দুধের সন্তান
সাবিত্রী সাহা
আমার কোলে দুধের সন্তান, দয়া করে খাদ্যদ্রব্যের দাম কমান।
আপনি জানেন! সন্তান জন্মদানের পর একজন মায়ের পেটে কতটা ক্ষুধা?
ডাল-ভাতেই আমার সুধা
কাকে বলব খাদ্যদ্রব্যের দামের কথা?
স্বামীর রোজগারে টান, আমার খাবার শাশুড়ির হাতে ওঠে না
শ্বশুর বলে বাজার দর বেশি, আপনি বলেন বাজার স্থিতিশীল।
সারা রাত দুধ খায় কোলের শিশু, স্তনবৃন্তে ব্যথা।
সন্তান জন্মদানের পর আমার মুখে আকাশ সমান স্বাদ
একাই খেতে ইচ্ছে করে হাঁড়ির অর্ধেক ভাত।
বাঁচার জন্য খাদ্য আমার মৌলিক অধিকার,
আপনি খাদ্যদ্রব্যের দাম কমান
শুভ্র শিউলি ভোরে
এস ডি সুব্রত
হেমন্তের মৃদু সমীরণ ভেতরে রমণীয় প্রেম
শেফালীর মালা শুকায় নীরব অভিমানে
ধবল মেঘের পানে মনময়ূরী যায় উড়ে
হৃদয় নিংড়ানো শিশিরস্নাত শুভ্র শিউলি ভোরে,
বিস্মৃত হয় ঝরা পাতার গান আনমনে
অদিনের দিন শেষে জাগে সুদিনের আশা
দুয়ারে হেমন্ত একবুক স্বপ্ন জাগানিয়া
সুন্দর আগামী আসে বাংলার আলপথ ধরে।
বাড়ন্ত বয়স
কাজল নিশি
আজ দুপুরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছিল
উঠোন কোনে ঠায় দাঁড়িয়েছিলাম।
হঠাৎ জলের ঝাপটায় শিহরিত হয় বক্ষ!
অবয়ব গোঙানি দিয়ে বলে
ওই যে, নদীর কিনারে বসে আছে-
তার নিকটে আছে আনন্দ জল।
আঁচলে মুখ ডেকে লাজুক কণ্ঠে কাছে গিয়ে বললাম
আমায় একটু স্নান করতে দেবেন?
খানিক সময় তাকিয়ে থেকে বলল
কি সব অবান্তর প্রশ্ন করছেন!
শরমে আঁখি জলে বক্ষ ভাসে...
কি আশ্চর্য!
বেহায়া মন বারবার উষ্ণ আলিঙ্গনে যেতে চায়!
নীরবে বোবা ভাষায় তাকেই শুধু ডাকে-
বোঝেনি সে বাড়ন্ত বয়সের দুরন্ত...
প্রেম
মতলু মল্লিক
যা দেবে তাই নেব আজ।
একঝাঁক রোদ দেবে, দাও
একনদী জল? তবে তাও
ব্যথা-ছল-ঘৃণায় আপত্তি নেই
হাসি-প্রেম-চুমো এসেছি নিতেই
শুধু যদি বলো মন, তবেই মানা
দোহাই তোমার মন দিয়ো না
আমি বুঝি না মনের কাজ।
তোমরা সবই পারো
অমিয় দত্ত ভৌমিক
তোমরা অনেক কিছুই পারো
পেট ভরে ভাত খাইয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মারো
দুশমনের তকমা দিয়ে, রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে
যা ইচ্ছে তাই করো, তোমরা সবই পারো!
হল্লা করে ঘাড়ে ধরে, আনো টেনে বাহির করে
মানুষ কর জড়ো, পিটিয়ে পিটিয়ে মারো
নাম দিয়ে দেও ইচ্ছেমতো, কুখ্যাত আর চোরও
যা ইচ্ছে তাই করো, তোমরা সবই পারো!
রাষ্ট্র যখন মগের মুল্লুক, আমরা সবাই যেন উল্লুক
খাচ্ছি সবই দিচ্ছ যা-তা, নইলে যদি মারো
সাধারণের টুঁটি ধরে, সবাই যেন হজম করে
সেটাই ভালো করো, তোমরা সবই পারো!
ভাবছি বসে ভবিষ্যতে, সন্তানের স্নেহের হাতে
লাঞ্ছনার ভয়..., যদি তোমরা মারো
শিক্ষা সম্মান দিচ্ছ তুলে, অপশিক্ষা নিচ্ছ কোলে
যা ভালো হয় করো, তোমরা সবই পারো!
সময়ের সঙ্গতা
সারমিন চৌধুরী
সময়ের সঙ্গতায় ছুটে চলি দিগ্বিদিক
কখনো বা পিছু করি পশ্চিমে অস্তমিত সূর্যের
নয়তো নদীর স্রোতের শেষ জলবিন্দুর!
কখনো কিশোরী বেলায় ভাসি গোধূলি বিকেলে
কভু অবাক চোখে দেখি বরফ গলে জল হওয়া
কখনো কঠিন পাথরের গাঁথুনিতে আটকে পাঁজর
থমকে যায় দিকচক্রবালের নিদারুণ ঘূর্ণিতে,
তখন ভীষণ ক্লান্ত আর আনমনা হয়ে যায় মন
কবিতা লিখি, গল্প লিখতে গিয়ে পৃষ্ঠা শেষ হয়
তবুও জানো যা কখনোই লিখতে পারি না?
যে সত্যের ইতিহাস বড়সড় উপন্যাস হয়ে গেছে
বুকের ভেতর ছিন্নভিন্ন ঘর ব্যতীত আর কিছু নেই,
সেখানে যত্নে লালিত হয় অজস্র স্বপ্নের মৃত শরীর
ঘুমন্ত আজও সেখানে আমার অস্তিত্বের শিকড়
কানাগলি ধরে সহস্র মাইল হাঁটছি কেবলই
শুধুমাত্র তোমাদের কাছে পৌঁছে যাব ভেবে।
শেফালী
সুভাষ কুমার বর্মন
শুভ্র সফেদ ফুলের সুবাস আছে, কাঁটা নেই।
শিশিরসিক্ত কাকভোরে
কুড়িয়ে ডালা ভরে আনি।
বারবার ছুঁই
ছুঁয়ে ছুঁয়ে কুসুম কমলা হলুদাভ
রঙে মাখাই হাতখানি।
মালা গাঁথি ছোট মাঝারি
দীর্ঘদিন কেটে যায়
রাত্রি পোহায়
আবার আসে ভোর।
পেরিয়ে যায় যৌবন শৈশব কৈশোর
কাটে না কেবল
শুভ্র সফেদ কুসুম কমলা হলুদাভ রঙের ঘোর।
আরোগ্য
গাজী গিয়াস উদ্দিন
রমণীর স্বতঃস্ফূর্ত উত্তাপ অমূল্য ভেবে
প্রকৃতির প্রতিবেশে সাজাই তাকে
এ কৃত্রিম খেলাঘরে সেসব প্রহসন
অসম্ভবকে সম্ভবের জাদুমন্ত্র জানে যারা
বল প্রয়োগ প্রকৃতি শাস্ত্রে মানা
শ্রাবণের উৎসবধারা নিসর্গের
সব সৌন্দর্য উলঙ্গ সোহাগে
অবগাহনে প্রলুব্ধ করে,
সে শক্তির প্রকাশকে ব্যাখ্যা করতে
পারি না আমি।
ললনার চিকিৎসায় জুটবে কি আরোগ্য?
অচেনা এক মায়ায়
সাঈদুর রহমান লিটন
তুমি সকাল বেলার রবির স্নিগ্ধ কিরণ,
তুমি প্রভাত বেলার দূর্বাঘাসের শিশিরবিন্দু,
তুমি ভোর বিহানের উড়ন্ত ধোঁয়ার চায়ের চুমুক।
তুমি ভোরের আকাশ, কিচিরমিচির পাখির ডাক,
তোমার কপালের কালো টিপ অনিন্দ্য সুন্দর,
অচেনা এক মায়ায় দেয় আমায় ডাক।
তুমি দূর থেকে উতালা করে দাও
সকল অলিরা ভিড় করে তোমার বারান্দায়।
অসময়ে চলে গেলি
মজনু মিয়া
আমার কেবল বিশ বা বাইশ তুই ছিলি সাথী,
তোরে নিয়ে কত আশা পেরোবো অমারাতি।
সেই ভাবনায় কাটা পড়ল চোখে অশ্রু জল,
এমন করে কেন কাঁদালি বল আমারে বল?
ভরসার নাম তুই ছিলি বুকের ভিতর আশা,
অনেক কিছু পাব হয়তো পাব ভালোবাসা।
অসময়ে চলে গেলি দিয়ে গেলি ব্যথার ঢেউ,
এমন জ্বালা বোঝার মতো আমার যে আর নেই কেউ!
দূরে সরে যাচ্ছে
আলমগীর কবির
দূরে সরে যাচ্ছে
রোদ পাখি মেঘ।
দূরে সরে যাচ্ছে আকাশ।
দূরে সরে যাচ্ছে মূল্যবোধ
সংশয়ের পিঠে সওয়ার হয়ে।
স্বার্থ যেখানে
সেখানে অনেকেই অন্ধ পাখি।
দূরে সরে যাচ্ছে
নদী, পাহাড়, ফুলের বসতভিটা।
ক্রমাগত
দূরে সরে যাচ্ছে প্রিয়জন।
নীল খামে রংধনু চিঠি
নকুল শর্ম্মা
উসকোখুসকো বিকেল
কুয়াশার বৃষ্টিতে সূর্যের আড়িপাতা,
পূবের আকাশে রংধনুর চিঠি আসে নীল খামে।
হালকা বাতাস রজনীগন্ধার সুবাস মাখা
নিশ্বাসে সচল হয় ভালোবাসার হৃদপিণ্ড,
চোরাগলি বেয়ে উড়ে চলে একঝাঁক বুনো পাখি।
চোখের পাতায় ভিড় করে অভিসারের পূর্বরাগ
বিদ্যুৎ বেগে ছুটে চলে কামনার ঝড়,
তাণ্ডবের ঘনঘটা শিরা উপশিরার রক্ত প্রবাহে।
অবলীলায় মুহ্যমান প্রিয়ার অধর কাঁপা অনুরাগ
নোঙর ছিঁড়ে ভেসে চলে জয়োল্লাসে,
অতঃপর হিসাবের মাপকাঠি ভেঙে পড়ে সমুদ্রগর্ভে
পুনরাবৃত্তিতে নীল খামে সঞ্চিত হয় নতুন ভালোবাসা।
অবহেলার জলছাপ
জহিরুল হক বিদ্যুৎ
নৈবেদ্য রাতের কাছে ভোরের আকুতি
অধরা স্বপ্নের বুকে নৈঃশব্দ্য আর্তনাদ!
ইচ্ছেরা পাখির ডানার মতো চঞ্চল
অথচ পাখির পায়ে শোষকের শৃঙ্খল।
শরতের কাশফুলে রক্তলাল আভা
ছড়িয়ে পড়েছে ওই দিগন্তের ওপারে,
কষ্টগুলো ফিরে আসে আপন নীড়ে
প্রতিশ্রুতির ডোমঘরে স্বার্থের ব্যবচ্ছেদ।
এই মাটির বুকে আছে প্রাণের স্পন্দন
বুকের ভেতর আছে রংধনু আকাশ,
ফিরে আসে ষড়ঋতু কত না রং নিয়ে
শুধু ভাগ্যটা ঝুলে থাকে অদৃশ্য কার্নিশে!
ধীরে ধীরে মলিন হয় প্রীতির পদচিহ্ন
ভেসে ওঠে ললাটে অবহেলার জলছাপ।