলচাতুরী খেলা! 
হে বর্বর দৈত্য দানব অসুর পশুর দল
কোথায় তোমাদের শিক্ষাদীক্ষা?
ক্ষমতার লোভে অন্ধ তুমি, স্বৈরাচারীর বল!
আমি ঘৃণা করি! আমি ঘৃণা করি! 
তুমি মানুষ নও! তুমি মানুষ নও! 
তুমি এই সমাজে ছাত্র নামের কীট।
তুমি নিঃশ্বাস কাড়লে আমার, হয়ে মহাবীর 
রাজপথে ঝরা প্রতিটি রক্তের ফোঁটায়
এবার জন্ম হবে, দেখবে তুমি লাখো কোটি বীর! 
ভাই বোন হত্যার বিচার করতে 
এগিয়ে এসে সব, ছাত্র-জনতা সৈনিক। 
আমি রাজাকার নই! রাজাকার নই! 
কৃষক শ্রমিক দিনমুজুরের সন্তান। 
আমি বাঙালি, আমার রক্তে মিশে আছে 
সেই একাত্তরের প্রতিবাদী ঘ্রাণ।
অধিকার আদায়ে, আজও থাকব অবিচল
বাংলার মানুষই এই বাংলার বল,
মনে রেখো স্বৈরাচার জালিম সেনার দল।

শ্রাবণ 

সুশান্ত কুমার দে 

এসেছে শ্রাবণ নদী নালা প্লাবন
কদম ফুলের সৌরভে মুখরিত বন।
সারা দিন ঝরঝর কালো মেঘের ভর 
উঠোনে কাঁদা ঐ দেয়া কড়মড়!
ঐ দূরে তাল গাছে বজ্রপাতে 
আগুনে ঝলসানো পাতাগুলো তাতে।
গোয়ালে গরু দুটি, একটু ছোটাছুটি 
নীড়ে চড়াই ছানা থাকে গুটিসুটি।
ছাতি মাথায় হাটে যায়, গহর আলি ভাই 
ঘরে তার এতটুকু চাল-ডাল নাই !
পুকুর পাড়ে চ্যাং-শোল, কই আর পুঁটি 
হাবুল বাবুল দুই ভাই ধরে মুঠি মুঠি।
গহর আলি খানা সেচে মাছ ধরতে যায় 
দা-কোদাল, ঘুনচি ঘুনি খুঁজতে জীবন যায়।
কোলা ব্যাঙ মাথা তুলে ডাকে ঘ্যাঙর গ্যাং 
পা পিছলে পাতি হাঁসের ভেঙে গেল ঠ্যাং।
সবুজ বনের পাতাবাহার রূপবৈচিত্র্যে ভরা 
আহা  কী, অপরূপ সৌন্দর্যময় এ ধরা।
বৃষ্টিভেজা বনবনানী, কতক পাখির ছা 
সারাক্ষণ ভিজে ভিজে, জ্বরে কাঁপল গা।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৭ পিএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

বিনিময়
সাত্ত্বিক দাস

আকাশজুড়ে ধুধু মাঠ,
ওই, আকাশে নক্ষত্রের নাচ, ও পাড়ার বারোয়ারি তলায়।
নির্ঘুম পেঁচার দল, ঘুম চোখে মাথা নাড়ে নিঃসংকোচে
নক্ষত্রের আলোয়, আমার মাথার ভিড়।
পোড়া ভাতের গন্ধে, একাকী ছায়ামূর্তি,
নিরুপায় চোখে চেয়ে আছে, সম্মুখ পানে
কী দেবে বিনিময়ে?
দুই মুঠো ভাত, 
প্রেম, ভালোবাসা, আদুরে হাত।
না কি, মৃত্যু যন্ত্রণা।।

 


দগ্ধ হৃদয়ের খোঁজ
সুমনা আফরিন

তার কোথাও একটা শূন্যতা ছিল
হয়তো শূন্যতায় ভরা কুঠরি ছিল
হয়তো তাতে
নিচ্ছিদ্র যন্ত্রণায় ভরা কোনো দুঃখবাক্স ছিল।

তার বাক্সে হয়তো কালো ও নীল কলম ছিল
কলমে কালি ছিল কম
হৃদয়ে কথার গুরুভার থাকলেও
সব কথা হস্তাক্ষর পায়নি।

তার জন্য সংরক্ষিত সবুজ কালির
সতর্কতার লাল কালির 
বল পেনের কোনো কমতি ছিল না।

তার চোখ বলত
ফাউন্টেন পেনের
অভিলাষ তার নেই।
বাসনা কেবল একটা শূন্য ডাকবাক্সের
শূন্য খাতার অধিকারী
একজন দগ্ধ মানুষের।

তার চোখে খোঁজ ছিল
কোনো পোড়া চোখের
পোড়া চোখের দগ্ধ হৃদয়ই পারে
পৌরহিত্যে করে
বুকের জগদ্দল পাথর নামাতে
দগ্ধ জনের অসীম শূন্যতা ঘোঁচাতে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ এএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

ফেরারি নারী
মোহামেদ সাইফুল হাসান

কৃত্তিকা তারার আবির্ভাব হেমন্তের পশ্চিমাকাশে
মৃদুমন্দ শীত নীরবতার গহিন অন্ধ রাতে,
বাঁশির সকরুণ আওয়াজ বাউল গানের সুরে 
টিনের চালে বেদনাতুর শিশির ঝরার শব্দ 
ছাতিমের গন্ধে অতীতের উঁকি তৃষিত অন্তরে,
পুরো একটি বছরের দূরত্ব, হলো দেড় কোটি সমান
অতিথি পাখিরাও চলে এল আপন দেশ ছেড়ে
শুধু ফেরারিদের ফিরে আসার নাম নেই!

 


শক্তি
রজব বকশী 

প্রতিটি মানুষ এক একটি প্রদীপ 
হোক না সে অন্ধ কিংবা অন্ধকারে একা 
তথাপি জ্বলতে থাকে 
দৃশ্য-দৃশ্যান্তর

এই শক্তির প্রাচীন ব্যবহারে পড়ে থাকে কেউ 
কেউবা নতুন করে পথ খুঁজে ফেরে 
কেবলি নিজের জন্য নয় 
সামগ্রিক চৈতন্যের বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ে ভাবতে শেখায় 

এই জেগে থাকা আর জাগানোর গান
আপন সত্তায় প্রতিস্থাপনের টেকনিক স্বপ্ন টাওয়ার
অন্যরকম বোধের আকরিক সংকেত পাঠায়
মানবিক মূল্যবোধে মেধা প্রতিভার এক একটি নক্ষত্র 

এই সভ্যতার আলোকিত মনিটরে ভেসে ওঠে 
ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে যে পাওয়াগুলো জয়ধ্বনি করে
সেই আলোয় নিজেকে নতবৃক্ষ হতে দেখা যায়
তারই ইতিহাস পাঠে মনোযোগী আমাদের সময়ের ঢেউ 

 


ক্লিওপেট্রার রোমাঞ্চকর প্রেম 
সাগর আহমেদ 

ক্লিওপেট্রার হাতে সোমরসে শরাব পাত্র 
গলায় প্যাঁচানো সদন্তে সাপ,

তার খিলখিল হাসিতে ছলনার রং 
দেশ, মহাদেশ পেরিয়ে জুলিয়াস সিজার 
পেল তবে পাপ?

এল গৃহযুদ্ধ, এল বিদেশি শক্তি, বিশ্বাসঘাতকতা 
হারেমের দেয়ালে তবু প্রেম আলপনা,
ক্লিওপেট্রার এক হাতে প্রেম, অন্য হাতে যুদ্ধ 
ফণীমনসার রাতে দারুণ উন্মাদনা।

প্রেম, বিরহ, ছলনায় ক্লিওপেট্রা, জুলিয়াস সিজার 
স্থিত যুগে যুগে,
সে এক রোমাঞ্চ কাব্য
উন্মাতাল সর্বগ্রাসী যৌবন সম্ভোগে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ 
মিনহাজ উদ্দিন শপথ 

রোদের হ্যাঙ্গারে শুকাই 
গত রাতের ভেজা চোখ 
স্যাঁতস্যাঁতে স্বপ্নের পর্দা
তোমার কাছ থেকে ফিরে আসার পর মনে হলো 
বাগানের ফুলগুলো আজ
অযথাই সৌরভে সারাৎসার। 

অন্ধের কাছে সব ইন্দ্রিয় দক্ষতার কথা 
জানতে চেয়ো না কখনো আর
আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ

 

 


জখমিপ্রেম
মোজাম্মেল সুমন

অতঃপর তুমি
নির্বিঘ্নে পবিত্র হৃদয়ের ভূমি
থেকে হারিয়ে যাওয়াতে
শূন্যতার হাওয়াতে
একাকিত্বের ছায়া জমতে জমতে
ভালো থাকা কমতে কমতে
আমার নিগড়ে পড়ার
চোখের অশ্রুজল বিগড়ে মরার
প্রতিধ্বনিতে বরফ
হয়ে নিশ্চুপ থাকলেও আমার তরফ
থেকে এখনো কিঞ্চিৎ লুকাইনি
অথবা শুকাইনি
বলে প্রতিনিয়ত বোবাকষ্ট প্রপাতের
দৃশ্য বেদনার প্রভাতের
মতো ফোটে
আর জীবনে জোটে
জখমিপ্রেমের অসহ্য ভগ্নাংশ
কিংবা নিষ্পেষিত অহেতুক স্বপ্নাংশ
যার প্রকৃত মানে
বেঁচে থাকা ক্রমাগত জীবন্মৃতের পানে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

ঐশ্বর্য সুখ-হেমন্তকাল 
পবিত্র মহন্ত জীবন 

সাদারঙে মেঘবালিকা ভেসে বেড়ায় আকাশে...
শীতের সকাল, উল্টো হেমন্তের খোলাহাওয়া 
হিমায়িত কুয়াশায় চাদরে ঢেকে যায় রোদ্দুর।
বাঁশপাতার ফাঁকে টুপটাপ শিশির জলফোঁটা...
সোনা মাটির সবুজবীথি, ফসলের মৌ সুগন্ধ
হেমন্তের আগমন নবান্ন সুখ, ক্যানভাসে ভাসে।
ফড়িংভেজা সকাল চুঁইয়ে চুঁইয়ে টুপটুপ বৃষ্টি
দূর্বাঘাসের ডগায় শিশিরের টলোমলো 
হলুদ রং ছোঁয়াতে বসে ঐশ্বর্য সুখ, আনন্দকাল...
মৌমাছি ফুলে ফুলে মধুভরা হেমন্তকাল
কাঁচাপাকা ফসিল মাঠ, কাজে ব্যস্ত কৃষাণ
গ্রামবাংলার কাদামাটির হাঁড়ি বানায় পাল...
শিল্পের সাবলীল জলছবি হেমন্তকাল।

 

 

রোদের ডাকপিওন
মতিউর রহমান

মৃত সকালের চৌকাঠে পা রেখে দেখি…
শীত আর কুয়াশায় লেখা চিঠি হাতে ডাকপিওন
চিঠির খাম খুলি
কিছু কান্না আর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ
অস্ফুটে গোঙায়
প্রেমিকার চুলে সূর্যাস্তের রং মুছে
যে দিন গত হয়েছিল
ফিরে ফিরে আসে
আমি শীত-কুয়াশা উপেক্ষা করে
দিনরাত সেলাই করি আলুথালু জীবন, যাপনের ছেঁড়া জামা
একটু একটু করে পুবালি আকাশ হলুদ হয়
দূরে দেখি, রোদের ডাকপিওন
পায়ে পায়ে হেঁটে আসে আমার আঙিনায়।

তবু কেউ নেই

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬ পিএম
তবু কেউ নেই

কেউ ছিল না এমন তো নয়
কেউ তো ছিল।
তবু কেউ নেই, কেউ কোথাও নেই!
ওই সুদূরে ভেসে ওঠে খুব চেনামুখ
তবু মনে হয় অচেনা, ভীষণ অচেনা!
জীবনের গল্পগুলো মায়ায় আচ্ছন্ন
এক ধূসর কালো বিরহী উপসংহার।
গোধূলির রং ছুঁয়ে নেমে আসা রাত
নির্ঘুম জোনাকির মতো আলো জ্বেলে
অপেক্ষায় থাকা নিবিড় উষ্ণ অনুভব
বাতাসের বুকে হাস্নাহেনার সৌরভ।
ওই নগ্ন আঁধার ভুলে গেছে প্রতিশ্রুতি
ফিরে আসে নীল খামে বিরহ চিরকুট।
বুকের যত কথা নির্বাক অপাঙ্‌ক্তেয়
ব্যথার অসুখে ক্ষত হয় হৃৎঅন্তঃপুর।