ঢাকা ১২ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

ধারাবাহিক উপন্যাস গোপনীয়

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ পিএম
আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ পিএম
গোপনীয়
গ্রাফিকস: নাজমুল মাসুম

পর্ব-১৩

চারদিকে হাঁকডাকের অন্ত নেই। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে পুলিশের দল, কিশোর গ্যাঙের বখাটে শিশুর দল।
সূর্য ঢলেছে সেই কবে। মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ। বিকেলী সূর্যের তীর্যক আলো জনতার ওপর পুলিশের টর্চের মতো এসে পড়েছে।  
এসময় বিরামপুর হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কিচিরমিচিরে মাঠের নৈঋত কোণটি ভরে উঠল। তারা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এদিক দিয়ে নেতা রিয়াজুল্লা মঞ্চে প্রবেশ করবেন।  
-আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে; সকাল থেকে না খেয়ে আছি।   
একজন সাদা শার্ট-কালো প্যান্ট পরা ছাত্র কাকে প্রশ্ন করল বোঝা গেল না। এ সময় শিক্ষার্থীদের দায়িত্বে থাকা একজন শিক্ষক বললেন, দুপুরে এক প্যাকেট বিরিয়ানি দেওয়া হবে, কিন্তু এই মন্দার বাজারে বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হবে কিনা জানা গেল না।  
শিক্ষক মহোদয় কার উদ্দেশে এ কথাটি বললেন তাও বোঝা গেল না। ছাত্রছাত্রীদের কল-কোলাহল, হকারদের হাঁকডাক আর থেকে থেকে মঞ্চ থেকে ভেসে আসা স্লেগানে ছাত্র-শিক্ষকদের কথাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর উত্থান-পতন নিয়ে বিমুখ কয়েকজন শিক্ষার্থী এর মধ্যে শিক্ষকের দৃষ্টি এড়িয়ে নিজেদের আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে-
-তুই বলেছিলি গতকাল শিরীষতলায় আসবি।  
 -আমি তো এসেছিলাম, স্যারকে দেখে চলে যেতে হয়েছে। 
-কখন এসেছিলি?  
 -এই কীসের আলাপ হচ্ছে এখানে?  
 -কেমিস্ট্রি ক্লাস নিয়ে আলাপ স্যার। আচ্ছা ফুটন্ত ক্লোরিনের মধ্যে এসিটিক এসিড চালনা করলে কী হয়।
-আমি জানি না। দশটার দিকে এসেছিলাম।
-তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে। হাইড্রোজেনের পরমাণু গুলি একটির পর একটি প্রতিস্থাপিত হতে থাকে। রোল নম্বর বারো মেয়েটিকে দেখেছিস?
-তা আর দেখব না? এসিটিক এসিডের পরিবর্তে ফরমিক এসিড চালালেও কি একই বিক্রিয়া হবে?  
-হবে। মাইরি বলছি। এমন মুখশ্রী জীবনে দেখিনি আর এমন হরিণের মতো চোখ দেখেছিস?  
-দেখব না কেন? সে আমার, ওর দিকে নজর দিবি না বললাম, ফরমিক এসিডে তো কোনো হাইড্রোজেন প্রতিস্থাপন হয় না।  
-এই, সবাই স্লোগান দাও,  
-আমার ভাই, তোমার ভাই রিয়াজুল্লা ভাই, রিয়াজুল্লা ভাই। কচু আলু ঘণ্টা।  
-এই কী বলছিস?
-স্যার সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে-বিদেশে গল্প বলছিলাম।  
-ও আচ্ছা।  
-রিয়াজুল্লা ভাইয়ের চরিত্র, ফুলের মতো পবিত্র।  
-এই সব চুপ কর।
এসময় মঞ্চ থেকে ঘোষিত হতে থাকে। ভাইসব, এখন আপনাদের সামনে মূল্যবান বক্তব্য পেশ করবেন আমাদের আজকের সভার মধ্যমণি, যার জন্য আজ আমরা এতক্ষণ অপেক্ষা করে আসছি, যার শাসনের জন্য সমগ্র দেশ অপেক্ষায় দিন গুজার করছে, বাংলার মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বর আমার আপনার সমাজের জনতার নেতা, জননেতা জনাব রিয়াজুল্লা। মুহুর্মুহু করতালিতে মুখরিত হলো চারদিক। একজন মঞ্চ থেকে স্লোগান ধরলেন,
-রিয়াজুল্লা তুমি এগিয়ে যাও। সমবেত জনতার কণ্ঠে পাল্টা স্লোগান;  
-আমরা আছি তোমার পাশে।   
নেতা মঞ্চে এসে জনতার দিকে হাত তুললেন প্রথমে। তার পর শুরু করলেন- 
ভাইয়েরা আমার, সংগ্রামী নেতৃবৃন্দ; বাংলার আকাশ আজ আষাঢ়ের মেঘে আচ্ছন্ন। বাংলার জমিনে নুহের প্লাবনের পদধ্বনি। দিকে দিকে মায়ের কান্না, পিতার হাহাকার আর ভাইবোনের চিৎকার। আকাশে উড়ছে শকুনী। জাতির পতাকা আজ খামছে ধরেছে পুরনো শকুন। বাজারে জ্বলছে আগুন, গরিবের ঘরে জ্বলছে না উনুন। দেশের স্বাধীনতার দিকে নেকড়ে দৃষ্টি পড়েছে বিদেশি শক্তির।  
তাই আজ সময় হয়েছে আমাদের জেগে ওঠার, রুখে দাঁড়ানোর। আজ যদি আমরা এই অনাচারের বীরুদ্ধে মুষ্টিবদ্ধ না হই, যদি এই অত্যাচার এখনো নীরবে সহ্য করে যাই, সেদিন দূরে নয়, যেদিন আমাদের ব্যক্তিগত ও রাষ্টীয় স্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে পড়বে। বিপন্ন হবে আমাদের ধর্ম; ওপরওয়ালার জমিনে তাকে উপাসনা করার অধিকার। ভাইয়েরা আমার, আজ আমাদের দরকার সে ঘোষণাকারীর যার কণ্ঠ শুনে লাখো জনতা যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করবে। ভাইয়েরা আমার যদি আমার মধ্যে আপনারা সেই পৌরুষের অস্তিত্ব অনুভব করেন, যদি... 
যদি কী? অনেক অনেকক্ষণ যদি বলে থেমে রইলেন সংগ্রামী জননেতা। তার অঙুলি ঊর্ধ্বে আর দৃষ্টি সম্মুখে প্রসারিত। সেদিকে দিগন্ত-প্লাবী লাখো জনতা ‘যদি’র পরের অংশটুকু শোনার জন্য ফানা ফিল্লার চতুর্থ স্তরে যাওয়া ফকিরের মতো সমাধি মুদ্রায় স্তম্ভিত হয়ে গেছে।
 স্তম্ভিত হয়ে গেছেন নেতাও। কথা নেই, বক্তব্য নেই, নিঃশ্বাস পর্যন্ত নেই। ওপরে মেঘভাঙা শ্রাবণ সূর্য রৌদ্রময়ী। নিস্তব্ধতার কানে কানে বাতাস শিস দিয়ে গেল, উত্তর দিল না কেউ। 
মঞ্চে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ কি করণীয় ঠাহর করতে পারলেন না। অনেকে নেতার মুখের দিকে আবার কেউ কেউ তাঁর সামনে প্রলম্বিত আঙুল অনুসরণ করে মাঠ বরাবর দৃষ্টি প্রসারণ করলেন। তাদের দৃষ্টি নিস্তব্ধ জনতার দেয়ালে প্রতিহত হয়ে ফিরে এল, বারবার। বক্তৃতার তুঙ্গে উঠে হঠাৎ এভাবে তাবদা খেয়ে যাওয়ার মতো নেতা রিয়াজুল্লাহ নন। কিন্তু তাই হলো।  
 স্তব্ধ জনতা, নির্বাক পৃথিবী। সবচেয়ে আশ্চর্য হলো আলিমুল্লা- নেতার ডানহাত হিসেবে ইতোমধ্যেই যে একযুগ পূর্তি সম্পন্ন করেছে। তার মুখ দিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণ হলো, কী হয়েছে নেতার?  
 কেউ কিছু বলছে না; ঝড়ের পরের শান্তি চারদিকে। এসময় পার্টির বর্ষীয়ান সভাপতি এগিয়ে এলেন, এগিয়ে এলেন মাইকের সামনে-  
 ভাইয়েরা আমার, আপনারা জানেন, কয়েক সপ্তাহজুড়ে নির্বাচনি প্রচারণা চলছে আমাদের পার্টির। আর এ প্রচারণার মধ্যমণি আমাদের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক জননেতা রিয়াজুল্লা। কিন্তু তিনিও তো মানুষ। নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল না করে দেশের জন্য, আপনাদের জন্য তিনি দিনরাত খেটে গেছেন। তাই শরীরের একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। আপনারা ধৈর্য ধরুণ। অল্পক্ষণেই তিনি বক্তৃতার জন্য ফিরে আসবেন, এখন চলবে আমাদের পার্টির সংগীত- 
বহুদূর হেঁটে এসে ঘরের দাওয়ায় বসে
ভাবছি ঘুমানো যাক এইবার,
তুমি ডাকিলে হঠাৎ, মিছিলে ওঠাও হাত
এখন তো সময় নহে ঘুমাবার।

সাগরে মিলন আশে বহুপথ পাড়ি শেষে
নদী যবে সাগরে মিলে-
নিঠুর সাগর বলে মেঘ হয়ে যাও চলে-
ভেজাও তৃষিত ঐ মরু কান্তার।

জীবনচক্র শেষে ফুল ফোটে অবশেষে
ভাবে, লোকে দেখুক আমায়-
ফুলের বৃক্ষ শুধায় ফল হয়ে ঝরো ভাই-
বীজ হয়ে বাঁচাও বংশ তোমার।

প্রাণ ছেড়ে দেয় হাল, মন বলে তোলো
পাল যতক্ষণ বাঁচো বলো: আলি, আলি;
গাও সারি ভাটিয়ালি হাতে হাতে দাও তালি,
দিতে হবে পাড়ি এই জীবন পারাবার।

মঞ্চব্যাপী সংগীত চললেও চারদিকে খুনসুটির অন্ত নেই। কী হয়েছে নেতার? তিনি কি অসুস্থ? কেউ কেউ বলল, সরকারি দল শুনেছি বিরোধী নেতাদের ওপর বিষ প্রয়োগ করছে। সেরকম কিছু হয়নি তো!  
এক কোণায় লাল-নীল দলের কর্মীরা তৎপর হলো সবার আগে। রিয়াজুল্লার জবান বন্ধ হওয়ার ঘটনাটি নেতৃবৃন্দকে এখনি জানানো দরকার।  
অকস্মাৎ ছন্দপতনে এতক্ষণের নিস্তব্ধ জনতা আবার জেগে উঠেছে।  
-লাল নীল পার্টির কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।  
-ডোরাকাটা পার্টি নিজেরাই সরকারের ঘাড়ে চাপানোর জন্য এ নাটক সাজাতে পারে।  
-পার্টিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা এ কাজে জড়িত।  
দূরের মসজিদ থেকে আসরের আজান ভেসে আসছে। বহুদূরে এক বিরহী ঘুঘু ডেকে চলেছে। সামনের জটলা একটু ফাঁকা হতে চলেছে। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র অনড় বসে আছে। তারা নেতার বক্তৃতা শুনতে আসেনি, তারা এসেছে মিটিংয়ে আসা মেয়েদের দেখতে। এ ছোকরার দল জানে মিটিংয়ের পর যখন মিছিল বের হয় তখন সামনের সারিতে থাকে সুন্দরীদের দল। কিন্তু শহরের বাছা বাছা সুন্দরীদের নেতারা কেমন করে জড়ো করেন- এ তাদের কাছে এক বিরাট জিজ্ঞাসা। তাদের কলেজ কী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন মেয়ে কেন দেখা যায় না- এ জিজ্ঞাসাও তাদের কুড়ে কুড়ে খায়। তাই এ ধরনের মিটিংয়ে বক্তাকৌশল শেখার টানে না হোক, সুন্দরের আকর্ষণে ভিড় জমায় ছাত্রদের একটি অংশ। 


চলবে... 

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

কাঁটাতার
আবির হাসান

পুরোনো মোমের মতো গলে যাচ্ছে 
নিঃসঙ্গ রাত্রি, হাওয়ার আর্তনাদ মাখা 
কোলাহল এড়িয়ে যাচ্ছে চোখ।
দৃষ্টিতে মৃত্যুর নির্মমতা ফুটে ওঠে পালকহীন 
শীর্ণ পাখির মতো!
ভাঙনের যাতনা নিয়ে যে শরীর 
ছটফট করে অন্তহীন!
মৃত্যুর মুখোশেই তার ক্ষয়িষ্ণু মখমলে দিন 
সামান্য আয়ু ফিরে পায়, আর অদৃশ্য কান্নার 
ভেতর খুঁজে পায় হারানো রঙিন দীর্ঘশ্বাস-
অথচ অলীক বঞ্চনার কাঁটাতারে 
রুদ্ধ হয়ে এ জীবন হারিয়ে ফেলেছে 
বেঁচে থাকার প্রশান্তিময় বিশ্বাস।

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

পঞ্চবৃক্ষের যুবতী
অলিউর রহমান ফিরোজ

একটি সম্পর্ক
তাও আবার দুই যুগ পেরোনো
সদ্য কৈশোর ছেড়ে
একটু একটু অনুভূতিশীল
শরীরবৃত্তীয় হালকা শিহরণ
সামান্য জেগে ওঠা
মিষ্টিমুগ্ধতা ছড়ানো 
ফুলের সুবাসিত ঘ্রাণের আকুলতায়
যেন কাউকে কাছে টেনে নেয়
সে রকম ভাবলেশহীন একটা সম্পর্ক।
সদ্য চুলের বিনুনি থেকে
আস্তে আস্তে চুলগুলো খসে যাচ্ছে
বাঁধনে আর মানছে না বাধা
সব বন পেরিয়ে
ডানা মেলে 
এক আকাশ, দু-আকাশ ভেদ করে
পাড়ি দেওয়া একটা অসম প্রেমের উপাখ্যানে
সলিল সমাধি ঘটেছে।

সাহিত্যসভার ছোটগল্প

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
সাহিত্যসভার ছোটগল্প
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

একটি সুগন্ধি ফুলের ঘ্রাণ 
সুশান্ত কুমার দে

বেলকনির জানালার গ্লাসটি সরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে শিউলি। খুঁজে পেল বহির্জগতের রূপলাবণ্যে ভরা অফুরন্ত সৌন্দর্যের ভাণ্ডার, তার মাঝেই প্রস্ফূটিত এক টুকরো ভালোবাসার উজ্জ্বল ঝকঝকে হীরের টুকরো।
হাজার মানুষের ভিড়ে শিউলির দৃষ্টিটা নিবন্ধিত হয় মিন্টুর দিকে।
হ্যাঁ, মিন্টু এসেছে, প্রতিদিনের মতো গাড়িটা থামিয়ে পাশের দোকান থেকে একটা ঠাণ্ডা কিনে ঢকঢক করে গিলতে লাগল।
না, ওটা নেহাত পানীয় পানের কিংবা খাদ্যের হজমশক্তি বাড়াতে নয়, কিছুটা সময় পার করে শুধু শিউলির রূপলাবণ্য সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। শিউলি ওকে কিছুটা খোলামেলা দেখার সুযোগ করে দেয়। বুকের ওড়নাটা টেবিলের ওপর রেখে দেয়। একটা পাতলা টাইট নীল রঙের কামিজ পরে কপালে একটা রঙিন টিপ দিয়ে বেলকনির জানালার কাচ সরিয়ে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।


মিন্টুকে যতটা সম্ভব খুশি করার চেষ্টা করে। কেননা শিউলি মিন্টুকে অত্যন্ত ভালোবাসে।
মিন্টু শিউলির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, তার সারা শরীর যেন এক মুহূর্তে প্রখর দৃষ্টিতে আটকে যায়।
শিউলিও কিছুটা আবেগের বশে লাজলজ্জা ভুলে দুজনায় মধ্যে চোখাচোখির ভাব বিনিময় করে।
একটু মিষ্টি হেসে কয়েক মুহূর্তের জন্য দুজনার দুকূলে দাঁড়িয়ে কিছুটা প্রেমসাগরে হাবুডুবু খাওয়ার প্রাণবন্ত চেষ্টা। 
মিন্টুর অফিসের সময় হয়ে গেছে, মাত্র মিনিট পাঁচেক সময় হাতে আছে। হাতটা নেড়ে টা টা বাই বাই বলে বিদায় নেয়। শিউলিও একটু হাত নেড়ে মিষ্টি হেসে মিন্টুকে বিদায় জানায়।
এভাবে আর কতদিন চলবে, অন্তরের যে দাবানল ফুঁসে উঠেছে তা বোধহয় স্বয়ং বিধাতাও থামাতে পারে না।
অতি মেধাবী শিউলির ক্রমশই পড়াশোনার অবনতি হচ্ছে। পড়াশোনার ক্ষতি হওয়ার ভয়ে তার মা তাকে একটা মোবাইল ফোন পর্যন্ত দেয়নি।
মা রমনা অত্যন্ত কঠিন শাসনের মধ্যেই মেয়েটিকে রাখেন। ঘরের বাইরে একা একা মেয়েকে কোথাও যেতে দেন না।
সব সময় কড়া নজরেই রাখেন, বাবা নিবারণ বাইরে থাকেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাড়ি ফেরেন। সেই কারণেই মেয়েটার দেখভাল মাকেই কড়া নজরে রাখতে হয়। 
যৌবনের প্রথম যে কুঁড়িটি প্রস্ফূটিত হয় সেই কুঁড়ির অন্তরে লুকায়িত থাকে অজস্র ভালোবাসার ঢেউ।
একটা নতুন অনুভূতির রঙিন স্বপ্ন। যেটা শিউলির অন্তরজুড়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
চন্দ্রের বিচ্ছুরণ যেন সারা অঙ্গে সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালি করে, বক্ষযুগল স্ফীত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা মনমাতানো প্রাচীরের শীর্ষ চূড়ায়।
ইতোমধ্যে শিউলি ও মিন্টুর মধ্যে যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা অনেকের দৃষ্টির গোচরে এসেছে।
রমনার কানে কে বা কারা ফিসফিস করে বলেও দিয়েছে।


রমনা আদৌ বিশ্বাস করতে পারেন না, শিউলির নামে কেউ আজেবাজে কোনো কথা বলুক, তিনি এটা আদৌ মেনে নিতে চান না।
তাছাড়া শিউলির রূপলাবণ্য নিয়ে মা রমনা, গর্ব বোধ করেন। আদরের মেয়েটিকে তো আর যেনতেন ঘরে সম্প্রদান করবেন না।
একটা উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরি পাওয়া ছেলের হাতে শিউলিকে তুলে দিতে চান। অথচ শিউলি একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষকের পদে সদ্য চাকরি পাওয়া স্বল্প বেতনের মিন্টুকে বিয়ে করতে চায়।


শিউলির সম্প্রতি চঞ্চলতা ও পড়াশোনার প্রতি অনাগ্রহ বেশ লক্ষণীয়।
ইতোমধ্যেই কলেজের অধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, টেস্ট পরীক্ষায় শিউলির রেজাল্ট খুবই খারাপ হয়েছে।
অভিভাবক হিসেবে রমনা শিউলিকে সঠিকভাবে পড়াশোনার ব্যাপারে একটু সজাগ থাকতে বললেন।
বিষয়টি নিয়ে রমনা শুক্রবার রাতে স্বামী নিবারণের সঙ্গে সবকিছু খুলে বললেন।
নিবারণ বললেন, মানসম্মান থাকতে থাকতে মেয়েটিকে সুপাত্রের হাতে তুলে দিতে হবে। কেননা, যে বাড়িতে একটা ভালো মেয়ে থাকে, সেই বাড়ির চারপাশের বাতাসে যেন একটা সুগন্ধি ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে।


সেই সুযোগে মৌমাছিদের আনাগোনা বেড়ে যায়।
ওদিকে মিন্টু ও শিউলির ঘটনা বহুদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে।
শিউলি তার বাবা, মায়ের পরিকল্পনাগুলো বুঝতে পারল।
আগামীকাল কলেজ যাওয়ার সময় বিষয়টি নিয়ে মিন্টুকে সবিস্তারে জানাতে হবে। প্রয়োজনে পালিয়ে বিয়েটা করাই শ্রেয়।
চারদিক নিস্তব্ধতা ভেঙে শিউলি খুব ভোরে মিন্টুদের বাড়ি হাজির হলো।
মধুলোভী মৌমাছিরা ফ্যালফ্যাল করে শিউলির দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সুগন্ধযুক্ত ফুলের নির্যাস পেতে কে না চায়। মিন্টু খবরটি পেয়ে শিউলির দিকে এগিয়ে এল।
শিউলি বলল, মিন্টু দা এখুনি একটা উপায় কর। ততক্ষণে শিউলির মা, বাবাসহ প্রতিবেশীর বেশ কিছু লোক এসে হাজির হলো।
রমনা, শিউলির সাহসিকতার কাছে পরাজয় বরণ করল। দুই পক্ষের লোকজন একত্রে জড়ো হলো। সবার মুখে মুখে শিউলি ও মিন্টুর কুকীর্তিটা ফাঁস হয়ে গেল। 
রমনা শিউলিকে বাড়ি ফিরে আসতে অনুরোধ করল; শিউলি মায়ের সব অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে মিন্টুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। এ দৃশ্য দেখে রমনার দুচোখ বেয়ে দরদর করে জল গড়িয়ে পড়ল।


পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উভয় পক্ষের মধ্যে একটা সমাধান চাই।
সবশেষে অতি শিগগিরই শিউলি ও মিন্টুর বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। হঠাৎ করে মিন্টুর ছোট ভাই পলাশ দৌড়াতে দৌড়াতে একখানা পঞ্জিকা নিয়ে রমনার হাতে ধরিয়ে দিল। মুহূর্তেই চারপাশের নিস্তব্ধতা ভেঙে উঠোন ভর্তি মানুষ ফ্যালফ্যাল করে রমনার দিকে তাকিয়ে রইল।

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

জন্মান্তর পেরিয়ে
নকুল শর্ম্মা

জন্মান্তর পেরিয়ে বারবার আমি আসব-
রাতের নীরব অবসানে যেভাবে দিন আসে,
নীরবতার দোর ভেঙে আমি তোমার কাছেই আসব। 
রামধনুর পথ বেয়ে তোমার ছবি আঁকব
গ্রহ-নক্ষত্রের নিয়মের বিপরীতে হবে আমার অবস্থান, 
নীল আকাশে সাদা মেঘ হয়ে আমি আসব।
খোলা প্রান্তরে মকমলে কোমল ঘাস মাড়িয়ে
দু’হাতে জড়িয়ে ধরব তোমাকে,
বাতাসে তোমার গায়ের মিষ্টি গন্ধ ছড়াবে,
আমি বুক ভরে নেব তৃপ্তির নিঃশ্বাস। 
নিঃশব্দে হাত বুলিয়ে দেব তোমার কালো চুলে
মেঘের জানালায় তোমাকে খুঁজে নেব,
ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বলব-
ভালোবাসি, ভালোবাসি অনন্ত রথের 
তুমিই আমার একমাত্র সারথি। 
গত জনমের অভিশাপ মুছে ফেলে আমরা হব
ছুটে চলা উন্মত্ত নদী-
ঢেউয়ের মিলন স্রোতে বয়ে যাব অজানার পানে
যেখানে নীল সমুদ্র মন্থনে উঠে আসে অমৃত বারি।

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম
আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

সুদিন
হাফিজুর রহমান

তুমি এসো
আমার জন্যেই আসবে, 
আসতেই হবে একসময়- একদিন;
না-হলেও ভালোবেসে!
আশাহত, হতে দিও না আমাকে।

ছোট হতে দিও না
হতে দিও না কখনো অপমান,
বাঁচতে দিও সম্মানটুকুই নিয়ে-
মানুষ হিসেবে ধরে রাখতে মর্যাদা;
উপভোগ করাতে এ জীবনটাকে।