ঢাকা ১২ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

সাহিত্যসভার এ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ পিএম
সাহিত্যসভার এ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

প্রান্তরেখা
অরূপ তালুকদার

পথের বাঁকে এখনো দাঁড়িয়ে আছি, কোথায়
যাব সেটা না জেনে তুমিও চলে এলে ঠিক
গোধূলির প্রান্তরেখা ছুঁয়ে ছুঁয়ে এইখানে
দূর দিগন্ত থেকে তুলে আনা করতলের সেই
রঙিন বিকেল কোথায় যে হারিয়ে গেল
গাছের সবুজ পাতারা কী বার্তা দিয়েছিল
সেই চন্দনের বনে সব ভুলে গেছে?

 

মেঘমেয়ে
পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তী 

প্রকৃতির রূপ বদলের সঙ্গে সঙ্গে মেঘমেয়েরও রং বদল 
হয়েছে। শ্যামকালো হতে ধব ধবে শাদা। ভেলা নামে এখন সে 
বেশ পরিচিত। নীল আকাশকে গভীর ভালোবাসায় ডুবিয়ে 
রাখত গতকালও যে মেঘমেয়ে: আজ সে ঘুরে বেড়ায় এখানে 
ওখানে বিচ্ছিন্নভাবে। কাঁদতে কাঁদতে আকাশের হয়তোবা 
সবটুকু অশ্রুবিন্দু দূর পাহাড়ের চূঁড়ায় বরফ হয়ে জমে গেছে। 
দিন-রাত আর অঝর ধারায় টাপুরটুপুর বৃষ্টিও করছে না 
এখন। ‘থ্রি-স্পাইন স্টিক্যাল ব্যাক’র স্ত্রী মাছের মতোন উদর 
দেখানোয় মত্ত সব পলিপূর্ণ উর্বর জমিন। হাওর-বাঁওড়ে নেই 
শাপলার হাসি। কেয়া-কদম-চাঁপার ঘ্রাণ সেই কবেই মিলিয়ে 
গেছে। তবে, ভোরের শিশির ভেজা দূর্বা ঘাসে শিউলির হাসি 
আজ উল্লেখ করার মতো। আর সুরমার তীর ঘেঁষানো 
কাশবনের মেঘশুভ্র কাশফুলের নরম ছোঁয়া আহা প্রেমিকার 
সবুজ স্পর্শের সঙ্গে তুলনীয়। দিনের বেলায় সূর্যসনে মেঘ 
মেয়ের দারুণ ভাব, কথোপকথন, বিচরণ রাতের বেলায় চাঁদ-
তারার মেলায়। মেঘ মেয়ের ওই লুকোচুরি খেলায় মজেই কেউ 
কবি কেউ লেখক-গায়ক। কেউ সুখ করছে কেউ কেউ 
আনন্দও করছে আর আমি খুব দুঃখ করছি। ছিলাম বর্ষা, 
ভালোই ছিলাম; এখন তো শরৎ হতে হচ্ছে আমাকেও।

 

তপ্ত মনের গুপ্ত বাসনা
আজাদুল হক আজাদ

তুমি যদি না আস এই ভরা বসন্তে
শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়ার বনে
জ্বালাব আজ দ্রোহের আগুন-
বাসন্তী রঙের উড়ন্ত সুখ করব লোপাট।
ঝরাপাতা ঝরে ঝরে বৈরাগী বৃক্ষের শাখায়
লটকানো ঘুড়ি উড়ছে উড়ুক 
প্রজাপতি ফাঁদে পড়ছে পড়ুক। 

তুমি যদি না আসো আজ এই বসন্তে 
দখিনা বাতাসে ফুঁ দিয়ে 
দামাল হাওয়া হয়ে ধুলোমাটি ওড়াব 
নাগরিকজীবনে সুখের বসনে। 

তুমি যদি না আসো আজ, ফাল্গুন হারাবার নেই ভয়-
তোমার আগমনী প্রতিশ্রুতিভঙ্গ আমার অস্থির পরাজয়। 
তুমি যদি না আসো আজ মানবো না কোনো শাসন-বারণ 
মানবো না কোনো অনুনয়ের সুড়সুড়ি। 

দ্রোহের আগুনে চোখের কুঠুরিতে ফুটুক পলাশ 
তপ্তমনের গুপ্ত বাসনা বেরিয়ে করুক উল্লাস।

 

সময়ের বেড়াজাল
নকুল শর্ম্মা

সূর্যাস্ত দেখিনি কতদিন
তেমন সুযোগ হয়ে ওঠে না আর
সময়ের বেড়াজালে আটকে গেছে
মুক্ত বলাকার উড়ে চলার সুখ।
পশ্চিমের খোলা প্রান্তরও নেই
ইট-পাথরে গড়ে উঠেছে ইমারত, 
জন কোলাহল আর কারখানা।

বাতাসে কালো ধোঁয়ার বিষবাষ্প,
আসর বসে না আর পাখির কলতানে
হারিয়ে গেছে কী জানি কোন অজানায়।
ক্লান্ত শরীর খুঁজে ফেরে অতীত
ইচ্ছের সাতকাহন বুনে আনমনে
দিনান্তে প্রাণ ফেরে চারদেয়ালের ভিড়ে।

 

স্বপ্ন স্বাধীনতার
এস ডি সুব্রত

ডানার স্বাধীনতা নিয়ে
দিনশেষে পাখিও তো ফিরে আসে নীড়ে
অনাবিল শান্তির পরশ নেয়
স্বজনের কাছে প্রাণভরে 
প্রশান্তির নিদ্রাশেষে জেগে ওঠে 
শান্ত স্নিগ্ধ সোনালি ভোরে,
অথচ সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের
নেই কোনো অধিকার
সুন্দর ও স্বভাবিক বেঁচে থাকার,
কে তবে নিচ্ছে কেড়ে
ফিলিস্তিনের স্বপ্ন-স্বাধীনতা? 
বিবেকবর্জিতের ভিড়ে 
পৃথিবী আজ বুঝি নষ্টদের অধিকারে
নিরপরাধ নর-নারী ও শিশুর কান্না
আটকে গেছে নির্মমতার ধ্বংসস্তূপে।

 

ফিলিস্তিন 
ভূঁইয়া বুলবুল 

নিবেদন: বোমায় নিহত ফিলিস্তিনি কবি হেবা কামাল আবু নাদাকে

এগিয়ে যাওয়া ঘড়ির কাঁটা ক্রমাগত 
পিছিয়ে আসতে আসতে 
আমাদের নিয়ে এসেছে জঙ্গল যুগে
অচেনা বৃক্ষের আড়ালে শিকারি সময় 
পত্রপল্লবে হিসহিস হিংস্রতা 
ফুলের বদলে ডালে ডালে ফুটে থাকা 
বিস্ফোরণ্মুখ বোমা, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রসংঘ,
বোমারও বুক থাকে! তোমাদের নেই?
সুনীল সুন্দরে এখন শুধু অশান্তির উৎসব! 
আবু নাদা, ভুল সময়ে জন্ম নেওয়া প্রজাপতি 
সময় অক্ষম শোধাতে তোমার ঋণ
পৃথিবীর আরেক নাম ফিলিস্তিন।

 

সাদা হাতিদের নৃত্য
ফেরদৌস জান্নাতুল

ক্রমাগত এগোচ্ছে জীবন
দ্বন্দ্বে ছন্দে ও আনন্দে
সকলের।
এই রেললাইন ধরে এগোলে পৌঁছানো যায় শীতের দেশে,
চটুল বিন্যস্ততার আবহ হতে আরও দূরে।
মানুষ স্বভাবতই খোঁজে সম্ভোগের মুখচ্ছবি
চিত্রিত অতীত, অনাগত ভবিষ্যৎ।
শরতের স্নিগ্ধতা আঁকা একটি চিত্রপট কুড়িয়ে পেয়েছিলাম একদিন-
সেখানে নীলের ভাঁজে ভাঁজে সাদা মেঘ,
মেঘের সঙ্গে বোঝাপড়ায় ব্যস্ত একদল বেনামি পাখি;
বেদনায় ডানা ঝাপটায়।
এই রেললাইন শেষ হতেই নতুন একটি শহর-
দিগন্তের মতো মুখচ্ছবি একে 
এ শহরে সাদা হাতিরা নৃত্য করে
সৌন্দর্য ও সম্ভোগের নির্জন অন্ধকারে।

 


দ্বিপদীগুচ্ছ
চন্দনকৃষ্ণ পাল

১.
দিন ভালো হোক, হাসি ফিরুক চাইছি শুধু এই,
দিন শুরু হোক আবার তোমার দাঁতের ঝিলিকেই।

২.
কুয়াশার আয়োজনে দেখি তার মুখ
হয়তো বা ঝাপসাই, তবু এটা সুখ।

৩.
তার চোখে জলবিন্দু আমাকে উতলা করে খুব
ভাবি আর দুঃসহ স্মৃতির সাগরে দিই ডুব।

৪.
মধুময় হাসি তার মুছে গেছে কী কারণে জানি
বিষণ্ন প্রতিমা এক, মেঘে মেঘে ঢাকা মুখখানি।

৫.
সোনায় মোড়ানো বিকেলে তুমি তো নেই
স্মৃতির কুয়াশা রেখেছে যে আড়ালেই।

৬.
গাছ কেটে সব করছ সাবাড় ভরাট করছ জলাভূমি
দেখতে তোমায় মানুষ লাগে আসলে কি মানুষ তুমি?

৭.
মরুকরণ হচ্ছে এ দেশ ঝড়ঝঞ্ঝা বন্যা খরা
তোমার মতো অমানুষেই আজকে ভরা বসুন্ধরা।

৮.
গলছে বরফ বাড়ছে সাগর উপকূলে বাড়ছে ভীতি 
মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েও কোথায় ভালোবাসা প্রীতি?

৯.
পরিবেশকে ধ্বংস করে আনছ মরণ কাছে ডেকে
খুব দেরি নেই প্রকৃতিটা দেবেই মৃত্যু তিলক এঁকে।

১০.
মানুষ ভেবে তাকিয়ে দেখি তুমি একটা যন্ত্র
টাকা দিন আর টাকা রাত্রি এটাই তোমার মন্ত্র

 

যা চিঠি তুই বাবার কাছে 
কাজল নিশি 

তুমি চলে গেছ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে 
অথচ হৃদয়ের বদ্ধ কোটিরে আজও পাই তোমার তীব্র নির্যাস।
জানতে বড্ড ইচ্ছে করে  
কেমন আছ ওই ছোট্ট মাটির ঘরে?
জানো বাবা, আজকাল কেউ আর বাজার থেকে তোমার মতো করে-
সব সিজনের ফল কিনে আনে না! 

স্কুল ছুটি শেষে ঘরে এলে বলতে, তোর পছন্দের আম এনেছি 
ব্যাস, ভাতের সঙ্গে আড়ি! 
পাকা আমের রস মুখ গড়িয়ে পড়ত বুকের ওপর! 
নিয়তির কী নির্মম পরিহাস 
আজ আর মুখের সামনে আম ধরে কেউ বলে না খেয়ে নে!

বাবা, তোমার সঙ্গে মায়ের দেখা হলে আচ্ছা করে বকে দিও কেমন 
জানো, আমাকে পৃথিবীর বুকে ফেলে রেখে মা একাই 
ওই দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে! 
ভীষণ পচা মা, সঙ্গে নিয়ে যায়নি! 

একটা কথা বলতে ভুলে গেছি!
তুমি যে গ্রামের মসজিদের জন্য বিশ শতক জমি লিখে দিয়েছিলে
সে মসজিদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে।
জুম্মার নামাজের দিন হুজুর যখন মাইকে বয়ান করে
তোমার অমূল্য দানের স্মৃতি মনে পরে গর্বে বুক ভরে।

 


বৃষ্টি এলে
এম এ রহমান

বৃষ্টি এলে বিষণ্ন মেঘেরা ঝরে পড়ে
বাতাসে বাতাসে তাপ-অনুতাপ হিম হয়
মনের দেরাজ খুলে কারা যেন
ছিঁড়ে ফেলা কিছু অনুভূতি হাতে নেয় 
সেলাই করতে থাকে
ফেলে আসা সময়কে, বেদনাকে

কারা যেন বেদনার ভেতর ঘুমিয়ে থাকা
তোমার ছায়াকে ডেকে আনে
তোমার মায়াকে বুনে বৃষ্টিভেজা শূন্য মাঠে
হৃদয়ে আমার; নাচঘরে টুপটাপ তুমি

বৃষ্টি এলে কারা যেন চিঠি লেখে
বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায়, নদীর কাছে
সমুদ্রের কাছে, ডাকবাক্স হেঁটে যায়...
কোনোদিন জবাব পায়নি

যদিও বরাবরে লিখেছিল, তুমি
তবে কি সুখেই আছ?
প্রিয়তমা আমার মৌসুমি!

 

ধারাপাত
সুশান্ত কুমার দে

নীলাকাশে রাশি রাশি ফুটল ঐ তারার হাসি
ঝলমল আলোয় ভাসি শুকতারা পাশাপাশি,
সাদা বক ভেসে ভেসে যায় কি মেঘের দেশে?
ঐ এল শারদ এল, নদীর বুকে নাইয়ে ভেসে।

শিউলি বনে সঙ্গোপণে মৌমাছিদের হুলুস্থুল
ভেজা ভেজা ঘাসে ঘাসে শিশিরের জুলজুল। 
কাশবনে দোদুল মনে মৃদু মন্দ হাওয়ার সনে
চুপচাপ মাছরাঙাটি বসে ওই দীঘির কোণে।
পাখপাখালি বনে বনে মত্ত গানের জলসায়
নৌকা চলে পাল তোলে কোন সে ভিন গাঁয়?

সবুজ বনে জাগল বুঝি নব খুশির মঞ্জুরি
শারদ লক্ষ্মীর শস্য ভাণ্ডার কৃষকের অঞ্জলি।
শীতল হাওয়ায় মন মাতাল শারদীয় প্রভাত
আবির রঙে রাঙিয়ে শুরু দিনের ধারাপাত।

 

বাধার দেয়াল রক্তে ভেঙে
মো. আশতাব হোসেন 

আসছে ধেয়ে রাজ পথে শোনা যাচ্ছে পদধ্বনি 
মুষ্টিবদ্ধ হস্ত তুলে বুকের মাঝে আগুন জ্বেলে
ভাইয়ের লাশ কাঁধে করে অধিকারের দাবি নিয়ে
বাধার দেয়াল রক্তে ভেঙে আসছে সব দামাল ছেলে! 

ভেঙে এবার জুলুমের হাত নিয়ে আসবে সুপ্রভাত
রোখার সাধ্য কার? 
অন্যায়ের মহাশক্তি পুড়ে করবে ছারখার! 

বেপরোয়া গতি তোদের এবার হবে খামুশ 
ভীমরুল বাসায় ঢিল ছুড়লে পরিণাম হয় কি? 
তোদের পশু কৃতি দেখে জানিস বন জঙ্গলের
সব পশু করছেরে ছিঃছিঃ! 

তোদের কি নেই একটু শরম? রক্ত তোমার এতই গরম?
দয়ামায়া মানবতা কি খেয়েছিস সব বেচে? 
এবার ঠেলা বুঝবি হাড় হয় কেমনে গুঁড়া 
লাশের মিছিল আসছে ধেয়ে তাকিয়ে দেখ সামনে চেয়ে
রক্ত তেষ্টা মিটিয়ে দেবে আসছে জোয়ান বুড়া। 

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

কাঁটাতার
আবির হাসান

পুরোনো মোমের মতো গলে যাচ্ছে 
নিঃসঙ্গ রাত্রি, হাওয়ার আর্তনাদ মাখা 
কোলাহল এড়িয়ে যাচ্ছে চোখ।
দৃষ্টিতে মৃত্যুর নির্মমতা ফুটে ওঠে পালকহীন 
শীর্ণ পাখির মতো!
ভাঙনের যাতনা নিয়ে যে শরীর 
ছটফট করে অন্তহীন!
মৃত্যুর মুখোশেই তার ক্ষয়িষ্ণু মখমলে দিন 
সামান্য আয়ু ফিরে পায়, আর অদৃশ্য কান্নার 
ভেতর খুঁজে পায় হারানো রঙিন দীর্ঘশ্বাস-
অথচ অলীক বঞ্চনার কাঁটাতারে 
রুদ্ধ হয়ে এ জীবন হারিয়ে ফেলেছে 
বেঁচে থাকার প্রশান্তিময় বিশ্বাস।

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

পঞ্চবৃক্ষের যুবতী
অলিউর রহমান ফিরোজ

একটি সম্পর্ক
তাও আবার দুই যুগ পেরোনো
সদ্য কৈশোর ছেড়ে
একটু একটু অনুভূতিশীল
শরীরবৃত্তীয় হালকা শিহরণ
সামান্য জেগে ওঠা
মিষ্টিমুগ্ধতা ছড়ানো 
ফুলের সুবাসিত ঘ্রাণের আকুলতায়
যেন কাউকে কাছে টেনে নেয়
সে রকম ভাবলেশহীন একটা সম্পর্ক।
সদ্য চুলের বিনুনি থেকে
আস্তে আস্তে চুলগুলো খসে যাচ্ছে
বাঁধনে আর মানছে না বাধা
সব বন পেরিয়ে
ডানা মেলে 
এক আকাশ, দু-আকাশ ভেদ করে
পাড়ি দেওয়া একটা অসম প্রেমের উপাখ্যানে
সলিল সমাধি ঘটেছে।

সাহিত্যসভার ছোটগল্প

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
সাহিত্যসভার ছোটগল্প
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

একটি সুগন্ধি ফুলের ঘ্রাণ 
সুশান্ত কুমার দে

বেলকনির জানালার গ্লাসটি সরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে শিউলি। খুঁজে পেল বহির্জগতের রূপলাবণ্যে ভরা অফুরন্ত সৌন্দর্যের ভাণ্ডার, তার মাঝেই প্রস্ফূটিত এক টুকরো ভালোবাসার উজ্জ্বল ঝকঝকে হীরের টুকরো।
হাজার মানুষের ভিড়ে শিউলির দৃষ্টিটা নিবন্ধিত হয় মিন্টুর দিকে।
হ্যাঁ, মিন্টু এসেছে, প্রতিদিনের মতো গাড়িটা থামিয়ে পাশের দোকান থেকে একটা ঠাণ্ডা কিনে ঢকঢক করে গিলতে লাগল।
না, ওটা নেহাত পানীয় পানের কিংবা খাদ্যের হজমশক্তি বাড়াতে নয়, কিছুটা সময় পার করে শুধু শিউলির রূপলাবণ্য সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। শিউলি ওকে কিছুটা খোলামেলা দেখার সুযোগ করে দেয়। বুকের ওড়নাটা টেবিলের ওপর রেখে দেয়। একটা পাতলা টাইট নীল রঙের কামিজ পরে কপালে একটা রঙিন টিপ দিয়ে বেলকনির জানালার কাচ সরিয়ে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।


মিন্টুকে যতটা সম্ভব খুশি করার চেষ্টা করে। কেননা শিউলি মিন্টুকে অত্যন্ত ভালোবাসে।
মিন্টু শিউলির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, তার সারা শরীর যেন এক মুহূর্তে প্রখর দৃষ্টিতে আটকে যায়।
শিউলিও কিছুটা আবেগের বশে লাজলজ্জা ভুলে দুজনায় মধ্যে চোখাচোখির ভাব বিনিময় করে।
একটু মিষ্টি হেসে কয়েক মুহূর্তের জন্য দুজনার দুকূলে দাঁড়িয়ে কিছুটা প্রেমসাগরে হাবুডুবু খাওয়ার প্রাণবন্ত চেষ্টা। 
মিন্টুর অফিসের সময় হয়ে গেছে, মাত্র মিনিট পাঁচেক সময় হাতে আছে। হাতটা নেড়ে টা টা বাই বাই বলে বিদায় নেয়। শিউলিও একটু হাত নেড়ে মিষ্টি হেসে মিন্টুকে বিদায় জানায়।
এভাবে আর কতদিন চলবে, অন্তরের যে দাবানল ফুঁসে উঠেছে তা বোধহয় স্বয়ং বিধাতাও থামাতে পারে না।
অতি মেধাবী শিউলির ক্রমশই পড়াশোনার অবনতি হচ্ছে। পড়াশোনার ক্ষতি হওয়ার ভয়ে তার মা তাকে একটা মোবাইল ফোন পর্যন্ত দেয়নি।
মা রমনা অত্যন্ত কঠিন শাসনের মধ্যেই মেয়েটিকে রাখেন। ঘরের বাইরে একা একা মেয়েকে কোথাও যেতে দেন না।
সব সময় কড়া নজরেই রাখেন, বাবা নিবারণ বাইরে থাকেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাড়ি ফেরেন। সেই কারণেই মেয়েটার দেখভাল মাকেই কড়া নজরে রাখতে হয়। 
যৌবনের প্রথম যে কুঁড়িটি প্রস্ফূটিত হয় সেই কুঁড়ির অন্তরে লুকায়িত থাকে অজস্র ভালোবাসার ঢেউ।
একটা নতুন অনুভূতির রঙিন স্বপ্ন। যেটা শিউলির অন্তরজুড়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
চন্দ্রের বিচ্ছুরণ যেন সারা অঙ্গে সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালি করে, বক্ষযুগল স্ফীত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা মনমাতানো প্রাচীরের শীর্ষ চূড়ায়।
ইতোমধ্যে শিউলি ও মিন্টুর মধ্যে যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা অনেকের দৃষ্টির গোচরে এসেছে।
রমনার কানে কে বা কারা ফিসফিস করে বলেও দিয়েছে।


রমনা আদৌ বিশ্বাস করতে পারেন না, শিউলির নামে কেউ আজেবাজে কোনো কথা বলুক, তিনি এটা আদৌ মেনে নিতে চান না।
তাছাড়া শিউলির রূপলাবণ্য নিয়ে মা রমনা, গর্ব বোধ করেন। আদরের মেয়েটিকে তো আর যেনতেন ঘরে সম্প্রদান করবেন না।
একটা উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরি পাওয়া ছেলের হাতে শিউলিকে তুলে দিতে চান। অথচ শিউলি একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষকের পদে সদ্য চাকরি পাওয়া স্বল্প বেতনের মিন্টুকে বিয়ে করতে চায়।


শিউলির সম্প্রতি চঞ্চলতা ও পড়াশোনার প্রতি অনাগ্রহ বেশ লক্ষণীয়।
ইতোমধ্যেই কলেজের অধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, টেস্ট পরীক্ষায় শিউলির রেজাল্ট খুবই খারাপ হয়েছে।
অভিভাবক হিসেবে রমনা শিউলিকে সঠিকভাবে পড়াশোনার ব্যাপারে একটু সজাগ থাকতে বললেন।
বিষয়টি নিয়ে রমনা শুক্রবার রাতে স্বামী নিবারণের সঙ্গে সবকিছু খুলে বললেন।
নিবারণ বললেন, মানসম্মান থাকতে থাকতে মেয়েটিকে সুপাত্রের হাতে তুলে দিতে হবে। কেননা, যে বাড়িতে একটা ভালো মেয়ে থাকে, সেই বাড়ির চারপাশের বাতাসে যেন একটা সুগন্ধি ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে।


সেই সুযোগে মৌমাছিদের আনাগোনা বেড়ে যায়।
ওদিকে মিন্টু ও শিউলির ঘটনা বহুদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে।
শিউলি তার বাবা, মায়ের পরিকল্পনাগুলো বুঝতে পারল।
আগামীকাল কলেজ যাওয়ার সময় বিষয়টি নিয়ে মিন্টুকে সবিস্তারে জানাতে হবে। প্রয়োজনে পালিয়ে বিয়েটা করাই শ্রেয়।
চারদিক নিস্তব্ধতা ভেঙে শিউলি খুব ভোরে মিন্টুদের বাড়ি হাজির হলো।
মধুলোভী মৌমাছিরা ফ্যালফ্যাল করে শিউলির দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সুগন্ধযুক্ত ফুলের নির্যাস পেতে কে না চায়। মিন্টু খবরটি পেয়ে শিউলির দিকে এগিয়ে এল।
শিউলি বলল, মিন্টু দা এখুনি একটা উপায় কর। ততক্ষণে শিউলির মা, বাবাসহ প্রতিবেশীর বেশ কিছু লোক এসে হাজির হলো।
রমনা, শিউলির সাহসিকতার কাছে পরাজয় বরণ করল। দুই পক্ষের লোকজন একত্রে জড়ো হলো। সবার মুখে মুখে শিউলি ও মিন্টুর কুকীর্তিটা ফাঁস হয়ে গেল। 
রমনা শিউলিকে বাড়ি ফিরে আসতে অনুরোধ করল; শিউলি মায়ের সব অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে মিন্টুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। এ দৃশ্য দেখে রমনার দুচোখ বেয়ে দরদর করে জল গড়িয়ে পড়ল।


পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উভয় পক্ষের মধ্যে একটা সমাধান চাই।
সবশেষে অতি শিগগিরই শিউলি ও মিন্টুর বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। হঠাৎ করে মিন্টুর ছোট ভাই পলাশ দৌড়াতে দৌড়াতে একখানা পঞ্জিকা নিয়ে রমনার হাতে ধরিয়ে দিল। মুহূর্তেই চারপাশের নিস্তব্ধতা ভেঙে উঠোন ভর্তি মানুষ ফ্যালফ্যাল করে রমনার দিকে তাকিয়ে রইল।

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

জন্মান্তর পেরিয়ে
নকুল শর্ম্মা

জন্মান্তর পেরিয়ে বারবার আমি আসব-
রাতের নীরব অবসানে যেভাবে দিন আসে,
নীরবতার দোর ভেঙে আমি তোমার কাছেই আসব। 
রামধনুর পথ বেয়ে তোমার ছবি আঁকব
গ্রহ-নক্ষত্রের নিয়মের বিপরীতে হবে আমার অবস্থান, 
নীল আকাশে সাদা মেঘ হয়ে আমি আসব।
খোলা প্রান্তরে মকমলে কোমল ঘাস মাড়িয়ে
দু’হাতে জড়িয়ে ধরব তোমাকে,
বাতাসে তোমার গায়ের মিষ্টি গন্ধ ছড়াবে,
আমি বুক ভরে নেব তৃপ্তির নিঃশ্বাস। 
নিঃশব্দে হাত বুলিয়ে দেব তোমার কালো চুলে
মেঘের জানালায় তোমাকে খুঁজে নেব,
ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বলব-
ভালোবাসি, ভালোবাসি অনন্ত রথের 
তুমিই আমার একমাত্র সারথি। 
গত জনমের অভিশাপ মুছে ফেলে আমরা হব
ছুটে চলা উন্মত্ত নদী-
ঢেউয়ের মিলন স্রোতে বয়ে যাব অজানার পানে
যেখানে নীল সমুদ্র মন্থনে উঠে আসে অমৃত বারি।

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম
আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

সুদিন
হাফিজুর রহমান

তুমি এসো
আমার জন্যেই আসবে, 
আসতেই হবে একসময়- একদিন;
না-হলেও ভালোবেসে!
আশাহত, হতে দিও না আমাকে।

ছোট হতে দিও না
হতে দিও না কখনো অপমান,
বাঁচতে দিও সম্মানটুকুই নিয়ে-
মানুষ হিসেবে ধরে রাখতে মর্যাদা;
উপভোগ করাতে এ জীবনটাকে।