ঢাকা ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

২০৪০ সালের মধ্যে সীসামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫ পিএম
২০৪০ সালের মধ্যে সীসামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
বক্তব্য রাখছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের মধ্যে সীসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর বিআইসিসিতে আয়োজিত ‘সীসামুক্ত বাংলাদেশ : আমরা কীভাবে পৌঁছাব’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সীসা এবং ভারী ধাতু দূষণকে ‘নীরব সংকট’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সরকার সব অংশীজনের সহযোগিতায় ২০৪০ সালের মধ্যে সীসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছে। 

সীসা দূষণের উৎস সনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

পরিসংখ্যানের গুরুত্ব উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সীসা দূষণের জাতীয় পর্যায়ের তথ্যসমূহ কার্যকর নীতিমালা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ। 

তিনি ইউনিসেফ এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সহযোগিতার প্রশংসা করেন এবং দূষণ প্রতিরোধে সমন্বিত ও তথ্যভিত্তিক উদ্যোগের আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক সীসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে মন্ত্রণালয় এবং ইউনিসেফের উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। 

এ কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিল ভারী ধাতু দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব, বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই সংকট মোকাবেলায় সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের একত্রিত করা।

মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স, ইউএসএআইডির মিশন পরিচালক রিড আইশ্লিম্যান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম।
সূত্র: বাসস

সুমন বিশ্বাস/অমিয়/

অপরূপ নীল চটক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ এএম
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ এএম
অপরূপ নীল চটক
গাছের ডালে বসা নীল চটক পাখি। সম্প্রতি চুয়াডাঙায়। ছবি: বখতিয়ার হামিদ

হালকা শীতের দুপুর। আর কদিন পর আসবে বসন্ত। ঢাকার রমনা পার্কের উত্তরায়ণ গেটের কাছে পলাশগাছটিতে ফুলের কলি এসেছে এবং কিছু ফুলও ফুটেছে। পলাশগাছের ফুলে অনেক পাখি আসে মধু ও ফুলে বিচরণ করা পোকামাকড় খেতে। পলাশগাছটি থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে পলাশ ফুলে আসা পাখি দেখছি। সবুজ টিয়া, বাংলা কাঠঠোকরা, কাঠশালিক, হাঁড়িচাঁচা ফুলে-ফুলে বিচরণ করছে। মাঝে মাঝে একটি চঞ্চল পুরুষ মৌটুসি উড়ে এসে ফুলে বসে দুদণ্ড সময় কাটিয়ে আবার উড়ে যাচ্ছে অন্য কোথাও। তার ডাক রোমাঞ্চকর। বসন্তের আগমনে তার একজন সঙ্গী দরকার, এমনই তার ভাব-সাব। 

পলাশগাছ থেকে একটু দূরে একটি মাঝারি বহেরা গাছ। বহেরার পাতাগুলো ঝরে পড়েনি। পাতার ভেতর থেকে একটি নীল রঙের পাখি উড়ে এসে অন্য পাতার ওপর বসে উড়ন্ত পোকা ধরে খাচ্ছে। পোকা ধরার কৌশলটা অন্য রকম। প্রথমে সে উড়ে এসে পাতার ভেতরে বা পাতার গায়ে লেগে থাকা পোকাদের উড়িয়ে দেয়। তারপর উড়ন্ত পোকা ধরে খায়। পাখিটির পালকের রং তীব্র নীল। শীতের সেই দিনে জীবনে প্রথম দেখা হলো পৃথিবীর সেই পাখিটির সঙ্গে, যার নাম হলো ‘নীল চটক’ বা ‘নীল কটকটিয়া’। পালকের নীল বর্ণের জন্য জুটেছে এমন নাম। পাখিটির অন্য নামগুলো হলো অম্বর চুটকি, নীলাম্বরি ও আকাশি চটক। এটি মূলত পোকা শিকারি পাখি। পাখিটি অনেকক্ষণ ধরে বহেড়াগাছের পাতায় উড়ে উড়ে পোকা ধরে খাচ্ছিল। কী সুন্দর তার পালকের নীল রং! যখন রোদ পড়ছিল, তখন নীল রংটি আরও তীব্র হয়েছিল। চোখের কাছে কাজলের মতো টান এবং নীলপালক পাখিটিকে অনন্য করে তুলেছে। 

নীল কটকটিয়া আমাদের দেশে শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে এবং বাংলাদেশে বহুল পরিচিত একটি পরিযায়ী পাখি। শীত মৌসুমে দেশে সব বিভাগের বন, শহরের উদ্যানে এবং গ্রামের জঙ্গলে দেখা যায়। শীতে মূলত একাকী কিংবা ছোট দলে পাখিটি চরে বেড়ায়। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় থাকে এবং দলে মিশে না। গ্রীষ্মকালীন আবাসে সাধারণত মুক্ত বন, বনের প্রান্তর, বাগান ও জলাধারের কাছে ঝোপে বিচরণ করে। প্রজনন সময় এরা হিমালয়ে বাসা বানায়। 

এ পাখির ইংরেজি নাম ভার্ডিটার ফ্লাইক্যাচার। নীল চটক হিমালয় থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে সুমাত্রা পর্যন্ত পাওয়া যায়। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নীল চটকের চোখের কালো দাগ এবং ধূসর ভেন্ট ব্যতীত শরীরের সমস্ত অংশে গাঢ় নীল। এই পাখির প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্করা হালকা নীল ও কিছুটা অনুজ্জ্বল হয়। মার্চ থেকে জুন মাসে এরা গাছের মগডালে বসে গান গায়। এপ্রিল থেকে আগস্ট মাসে গাছের গর্তে, শিলার ফাটলে সবুজ শেওলা দিয়ে দুই স্তরের বাসা বানায়। তিন থেকে পাঁচটি পিত-বেগুনি রঙের ডিম পাড়ে। বাংলাদেশ ছাড়া পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াতে নীল চটক পাখির দেখা পাওয়া যায়। 

লেখক: নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার

শীতের শোভা রক্তকাঞ্চন

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ এএম
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ এএম
শীতের শোভা রক্তকাঞ্চন
জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে ফোটা রক্তকাঞ্চন ফুল। ছবি: লেখক

‘কোন ঘর-ছাড়া বিবাগীর বাঁশি শুনে উঠেছিল জাগি
ওগো চির-বৈরাগী!
দাঁড়ালে ধুলায় তবে কাঞ্চন-কমল-কানন ত্যাগি’-
ওগো চির-বৈরাগী।’

কাজী নজরুল ইসলামের ১৯২৫ সালে প্রকাশিত চিত্তনামা কাব্যের ‘রাজ-ভিখারী’ কবিতার এ লাইনগুলো পড়লে কাঞ্চন-কানন নিয়ে একটি দৃশ্য কল্পনায় ভেসে ওঠে। কাল যে রাজা ছিল, তার ছিল কাঞ্চন-কমল শোভিত রাজ উদ্যান। সে উদ্যানে শোভা পেত কাঞ্চন ফুল, জলাশয়ে পদ্ম। সুধাময় সে জীবন ছেড়ে রাজা কেন বেছে নিতে বাধ্য হলেন ক্ষুধাময় ভিখারির জীবন? এটাই বোধ হয় প্রকৃতির বিধান, আজ যে রাজা কাল সে ফকির। আজ যেখানে যে গাছ আছে, কাল সেখানে তা থাকবে না। রাজভিখারির মতো ভিক্ষা তো আমিও চাই, মানুষের কাছে- প্রকৃতির কাছে আমার সে ভিক্ষা সমগ্র মানবের কল্যাণের জন্য। 

রাজোদ্যানেই আসলে মানায় কাঞ্চনকে। কাঞ্চন অর্থ সোনা, সোনা মানেই দামি। সেই সোনারঙা হলুদ কাঞ্চনও আছে এ দেশে, সেটা দুষ্প্রাপ্য বলেই দামি। তবে এই শীতে নগরজুড়ে উদ্যানে, রাজোদ্যানে ফুটে উঠেছে রক্তকাঞ্চন আর দেবকাঞ্চন ফুলেরা। খামারবাড়ি থেকে আড়ংয়ের দিকে যেতে জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণের ভেতরে কয়েকটি রক্তকাঞ্চন গাছে ফুল ফুটে আছে। শাখায় শাখায়, ডগায় ডগায় ফুলের মঞ্জরি, রোদমাখা বাতাসে দুলছে ফুলমাথায় সরু সরু ডাল। সবুজ পত্রপল্লবের মধ্যে যেন বসেছে প্রজাপতির মেলা। 

কাজী নজরুল ইসলাম শতবর্ষ আগে যে কাঞ্চন ফুলকে ঠাঁই দিয়েছিলেন রাজ উদ্যানে, কাকতালীয়ভাবে সেই কাঞ্চনকেই দেখতে পেলাম বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের আঙিনায়। রমনা উদ্যান ও জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান তো বটেই, এ সময় ঢাকা শহরের অনেক ছাদের বাগানেও দেখা যাচ্ছে রক্তকাঞ্চনের শোভা। যদিও বইপত্রে লেখা আছে, রক্তকাঞ্চনের ফুল ফোটা শুরু হয় মাঘের মাঝামাঝি থেকে আর ফুল ফোটা চলতে থাকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত। সুসংবাদ হলো, এবার আর মাঘ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি, অগ্রহায়ণেই ফুল ফোটা শুরু হয়ে গেছে রক্তকাঞ্চনের। তেমনি তাকে সঙ্গ দিতে ফোটা শুরু করেছে হালকা গোলাপি রঙের সরু পাঁপড়ির দেবকাঞ্চন ফুলও। দুই সপ্তাহ আগেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে গিয়ে সে দৃশ্য দেখে এসেছি। ফুল ফোটার পঞ্জিকা অনুসারে দেবকাঞ্চনের ফোটার সময়টা ঠিকই আছে, কিন্তু রক্তকাঞ্চনের বেলায় কিছুটা উল্টোপাল্টা দেখছি। অথচ এ দুটি কাঞ্চনের প্রস্ফুটন প্রাচুর্যের মোক্ষম সময় হলো বসন্ত। 

রক্তের রং লাল, কিন্তু রক্তকাঞ্চন নাম হলেও এর রং লাল না, বেগুনি-গোলাপি বা মেজেন্টা। আগে ঢাকা শহরে দেবকাঞ্চনই বেশি দেখা যেত, এখন রক্তকাঞ্চনের গাছ বেড়েছে। কারণ আর কিছুই না, দেবকাঞ্চনের চেয়ে রক্তকাঞ্চন ফুলের শোভা বা সৌন্দর্য বেশি, রংটাও আকর্ষণীয়। আর ফুলে মৃদু সুগন্ধও আছে। আবার এর কিছু হাইব্রিড জাতও বিদেশ থেকে এসেছে, যেগুলোর ফুল বড় ও ঘন মেজেন্টা রঙের। রক্তকাঞ্চন ফুলের পাপড়ি পাঁচটি, পুরুষ কেশরও পাঁচটি, কিন্তু স্ত্রী কেশর একটি। এসব গাছ লাগানোর পরের বছর থেকেই ফুল ফোটা শুরু হয়। গাছ বাড়েও বেশ দ্রুত। বাড়তে বাড়তে একসময় রক্তকাঞ্চনের গাছ মাঝারি বৃক্ষের রূপ ধরে। এ গাছের দোলায়মান শাখা-প্রশাখা ঘন ছাতার মতো গাছের পত্রছায়া তৈরি করে। সব কাঞ্চনের পাতা দেখতে প্রায় একই রকম, উটের খুরের মতো আকৃতি, একটি পাতার দুটি ফলক বইয়ের দুটি পাতার মতো ভাঁজ করা থাকে। পাতার ফলক অনেকটা উপবৃত্তাকার, সবুজ, নিচের পিঠ ধূসর সবুজ। তবে গাছটা চিরসবুজ না। শীত ফুরালেই পাতারা ঝরে যায়। বসন্তে তখন নিষ্পত্র ডালে ডালে শোভা পেতে থাকে ফুলেরা। সে এক মধুর দৃশ্য!

ডালের আগায় লম্বা পুষ্পমঞ্জরিতে একটার পর একটা ফুল ফুটতে থাকে, ফুল ঝরে গেলে সেখানে ঝুলতে থাকে শিমের মতো চ্যাপ্টা ফল। শিম, কৃষ্ণচূড়া, কাঞ্চন একই বংশীয়, ফ্যাবেসি ওদের গোত্রের নাম। তাই ওদের ফলগুলোও দেখতে মোটামুটি একই রকম, শুধু আকারে ছোট-বড়। ফল পাকলে সশব্দে ফেটে দুভাগ হয়ে ভেতর থেকে বিচিগুলো ছড়িয়ে পড়ে। বীজ থেকে চারা হয়। তবে এখন শাখা কেটে কলম করেও চারা তৈরি করা হচ্ছে। রক্তকাঞ্চনের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bauhinia variegata, গাছটি এ দেশে এসেছে ভারতের শুষ্কাঞ্চলের অরণ্যভূমি থেকে। ষাটের দশকে ঢাকা শহরে হেয়ার রোড ও পরীবাগে কদাচিৎ রক্তকাঞ্চন গাছ চোখে পড়ত বলে জানিয়েছিলেন নিসর্গী দ্বিজেন শর্মা, বর্তমানে অঢেল। কাঞ্চন ফুলের শোভা দিক মনের প্রশান্তি, বৃক্ষ দিক বেঁচে থাকার প্রাণবায়ু। বাগানে বাগানে আরও ছড়িয়ে পড়ুক কাঞ্চনকন্যারা। শীত ঋতুর বরণ ঘটুক রক্তকাঞ্চনের শোভায়।

নোবিপ্রবিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে অতিথি পাখি

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৩ এএম
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৩ এএম
নোবিপ্রবিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে অতিথি পাখি
শীতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ময়না দ্বীপে দেখা যায় হাজারও অতিথি পাখি। ছবি: সংগৃহীত

কুয়াশাঘেরা ভোর জানান দিচ্ছে শীতের। শীত আগমনের সঙ্গে সঙ্গে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ময়না দ্বীপে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব অতিথি পাখির সমাগম আরও বেড়ে যায়। এ কারণে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ময়না দ্বীপ সৌন্দর্য উপভোগের এক অন্যতম জায়গায় পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিবছর শীত এলেই নোবিপ্রবির ময়না দ্বীপে অতিথি পাখি ভিড় জমায়। এ বছরও আগমন ঘটেছে অতিথি পাখির। কুয়াশা জড়ানো সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ময়না দ্বীপের পানিতে বিচরণ শুরু হয় তাদের। দলবেঁধে পাখিদের উড়ে বেড়ানো আর খাবার সংগ্রহের দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। ময়না দ্বীপ পাখিদের স্থায়ী অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে নোবিপ্রবির সৌন্দর্য আরও বাড়বে, পাখিদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

চারদিকে পাখির কলকাকলি। কখনো মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানো, আবার কখনো দলবেঁধে জলকেলিতে মত্ত থাকা এসব অতিথি পাখি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন প্রকৃতি ও পাখিপ্রেমী শিক্ষার্থীরা। কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউবা ভিডিও ফুটেজ নিয়ে শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এমন দৃশ্য এখন বলা চলে নিত্যদিনের।

অতিথি পাখির কলকাকলি উপভোগ করতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ শিক্ষার্থীরাই শুধু নয়, আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সৌন্দর্যপ্রেমীরা আসছেন। ময়না দ্বীপের পাশে শান্তিনিকেতনে শিক্ষার্থীদের গানের আসর বসে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ সেই গানের আসরকে করে আরও প্রাণবন্ত। ব্যস্ত ক্যাম্পাস জীবনের মাঝে একটু বিরাম পেতে প্রতিদিনই হাজির হচ্ছেন শত শত শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ময়না দ্বীপের জমি ইজারা দেওয়ায় বিগত বছরগুলোতে সেখানে পানি সেচ দিয়ে করা হতো চাষাবাদ। ফলে কিছুদিন থেকে আবারও ফিরে যেত এসব পাখি। তবে এবার ময়না দ্বীপে চাষাবাদ না করায় এখনো নির্ভয়ে দিন পার করছে চলতি মৌসুমে আসা অতিথি পাখি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া সুলতানা বলেন, ‘মনে প্রশান্তি এনে দেয় নোবিপ্রবিতে আসা অতিথি পাখি। প্রকৃতির মাঝে বিলীন হতে আমার সবসময়ই ভালো লাগে, মানসিক শান্তি অনুভব হয়। অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস শেষ হলে মানসিক শান্তির খোঁজে শান্তিনিকেতন, মনোসরণি বা কেন্দ্রীয় উপাসনালয়ের পাশের মাঠে এসে বসি, ওই সময় অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দ, উড়ে বেড়ানো সবকিছুই মনে অদ্ভুত শান্তি এনে দেয়।’

আরেক শিক্ষার্থী ইসমাত জাহান বলেন, ‘আমার কাছে নোবিপ্রবির সৌন্দর্য মানে তিনটি জিনিস। শরতের কাশফুল, শীতের অতিথি পাখি আর সূর্যমুখী ফুল। অতিথি পাখি নোবিপ্রবির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। সারা দিনের ক্লাস শেষে মনোসরণি কিংবা শান্তিনিকেতনের টঙে বসি। ওই সময় অতিথি পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ শুনে মনে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়। ময়না দ্বীপজুড়েই তাদের রাজত্ব। চারদিকে ফুটে থাকা নানা রঙের ফুলের ভিড়ে এসব পাখি যেন ক্যাম্পাসের ১০১ একরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘গত বছর ময়না দ্বীপ ধান চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর লিজ বাতিল করি। অতিথি পাখির নিরাপদ আবাসস্থলের জন্য আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। ময়না দ্বীপকে অভয়ারণ্য ঘোষণার পাশাপাশি একটা প্রকল্প আমরা পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছি। আশা করছি, অতিথি পাখি যদি আমাদের এ অঞ্চল নিরাপদ মনে করে, তাহলে তারা ভবিষ্যতেও এখানে আসবে। এতে এখানকার পরিবেশের সৌন্দর্য বাড়বে। কেউ যেন এসব পাখি শিকার না করে, তাদের ঢিল ছুড়ে না মারে এবং তাদের বিরক্ত না করে সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

গোলাপী-সাদা লতাকরবী

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ এএম
গোলাপী-সাদা লতাকরবী
মহারাষ্ট্রের পুনের সিএলএইচএম-এ লতাকরবী। ছবি: লেখক

২০১৭ সালের জুনে গিয়েছিলাম ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনেতে অবস্থিত সেন্টার ফর লাইফ সায়েন্সেস, হেলথ অ্যান্ড মেডিসিনে। সেখানে টিলার ওপর চমৎকার নির্মাণশৈলী, বুদ্ধমূর্তি, উদ্যান, নানা রকমের গাছপালা, অর্কিড দেখে মুগ্ধ হবে সবাই। ছোট একটা সবুজ উদ্যানের পাশে সুন্দর একটা বুদ্ধমূর্তি, তার পাশেই দেখা পেলাম ঝোপাল লতাকরবী গাছের।

লতাকরবী চিরসবুজ, কাষ্ঠল, লতা জাতীয় বা ঝোপাল উদ্ভিদ, ২৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কাণ্ড গাঢ় ধূসর এবং কচি কাণ্ড গাঢ় বেগুনি রঙের এবং তাতে অসংখ্য হালকা বিন্দু থাকে। উদ্ভিদের পাতা চকচকে, চামড়াবৎ, জলপাই সবুজ, উপবৃত্তাকার থেকে আয়তাকার, ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা। বসন্তে ফুল ফোটে। ফুল দর্শনীয়, প্রান্তীয় পুষ্পমঞ্জরিতে ৬-১০টি ফুল ফোটে। ফুল গোলাপের মতো সুগন্ধি, গোলাপি, বা গোলাপি সাদা, ব্যাস ২ ইঞ্চি পর্যন্ত, দলনল ১.৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা, খণ্ডের কিনারা খসখসে। ফুলে বৃতি ও পাপড়ি ৫টি। করবী ও অলকানন্দার সঙ্গে এ ফুলের মিল রয়েছে। এই উদ্ভিদটি ক্রিমফ্রুট নামে পরিচিত। ফল লিগিউম জাতীয়, খুব লম্বা, ১৮-৪০ সেন্টিমিটার। 

 লতাকরবীর বৈজ্ঞানিক নাম Strophanthus gratus, এটি Apocynaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এর আগের বৈজ্ঞানিক নাম Roupalia grata, এ জন্য অনেকের কাছে এটি রূপেলিয়া নামে পরিচিত। উদ্ভিদটি ইংরেজিতে Rose allamanda, Spider-tresses, Poison arrwo vine নামে পরিচিত। উদ্ভিদের ফুলে পাপড়ির বিস্তার বড়জোর ১০ সেন্টিমিটার। এর ডাল-পালা ছড়ানো-ছিটানো। বাগানে বা থামের ওপর তুলে দিলে সুন্দর মানায়।

 ফুল ফোটার সময়কাল গ্রীষ্ম থেকে বসন্ত। লতাকরবীর আদি নিবাস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকায়। এ উদ্ভিদের বিস্তার মধ্য আফ্রিকার সেনেগাল থেকে কঙ্গো পর্যন্ত। নার্সারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এখন দেশে ছড়াতে শুরু করেছে। ঢাকায় রমনা উদ্যান ও মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে লতাকরবী রয়েছে। 

অর্ধপত্রঝরা এই উদ্ভিদের বংশবিস্তার বীজ এবং কাটিং দ্বারা সৃষ্ট হয়। Apocynaceae পরিবারের অন্য সদস্যের মতো এই উদ্ভিদটিও বিষাক্ত। গাছের কিছু অংশ আফ্রিকার কোথাও বিষাক্ত তীর তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, সাপের কামড়, দুর্বলতা, গনোরিয়া ইত্যাদি রোগের নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। 

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

কুয়াকাটায় অভিযান পরিচ্ছন্ন সৈকত উপহার দিতে চায় বিডি ক্লিন

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০২ এএম
পরিচ্ছন্ন সৈকত উপহার দিতে চায় বিডি ক্লিন
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে গতকাল বিডি ক্লিন বরিশাল বিভাগের সদস্যরা পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। ছবি: খবরের কাগজ

‘পরিচ্ছন্নতা শুরু হোক আমার থেকে’, স্লোগানকে সামনে রেখে ‘বিডি ক্লিন’ বরিশাল বিভাগের সব ইউনিটের সমন্বয়ে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত সংগঠনটি পর্যটকদের কাছে একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সৈকত উপহার দিতে চায়।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম শপথবাক্য পাঠ করানোর মাধ্যমে ‘বিডি ক্লিন’-এর এ অভিযানের উদ্বোধন করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার, সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী সাঈদসহ ‘বিডি ক্লিন’ বরিশাল বিভাগের সব ইউনিটের সমন্বয়ক এবং স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা। 

‘বিডি ক্লিন’ বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ক জায়েদ ইরফান বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত পরিচ্ছন্নতা অভিযানে আমরা বরিশাল থেকে এখানে এসেছি। আমরা কুয়াকাটা টিমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব। সাগরকন্যা কুয়াকাটা সারা বিশ্বের কাছে অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র। আমরা বিডি ক্লিন বরিশাল বিভাগের সকল ইউনিটের সমন্বয়ক আজকের এ অভিযানে অংশ নিচ্ছি। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, কলাপাড়া, কুয়াকাটা টিমের সমন্বয়ে আজকের এই কর্মসূচি।

‘বিডি ক্লিন’ পটুয়াখালী জেলা শাখার উপসমন্বয়ক রাকায়েত হোসেন বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য পর্যটকদের কাছে একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সৈকত উপহার দেওয়া। পাশাপাশি সবার উদ্দেশে আমরা একটি মেসেজ পৌঁছে দিতে চাই। আজ আমরা যেভাবে পরিষ্কার করলাম, এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যাদের তারা যেন এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। সৈকতে কোনোভাবেই যেন কেউ প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, পলিথিন না ফেলেন। আশা করছি, আমাদের এ কার্যক্রম দেখে স্থানীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ভবিষ্যতে এগিয়ে আসবে, উৎসাহিত হবে।

বিডি ক্লিন কুয়াকাটা ইউনিটের সমন্বয়ক আসাদুজ্জামান মিরাজ বলেন, কুয়াকাটায় আজকের যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কুয়াকাটা ইউনিটের আরও বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। আজকের এই  অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য বরিশাল বিভাগের সব ইউনিটের সমন্বয়কসহ সব সদস্যকে কুয়াকাটা টিমের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ তৈরির দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বিডি ক্লিনের সদস্যরা কাজ করছে। এ দায়িত্ব শুধু বিডি ক্লিনের নয়, সমাজের সবার। 

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });