ঢাকা ১২ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

সাহিত্যসভার এ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম
সাহিত্যসভার এ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

দুধের সন্তান 
সাবিত্রী সাহা 

আমার কোলে দুধের সন্তান, দয়া করে খাদ্যদ্রব্যের দাম কমান। 
আপনি জানেন! সন্তান জন্মদানের পর একজন মায়ের পেটে কতটা ক্ষুধা?
ডাল-ভাতেই আমার সুধা 
কাকে বলব খাদ্যদ্রব্যের দামের কথা?
স্বামীর রোজগারে টান, আমার খাবার শাশুড়ির হাতে ওঠে না
শ্বশুর বলে বাজার দর বেশি, আপনি বলেন বাজার স্থিতিশীল।
সারা রাত দুধ খায় কোলের শিশু, স্তনবৃন্তে ব্যথা।
সন্তান জন্মদানের পর আমার মুখে আকাশ সমান স্বাদ
একাই খেতে ইচ্ছে করে হাঁড়ির অর্ধেক ভাত।
বাঁচার জন্য খাদ্য আমার মৌলিক অধিকার, 
আপনি খাদ্যদ্রব্যের দাম কমান 

 

শুভ্র শিউলি ভোরে
এস ডি সুব্রত

হেমন্তের মৃদু সমীরণ ভেতরে রমণীয় প্রেম 
শেফালীর মালা শুকায় নীরব অভিমানে 
ধবল মেঘের পানে মনময়ূরী যায় উড়ে 
হৃদয় নিংড়ানো শিশিরস্নাত শুভ্র শিউলি ভোরে,
বিস্মৃত হয় ঝরা পাতার গান আনমনে 
অদিনের দিন শেষে জাগে সুদিনের আশা
দুয়ারে হেমন্ত একবুক স্বপ্ন জাগানিয়া 
সুন্দর আগামী আসে বাংলার আলপথ ধরে।

 

বাড়ন্ত বয়স 
কাজল নিশি 

আজ দুপুরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছিল
উঠোন কোনে ঠায় দাঁড়িয়েছিলাম।
হঠাৎ জলের ঝাপটায় শিহরিত হয় বক্ষ!
অবয়ব গোঙানি দিয়ে বলে
ওই যে, নদীর কিনারে বসে আছে-
তার নিকটে আছে আনন্দ জল।

আঁচলে মুখ ডেকে লাজুক কণ্ঠে কাছে গিয়ে বললাম
আমায় একটু স্নান করতে দেবেন? 
খানিক সময় তাকিয়ে থেকে বলল
কি সব অবান্তর প্রশ্ন করছেন!
শরমে আঁখি জলে বক্ষ ভাসে...

কি আশ্চর্য!
বেহায়া মন বারবার উষ্ণ আলিঙ্গনে যেতে চায়! 
নীরবে বোবা ভাষায় তাকেই শুধু ডাকে-
বোঝেনি সে বাড়ন্ত বয়সের দুরন্ত...

 

প্রেম
মতলু মল্লিক
 
যা দেবে তাই নেব আজ।
একঝাঁক রোদ দেবে, দাও
একনদী জল? তবে তাও
ব্যথা-ছল-ঘৃণায় আপত্তি নেই
হাসি-প্রেম-চুমো এসেছি নিতেই
শুধু যদি বলো মন, তবেই মানা
দোহাই তোমার মন দিয়ো না
আমি বুঝি না মনের কাজ।

 

তোমরা সবই পারো
অমিয় দত্ত ভৌমিক

তোমরা অনেক কিছুই পারো
পেট ভরে ভাত খাইয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মারো
দুশমনের তকমা দিয়ে, রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে
যা ইচ্ছে তাই করো, তোমরা সবই পারো!
 
হল্লা করে ঘাড়ে ধরে, আনো টেনে বাহির করে
মানুষ কর জড়ো, পিটিয়ে পিটিয়ে মারো
নাম দিয়ে দেও ইচ্ছেমতো, কুখ্যাত আর চোরও
যা ইচ্ছে তাই করো, তোমরা সবই পারো!
 
রাষ্ট্র যখন মগের মুল্লুক, আমরা সবাই যেন উল্লুক
খাচ্ছি সবই দিচ্ছ যা-তা, নইলে যদি মারো
সাধারণের টুঁটি ধরে, সবাই যেন হজম করে
সেটাই ভালো করো, তোমরা সবই পারো!
 
ভাবছি বসে ভবিষ্যতে, সন্তানের স্নেহের হাতে
লাঞ্ছনার ভয়..., যদি তোমরা মারো
শিক্ষা সম্মান দিচ্ছ তুলে, অপশিক্ষা নিচ্ছ কোলে
যা ভালো হয় করো, তোমরা সবই পারো!

 

সময়ের সঙ্গতা 
সারমিন চৌধুরী

সময়ের সঙ্গতায় ছুটে চলি দিগ্বিদিক 
কখনো বা পিছু করি পশ্চিমে অস্তমিত সূর্যের
নয়তো নদীর স্রোতের শেষ জলবিন্দুর! 
কখনো কিশোরী বেলায় ভাসি গোধূলি বিকেলে
কভু অবাক চোখে দেখি বরফ গলে জল হওয়া 
কখনো কঠিন পাথরের গাঁথুনিতে আটকে পাঁজর
থমকে যায় দিকচক্রবালের নিদারুণ ঘূর্ণিতে,
তখন ভীষণ ক্লান্ত আর আনমনা হয়ে যায় মন 
কবিতা লিখি, গল্প লিখতে গিয়ে পৃষ্ঠা শেষ হয় 
তবুও জানো যা কখনোই লিখতে পারি না? 
যে সত্যের ইতিহাস বড়সড় উপন্যাস হয়ে গেছে
বুকের ভেতর ছিন্নভিন্ন ঘর ব্যতীত আর কিছু নেই, 
সেখানে যত্নে লালিত হয় অজস্র স্বপ্নের মৃত শরীর
ঘুমন্ত আজও সেখানে আমার অস্তিত্বের শিকড়
কানাগলি ধরে সহস্র মাইল হাঁটছি কেবলই 
শুধুমাত্র তোমাদের কাছে পৌঁছে যাব ভেবে।

 

শেফালী
সুভাষ কুমার বর্মন 

শুভ্র সফেদ ফুলের সুবাস আছে, কাঁটা নেই। 
শিশিরসিক্ত কাকভোরে 
কুড়িয়ে ডালা ভরে আনি।
বারবার ছুঁই 
ছুঁয়ে ছুঁয়ে কুসুম কমলা হলুদাভ
রঙে মাখাই হাতখানি।

মালা গাঁথি ছোট মাঝারি 
দীর্ঘদিন কেটে যায় 
রাত্রি পোহায় 
আবার আসে ভোর।
পেরিয়ে যায় যৌবন শৈশব কৈশোর 
কাটে না কেবল
শুভ্র সফেদ কুসুম কমলা হলুদাভ রঙের ঘোর।

 

আরোগ্য 
গাজী গিয়াস উদ্দিন 

রমণীর স্বতঃস্ফূর্ত উত্তাপ অমূল্য ভেবে
প্রকৃতির প্রতিবেশে সাজাই তাকে
এ কৃত্রিম খেলাঘরে সেসব প্রহসন
অসম্ভবকে সম্ভবের জাদুমন্ত্র জানে যারা
বল প্রয়োগ প্রকৃতি শাস্ত্রে মানা
শ্রাবণের উৎসবধারা নিসর্গের 
সব সৌন্দর্য উলঙ্গ সোহাগে
অবগাহনে প্রলুব্ধ করে, 
সে শক্তির প্রকাশকে ব্যাখ্যা করতে
পারি না আমি। 

ললনার চিকিৎসায় জুটবে কি আরোগ্য?

 

অচেনা এক মায়ায় 
সাঈদুর রহমান লিটন 

তুমি সকাল বেলার রবির স্নিগ্ধ কিরণ,
তুমি প্রভাত বেলার দূর্বাঘাসের শিশিরবিন্দু, 
তুমি ভোর বিহানের উড়ন্ত ধোঁয়ার চায়ের চুমুক।
তুমি ভোরের আকাশ, কিচিরমিচির পাখির ডাক,
তোমার কপালের কালো টিপ অনিন্দ্য সুন্দর,
অচেনা এক মায়ায় দেয় আমায় ডাক।
তুমি দূর থেকে উতালা করে দাও 
সকল অলিরা ভিড় করে তোমার বারান্দায়।

 

অসময়ে চলে গেলি
মজনু মিয়া 

আমার কেবল বিশ বা বাইশ তুই ছিলি সাথী, 
তোরে নিয়ে কত আশা পেরোবো অমারাতি।
সেই ভাবনায় কাটা পড়ল চোখে অশ্রু জল,
এমন করে কেন কাঁদালি বল আমারে বল?

ভরসার নাম তুই ছিলি বুকের ভিতর আশা,
অনেক কিছু পাব হয়তো পাব ভালোবাসা। 
অসময়ে চলে গেলি দিয়ে গেলি ব্যথার ঢেউ, 
এমন জ্বালা বোঝার মতো আমার যে আর নেই কেউ!

 

দূরে সরে যাচ্ছে 
আলমগীর কবির 

দূরে সরে যাচ্ছে 
রোদ পাখি মেঘ।
দূরে সরে যাচ্ছে আকাশ।

দূরে সরে যাচ্ছে মূল্যবোধ
সংশয়ের পিঠে সওয়ার হয়ে। 
স্বার্থ যেখানে 
সেখানে অনেকেই অন্ধ পাখি। 

দূরে সরে যাচ্ছে 
নদী, পাহাড়, ফুলের বসতভিটা।
ক্রমাগত 
দূরে সরে যাচ্ছে প্রিয়জন।

 

নীল খামে রংধনু চিঠি 
নকুল শর্ম্মা

উসকোখুসকো বিকেল
কুয়াশার বৃষ্টিতে সূর্যের আড়িপাতা, 
পূবের আকাশে রংধনুর চিঠি আসে নীল খামে।
হালকা বাতাস রজনীগন্ধার সুবাস মাখা
নিশ্বাসে সচল হয় ভালোবাসার হৃদপিণ্ড, 
চোরাগলি বেয়ে উড়ে চলে একঝাঁক বুনো পাখি।

চোখের পাতায় ভিড় করে অভিসারের পূর্বরাগ
বিদ্যুৎ বেগে ছুটে চলে কামনার ঝড়,
তাণ্ডবের ঘনঘটা শিরা উপশিরার রক্ত প্রবাহে।
অবলীলায় মুহ্যমান প্রিয়ার অধর কাঁপা অনুরাগ
নোঙর ছিঁড়ে ভেসে চলে জয়োল্লাসে,
অতঃপর হিসাবের মাপকাঠি ভেঙে পড়ে সমুদ্রগর্ভে
পুনরাবৃত্তিতে নীল খামে সঞ্চিত হয় নতুন ভালোবাসা।

 

অবহেলার জলছাপ
জহিরুল হক বিদ্যুৎ

নৈবেদ্য রাতের কাছে ভোরের আকুতি
অধরা স্বপ্নের বুকে নৈঃশব্দ্য আর্তনাদ!
ইচ্ছেরা পাখির ডানার মতো চঞ্চল
অথচ পাখির পায়ে শোষকের শৃঙ্খল।
শরতের কাশফুলে রক্তলাল আভা
ছড়িয়ে পড়েছে ওই দিগন্তের ওপারে,
কষ্টগুলো ফিরে আসে আপন নীড়ে
প্রতিশ্রুতির ডোমঘরে স্বার্থের ব্যবচ্ছেদ।
এই মাটির বুকে আছে প্রাণের স্পন্দন
বুকের ভেতর আছে রংধনু আকাশ,
ফিরে আসে ষড়ঋতু কত না রং নিয়ে
শুধু ভাগ্যটা ঝুলে থাকে অদৃশ্য কার্নিশে!
ধীরে ধীরে মলিন হয় প্রীতির পদচিহ্ন
ভেসে ওঠে ললাটে অবহেলার জলছাপ।

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

কাঁটাতার
আবির হাসান

পুরোনো মোমের মতো গলে যাচ্ছে 
নিঃসঙ্গ রাত্রি, হাওয়ার আর্তনাদ মাখা 
কোলাহল এড়িয়ে যাচ্ছে চোখ।
দৃষ্টিতে মৃত্যুর নির্মমতা ফুটে ওঠে পালকহীন 
শীর্ণ পাখির মতো!
ভাঙনের যাতনা নিয়ে যে শরীর 
ছটফট করে অন্তহীন!
মৃত্যুর মুখোশেই তার ক্ষয়িষ্ণু মখমলে দিন 
সামান্য আয়ু ফিরে পায়, আর অদৃশ্য কান্নার 
ভেতর খুঁজে পায় হারানো রঙিন দীর্ঘশ্বাস-
অথচ অলীক বঞ্চনার কাঁটাতারে 
রুদ্ধ হয়ে এ জীবন হারিয়ে ফেলেছে 
বেঁচে থাকার প্রশান্তিময় বিশ্বাস।

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

পঞ্চবৃক্ষের যুবতী
অলিউর রহমান ফিরোজ

একটি সম্পর্ক
তাও আবার দুই যুগ পেরোনো
সদ্য কৈশোর ছেড়ে
একটু একটু অনুভূতিশীল
শরীরবৃত্তীয় হালকা শিহরণ
সামান্য জেগে ওঠা
মিষ্টিমুগ্ধতা ছড়ানো 
ফুলের সুবাসিত ঘ্রাণের আকুলতায়
যেন কাউকে কাছে টেনে নেয়
সে রকম ভাবলেশহীন একটা সম্পর্ক।
সদ্য চুলের বিনুনি থেকে
আস্তে আস্তে চুলগুলো খসে যাচ্ছে
বাঁধনে আর মানছে না বাধা
সব বন পেরিয়ে
ডানা মেলে 
এক আকাশ, দু-আকাশ ভেদ করে
পাড়ি দেওয়া একটা অসম প্রেমের উপাখ্যানে
সলিল সমাধি ঘটেছে।

সাহিত্যসভার ছোটগল্প

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
সাহিত্যসভার ছোটগল্প
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

একটি সুগন্ধি ফুলের ঘ্রাণ 
সুশান্ত কুমার দে

বেলকনির জানালার গ্লাসটি সরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে শিউলি। খুঁজে পেল বহির্জগতের রূপলাবণ্যে ভরা অফুরন্ত সৌন্দর্যের ভাণ্ডার, তার মাঝেই প্রস্ফূটিত এক টুকরো ভালোবাসার উজ্জ্বল ঝকঝকে হীরের টুকরো।
হাজার মানুষের ভিড়ে শিউলির দৃষ্টিটা নিবন্ধিত হয় মিন্টুর দিকে।
হ্যাঁ, মিন্টু এসেছে, প্রতিদিনের মতো গাড়িটা থামিয়ে পাশের দোকান থেকে একটা ঠাণ্ডা কিনে ঢকঢক করে গিলতে লাগল।
না, ওটা নেহাত পানীয় পানের কিংবা খাদ্যের হজমশক্তি বাড়াতে নয়, কিছুটা সময় পার করে শুধু শিউলির রূপলাবণ্য সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। শিউলি ওকে কিছুটা খোলামেলা দেখার সুযোগ করে দেয়। বুকের ওড়নাটা টেবিলের ওপর রেখে দেয়। একটা পাতলা টাইট নীল রঙের কামিজ পরে কপালে একটা রঙিন টিপ দিয়ে বেলকনির জানালার কাচ সরিয়ে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।


মিন্টুকে যতটা সম্ভব খুশি করার চেষ্টা করে। কেননা শিউলি মিন্টুকে অত্যন্ত ভালোবাসে।
মিন্টু শিউলির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, তার সারা শরীর যেন এক মুহূর্তে প্রখর দৃষ্টিতে আটকে যায়।
শিউলিও কিছুটা আবেগের বশে লাজলজ্জা ভুলে দুজনায় মধ্যে চোখাচোখির ভাব বিনিময় করে।
একটু মিষ্টি হেসে কয়েক মুহূর্তের জন্য দুজনার দুকূলে দাঁড়িয়ে কিছুটা প্রেমসাগরে হাবুডুবু খাওয়ার প্রাণবন্ত চেষ্টা। 
মিন্টুর অফিসের সময় হয়ে গেছে, মাত্র মিনিট পাঁচেক সময় হাতে আছে। হাতটা নেড়ে টা টা বাই বাই বলে বিদায় নেয়। শিউলিও একটু হাত নেড়ে মিষ্টি হেসে মিন্টুকে বিদায় জানায়।
এভাবে আর কতদিন চলবে, অন্তরের যে দাবানল ফুঁসে উঠেছে তা বোধহয় স্বয়ং বিধাতাও থামাতে পারে না।
অতি মেধাবী শিউলির ক্রমশই পড়াশোনার অবনতি হচ্ছে। পড়াশোনার ক্ষতি হওয়ার ভয়ে তার মা তাকে একটা মোবাইল ফোন পর্যন্ত দেয়নি।
মা রমনা অত্যন্ত কঠিন শাসনের মধ্যেই মেয়েটিকে রাখেন। ঘরের বাইরে একা একা মেয়েকে কোথাও যেতে দেন না।
সব সময় কড়া নজরেই রাখেন, বাবা নিবারণ বাইরে থাকেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাড়ি ফেরেন। সেই কারণেই মেয়েটার দেখভাল মাকেই কড়া নজরে রাখতে হয়। 
যৌবনের প্রথম যে কুঁড়িটি প্রস্ফূটিত হয় সেই কুঁড়ির অন্তরে লুকায়িত থাকে অজস্র ভালোবাসার ঢেউ।
একটা নতুন অনুভূতির রঙিন স্বপ্ন। যেটা শিউলির অন্তরজুড়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
চন্দ্রের বিচ্ছুরণ যেন সারা অঙ্গে সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালি করে, বক্ষযুগল স্ফীত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা মনমাতানো প্রাচীরের শীর্ষ চূড়ায়।
ইতোমধ্যে শিউলি ও মিন্টুর মধ্যে যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা অনেকের দৃষ্টির গোচরে এসেছে।
রমনার কানে কে বা কারা ফিসফিস করে বলেও দিয়েছে।


রমনা আদৌ বিশ্বাস করতে পারেন না, শিউলির নামে কেউ আজেবাজে কোনো কথা বলুক, তিনি এটা আদৌ মেনে নিতে চান না।
তাছাড়া শিউলির রূপলাবণ্য নিয়ে মা রমনা, গর্ব বোধ করেন। আদরের মেয়েটিকে তো আর যেনতেন ঘরে সম্প্রদান করবেন না।
একটা উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরি পাওয়া ছেলের হাতে শিউলিকে তুলে দিতে চান। অথচ শিউলি একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষকের পদে সদ্য চাকরি পাওয়া স্বল্প বেতনের মিন্টুকে বিয়ে করতে চায়।


শিউলির সম্প্রতি চঞ্চলতা ও পড়াশোনার প্রতি অনাগ্রহ বেশ লক্ষণীয়।
ইতোমধ্যেই কলেজের অধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, টেস্ট পরীক্ষায় শিউলির রেজাল্ট খুবই খারাপ হয়েছে।
অভিভাবক হিসেবে রমনা শিউলিকে সঠিকভাবে পড়াশোনার ব্যাপারে একটু সজাগ থাকতে বললেন।
বিষয়টি নিয়ে রমনা শুক্রবার রাতে স্বামী নিবারণের সঙ্গে সবকিছু খুলে বললেন।
নিবারণ বললেন, মানসম্মান থাকতে থাকতে মেয়েটিকে সুপাত্রের হাতে তুলে দিতে হবে। কেননা, যে বাড়িতে একটা ভালো মেয়ে থাকে, সেই বাড়ির চারপাশের বাতাসে যেন একটা সুগন্ধি ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে।


সেই সুযোগে মৌমাছিদের আনাগোনা বেড়ে যায়।
ওদিকে মিন্টু ও শিউলির ঘটনা বহুদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে।
শিউলি তার বাবা, মায়ের পরিকল্পনাগুলো বুঝতে পারল।
আগামীকাল কলেজ যাওয়ার সময় বিষয়টি নিয়ে মিন্টুকে সবিস্তারে জানাতে হবে। প্রয়োজনে পালিয়ে বিয়েটা করাই শ্রেয়।
চারদিক নিস্তব্ধতা ভেঙে শিউলি খুব ভোরে মিন্টুদের বাড়ি হাজির হলো।
মধুলোভী মৌমাছিরা ফ্যালফ্যাল করে শিউলির দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সুগন্ধযুক্ত ফুলের নির্যাস পেতে কে না চায়। মিন্টু খবরটি পেয়ে শিউলির দিকে এগিয়ে এল।
শিউলি বলল, মিন্টু দা এখুনি একটা উপায় কর। ততক্ষণে শিউলির মা, বাবাসহ প্রতিবেশীর বেশ কিছু লোক এসে হাজির হলো।
রমনা, শিউলির সাহসিকতার কাছে পরাজয় বরণ করল। দুই পক্ষের লোকজন একত্রে জড়ো হলো। সবার মুখে মুখে শিউলি ও মিন্টুর কুকীর্তিটা ফাঁস হয়ে গেল। 
রমনা শিউলিকে বাড়ি ফিরে আসতে অনুরোধ করল; শিউলি মায়ের সব অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে মিন্টুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। এ দৃশ্য দেখে রমনার দুচোখ বেয়ে দরদর করে জল গড়িয়ে পড়ল।


পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উভয় পক্ষের মধ্যে একটা সমাধান চাই।
সবশেষে অতি শিগগিরই শিউলি ও মিন্টুর বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। হঠাৎ করে মিন্টুর ছোট ভাই পলাশ দৌড়াতে দৌড়াতে একখানা পঞ্জিকা নিয়ে রমনার হাতে ধরিয়ে দিল। মুহূর্তেই চারপাশের নিস্তব্ধতা ভেঙে উঠোন ভর্তি মানুষ ফ্যালফ্যাল করে রমনার দিকে তাকিয়ে রইল।

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

জন্মান্তর পেরিয়ে
নকুল শর্ম্মা

জন্মান্তর পেরিয়ে বারবার আমি আসব-
রাতের নীরব অবসানে যেভাবে দিন আসে,
নীরবতার দোর ভেঙে আমি তোমার কাছেই আসব। 
রামধনুর পথ বেয়ে তোমার ছবি আঁকব
গ্রহ-নক্ষত্রের নিয়মের বিপরীতে হবে আমার অবস্থান, 
নীল আকাশে সাদা মেঘ হয়ে আমি আসব।
খোলা প্রান্তরে মকমলে কোমল ঘাস মাড়িয়ে
দু’হাতে জড়িয়ে ধরব তোমাকে,
বাতাসে তোমার গায়ের মিষ্টি গন্ধ ছড়াবে,
আমি বুক ভরে নেব তৃপ্তির নিঃশ্বাস। 
নিঃশব্দে হাত বুলিয়ে দেব তোমার কালো চুলে
মেঘের জানালায় তোমাকে খুঁজে নেব,
ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বলব-
ভালোবাসি, ভালোবাসি অনন্ত রথের 
তুমিই আমার একমাত্র সারথি। 
গত জনমের অভিশাপ মুছে ফেলে আমরা হব
ছুটে চলা উন্মত্ত নদী-
ঢেউয়ের মিলন স্রোতে বয়ে যাব অজানার পানে
যেখানে নীল সমুদ্র মন্থনে উঠে আসে অমৃত বারি।

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম
আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

সুদিন
হাফিজুর রহমান

তুমি এসো
আমার জন্যেই আসবে, 
আসতেই হবে একসময়- একদিন;
না-হলেও ভালোবেসে!
আশাহত, হতে দিও না আমাকে।

ছোট হতে দিও না
হতে দিও না কখনো অপমান,
বাঁচতে দিও সম্মানটুকুই নিয়ে-
মানুষ হিসেবে ধরে রাখতে মর্যাদা;
উপভোগ করাতে এ জীবনটাকে।