ঢাকা ৫ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

অপরূপ নীল চটক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ এএম
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ এএম
অপরূপ নীল চটক
গাছের ডালে বসা নীল চটক পাখি। সম্প্রতি চুয়াডাঙায়। ছবি: বখতিয়ার হামিদ

হালকা শীতের দুপুর। আর কদিন পর আসবে বসন্ত। ঢাকার রমনা পার্কের উত্তরায়ণ গেটের কাছে পলাশগাছটিতে ফুলের কলি এসেছে এবং কিছু ফুলও ফুটেছে। পলাশগাছের ফুলে অনেক পাখি আসে মধু ও ফুলে বিচরণ করা পোকামাকড় খেতে। পলাশগাছটি থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে পলাশ ফুলে আসা পাখি দেখছি। সবুজ টিয়া, বাংলা কাঠঠোকরা, কাঠশালিক, হাঁড়িচাঁচা ফুলে-ফুলে বিচরণ করছে। মাঝে মাঝে একটি চঞ্চল পুরুষ মৌটুসি উড়ে এসে ফুলে বসে দুদণ্ড সময় কাটিয়ে আবার উড়ে যাচ্ছে অন্য কোথাও। তার ডাক রোমাঞ্চকর। বসন্তের আগমনে তার একজন সঙ্গী দরকার, এমনই তার ভাব-সাব। 

পলাশগাছ থেকে একটু দূরে একটি মাঝারি বহেরা গাছ। বহেরার পাতাগুলো ঝরে পড়েনি। পাতার ভেতর থেকে একটি নীল রঙের পাখি উড়ে এসে অন্য পাতার ওপর বসে উড়ন্ত পোকা ধরে খাচ্ছে। পোকা ধরার কৌশলটা অন্য রকম। প্রথমে সে উড়ে এসে পাতার ভেতরে বা পাতার গায়ে লেগে থাকা পোকাদের উড়িয়ে দেয়। তারপর উড়ন্ত পোকা ধরে খায়। পাখিটির পালকের রং তীব্র নীল। শীতের সেই দিনে জীবনে প্রথম দেখা হলো পৃথিবীর সেই পাখিটির সঙ্গে, যার নাম হলো ‘নীল চটক’ বা ‘নীল কটকটিয়া’। পালকের নীল বর্ণের জন্য জুটেছে এমন নাম। পাখিটির অন্য নামগুলো হলো অম্বর চুটকি, নীলাম্বরি ও আকাশি চটক। এটি মূলত পোকা শিকারি পাখি। পাখিটি অনেকক্ষণ ধরে বহেড়াগাছের পাতায় উড়ে উড়ে পোকা ধরে খাচ্ছিল। কী সুন্দর তার পালকের নীল রং! যখন রোদ পড়ছিল, তখন নীল রংটি আরও তীব্র হয়েছিল। চোখের কাছে কাজলের মতো টান এবং নীলপালক পাখিটিকে অনন্য করে তুলেছে। 

নীল কটকটিয়া আমাদের দেশে শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে এবং বাংলাদেশে বহুল পরিচিত একটি পরিযায়ী পাখি। শীত মৌসুমে দেশে সব বিভাগের বন, শহরের উদ্যানে এবং গ্রামের জঙ্গলে দেখা যায়। শীতে মূলত একাকী কিংবা ছোট দলে পাখিটি চরে বেড়ায়। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় থাকে এবং দলে মিশে না। গ্রীষ্মকালীন আবাসে সাধারণত মুক্ত বন, বনের প্রান্তর, বাগান ও জলাধারের কাছে ঝোপে বিচরণ করে। প্রজনন সময় এরা হিমালয়ে বাসা বানায়। 

এ পাখির ইংরেজি নাম ভার্ডিটার ফ্লাইক্যাচার। নীল চটক হিমালয় থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে সুমাত্রা পর্যন্ত পাওয়া যায়। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নীল চটকের চোখের কালো দাগ এবং ধূসর ভেন্ট ব্যতীত শরীরের সমস্ত অংশে গাঢ় নীল। এই পাখির প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্করা হালকা নীল ও কিছুটা অনুজ্জ্বল হয়। মার্চ থেকে জুন মাসে এরা গাছের মগডালে বসে গান গায়। এপ্রিল থেকে আগস্ট মাসে গাছের গর্তে, শিলার ফাটলে সবুজ শেওলা দিয়ে দুই স্তরের বাসা বানায়। তিন থেকে পাঁচটি পিত-বেগুনি রঙের ডিম পাড়ে। বাংলাদেশ ছাড়া পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াতে নীল চটক পাখির দেখা পাওয়া যায়। 

লেখক: নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার

সবুজের মাঝে হলুদের ছোঁয়া

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫০ পিএম
সবুজের মাঝে হলুদের ছোঁয়া
সূর্যমুখী গ্যালারি ভিউয়ে হলুদের ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়া দর্শকরা। গতকাল নরসিংদী পৌর শহরের নাগরিয়াকান্দি সেতুসংলগ্ন মেঘনার তীরে। ছবি: খবরের কাগজ

একসময় নরসিংদীর মেঘনা তীরের জমি ছিল পরিত্যক্ত। কেউ চাষাবাদ করতেন না। এখন সেই জমিতে সোনা ফলছে। কেউ সেখানে ফলাচ্ছেন শস্য। আবার কেউ গড়ে তুলছেন কৃষি পর্যটন। এমন একটি কৃষি পর্যটন হলো ‘সূর্যমুখী গ্যালারি ভিউ’। 

ভ্রমণপিপাসু পল্লি চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলাম মাসুম গড়ে তুলেছেন এটি। দর্শকদের সেখানে রীতিমতো টিকিট কেটে উপভোগ করতে হয় সূর্যমুখীর মুগ্ধতা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নরসিংদী পৌর শহরের নাগরিয়াকান্দি সেতুসংলগ্ন মেঘনা তীরবর্তী বিশাল এলাকাজুড়ে সূর্যমুখীর বাগান গড়ে উঠেছে। দৃষ্টিনন্দন গেটের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানানো হয়েছে। বাগানে প্রবেশ করতে কাউন্টার থেকে ৩০ টাকার টিকিট কিনতে হয়। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী বাগানে প্রবেশ করে উচ্ছ্বসিত।

দর্শনার্থীরা মেঘনা তীরে গ্যালারি ভিউ সূর্যমুখীর বাগানকে ‘দেশসেরা’ বলে অভিহিত করছেন। তাদের কেউ এখানে এসেছেন প্রিয়জনের সঙ্গে। আবার কেউ পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে। তরুণ-তরুণীরা প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে নিজেদের মুঠোফোনে সেলফিবন্দি করে রাখছেন। পড়ন্ত বিকেলে সবুজ প্রকৃতির মাঝে হলুদের ছোঁয়া আর শীতের উষ্ণতা আরও মনোমুগ্ধ করে তুলেছে তাদের।

ঢাকা থেকে দুই বন্ধু ও পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন ফাহিজা নামে এক গৃহিণী। তিনি বলেন, ‘মনোমুগ্ধকর পরিবেশ ও সৌন্দর্য দেখে খুবই ভালো লেগেছে।’ তবে ভালো খাবার হোটেল ও শৌচাগার না থাকায় তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।

বাগানটির প্রবেশ মুখে কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করছেন জমির মালিক ও সূর্যমুখী বাগানের পরিচালক মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, এ বছর বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে বাগানটি। এক টিকিটে দুটি জোনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন দর্শানার্থীরা। দেশি ফুলের ‘আপন’ হাউসটি এবার সাজানো হয়েছে টিউলিপ দিয়ে। তাই এবার গতবারের চেয়ে দর্শানার্থী বেশি।

বাগানটির উদ্যোক্তা ও পল্লি চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলাম মাসুম বলেন, ‘আমি একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। আমরা দর্শনার্থীদের ব্যতিক্রমী কিছু উপহার দিতে চাই। পরিত্যক্ত জমিতে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সুর্যমুখী বাগান করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, দর্শনার্থীদের আগ্রহের কারণে বাগানটিকে বিনোদন কেন্দ্রে রূপ দেওয়া হয়েছে। বাগানটির অন্যতম আর্কষণ হলো নদীর পাড়, যা অন্য কোথাও নেই। এবার ১৫ বিঘা জমিতে বাগান করা হয়েছে। সূর্যমুখী বাগানের পাশাপাশি রয়েছে টিউলিপসহ দেশীয় ফুলের আপন হাউস। এখানে প্রতিদিন হাজারের ওপরে দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন। ছুটির দিনে পাঁচ হাজার পেরিয়ে যায় দর্শনার্থী। 

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজিজুর রহমান বলেন, এ বছর নরসিংদী জেলায় ২৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী বীজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবাদ হয়েছে ২০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে নাগরিয়াকান্দির স্থানীয় উদ্যোক্তারা ২২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। এটি কৃষি পর্যটন হিসেবে গড়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, মানবদেহে বেশ উপকারী সূর্যমুখী তেল। বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষ করে অনেক কৃষক লাভবান হচ্ছেন। আবার ভ্রমণপিপাসুদেরও মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখীর বাগান।

মনোহরি কালামাথা বুলবুল

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৫ এএম
আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৬ এএম
মনোহরি কালামাথা বুলবুল
একজোড়া কালামাথা বুলবুল। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে তোলা। ছবি: লেখক

গ্রীষ্মের তপ্ত রোদ। প্রকৃতিতে তেমন খুব বাতাস নেই। তবে সামান্য বাতাসে বনের মাঝে কখনো বৃক্ষের পাতাগুলো দুলে ওঠে। তখন কিছুটা শীতল অনুভব হয়। ছায়া থাকলেও গ্রীষ্মের সময় বনে হাঁটা কিন্তু কঠিন। অনেক সময়ই পাখি খোঁজার জন্য আমাদের কিছুটা জিরিয়ে নিতে হয়। একদিন রাঙামাটির কাপ্তাই বনে গ্রীষ্মের দুপুরে একটি গাছের ছায়াতে বসেছিলাম। এমন সময় একটি ফলের গাছে হলুদ-কালো মিশ্রণ বর্ণের একটি পাখি উড়ে এল। এর কিছুক্ষণ পর ঠোঁটে করে একটি পাকা ফল নিয়ে পাখিটি উড়ে গেল। কিছুক্ষণ বাদে সে আবার এল এবং পাকা ফল নিয়ে চলে গেল। নিশ্চিত হলাম যে, সে তার ছানার জন্য খাবার সংগ্রহ করছে। পাখিরা সাধারণত কোনো উৎস পেলে খাবারের জন্য সেই স্থানে বারবার আসে। সেই পাখিটি ছিল কালামাথা বুলবুল। সেই প্রথম, বনে আমার কালামাথা বুলবুল দেখা। তার জলপাই-হলুদ রঙের পালক এবং সৌন্দর্য প্রথম দেখায় আমার মন কেড়ে নিয়েছিল। তারপরে, ২০১৯ সালে সাতছড়ি উদ্যানে কয়েক জোড়া কালামাথা বুলবুল দেখেছিলাম। মূলত তারা ছোট একটি দলে ছিল। তারা একটি পত্রহীন বৃক্ষের শাখায় বসে সকালের রোদে পোহাচ্ছিল।

বাংলাদেশে ৯ প্রজাতির বুলবুল আছে। এর বেশির ভাগ প্রজাতিই চিরসবুজ বনে বাস করে। কালামাথা বুলবুল চিরসবুজ বন, বনের প্রান্তর এবং বনের কাছের ছোট ঝোপ এলাকায় বিচরণ করে। বুনো বৃক্ষ ও লতায় এরা ওড়ে এবং খাবার খোঁজে। 

তাদের খাদ্য তালিকায় আছে প্রধানত বনের রসালো ফল ও পোকামাকড়। এরা তীক্ষ্ণ এবং মোনহর সুরে ডাকে। ঊষা এবং গোধূলিতে শিস দিয়ে গান গায়। প্রজনন মৌসুম বাদে এরা সাধারণত ছোট ঝাঁকে চরে বেড়ায়। একটি ঝাঁকে ৬-৮টি বুলবুল থাকতে পারে।

১৭৮৮ সালে জার্মান প্রকৃতিবিদ জোহান ফ্রেডরিখ গেমেলিন এ পাখির প্রথম বর্ণনা করেছিলেন। কালামাথার বুলবুলের দৈর্ঘ্য ১৬-১৮ সেমি এবং ওজন ২০-৩০ গ্রাম হয়ে থাকে। এদের চকচকে নীল-কালো পালকের মাথাসহ সারা দেহ প্রধানত জলপাই-হলুদ পালকে আবৃত থাকে। এরা এপ্রিল-মে মাসে গাছের ডালে বাটির মতো বাসা বানিয়ে দুই-তিনটি ডিম পাড়ে। ডিমের রং ফিকে পাটকিলে। কালামাথা বুলবুল বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বনে এদের দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে এদের বিস্তৃতি রয়েছে।

লেখক: নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার

চাঁদের দেশের চন্দ্রমল্লিকা

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৮ এএম
চাঁদের দেশের চন্দ্রমল্লিকা
আগারগাঁও ফ্যালকন নার্সারিতে ফুটেছে চন্দ্রমল্লিকা ফুল। ছবি: লেখক

‘চন্দ্রমল্লিকা, চন্দ্রমল্লিকা
চাঁদের দেশের পথ-ভোলা ফুল চন্দ্রমল্লিকা। 
রঙ-পরীদের সঙ্গিনী তুই অঙ্গে চাঁদের রূপ-শিখা 
ঊষর ধরায় আসলি ভুলে তুষার দেশের রঙ্গিনী
হিমেল দেশের চন্দ্রিকা তুই শীত-শেষের বাসন্তিকা 
চাঁদের আলো চুরি ক’রে আনলি তুই মুঠি ভ’রে,
দিলাম চন্দ্র-মল্লিকা নাম তাই তোরে আদর ক’রে।’

কাজী নজরুল ইসলাম এ গানটি কবে লিখেছিলেন জানি না, তবে জানা যায় ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে এ গানটির রেকর্ড বেরিয়েছিল, সুরকারও ছিলেন কবি নিজেই। সে সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বছর ১০ মাস। গানটির মধ্যেই তিনি আদর করে চীনা ‘ক্রিসানথিমাম’ ফুলটির নাম দিয়েছিলেন ‘চন্দ্রমল্লিকা’।

সে বয়সে তিনি চন্দ্রমল্লিকার রূপ-রসে মুগ্ধ হয়ে কল্পলোকে ঘুরেছেন চাঁদের দেশে। চন্দ্রমল্লিকা ফুলের রূপকে তিনি তুলনা করেছেন চাঁদের শিখার সঙ্গে, যার সঙ্গিনী রঙ-পরীরা। চন্দ্রমল্লিকা যেন চাঁদের আলো মুঠো ভরে চুরি করে এনে নিজের দেহে ছড়িয়ে দিয়েছে। শীতে ফোটা ফুলগুলো যেন শীতকালেই পুষ্পোচ্ছ্বাসে টেনে এনেছে বসন্তের পুষ্পশোভা। সত্যিই চন্দ্রমল্লিকার ফুলের এরূপ দীর্ঘস্থায়ী প্রস্ফূরণের প্রাচুর্য খুব কম ফুলেরই আছে। এ দেশে শীতকাল আলো করে যে কয়েকটি ফুল, চন্দ্রমল্লিকা সেগুলোর মধ্যে সেরা।

চন্দ্রমল্লিকার আদি নিবাস চীনে হলেও তার শ্রীবৃদ্ধি ও বিকাশ বেশি ঘটেছে জাপানে। বিখ্যাত চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের লেখা থেকে জানা যায়, প্রায় ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে চীনে চন্দ্রমল্লিকা চাষ হতো ঔষধি গাছ হিসেবে। জানা যায়, ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে চীনে চন্দ্রমল্লিকা সপুষ্পক হার্ব হিসেবে বাগানে লাগানো হতো। ভারতবর্ষ ও আমাদের দেশে ঠিক কখন-কীভাবে চন্দ্রমল্লিকা ফুল এল, তার সঠিক কোনো ইতিহাস পাওয়া না গেলেও ১২৯০ খ্রিষ্টাব্দে শান্ত জ্ঞানেশ্বর রচিত মারাঠি ভাষার ‘জ্ঞানেশ্বরী’ গ্রন্থে চন্দ্রমল্লিকা ফুলের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিভিন্ন হিন্দি গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে ষোড়শ শতকে মোগল আমলে ভারতবর্ষে চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ শুরু হয়, সপ্তদশ শতকে চন্দ্রমল্লিকা প্রবেশ করে ইউরোপে। সারা বিশ্বে চন্দ্রমল্লিকা ফুল এখন সুখ, ভালোবাসা, আনন্দ, দীর্ঘজীবন, চিরবিদায় ও রাজকীয়তার প্রতীক।

চন্দ্রমল্লিকা ফুলের ইংরেজি নাম ক্রিসানথিমাম, নামটি দুটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ থেকে উদ্ভূত। ‘ক্রিয়স’ অর্থ সোনালি ও ‘অ্যান্থিমন’ অর্থ ফুল; এর অর্থ সোনালি ফুল। আদিকালে চন্দ্রমল্লিকার হয়তো শুধু সে রূপই ছিল। ১৭৫৩ খ্রিষ্টাব্দে লিনিয়াস প্রথম এ ফুলের মহাজাতির নামকরণ করেন Chrysanthemum, তখন তার প্রজাতি সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪টি। সারা পৃথিবীতে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে চন্দ্রমল্লিকার প্রজাতিসংখ্যা পাওয়া যায় ৪২টি। ভারতবর্ষে চাষ হওয়া চন্দ্রমল্লিকার দেশীয় আদি প্রজাতিটি হলো Chrysanthemum indicum, এ প্রজাতির ফুলের রং প্রধানত সোনালি-হলুদ। চন্দ্রমল্লিকা একটি বহুবর্ষজীবী ও বহুশাখায়িত বিরুৎ শ্রেণির উদ্ভিদ। গাছ ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতার কিনারা গভীরভাবে খাঁজকাটা। ডালের মাথায় অনেকগুলো ফুল ফোটে শীতকালে। ফোটার পর ফুলগুলো বেশ কয়েক দিন থাকে। চন্দ্রমল্লিকা বাগানে ও টবে লাগানো যায়।

১৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে সারা পৃথিবীতে চন্দ্রমল্লিকার নথিভুক্ত প্রজাতির সংখ্যা ছিল ৫০০টির বেশি। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ২০ হাজারের বেশি জাত রয়েছে। নানা আকারের, আকৃতির, চেহারার ও রঙের চন্দ্রমল্লিকা ফুল এখন বাংলাদেশেও বিভিন্ন বাগানে, বাড়িতে ও নার্সারিতে দেখা যাচ্ছে। হলুদ ও সাদা ফুলের চন্দ্রমল্লিকা ফুলগুলো দেখতে বেশ সুন্দর।  তবে ফুলটি লাল, গোলাপি, কমলা, খয়েরি, মেরুন, সোনালি, বেগুনি, হলুদ, মিশ্র বর্ণের প্রায় সব রঙের হয়। এমনকি মালয়েশিয়ায় গিয়ে সবুজ রঙের চন্দ্রমল্লিকাও দেখেছি। সব রঙের ফুলই ফোটে শীতকালে। অক্টোবরে গাছগুলোয় কুঁড়ি আসে, নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে ফুল ফুটতে শুরু করে। বসন্ত পর্যন্ত কোনো কোনো গাছে ফুল ফুটতে দেখা যায়। অন্য ফুলের সঙ্গে এর মূল পার্থক্যটা হলো, চন্দ্রমল্লিকার ফুল ফোটার পরও বহুদিন, এমনকি এক মাস পর্যন্ত সজীব থাকে। তাই কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ফুলদানির জন্য উত্তম।

জলবসা মাটি চন্দ্রমল্লিকাগাছ মোটেই সইতে পারে না। বীজ, শাখা কলম ও সাকার থেকে চন্দ্রমল্লিকার চারা তৈরি করা যায়। সম্প্রতি সাভারের বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্ল্যান্ট বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে চন্দ্রমল্লিকার চারা তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চন্দ্রমল্লিকার ‘বারি চন্দ্রমল্লিকা ১’ ও ‘বারি চন্দ্রমল্লিকা ২’ নামে দুটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে।

চন্দ্রমল্লিকা ফুলের কথা লিখতে গিয়ে শেষে হঠাৎ তারাপদ রায়ের ভুল কবিতাটির কয়েকটা লাইন মনে পড়ল- ‘কোনটা যে চন্দ্রমল্লিকার ফুল/আর কোনটা যে সূর্যমুখী/বারবার দেখেও/আমার ভুল হয়ে যায়/আমি আলাদা করতে পারি না।’ চন্দ্রমল্লিকা ফুলের মাঝখানে একটি ছোট্ট চাকতি, সে চাকতি থেকে চারদিকে রশ্মির মতো ছড়ানো পাঁপড়ি। এমন চেহারা আছে তো জারবেরা, অ্যাস্টার, টিথোনিয়া, জিনিয়া, গাজানিয়া ও সূর্যমুখী ফুলেরও। পাশাপাশি না রেখে এসব ফুল দেখলে ভুল তো হতেই পারে!

কাঁকড়ার খাদ্য উদ্ভাবনে সফলতা

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৪ এএম
কাঁকড়ার খাদ্য উদ্ভাবনে সফলতা
ঘেরে বা খাঁচায় চাষ করা কাঁকড়ার খাবার পর্যবেক্ষণ করছে নোবিপ্রবির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের গবেষক দল। ছবি-সংগৃহীত

বাংলাদেশে কাঁকড়া উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাষিদের দুই কারণে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। একটি হলো কাঁকড়ার খাবার এবং অন্যটি কাঁকড়ার পোনা। উন্মুক্ত জলাশয়ে কাঁকড়া প্রকৃতিতে মাছজাতীয় যে খাবার পায় তা খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার ঘেরে বা খাঁচায় চাষ করা কাঁকড়াগুলোকে স্বল্পমূল্যের শামুক, তেলাপিয়া ও সাগরের অন্যান্য মাছ খাবার হিসেবে দেওয়া হয়। কিন্তু খাবার হিসেবে মাছের ব্যবহার, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কষ্টসাধ্য। এতে করে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই বাড়ছে।

প্রাকৃতিক উপায়ে অতিমাত্রায় খাবার ও পোনা সংগ্রহের দরুন প্রকৃতিতে বৈষম্যের জন্য বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ সংকট নিরসনে তথা উৎপাদন বৃদ্ধিতে ঘেরে বা খাঁচায় চাষ করা কাঁকড়ার জন্য সম্পূরক খাবার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কী হতে পারে সে খাবার? এর অনুসন্ধান করতেই গবেষণা শুরু করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) একদল গবেষক।

কাঁকড়ার জন্য নতুন সম্পূরক খাবার তৈরির উদ্যোগ নেন তারা। দেশে প্রথমবারের মতো কাঁকড়ার এ সম্পূরক খাবার উদ্ভাবনে সফলতা পান নোবিপ্রবির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন ও তার দল। নতুন উদ্ভাবিত খাবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামানুসারে রাখা হয় ‘এনএসটিইউ ক্র্যাব ফিড’। দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়া ও ভিয়েতনামে কাঁকড়ার এ ধরনের খাবারের প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে এটাই প্রথম। বিভিন্ন আকারের কাঁকড়ার জন্য খাওয়ার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে ৪৫ শতাংশ প্রোটিনসমৃদ্ধ এই খাবার। ঘেরে কিংবা খাঁচায় বেড়ে ওঠা কাঁকড়াদের খাবার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এটি। এতে করে চাষিদের প্রকৃতি-নির্ভরতা অনেকটা কমেছে। পাশাপাশি বেড়েছে কাঁকড়ার উৎপাদন ও রপ্তানি।

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০১৪ সাল থেকে ছোট-বড় সাইজের নরম খোলসযুক্ত (সফট শেল) কাঁকড়া হিমায়িত করে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। যার দরুন প্রকৃতিতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে এবং নষ্ট হতে শুরু করেছে ইকোসিস্টেম। ছোট ছোট কাঁকড়াও রেহাই পাচ্ছে না রপ্তানি থেকে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২২ সালে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। এতে গবেষণা সহযোগী হিসেবে গ্লোন অ্যাগ্রোভেট, ইরওয়ান ট্রেডিং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়কে সংযুক্ত করা হয়।

গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ঘেরে ও খাঁচায় কাঁকড়া চাষ সম্ভব এবং এদের সম্পূরক খাবার দিলে কাঙ্ক্ষিত পুষ্টিগুণও পাওয়া যায়। তাই বর্তমানে চাষিরা প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সম্পূরক খাবারের মাধ্যমে কাঁকড়া উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন। নতুন উদ্ভাবিত খাবার কাঁকড়ার জন্য একটি উপযোগী খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

গবেষক ড. মামুন জানান, গবেষণার শুরুর দিকে কক্সবাজারে কাঁকড়ার প্রচলিত খাদ্যব্যবস্থা সম্পর্কে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। পরবর্তী সময়ে বৃহৎ পরিসরে কক্সবাজার ও সাতক্ষীরার ৮০ জন চাষিকে নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত চাষিদের হ্যাচারির কাঁকড়ার পোনা, সম্পূরক খাবার ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়। তাদের মাধ্যমে ঘেরে ও খাঁচায় উৎপাদিত কাঁকড়ার খাবারের বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি মা কাঁকড়ার লালন, স্বজাতি ভক্ষণ প্রতিরোধে শেল্টার ব্যবহারকরণ, মজুত ঘনত্ব ইত্যাদি নিরীক্ষণ করা হয়। বর্তমানে একই বিভাগের সাতজন শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কাঁকড়ার আরও বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। তারা শস্য বহুমুখীকরণ অর্থাৎ ‘কাঁকড়া, চিংড়ি ও সাদা মাছের পলিকালচার’ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ ক্ষেত্রে গবেষক দল বিভিন্ন উদ্যোক্তা, হ্যাচারি মানিক, ফিড ইন্ডাস্ট্রিসহ সংশ্লিষ্টদের কারিগরি সহায়তা দেওয়ার জন্য উন্মুক্ত, যা মৎস্য খাতকে গতিশীল করবে।

লেখক পরিচিতি: সহকারী পরিচালক (তথ্য ও জনসংযোগ), নোবিপ্রবি।

ভেষজ উদ্ভিদ মটকিলা

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩২ এএম
ভেষজ উদ্ভিদ মটকিলা
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় কলেজ রোড এলাকার মটকিলা গাছ। ছবি: লেখক

গ্রামে আত্মীয়বাড়ি বেড়াতে গেছেন, টুথব্রাশ বা টুথপেস্ট নিয়ে যাননি। সকালে উঠে বাড়ির পেছন থেকে মটকিলার ডাল ভেঙে মুখে একটু চিবিয়ে থেঁতলে নিয়ে দাঁত ব্রাশ করে ফেললেন। অনেকের এই অভিজ্ঞতা রয়েছে। ছোটবেলায় বাড়ির পেছনে, বনের ধারে মটকিলা গাছে পাকা ফল খুঁজে বেড়িয়েছি অন্য বাচ্চাদের মতো আমিও। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দার কলেজ রোড এলাকায় রাংসা নদীর ধারে মটকিলা গাছের দেখা পেলাম।

মটকিলা কাষ্ঠল, গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটি উচ্চতায় এক থেকে পাঁচ মিটার হয়। এর অন্যান্য বাংলা নাম আঁশশেওড়া, কওয়াটুটি, মটমটি ইত্যাদি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Glycosmis Pentaphylla, এটি Rutaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ ইংরেজিতে Orange berry, Gin berry, Toothbrush plant, Motar tree ইত্যাদি নামে পরিচিত। এই উদ্ভিদ মারমাদের কাছে ‘তাতিয়াং’, চাকমাদের কাছে ‘হতিজ্ঞিরা’, গারোদের কাছে ‘মোয়াতন’ নামে পরিচিত।

দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফিলিপিন্স, দক্ষিণ চীন, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, জাভা, সুমাত্রা, বোর্নিও এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায় এই উদ্ভিদ।

মটকিলার কিছু কিছু গাছ ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। কাণ্ড বেশ শক্ত এবং রং ধূসর। কাণ্ডের দেড় থেকে ২ ফুট পর্যন্ত কোনো ডালপালা হয় না বললেই চলে। কাণ্ডের বেড় দেড় থেকে আড়াই ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। পাতার রং সবুজ। পাতা একপক্ষল, উপবৃত্তাকার, দৈঘ্য ৩-৪ ইঞ্চি। মাঝ বরাবর এর প্রস্থ ২-২.৫ ইঞ্চি। পাতা পাতলা, মসৃণ। মটকিলার ফুল খুব ছোট। ফুলের রং সবুজাভ সাদা। ফুলের ব্যাস ৫-৭ মিলিমিটার। প্রতি ফুলে পাঁচটি করে পাঁপড়ি থাকে। এর ফুল হালকা মিষ্টি গন্ধযুক্ত। পাতা দেখতে লেবু পাতার মতো। 

আসলে লেবু, কমলা, জাম্বুরা আর মটকিলা একই গোত্রের, তাই এই মিল। ফল সবুজ রঙের, মটর দানার চেয়ে সামান্য বড়। একটি গুচ্ছে ২০-৫০টি পর্যন্ত ফল থাকে। কাঁচা ফলের রং সবুজ। পাকা ফলের রং গাঢ় গোলাপি, গোলাকার। ফল রসাল, বেশ মিষ্টি। তবে ফলে সামান্য তেতোভাব আছে। পাখি ও শিশুদের প্রিয় এই ফল। মটকিলার ফলের ভেতর দ্বিবীজপত্রী গোলাকার বীজ থাকে। মটকিলার চারা জন্মায় বীজ থেকে। 

মটকিলা বেশ কয়েক বছর বাঁচে। প্রায় ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত বাঁচে। পানি পেলে সারা বছর জন্মায়। বাংলাদেশের সর্বত্র এদের দেখা মেলে। এরা যেকোনো পরিবেশে সহজেই অভিযোজিত হতে পারে। রাস্তার দুই ধারে, জমির আইলে, বাড়ির পেছনে, পুরোনো দালানের ইটের খাঁজে, পুকুরপাড়ে, নদীর ধারে, ঘন ঝোপের আড়ালে প্রায় সব জায়গাতেই জন্মাতে ও বেড়ে উঠতে পারে এরা। 

লিভারের সমস্যা, কাশি, জন্ডিস, বাত, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় এ উদ্ভিদের ব্যবহার দেখা যায়। গ্রামের মানুষ এ গাছের ডাল দাঁত মাজার কাজে ব্যবহার করে। মটকিলার পাতা আদার সঙ্গে মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়, যা চর্মরোগের উপশমে ব্যবহৃত হয়। গাছের মূল সেদ্ধ করে তৈরি করা হয় এক ধরনের ক্বাথ, যা মুখমণ্ডলের প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। 

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ।