কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় রাজধানীসহ সারা দেশে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চার সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২২২ জন সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী। এর মধ্যে গুরুতর অবস্থা অন্তত ৬৫ জনের। আহত সাংবাদিক ও গণমাধ্যমগুলোর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কোটা আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহের সময় ঢাকায় নিহত হন সাংবাদিক হাসান মেহেদী ও তৌহিদ জামান প্রিয়, সিলেটে এ টি এম তুরাব ও গাজীপুরে মো. শাকিল হোসেন। হাসান মেহেদী ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন। ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী এলাকায় সহিংসতার সময় হাসান মেহেদী গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মেহেদীকে মৃত ঘোষণা করেন।
১৯ জুলাই দুপুরে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে আন্দোলনের ছবি তোলার সময় ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক তৌহিদ জামান প্রিয় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
একই দিনে সিলেটে দায়িত্ব পালনের সময় নয়া দিগন্তের সাংবাদিক এ টি এম তুরাব গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ছাড়া ১৮ জুলাই দৈনিক ভোরের আওয়াজের গাজীপুরের গাছা থানা প্রতিনিধি মো. শাকিল হোসেন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের অনেক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, হামলার শিকার হয়েছেন বা সংঘাতের মাঝে পড়ে আহত হয়েছেন।
দৈনিক খবরের কাগজের দুজন আহত হয়েছেন। ফটোসাংবাদিক মাসুদ মিলন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১৯ জুলাই। এদিন দুপুরে পল্টনে তার শরীরে ছররা গুলি লাগে। এ ছাড়া পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার জাহাঙ্গীর আলম ১৮ জুলাই বছিলায় হামলার শিকার হন।
দৈনিক প্রথম আলোর তিন ফটোসাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা হলেন সাজিদ হোসেন, দীপু মালাকার ও খালেদ সরকার। তারা তিনজনই গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।
দৈনিক আমাদের সময়ের ৯ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আহতরা হলেন চিফ রিপোর্টার শাহজাহান আকন্দ শুভ, ফটোসাংবাদিক মনজুরুল বাবু, মো. মেহরাজ ও আলামিন লিওন, স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল্লাহ কাফি ও রেজাউল রেজা এবং মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক মিরাজুল ইসলাম ও আকতারুজ্জামান।
কালের কণ্ঠের ছয় সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা হলেন সিনিয়র ফটোসাংবাদিক মনজুরুল করিম, ফটোসাংবাদিক লুৎফর রহমান, শেখ হাসান ও মোহাম্মদ আসাদ। এ ছাড়া পত্রিকাটির আরও দুজন মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আহত হয়েছেন। তারা হলেন আল আমিন ও মাহাদী হাসান।
দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর তিন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা হলেন ফটোসাংবাদিক আলী হোসেন মিন্টু, ক্রাইম চিফ আলাউদ্দিন আরিফ ও মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আকাশ। ইংরেজি পত্রিকা ঢাকা ট্রিবিউনের দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা হলেন ফটোসাংবাদিক আহাদুল করিম খান ও রাজিব কুমার ধর।
সমকালের দুই ফটো জার্নালিস্ট গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা হলেন সাজ্জাদ মাহমুদ নয়ন ও মামুনুর রশীদ।
ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি সানের তিন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সিনিয়র ফটো জার্নালিস্ট প্রবীর দাস ও মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আবির আহত হন ঢাকায়। এ ছাড়া ডেইলি স্টারের সিলেট প্রতিনিধি দোহা চৌধুরী গুরুতর আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের একজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সিনিয়র সাংবাদিক রোহেত রাজীব ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন।
মানবজমিনের একজন ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ ২০ জুলাই রামপুরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। তার শরীরে ছয়টি ছররা গুলি লাগে।
দেশ রূপান্তরের চার সংবাদকর্মী আহত হয়েছেন। তারা হলেন ফটোসাংবাদিক মহুবার রহমান ও মোশারফ হোসেন ভুবন, স্টাফ রিপোর্টার নাজমুল হাসান সাগর ও মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক সুপন সিকদার।
ইত্তেফাকের একজন সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি হলেন সিনিয়র ফটোসাংবাদিক আব্দুল গনি। সময়ের আলোর ছয় সংবাদকর্মী আহত হয়েছেন। তারা হলেন ফটোসাংবাদিক আব্দুল হালিম, আবদুল্লাহ আল মমীন ও শেখ ফেরদৌস, সাহিত্য সম্পাদক আলী রেজা চৌধুরী এবং অনলাইন ভার্সনের সাংবাদিক হুমায়ন ও আল ইমরান।
দৈনিক সংবাদের চার সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। তারা হলেন সিনিয়র রিপোর্টার মোস্তাফিজুর রহমান, প্রধান ফটোসাংবাদিক সোহরাব আলম, স্টাফ রিপোর্টার (ক্রাইম) মাসুদ রানা ও স্টাফ রিপোর্টার রেজাউল করিম। তাদের মধ্যে দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
দৈনিক যায়যায়দিনের দুজন রিপোর্টার হামলার শিকার হয়েছেন। তারা হলেন মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও নাহিদ হাসান। দুর্বৃত্তদের হামলায় তাদের হাতে ও পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। জনকণ্ঠের চারজন সংবাদকর্মী আহত হয়েছেন। তারা হলেন ফটোসাংবাদিক সুমন্দ চক্রবর্তী ও জসিম উদ্দিন, রিপোর্টার ফজলুর রহমান ও ঢাবি প্রতিনিধি মোজাহার।
ভোরের কাগজের দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা হলেন ফটোসাংবাদিক মামুন আবেদীন ও সংবাদকর্মী রাজিবুল মানিক। যুগান্তরের দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাহিদা হাসান ক্যাম্পাসে হামলার শিকার হন। অপরজন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা প্রতিনিধি আল আমিন প্রধান, তিনি ১৯ জুলাই গুরুতর আহত হয়েছেন।
কালবেলার দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা হলেন স্টাফ রিপোর্টার রনি রায়হান ও মোবাইল জার্নালিজম রিপোর্টার আকরাম হোসেন।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সানের দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা হলেন ফটোসাংবাদিক রিয়াজ আহম্মেদ সুমন ও সংবাদকর্মী সায়েদ হাসান শুভ।
বণিক বার্তার তিন সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা হলেন ফটোসাংবাদিক মাসফিকুর আক্তার ও কাজী সালাহউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী মামুন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের চার সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা হলেন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট জসিম উদ্দিন, রিপোর্টার রোকুনুজ্জামান মনি, ফটোসাংবাদিক রাজিব ধর ও মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক মো. কাজল সিকদার।
আজকের পত্রিকার দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা হলেন ফটোসাংবাদিক ফজলে এলাহী ওমর ও অন্যজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। বাংলাবাজার পত্রিকার একজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তিনি হলেন ফটোসাংবাদিক এম খোকন সিকদার। এ ছাড়া দ্য ডেইলি অবজারভারের ফটোসাংবাদিক খন্দকার আজিজুর রহমান আহত হয়েছেন।