গুচ্ছ গুচ্ছ ফুটেছে কাশফুল। দোলে হাওয়া-বাতাসে। আর গাঢ় নীল আকাশে থেকে থেকে উড়ে যায় সাদা মেঘ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরতলির ছয়বাড়িয়ার মডেল মসজিদ ও জেলা প্রশাসক প্রকল্প এলাকায় যদি বেড়াতে যান, দেখবেন এমন দৃশ্য। সেখানে ঋতুর রানি শরৎকাল সেজেছে কী অপরূপ সাজে।
কারুকার্যময় মসজিদটির চারপাশে অনেকটা খোলা জায়গা। সেখানে ফুটেছে ধবধবে সাদা কাশফুল। এরপর ধানের খেত, সবুজ ধানগাছ। আরও দূরে গাছগাছালি ছাওয়া ঘরবাড়ি। আর নগরকাননে ফুটেছে শিউলি ফুল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়বাড়িয়াতে দিনের শুরু কিংবা শেষ বিকেলের মৃদু হাওয়ায় দোলে কাশফুল। যারা নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন, তারা নিত্য উপভোগ করেন প্রকৃতির এই সৌন্দর্য। আসেন আরও অনেকে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও আসেন দলবেঁধে। শিশুসন্তানদের নিয়ে আসেন অনেকে মা-বাবা। শিশুরা কখনো বাবার হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়। আবার কখনো তার ভাই কিংবা বোনের সঙ্গে দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে। লুকোচুরি খেলে। অথবা কাশফুলের নরম ছোঁয়া নেয়। এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন অনেকে।
সামিয়া জাহান নামের এক কলেজছাত্রী এসেছেন কাশবনে। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ঘুরে বেড়ানোর তেমন জায়গা নেই। প্রতিবছর শরৎকালে এই এলাকায় কাশফুল ফোটে। তাই বিকেল বেলা এখানে ঘুরতে আসেন। কখনো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আসেন। কখনো বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আসেন। এখানে শেষ বিকেলটা কাটাতে তার বেশ ভালো লাগে। বিশেষ করে কাশফুলের ওপর দিয়ে যখন বাতাস বয়ে যায়, তখন কেমন ঢেউ খেলে। এই দৃশ্য দেখতে তার খুব ভালো লাগে। তা ছাড়া এখানে কোনো কোলাহল নেই। কোনো ব্যস্ততা নেই। এমনিতে মন ভালো হয়ে যায়।
শাহিদুল আলম নামের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের দেশের শরৎকালের তুলনা নেই। এ সময় খুব একটা বৃষ্টি হয় না। আকাশে মেঘ ভেসে বেড়ায়। চরে কিংবা নদীর কিনারে দেখবেন কাশফুল ফুটে আছে। এই ফুলের সুবাস নেই বটে! কিন্তু এর অন্যরকম আকর্ষণ আছে। দেখতে দুধের মতো সাদা। আর ছুঁয়ে দেখবেন কী যে কোমল! তিনি আরও বলেন, ‘এই মডেল মসজিদ এলাকায় অনেকটা জায়গাজুড়ে কাশফুল ফুটেছে। তাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এসেছি। ছবি তুলছি। খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে বাচ্চারা খুব মজা পায়। এতে আমরাও খুব খুশি।’
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়বাড়িয়ার এই কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা মানুষ মাঝেমধ্যে বখাটেদের উপদ্রবের শিকার হন। গত বছর এখানে এক নারীকে লাঞ্ছিত করেছিল বখাটেরা। এবারও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযুষ কান্তি আচার্য বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বসাধারণের সময় কাটানোর মতো তেমন জায়গা নেই। এ কারণে প্রতিবছর এখানে শরৎকালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকে বেড়াতে আসেন। কিছুসংখ্যক বখাটে এখানে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে বলে আমরা জেনেছি। ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটছে।’
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে পুলিশের টহল না থাকায় দুর্বৃত্তরা সুযোগ নেবে। এ ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। বছরের মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন এই এলাকায় কাশফুল দেখতে মানুষের ভিড় জমে। স্থানীয় বাসিন্দারা যদি একটু নজর রাখেন, তাহলে এখানে দুর্বৃত্তরা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সাহস পাবে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার খবর তার কানেও এসেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের লোকবল কম। তা ছাড়া পুলিশের যানবাহন নেই বললেই চলে। তাই কাশফুলের এলাকায় পুলিশের টহল দেওয়া আপাতত সম্ভব হচ্ছে না।