নদী শুকিয়ে যায়
বাশার মাহফুজ
বহুগামী দুঃখের ফোয়ারায় চোখের শহরে প্লাবন নামে
তবু, শাবক স্বপ্নের উর্বরতায় ফুটছে জুঁইফুল
বুকের মানচিত্রে নতুন দ্বীপ নতুন অধ্যায় চাঁদ।
প্রিয় জোছনা। প্রিয় জানালায় উপেক্ষিত এই বেঁচে থাকা।
সবগুলো নদীতে স্বপ্নের নামে পাল ওঠালাম
তবু নদী শুকিয়ে যায়
মৃত্যুর কঙ্কালে জেগে ওঠে অমানবিক চর
বাতাসের কানে ভুল সংগীত বেজে ওঠে।
ভুলে মাখা এই পথ ফুরাতে চায় না
সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে
সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে
এই ভেবে কেটে গেল পুরো একটা জীবন!
কালিদাসের মুখোমুখি
সায়্যিদ লুমরান
বড় অভিমান করে আছে মেঘগুলো! এই মুহূর্তেই পত্র প্রস্তুত করো। সম্বোধনের যথাযোগ্য শব্দ পেতে তরুণ কবিকে বসাও কালিদাসের মুখোমুখি।
অতঃপর বিস্তারিত লিখতে সমস্ত বাংলা কবিতা থেকে তুলে আনো অজস্র বর্ষার বাৎসায়নঃ
যে বাতাস যমুনাগামী তার ডানায় ডানায় কদম ফুলের রেণু, সে বাতাস শব্দে সঞ্চারিত করে পত্রে লিপিবদ্ধ করো।
আরও সঞ্চারিত করে দাও বাক্যের আত্মায় বংশীবাদকের বুক থেকে উঠে আসা রাগ- মেঘমল্লার।
গভীর অরণ্যে নীলাম্বরীর ভাঁজে যে শরীর, তার নৃত্যের ভঙ্গিমার সাথে পত্রের পুনশ্চে এঁকে দাও রাধিকার পদচিহ্ন।
আলবৎ! পত্রের অপর পিঠে অঙ্কন করো বৃষ্টির সিলমোহর।
বড় অভিমান করে আছে মেঘগুলো! এই মুহূর্তেই পত্র প্রস্তুত করোঃ কবুতর নয়, এ অনাবৃষ্টির কালে পানকৌড়ির পায়ে চিঠি বেঁধেই মেঘকে বার্তা পাঠাও।
ইচ্ছে
আহমেদ আশিক
ইচ্ছে আমার আকাশ সমান
ভেবে তো না পাই,
এই যে মাটির দেহখানা
সৃষ্টি মালিক সাঁই।
প্রেম-পিড়িতের মাখামাখি-
দেহের মাঝে দমের পাখি
কখন পাখি উড়ে যাবে
ঠিকঠিকানা নাই।
মালিক চালায় বলেই চলি
আমার মাঝে সাঁইকে খুঁজি,
আসলেই কি প্রভুর কাছে
আমার আছে ঠাঁই?
অপ্রস্তুত মেঘবালিকা
মুহাম্মদ রফিক ইসলাম
সকালের খামে ওড়ে দুপুরের চিঠি!
মন খারাপের পাশে মেঘবালিকার
নীরবতা, ভালো নেই শ্রাবণ বিকেল।
কদম-কেয়ার বনে সন্ধ্যার বর্ণিল
আয়োজনে বাদুড়ের রাতকানা চোখ।
নাড়ির টানের মতো আকাশের টান
পৃথিবীর, মৃত্তিকার সোঁদামাখা পথে।
বাতাসের ডানা জানে পাহাড়ের বাড়ি;
প্রণয়ের মানে বোঝে ঝরনার স্রোত!
কদম-কেয়ার বনে সন্ধ্যার পিদিম;
মেঘবালিকার মনে আলো ঢুকে গেলে
মুছে যায় অন্ধকার, বির্বণ অতীত!
ফুডব্লগাররা কেন এত জনপ্রিয়
মেহেদী ইকবাল
খিদে নিয়ে জন্মেছে মানুষ
অন্য প্রাণীর মতো
তবে তারা শৌখিন
কত শত রেসিপি আর মসলার ঘ্রাণ
বৈচিত্র্য আর চমকে ভরা খাবার টেবিল তাদের।
যদিও আছে অনিয়ম
বণ্টনে বঞ্চিত যারা থাকে তারা অনাহারে
আছে অপচয় আর জঘন্য কাড়াকাড়ি উচ্ছিষ্ট নিয়ে।
মানুষের লোভী চোখ খোঁজে রেসিপি শুধু
অনাহারে থাকে যারা
তাদেরও চোখ খাবারের দিকে।
মানুষ খেতে ভালোবাসে
আর লোভী কিংবা ক্ষুধার্ত চোখে
ভালোবাসে দেখতে
খাবার প্লেটভর্তি!
মূল্যহ্রাস
দালান জাহান
এই এলাকায় কোনো শিল্পী নেই
অথচ রোজ রাতে কে যেন
তিনটি মুমূর্ষু মহাদেশ এঁকে যায় কৃষ্ণঠোঁটে।
এই এলাকায় কোনো জ্যোতির্বিদ নেই
অথচ কম্পমান চোখের পাতায়
টেলিস্কোপ নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে
নিঃশ্বাস বেয়ে নিউরনে ওঠা ঠাণ্ডা সুতি সাপ।
এই এলাকায় কোনো ঈশ্বর নেই
নক্ষত্র নেই শত্রু নেই
অথচ মূল্যহ্রাসের মায়াবাজারে
দীর্ঘ হচ্ছে তোমার শাড়ির দাম।
ইন্দ্রজাল
সাঈদুর রহমান লিটন
আবার কোনো প্রজাপতি উড়ে আসে
মনের বেখেয়ালে ঠাঁয় নেয় অন্তরে
মমতা জন্ম নেয় মন-মননে।
তার পরশ মন ছুঁয়ে যায়
দাগ কেটে যায় অন্তরে।
তার ডানার আদর আর অকৃত্রিম সৌন্দর্যে
এক ইন্দ্রজাল তৈরি করে যায়
সেই প্রজাপতির উড়ে যাওয়া, ছুঁয়ে যাওয়া
সব কিছু ভালো লাগে।
শোকার্ত দুচোখ
পবিত্র মহন্ত জীবন
অঝোরে কাঁদে শোকার্ত দুচোখ-
অধীর গতি, বিকর্ষ বিক্ষোভ মিছিল
হৃদ-গগনে সহস্র কষ্টের আবরণ
তীব্র ক্ষোভ, অসহ্য যন্ত্রণা
জীর্ণ কাচের নল ক্ষতবিক্ষত
ব্যথা, কাতরে ওঠে বুকের ভিতর,
নিন্দন ঘৃণা, অমীমাংসিত, তাচ্ছিল্য
কালো মেঘের আনাগোনা, শোকার্ত চোখ
অঝরে কাঁদে পাহাড়-পর্বত, ঝরনাধারা
দুঃখের তরীতে ভাসে ভূমি সমতল;
সমুদ্র কোলাহল।
সেসব অবোধগম্যতা
গাজী গিয়াস উদ্দিন
সহস্র রহস্যের জগতে আমাদের অদৃষ্ট বিচরণ!
লাগসই ভাষা কই সেসব অবোধগম্যতা নিয়ে খেলে
মার্জার ছানারাও অবাক দূরত্বে অপরিচিত পরিবেশে
পরম স্বজনের মনোভাব কেন মুশকিলে ফেলে?
অথচ জলবায়ুর স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয় বায়ুবিদ
প্রণয়পুষ্পের সন্ধানেও মৌমাছির কাছে হই নাকাল
রোবট ও রমণীর সুষম মিথস্ক্রিয়া এ আইয়ের ধ্রুব জয়-জাল,
শিশুর অভিমান ভাঙতেও হিমশিম অভিজ্ঞ মনোবিদ!
তবু চলে ঠিকঠাক সেলাইয়ের সব চটকল,
শত রহস্য বিফল এ কোন ম্যাজিক- কোন মিরাকল!
তনুমন শুশ্রূষা- ঘুরপ্যাঁচ মৃত্যুর চতুর্ভুজ সমীকরণ!
দিন কাটছে বেশ
সাদেকুর রহমান সাদিক
ফসল নাকি উদ্বৃত্ত
খাদ্যে গুদাম ভরা,
বিদেশ থেকে চাল না এলে
দেশের বাজার চড়া।
ঋণখেলাপির পকেট ভারী
বাড়ছে ক্রয়ক্ষমতা,
আমলা আর সাধারণে
আকাশ-পাতাল সমতা।
গিন্নি যখন সকালবেলা
হাতে ধরায় থলি-
পকেটে মোর ঘুঘু নাচে
কেমন করে বলি।
আয় বাড়েনি আমজনতার
তবু মধ্যবিত্ত দেশ,
ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে
দিন কাটছে বেশ।