ঢাকা ১ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
English

ধ্যানচর্চার উপকারিতা কী

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৭ পিএম
আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৯ পিএম
ধ্যানচর্চার উপকারিতা কী
প্রতীকী ছবি

মানব মনের সহজাত ধর্ম হলো সে কখনো বর্তমানে থাকতে চায় না। মন হয় অতীত স্মৃতি রোমস্থনে, নয়তো ভবিষ্যত ভাবনায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করে। মনকে অতীত ও ভবিষ্যত অবস্থান থেকে বর্তমানে ফোকাস করার কাজটি দূরহ হলেও অসম্ভব নয়। মনকে সর্বদা বর্তমানে ধরে রাখতে পারলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য এসে ধরা দিতে বাধ্য। সর্বাবস্থায় মনকে বর্তমানে ধরে রাখার মাধ্যম হলো ধ্যানচর্চা। ধ্যান বা মেডিটেশন মনকে বর্তমানে নিয়ে আসে।

মেডিটেশন অতীতের ব্যর্থতার গ্লানি আর ভবিষ্যতের আশঙ্কা থেকে মনকে মুক্ত করে। প্রতি মুহূর্তে প্রতিটি বিষয়ের অন্তর্লোকে মনকে প্রবেশ করিয়ে আপনাকে আত্মনিমগ্ন করে। এর মাধ্যমেই আপনি সংযোগ সাধন করতে পারেন আপনার 'অন্তরের আমি'র সঙ্গে, আপনার শক্তির মূল উৎসের সঙ্গে। অশান্তিকে প্রশান্তিতে, রোগকে সুস্থতায়, ব্যর্থতাকে সাফল্যে, অভাবকে প্রাচুর্যে রূপান্তরিত করতে পারে ধ্যান। ধ্যানমগ্ন হয়ে আপনি অতিক্রম করবেন আপনার জৈবিক অস্তিত্বের সীমাবদ্ধতা। আপনার উত্তরণ ঘটবে অনন্য মানুষে। ইতিবাচকতার অণুরনণে বদলে যাবে আপনার জীবন।

অশান্তি-অস্থিরতা থেকে মুক্তি

১. আপনার মনের জট খুলে যাবে সহজ স্বতঃস্ফূর্ততায়। পণ্যদাসত্ব থেকে, ভোগ্যপণ্য কেনার অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন। পরিবর্তে লাভ করবেন শুকরিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি।

২. ব্যর্থতার কারণ রিঅ্যাকটিভ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে প্রো অ্যাকটিভ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারবেন।

৩. নিয়মিত মেডিটেশনের মাধ্যমে চিন্তাকে করতে পারবেন শাণিত, সিদ্ধান্তকে সঠিক এবং বক্তব্যকে করবেন স্বতঃস্ফূর্ত।

৪. আপনি পারবেন ইচ্ছেমতো ঘুমাতে, দীর্ঘ অনিদ্রা থেকে মুক্তি লাভ করতে, নির্ধারিত সময়ে ঘুম থেকে উঠতে ও অতিঘুম নিয়ন্ত্রণ করতে।

৫. মুহূর্তে সজীবতা অবসাদ ও বিষণ্নতা দূর, মুহূর্তে সজাগ, ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব দূর, মুহূর্তে শান্ত, হঠাৎ সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি শান্তভাবে মোকাবেলা এবং মুহূর্তে মাথাব্যথা দূর হবে।

৬. স্নায়ু ও পেশি পুরোপুরি শিথিল করে ধ্যান ।

৭. রোগভয় লোকভয় মৃত্যুভয়সহ যাবতীয় অমূলক ভয়ভীতি ও ফোবিয়া থেকে মুক্তি লাভ করবেন।

৮. দুশ্চিন্তা হতাশা বিষণ্নতা ডিপ্রেশন দুঃখ অনুশোচনা ক্ষোভ ঘৃণা ও পাপবোধ থেকে মুক্ত হয়ে পাবেন মানসিক প্রশান্তি।

৯. নেতিবাচক চিন্তা, কথা, আবেগ, আচরণ থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক চিন্তা, কথা, আচরণ ও অভ্যাস তৈরি করতে পারবেন।

১০. মুহূর্তে রাগ ক্রোধ ক্ষুধা টেনশন নার্ভাসনেস বা ভয়ভীতি নিয়ন্ত্রণ ও যে-কোনো পরিস্থিতি ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবেলা করতে পারবেন।

১১. মনে রাখার উপায়, ভুলে যাওয়া বিষয় স্মরণ করা ও নাম মনে রাখার পদ্ধতি চর্চা আপনার স্মৃতিশক্তিকে করে তুলবে আরও প্রখর।

১২. আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, বিশ্বাস ও আশা নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে আর সংশয় ও হতাশা জীবনকে ব্যর্থ করে।

সুস্বাস্থ্য

১৩. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় ও আরও কার্যকর করে তোলার মাধ্যমে রোগের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে পারবেন সফল প্রতিরোধ।

১৪. রুকু-সেজদা দিয়ে নামাজ পড়তে না পারলে আপনি মুক্তি পাবেন সে শারীরিক অক্ষমতা থেকে।

১৫. আপনার হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং হজম-সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা থেকে আপনি মুক্ত থাকবেন।

১৬. মেডিটেশনের ফলে স্ট্রেসপূর্ণ এসিডিক অবস্থা দূর হয়ে আপনার দেহে সৃষ্টি হবে অ্যালকালাইন অবস্থা; যা সুস্থতা ও নিরাময়ের পূর্বশর্ত।

১৭. ওজন নিয়ন্ত্রণ করার প্রাকৃতিক ও কার্যকর পদ্ধতিতে ধরে রাখতে পারবেন আপনার আকর্ষণীয় শারীরিক কাঠামো।

১৮. ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাস বর্জন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণের মাধ্যমে বাড়াতে পারবেন আপনার তারুণ্য, কর্মোদ্দীপনা ও সুস্থতা।

১৯. ইয়োগা চর্চা বাড়াবে আপনার দৈহিক ও মানসিক ফিটনেস।

রোগমুক্তি

২০. সুস্বাস্থ্য ও নিরাময়ের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে আপনি মুক্ত থাকতে পারবেন ৭৫ ভাগ মনোদৈহিক রোগ থেকে।

২১. রোগের মনোগত কারণকে শনাক্ত ও তা দূর করার মাধ্যমে মাথাব্যথা মাইগ্রেন ব্যাকপেইন সাইনোসাইটিস ও বাত ব্যথাসহ বিভিন্ন ক্রনিক মনোদৈহিক রোগ থেকে নিরাময় লাভ করবেন।

২২. সঠিক দমচর্চার মাধ্যমে আপনি সবসময় থাকবেন প্রাণবন্ত ও প্রাণোচ্ছল। ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও দেহকোষে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ানোর ফলে অবসাদ, ক্রনিক ঠাণ্ডা, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস থেকে লাভ করবেন আরোগ্য।

২৩. টেনশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রোগ যেমন-অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, করোনারি হৃদরোগ, স্ট্রোক, আমাশয়, পেটের পীড়া, আইবিএস, আলসার, চর্মরোগ ইত্যাদি থেকে নিরাময় লাভ করে উপভোগ করবেন স্বাভাবিক সুস্থ জীবন।

২৪. করোনারি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা হার্ট ক্লাব নির্দেশিত জীবনপদ্ধতি অনুসরণ করে এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই হয়ে উঠবেন সুস্থ, প্রাণবন্ত ও কর্মক্ষম।

২৫. ‘ধ্যান দোয়া দান দাওয়া’র সমন্বিত প্রয়োগের মাধ্যমে বহু জটিল ও দুরারোগ্য রোগ থেকে লাভ করতে পারেন  নিরাময়।

২৬. ধূমপান অ্যালকোহল ড্রাগস এবং যে-কোনো ধরনের নেশা ও নেশাজাতীয় দ্রব্য (পানসুপারি, জর্দা, পানমসলা, গুল ইত্যাদি) বর্জন করতে পারবেন।

পারিবারিক ও সামাজিক সমৃদ্ধি

২৭. প্রেম-বিয়ে-পরিবার সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে লাভ করবেন শান্তিময় পারিবারিক জীবনের দিক-নির্দেশনা।

২৮. স্বামী-স্ত্রী, মা-বাবা ও সন্তানদের প্রতি পরিপূর্ণ মমতা, সম্মান ও মনোযোগ দিতে শিখবেন। পরিবারই হয়ে উঠবে আপনার অনুপ্রেরণার উৎস।

২৯. সন্তানকে সঠিক জীবনদৃষ্টি দিয়ে তাকে গড়ে তুলতে পারবেন আলোকিত মানুষ হিসেবে।

৩০. পারিবারিক মেডিটেশনে পরিবার হয়ে উঠবে সুখ-শান্তিতে সমৃদ্ধ এক স্বর্গীয় পরিমণ্ডল।

৩১. সঙ্ঘবদ্ধতার গুরুত্ব অনুভব করার ফলে সৃষ্টি হবে সঙ্ঘশক্তির চেতনা।

৩২. ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝি ও দেওয়াল সৃষ্টি না করে শিখবেন সুসম্পর্কের সেতু নির্মাণ করতে।

৩৩. সুসম্পর্কের গুরুত্ব ও কৌশল অনুধাবনের ফলে সামাজিক সংযোগায়নে সৃষ্টি হবে চমৎকার দক্ষতা। বাড়বে আপনার গ্রহণযোগ্যতা।

৩৪. আচরণে বিনয়, মানবিকতা, শিষ্টাচার ও সদগুণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ঘটিয়ে পরিণত হবেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।

৩৫. ক্ষমার গুরুত্ব অনুধাবনের ফলে পারিবারিক ও সামাজিক যে-কোনো সম্পর্কের তিক্ততা দূর করতে পারবেন সহজেই।

৩৬. পেশা ও পরিবারের মধ্যে ব্যস্ততার সুসমন্বয় করে উভয় ক্ষেত্রে অর্জন করবেন সমৃদ্ধি। আপনার সাংগঠনিক দক্ষতা বিকশিত হবে।

৩৭. প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা প্রবাস-যেখানেই থাকুন না কেন আপনার সমস্যা, বিপদ, অসুস্থতা নিরাময়ে যৌথ দোয়ায় মিলিত হয়ে অনুভব করবেন ‘আপনি একা নন’।

৩৮. ব্যক্তিগত পারিবারিক শারীরিক মানসিক সামাজিকসহ যে-কোনো সমস্যায় পাবেন সমমর্মিতাপূর্ণ সৎ পরামর্শ ও কাউন্সেলিং।

আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব

৩৯. নেতিবাচকতা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে বদলানোর বিশাল শক্তিভাণ্ডারকে ব্যবহার করতে শিখবেন।

৪০. অস্থিরতা সংকোচ জড়তা ও হীনম্মন্যতা থেকে মুক্ত হয়ে আত্মবিশ্বাসী, চৌকস, প্রশান্ত ও প্রত্যয়ী হবেন।

৪১. সমস্যা বা সংকটের অংশ না হয়ে আপনি হবেন সমাধানের অংশ।

৪২. মনের অফুরন্ত শক্তি সম্পর্কে সচেতন হবেন। দৃঢ় হবে আপনার আস্থা ও বিশ্বাস। সফলদের মতো আপনিও ভাববেন ‘আমি পারি আমি করব’।

৪৩. মস্তিষ্কের অসাধারণ ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা লাভ এবং মস্তিষ্ককে বেশি পরিমাণে ব্যবহারের কৌশল শিখবেন।

৪৪. ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’-এ সত্যকে অনুভব করবেন। শিখবেন দৈনন্দিন জীবনে রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল।

৪৫. ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন ও গুণাবলি অর্জনে অটোসাজেশন ও প্রত্যয়ন অনুশীলনের প্রক্রিয়া শিখবেন।

৪৬. সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামর্থ্য লাভ করবেন, যা আপনাকে করবে সহজ স্বতঃস্ফূর্ত নেতৃত্বের অধিকারী।

৪৭. মনছবির মাধ্যমে সাফল্য ও সৌভাগ্যকে নিজের দিকে আকর্ষণ করার প্রক্রিয়া শিখবেন।

শিক্ষায় সাফল্য

৪৮. মনোযোগ শূন্যায়নের মাধ্যমে মুহূর্তে মন স্থির করে যা পড়বেন বা অনুশীলন করবেন, তা-ই সহজে আয়ত্ত করতে পারবেন।

৪৯. একজন শিক্ষার্থী হিসেবে জীবনের সঠিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ এবং সেই লক্ষ্যে সহজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অগ্রসর হতে পারবেন। ক্লাসে প্রথম ও জীবনে প্রথম হওয়ার সূত্র আপনাকে সফল হতে সাহায্য করবে।

৫০. অখণ্ড মনোযোগ সৃষ্টি ও বিশেষ প্রক্রিয়ায় লেখাপড়ার মাধ্যমে অল্প সময়ে পড়া তৈরি করতে পারবেন।

৫১. শিক্ষার্থী জীবনের ফাঁদগুলো সম্পর্কে আপনি সচেতন হবেন।

৫২. সময়-সচেতন হবেন। শিখবেন রুটিন অনুসরণের সহজ কৌশল।

৫৩. পরীক্ষাভীতি দূর ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে যেকোনো শিক্ষার্থীই পারবেন ভালো রেজাল্ট করতে।

৫৪. পরীক্ষার হলে বা ভাইভা বোর্ডে বিশেষ টেকনিকের সফল প্রয়োগের মাধ্যমে লাভ করবেন কাঙ্ক্ষিত ফল।

৫৫. উপলব্ধি করবেন মেধাই সব নয়, সফল শিক্ষার্থী হতে প্রয়োজন- সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সুপরিকল্পিত পড়াশোনা।

প্রাচুর্য ও সাফল্য

৫৬. পেশা ও কাজের প্রতি মনোযোগ পেশাকে পরিণত করবে আপনার জীবনের আনন্দে।

৫৭. আত্মশক্তির জাগরণে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে কর্মস্থলে আপনার গুরুত্ব এবং সাফল্যকে নিজের দিকে আকর্ষণের ক্ষমতা।

৫৮. প্রতিটি ক্ষেত্রে শূন্য থেকে শুরু করার সাহস ও উদ্যম লাভ করবেন।

৫৯. মেধাকে সেবায় রূপান্তরের দৃষ্টিভঙ্গি আপনার পেশাগত কাজে সৃষ্টি করবে নতুন উদ্যম।

৬০. সফল ক্যারিয়ারের পঞ্চসূত্র অনুধাবন ও অনুসরণের মাধ্যমে আপনি হবেন আপনার পেশায় অনন্য।

৬১. মস্তিষ্ককে বেশি বেশি কাজে লাগিয়ে পেশাগত ক্ষেত্রে নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা উদ্ভাবন করা সহজ হবে।

৬২. প্রাচুর্যের পঞ্চসূত্র অনুসরণ করে সহজ স্বতঃস্ফূর্ততায় লাভ করবেন প্রাচুর্য।

৬৩. ক্রেডিট কার্ড, ক্ষুদ্রঋণ, ঋণ করে ফ্ল্যাট বাড়ি ও নেহায়েত ফুটানির জন্যে ঋণের মতো বেনিয়াগোষ্ঠীর ফাঁদ সম্পর্কে সচেতন হবেন। উপলব্ধি করবেন ‘ঋণমুক্ত সচ্ছল জীবন আমার মৌলিক অধিকার’।

৬৪. যে-কোনো ব্যবসায়িক আলোচনা বা লেনদেনে প্রশান্ত মনে অপরপক্ষের সঙ্গে লেনদেন চূড়ান্ত করতে পারবেন খুব সহজেই।

৬৫. মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে পারবেন, ফলে দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে আপনার, হয়ে উঠবেন সবার ভরসাস্থল।

৬৬. সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে যেকোনো প্রতারণার চক্র থেকে রক্ষা পাবেন, বাঁচবেন অসম্মান ও আর্থিক ক্ষতি থেকে।

৬৭. কেরানি মানসিকতা নয়, ব্যবস্থাপকীয় দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারবেন। গ্রহণ করতে পারবেন দূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত।

৬৮. জীবনে আসবে নিয়ম ও সময়ানুবর্তিতা যা আপনাকে অল্প সময়ে বেশি কাজের সাফল্য উপহার দেবে।

৬৯. অভিনয়, ক্রীড়া ও জনপেশায় সৃজনশীলতা ও জনপ্রিয়তা বাড়বে এবং আপনার কর্মক্ষেত্রে লাভ করবেন অর্থবিত্ত, খ্যাতি-প্রতিপত্তি।

৭০. দোয়া ও দানকে কাজে লাগাতে পারবেন আপনার পেশাগত সাফল্যের অনুঘটক হিসেবে।

নৈতিক ও আত্মিক উন্নয়ন

৭১. ‘অন্তরতম আমি’র সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে আপনি অনুভব করবেন আত্মার স্বরূপ।

৭২. নিজের অন্তর্গত অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা ও নিঃসঙ্গতার কারণগুলোকে উদ্ঘাটন করে সহজেই তা দূর করতে পারবেন।

৭৩. প্রজ্ঞা লাভ করে আপনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।

৭৪. অন্তরের পথপ্রদর্শক অন্তর্গুরুর কাছ থেকে পাবেন কল্যাণের পথনির্দেশ।

৭৫. দৃশ্যমান সবকিছুর পেছনে ক্রিয়াশীল প্রকৃতির নেপথ্য স্পন্দন ও নিয়মকে নিজের ও অন্যের নিরাময় এবং সার্বিক কল্যাণে সক্রিয় করে তোলার প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হবেন। সচেতন হবেন প্রকৃতির প্রতিদান অর্থাৎ ‘ল’ অব নেচারাল রিটার্ন’ সম্পর্কে।

৭৬. অন্যের রোগ নির্ণয়, নিরাময় ও সার্বিক কল্যাণ সাধনের প্রক্রিয়া।

৭৭. কমান্ড সেন্টারে সাইকিক বর্ম লাভ করে সকল অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারবেন।

৭৮. নামাজ, প্রার্থনা ও ইবাদতে সৃষ্টি হবে একাগ্রতা ও গভীর মনোযোগ।

৭৯. ধ্যানের স্তরে অর্থসহ কুরআন শোনার অভূতপূর্ব অনুভূতি লাভ করবেন। স্রষ্টার বাণী অনুধাবন করবেন গভীর আত্মনিমগ্নতায়।

৮০. ধর্মবর্ণগোত্র নির্বিশেষে মানুষ ও সৃষ্টি জগতের প্রতি হৃদয়ে অনুভব করবেন বিশ্বজনীন মমতা।

৮১. স্রষ্টায় সমর্পণের মাধ্যমে আপনার মধ্যে সৃষ্টি হবে প্রশান্ত প্রত্যয়। জীবন থেকে দূর হবে সকল অযাচিত ভয় ও অস্থিরতা।

৮২. প্রকৃতির মাঝে ধ্যান ও হিরণ্ময় মৌনতার আনন্দে অবগাহন করার সুযোগ পাবেন।

৮৩. বিষাদমুক্ত সদানন্দ আলোকিত জীবনের চাবিকাঠি লাভ করবেন।

৮৪. জানতে পারবেন জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য আর উপলব্ধি করবেন মানুষ হিসেবে আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্বকে।

৮৫. পরিণত হবেন নৈতিক ও মানবীয় গুণাবলিসম্পন্ন এক অনন্য মানুষে।

৮৬. আপনি লাভ করবেন সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন।

মানবসেবা

৮৭. স্ব-উদ্যোগ, স্ব-অর্থায়ন ও স্ব-পরিকল্পনার নানাবিধ উদ্যোগের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে সৃষ্টির সেবায় নিবেদিত হতে পারবেন।

৮৮. হাজারো মানুষের সঙ্গে শ্রমানন্দে সৃষ্টির সেবা করার সুযোগে লাভ করবেন আত্মিক পরিতৃপ্তি।

৮৯. সৎসঙ্ঘে একাত্মতা আপনার মেধাকে বিকশিত করবে শতধারায়।

৯০. আত্মিক অভিভাবক হিসেবে প্রতি মাসে/ বাৎসরিক খরচ প্রদান করে আপনিও হতে পারবেন অসহায় শিশুদের আশ্রয়।

৯১. নিয়মিত বিভিন্ন আত্ম উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সৎসঙ্ঘে আপনার জীবন হয়ে উঠবে প্রশান্তিময়।

৯২. একার পক্ষে অসম্ভব এমন অসংখ্য সুদূরপ্রসারী সেবামূলক কাজের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার অবারিত সুযোগ।

৯৩. স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমে অংশ নিয়ে বাঁচাতে পারবেন মুমূর্ষের প্রাণ।

৯৪. মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পাবেন আপনি।

৯৫. প্রতিদিন সাধ্যমতো দানের মাধ্যমে হাজারো বঞ্চিতের জীবনকে আলোকিত করতে পারবেন সঙ্ঘবদ্ধভাবে।

৯৬. বাংলাদেশকে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় জাতিতে রূপান্তরের মনছবি করে আপনি এক মানবিক মহাসমাজ নির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারবেন।

ভার্চুয়াল ভাইরাস আসক্তি থেকে মুক্তি

৯৭. ফেসবুক, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট, ইনস্টাগ্রাম, সেলফি, ইউটিউব, ওয়েব সিরিজ, টিভি সিরিয়াল, ভার্চুয়াল গেম, অনলাইন শপিং, স্মার্ট টিভি, ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন-এর আসক্তি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবেন। লাভ করবেন আসক্তিমুক্ত সুস্থ স্বাভাবিক জীবন।

৯৮. কার্যকর দিক-নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রযুক্তির আসক্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে নিজে মুক্ত হবেন এবং এর মরণ-আগ্রাসন সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারবেন পরিবার-আত্মীয়-বন্ধুদের।

৯৯. ভার্চুয়াল জগতে কৃত্রিম সামাজিকতা ও ঠুনকো বায়বীয় সম্পর্কের পরিবর্তে মনোযোগী হয়ে উঠবেন বাস্তব জীবন ও সম্পর্কগুলোর প্রতি।

১০০. বাঁচবেন সাইবার অপরাধ ও প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে। শনাক্ত করতে পারবেন শোষকদের নিত্যনতুন কৌশল।

১০১. জানতে পারবেন কীভাবে প্রযুক্তির অপরিমিত ব্যবহারে  হ্রাস পাচ্ছে আপনার ও আপনার পরিবারের-বিশেষত শিশু-কিশোরদের চিন্তাশক্তি, দক্ষতা ও মনোযোগ। সেইসঙ্গে লাভ করবেন প্রযুক্তি ব্যবহারের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মাত্রাজ্ঞান।

১০২. সর্বাবস্থায় মহান স্রষ্টার কাছে শুকরিয়া করতে শিখবেন। মন থেকে বলতে পারবেন ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ! বেশ ভালো আছি!

তথ্যসূত্র: কোয়ান্টামমেথড ডট ওআরজি ডট বিডি (quantummethod.org.bd)

 

মেডিটেশন নিয়ে ধর্ম ও বিজ্ঞান কী বলে?

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম
আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৭ পিএম
মেডিটেশন নিয়ে ধর্ম ও বিজ্ঞান কী বলে?
দেহ-মনের প্রশান্তির খোঁজে মেডিটেশনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

পরমাত্মার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সাধনায় ধ্যানের মাধ্যমে যুগে যুগে মানুষ আত্মনিমগ্ন হয়ে পরিণত হয়েছেন মহামানবে। স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পণের জন্য সুফিসাধকরা নিমগ্ন হয়েছেন মোরাকাবা-মোশাহেদায়। আত্ম উপলব্ধির জন্য কালে কালে সাধক মুনি-ঋষিরা বেছে নিয়েছেন ধ্যানকে। ধ্যান, মেডিটেশন, মোরাকাবা, তাফাক্কুর- শব্দগুলো ভিন্ন হলেও এর মূল নির্যাস একই। বিভিন্ন ধর্ম আর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এর প্রায়োগ ভিন্ন রূপ নিলেও পানির সার্বজনীনতার মতোই ধ্যানের নির্যাস সার্বজনীন। 

ধ্যান চর্চার প্রচলন হয়ে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। আধুনিক বিজ্ঞানের এ যুগে মেডিটেশন এক অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগ মুক্তি, স্ট্রেস, রাগ নিয়ন্ত্রণ, হতাশা, নেতিবাচকতার শৃঙ্খল থেকে শুরু করে জীবনের সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে এবং নেতিবাচকতা ও মনোজাগতিক শৃঙ্খল থেকে নিজেনে স্বমহিমায়  ফিরে পেতে  মেডিটেশন বিজ্ঞানসম্মত কার্যকর মাধ্যম। মেডিটেশন হচ্ছে জীবন যাপনের বিজ্ঞান।

প্রাচ্যের হাজার বছরের ঐতিহ্য এই ধ্যান। মোরাকাবা বা মেডিটেশনই এখন পাশ্চাত্যে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রয়োগ হচ্ছে মূলত প্রশান্তি ও আত্মনিরাময় লাভের ক্ষেত্রে।

ধ্যানের কথা লেখা আছে পাঁচ হাজার বছর আগে

প্রাচীন মানুষ যে ধ্যান বা মেডিটেশন চর্চা করতেন তার লিখিত প্রমাণের বয়সই কমপক্ষে ৫ হাজার বছর। ৫ হাজার বছরের প্রাচীন ভারতীয় তন্ত্রশাস্ত্রে ধ্যানের উল্লেখ আছে। এটি সতের শতকের একটি দুর্লভ উপনিষদ পান্ডুলিপির খণ্ডাংশ। এখানে ধ্যানের কথা বলা আছে।

মোজেস বা মুসা

ইহুদি ধর্মের প্রাণপুরুষ মোজেস বা মুসা সিনাই পাহাড়ে ৪০ দিন ধ্যানমগ্ন থেকে আল্লাহর বাণী লাভ করেন। তাওরাতে পিতা আইজ্যাকের সান্ধ্যকালীন প্রার্থনার জন্যে মাঠে যাওয়া প্রসঙ্গে হিব্রুতে যে ‘লাসাচ’ (Lasuach) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, এটা আসলে ধ্যানেরই একটি পরিভাষা।

মহেঞ্জোদারো সভ্যতা

ধ্যানচর্চার প্রাচীন ইতিহাসের আরও কিছু নিদর্শন মিলেছে মহেঞ্জোদারো সভ্যতার ধ্বংসাবশেষে। আজ থেকে ৪ হাজার ৬০০ বছর আগে সিন্ধু অববাহিকা অঞ্চলে বিকশিত এ সভ্যতার একটি প্রাচীন সিলমোহরে দেখা যায় ধ্যানাসনে বসে একজন যোগী গভীর ধ্যানে মগ্ন।

মহামতি বুদ্ধ

মহামতি বুদ্ধ ধ্যানের পথে বোধি লাভ করেছেন। ধ্যানের মাধ্যমেই নির্বাণ লাভের পন্থা শিখিয়েছেন অনুসারীদের। তার ধ্যান পদ্ধতিকে ইউরোপ-আমেরিকায় এখন নানাভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে বিভিন্ন শারীরিক-মানসিক নিরাময়ের ক্ষেত্রে।

ইমাম গাজ্জালী

ইমাম গাজ্জালী। দীর্ঘ ১০ বছর নির্জনবাসের মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করেন আত্মশুদ্ধি এবং ধ্যানের পথেই মুক্তি। শরিয়তের সঙ্গে সাধনাকে সম্পৃক্ত করে তিনি ইসলামি জীবনদৃষ্টির পুনর্জাগরণ ঘটান। পরবর্তী হাজার বছরে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের সাধক-দার্শনিকদের তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত করেছেন। শুধু তাই নয়, তার লেখা থেকেই পাওয়া যায় যে, হযরত ইমাম বোখারীও মেডিটেশন করতেন।

মধ্যযুগীয় সুফিধারা

সুফিধারায় ধ্যান বা মেডিটেশনের অবস্থান উল্লেখযোগ্য। জিকর বা স্রষ্টার স্মরণ এবং ফিকর বা আত্মমগ্ন ভাবনার চর্চার ধারাই পরে পরিণত হয়েছে বিশেষ প্রক্রিয়ার ধ্যানে। ১৬৩০ সালের একটি ছবিতে একজন সুফিকে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দেখা যায়।

মহাঋষি মহেশ যোগী

মহাঋষি মহেশ যোগী ষাটের দশকে পাশ্চাত্যে বেদান্ত দর্শনকেন্দ্রিক টিএম-কে পরিচিত করান। পরবর্তীতে যা পাশ্চাত্যের মিডিয়া এবং জনজীবনে ধ্যানচর্চাকে জনপ্রিয় করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

দালাই লামা

তিববতের আধ্যাত্মিক নেতা চতুর্দশ দালাই লামা। বুদ্ধের ধ্যান পদ্ধতিকে পাশ্চাত্যের বুদ্ধিজীবী ও বিজ্ঞানী মহলে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

যিশু

যিশুখ্রিষ্টের জীবনে ধ্যান এবং প্রার্থনা হয়ে গিয়েছিল একাকার। যখনই সুযোগ পেতেন তিনি ধ্যান ও প্রার্থনায় নিমগ্ন থাকতেন। শিষ্যদেরও উৎসাহিত করতেন ধ্যানমগ্ন হতে।

হযরত মোহাম্মদ (স.)

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) বছরের পর বছর হেরা পর্বতের গুহায় কাটিয়েছেন ধ্যানমগ্ন অবস্থায়। ধ্যানের স্তরেই মহগ্রন্থ আল-কোরআনের বাণী নাযিল হয়েছে তাঁর ওপর।

পবিত্র কোরআনের ধ্যান সম্পর্কে যা বলা আছে

“নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন-রাত্রির আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। তারা দাঁড়িয়ে, বসে বা শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে। তারা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য নিয়ে ধ্যানে (তাফাক্কুর) নিমগ্ন হয় এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি কর নি।” (সূরা আলে ইমরানের ১৯০-১৯১ আয়াত)।

কোরআনের আরও বেশ কটি আয়াতে তাফাক্কুর বা তাদাব্বুরের যে কথা বলা হয়েছে, তা আসলে সৃষ্টিরহস্য নিয়ে ধ্যানেরই তাগিদ।

কোরআন অনুধাবনের জন্য ধ্যান

মহান রাব্বুল আলামীন মানবজাতির জন্য যে পথনির্দেশিকা কোরআন নাজিল করেছেন, তাতেই আছে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। কিন্তু এই জীবন বিধান অনুসরণের জন্য প্রয়োজন এ বাণীর অনুধাবন, উপলব্ধি। আর কোরআন নিজেই কোরআন অনুধাবনের জন্য বলেছে এই ধ্যানের কথা।

‘হে নবী ! আমি তোমার ওপর এই কল্যাণময় কিতাব নাজিল করেছি, যাতে মানুষ এই কোরআনের বাণী নিয়ে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়, সেই সঙ্গে সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে এর শিক্ষা অনুসরণ করে।’ (সূরা সাদ, আয়াত ২৯)

‘এরপরও কি ওরা কোরআন নিয়ে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে তা অন্তরে ধারণ করবে না? নাকি মনের দরজা বন্ধই করে রাখবে?’ (সূরা মুহাম্মদ আয়াত ২৪)

‘(হে নবী! ওদের) বলো, আমি তোমাদের একটিমাত্র পরামর্শ দিচ্ছি এককভাবে বা যৌথভাবে আল্লাহর সামনে সচেতন হয়ে দাঁড়াও। নিজের গভীরে ধ্যানে নিমগ্ন হও, (তাহলেই উপলব্ধি করতে পারবে) তোমাদের সঙ্গী আদৌ উন্মাদ নয়। আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সে একজন সতর্ককারী মাত্র’। (সূরা সাবা ৪৬ নম্বর আয়াত)

‘এরপরও কোরআনকে অনুধাবন করার জন্য ওরা কি গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হবে না (বা ওদের সহজাত বিচারবুদ্ধিও প্রয়োগ করবে না)? কোরআন যদি আল্লাহর কালাম ছাড়া অন্য কিছু হতো, তাহলে অবশ্যই এর মধ্যে অনেক অসঙ্গতি থাকত। (সূরা নিসা, ৮২)

হাদীসে ধ্যান সম্পর্কে যা বলা আছে

‘একঘণ্টার ধ্যান ৭০ বছরের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম।’ -আবু হুরায়রা (রা); জামে উস-সগীর, ইবনে হিব্বান।

‘রাতে একঘণ্টা জ্ঞানচর্চা বা ধ্যান সারারাত ইবাদতের চেয়ে উত্তম।’ -আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); মেশকাত।

‘আল্লাহর সৃষ্টির বৈচিত্র্য নিয়ে ধ্যান করো, তাঁর মহিমা আঁচ করতে পারবে। আল্লাহকে নিয়ে ধ্যান করতে যেও না। (কারণ তুমি কখনো তাঁর ক্ষমতার কূলকিনারা পাবে না।)’ -আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); আবু নায়ীম, গাজ্জালী।

‘গভীর ধ্যানের তুল্য কোনো ইবাদত নেই।’ -আলী ইবনে আবু তালিব (রা); বায়হাকি।

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। আজ থেকে হাজার বছর আগে বাংলার এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ ধ্যানের শিক্ষা দিয়ে উপমহাদেশ, তিববত ও চীনের সমাজ-জীবনের পঙ্কিলতা দূর করতে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।

নতুন যুগের সূচনা

১৯৬৯-১৯৭০ দশকে মেডিটেশন চর্চায় নতুন যুগের সূত্রপাত হয়। নতুন নতুন পদ্ধতির আবির্ভাব ঘটে। এর মধ্যে টিএম, বা ট্রান্সেনডেন্টাল মেডিটেশন, সহজ যোগ, ন্যাচারাল স্ট্রেস রিলিফ, ফাইভ রিদম, থিটা হিলিং, সিলভা মেথড, ডা. হার্বার্ট বেনসনের রিলাক্সেশন রেসপন্স, ডা. কাবাত জিনের মাইন্ডফুলনেস বা মনোনিবেশায়ন উল্লেখ্যযোগ্য।

ধর্মের আলোকে মেডিটেশন

ধর্মচর্চা ভিন্ন হলেও সব ধর্মের মূলবাণী একই। আর তা হলো অনৈতিকতা ও পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে আদর্শ জীবন গঠন। আত্মপর্যালোচনা এবং আত্মউপলব্ধির মাধ্যমে নিজের পরিবর্তন। আর এই উপলব্ধির প্রক্রিয়ায় ধ্যান বা মেডিটেশনকে পৃথিবীর সব ধর্মেই বিবেচনা করা হয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে। 

সনাতন ধর্মে ধ্যান

মহাভারত, বেদ ও উপনিষদে বলা হয়েছে, ধ্যানে মগ্ন হলে একজন মানুষ আত্মার সন্ধান পেতে পারে নিজের মাঝেই। ভগবতগীতায় ধ্যানযোগের ওপর রয়েছে বিশেষ অধ্যায়। আর পতাঞ্জলির সময় থেকে যোগসাধনায় সংযুক্ত হয়েছে ধ্যান, যার পরিণতি সমাধির স্তরে।

বৈদিক হিন্দুধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র হলো গায়ত্রী মন্ত্র। এ মন্ত্রকে বলা হয় সমস্ত মন্ত্রের জননী। পন্ডিত সত্যকাম বিদ্যালংকারের অনুবাদ দি The Holy Vedas এ রয়েছে — O Supreme Lord
Thou art ever existent, ever conscious, ever blissful. We meditate on Thy most adorable glory. Mayest Thou guide and inspire our intellect on the path of highest divinity! May we be able to discriminate between truth and falsehood. (Rig.3.62.10)

সদাসর্বত্র বিরাজমান তন্দ্রা-নিদ্রাহীন সদা সজাগ প্রতিনিয়ত করুণা বর্ষণকারী সর্বশক্তিমান হে প্রভু! আমরা শুধু তোমারই মহিমার ধ্যান করি, প্রভু হে! তুমি আমাদের সর্বোত্তম আলোকিত পথে পরিচালিত করো। [ঋগ্বেদ : ৩.৬২.১০]

বৌদ্ধ ধর্মে ধ্যান

বৌদ্ধ ধর্মমতে ধ্যান বা মেডিটেশনই হলো নির্বাণপ্রাপ্তির উপায়। দুঃখসংক্রান্ত চতুরার্থ সত্য উপলব্ধির পর মহামতি বুদ্ধ এর প্রতিকারের জন্যে যে দুই ধর্মচক্রের কথা বলেন, তার প্রথম হলো মধ্যপন্থা অনুসরণ অর্থাৎ জীবনে অতি সুখ-বিলাস-ব্যসন যেমন পরিত্যাজ্য, তেমনি অতি সংযম ও কৃচ্ছ্রসাধনও অপ্রয়োজনীয়। আর দ্বিতীয় ধর্মচক্রে আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গে তিনি আটটি সৎপথের কথা বলেন। আর তা হলো, সৎদৃষ্টি, সৎসংকল্প, সৎবাক্য, সৎকর্ম, সৎজীবিকা, সৎপ্রচেষ্টা, সৎস্মৃতি এবং সৎসমাধি। আর এর যথার্থ উপলব্ধির জন্যে একজন মানুষকে মেডিটেশন বা ধ্যানে আত্মমগ্ন হতে হবে।

বুদ্ধের মতে মেডিটেশনের প্রাপ্তি হলো দুটি–এক, সমাধি বা স্থিরতা যা মনকে কেন্দ্রীভূত করে; দুই, বিপাসন বা প্রজ্ঞা, যা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বাইরেও উপলব্ধির চেতনাকে জাগ্রত করে। ফলে একজন মানুষ তার স্থান-কালের সীমা অতিক্রম করে ত্রিকাল দর্শনের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। অর্থাৎ মহামতি বুদ্ধ ধ্যানের পথে বোধি লাভ করেছেন। ধ্যানের মাধ্যমেই নির্বাণ লাভের পন্থা শিখিয়েছেন অনুসারীদের।

খ্রিষ্ট ধর্মে ধ্যান

যিশুখ্রিষ্টের জীবনে ধ্যান এবং প্রার্থনা হয়ে গিয়েছিল একাকার। যিশুর শক্তির উৎস ছিল তাঁর ধ্যান, তাঁর প্রার্থনা—যে ধ্যানে তিনি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতেন। যে প্রার্থনা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, প্রার্থনায় যা-কিছু তোমরা চাও, বিশ্বাস করবে তা পেয়েছ, তাহলে তা-ই পাবে। সারাদিন ধরে ভক্ত-শিষ্য-অভ্যাগতদের সাথে সময় কাটানোর পর সন্ধ্যাবেলা খানিকটা নির্জনে গিয়ে তিনি প্রার্থনায় নিমগ্ন হতেন, ভুলে যেতেন সমস্ত ক্ষুধা-ক্লান্তি-অবসাদ। অন্যদেরকেও তিনি বলতেন, অনেক কাজ করেছ, এখন ধ্যান করো। নিজেকে পর্যালোচনা করো, ভুলগুলো খুঁজে বের করো, মনের পর্দায় নিজেকে দাঁড় করাও, জীবন পরিবর্তন করো।

যিশুখ্রিষ্টের এ আদর্শের অনুসরণে যারা অনুপ্রাণিত, তারা চর্চা করেন খ্রিষ্টীয় মেডিটেশন। স্রষ্টার মহিমা ও বাণী নিয়ে বিশেষ প্রার্থনা। খ্রিষ্টীয় মেডিটেশনের একজন একনিষ্ঠ প্রবক্তা সেইন্ট পিয়েত্রিলসিনা। তিনি বলেন, বাইবেল পড়ে একজন মানুষ স্রষ্টাকে খোঁজে, আর মেডিটেশনের মধ্য দিয়ে সে স্রষ্টাকে পায়।

ইসলাম ধর্মে ধ্যান

ইসলামে ধ্যান বা মেডিটেশনকে একটি উচ্চস্তরের ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র গ্রন্থ কোরআনের বহু জায়গায় সরাসরি ধ্যান বা মেডিটেশনের কথা বলা হয়েছে। কোরআনে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা হচ্ছে তাফাক্কুর। এর অর্থ হচ্ছে কনটেমপ্লেশন, মেডিটেশন বা ধ্যান। 

আল কোরআনের সূরা আনআমে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! ওদের জিজ্ঞেস করো, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি কখনো সমান হতে পারে? তোমরা কি এরপরও (কোরআনের শিক্ষা অনুধাবনে) গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হবে না (বা তোমাদের সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করবে না)?’ (আনআম: ৫০ )

সূরা সাদে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আমি তোমার ওপর এই কল্যাণময় কিতাব নাজিল করেছি, যাতে মানুষ এই কোরআনের বাণী নিয়ে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়! (সেইসঙ্গে সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে) এর শিক্ষা অনুসরণ করে।’

একইভাবে সূরা মুহাম্মদের ২২, ২৩, ২৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন, (হে নবী! ওদের জিজ্ঞেস করো) তোমরা যদি (আল্লাহর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে পুরনো ধ্যানধারণায়) ফিরে যাও, তবে কি তোমরা দুনিয়ার বুকে পুনরায় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে? বন্ধন ছিন্ন করে পরস্পর বিবাদ-বিসংবাদে লিপ্ত হবে? এদেরকেই আল্লাহ তার রহমত থেকে বঞ্চিত করেন, (সত্যের ব্যাপারে) বধির ও অন্ধ করেন। এরপরও কি ওরা কোরআন নিয়ে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে তা অন্তরে ধারণ করবে না? নাকি মনের দরজা বন্ধই করে রাখবে?

বিজ্ঞানের চোখে ধ্যান বা মেডিটেশন 

মেডিটেশন হচ্ছে বিজ্ঞান। এটা অলৌকিক কিছু নয় বা নয় কোনো আশ্রম, খানকা বা শ্রেণি সম্প্রদায়ের বিষয়। বরং মেডিটেশন হলো এক সার্বজনীন কল্যাণ প্রক্রিয়া। মেডিটেশন চর্চা করে নারী-পুরুষ, কিশোর-বৃদ্ধ, পাপী-পুণ্যাত্মা নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ শারীরিক মানসিক সামাজিক ও আত্মিক কল্যাণ লাভ করতে পারেন। গত ৬০ বছরের অসংখ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার মধ্য দিয়ে এটা এখন এক প্রমাণিত সত্য।

‘এভরিবডি সে ওম’

নিউসায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিনে ৮ জানুয়ারি, ২০১১ সংখ্যায় মেডিটেশনের ওপর একটি বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। ‘এভরিবডি সে ওম’ শিরোনামের এ প্রচ্ছদ নিবন্ধে মেডিটেশন নিয়ে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ব্যাপক গবেষণার ফল তুলে ধরা হয়। নিবন্ধে বলা হয় — মেডিটেশন শুধু সাধকদের জন্যে নয় বা এ থেকে উপকার লাভের জন্যে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। যে কেউ মেডিটেশন করে উপকৃত হতে পারে। মেডিটেশনে সময় ব্যয় করা হচ্ছে ফলপ্রসূ সময় ব্যয়।

আপনি যে-ই হোন বা যেখানেই থাকুন, মেডিটেশন থেকে উপকৃত হবেনই

এসব গবেষণার মধ্য দিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সত্যটি বেরিয়ে এসেছে তা হলো, আপনি যে-ই হোন বা যেখানেই থাকুন, মেডিটেশন থেকে আপনি উপকৃত হবেনই। আপনাকে এজন্যে মেডিটেশনে বিশেষজ্ঞ হতে হবে না, দিনে পাঁচ ঘণ্টা করে অনুশীলন করতে হবে না, ঘরবাড়ি ছেড়ে জঙ্গলেও যেতে হবে না।

মেডিটেশনের ব্যথানিরোধক ক্ষমতার ওপর মনোবিজ্ঞানী ফিদেল জাইদানের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ২০ মিনিট করে মাত্র তিন দিন অনুশীলন করেই উপকার পেতে শুরু করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। তার দ্বিতীয় গবেষণায়ও দেখা গেছে, অল্পসময়ের জন্যে একটুখানি মেডিটেশন করেই বেড়ে গেছে তাদের মনোযোগের ক্ষমতা, বেড়েছে বড় বড় সংখ্যা মনে রাখা ও বলতে পারার দক্ষতা। তার এই গবেষণালব্ধ তথ্য বেরিয়েছে কনশাসনেস এন্ড কগনিশন জার্নালে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় হচ্ছে মেডিটেশন

মেডিটেশন বা আত্ম উন্নয়নমূলক ধ্যানের ব্যাপারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বর্তমানে সেখানে এক কোটি মানুষ নিয়মিত মেডিটেশন করছেন যা নব্বই দশকের দ্বিগুণ। মেডিটেশন এখন তাদের স্মার্টনেসের একটি অংশ। মেডিটেশনে অবিশ্বাসীরা পরিণত হচ্ছেন সংখ্যালঘুতে।

ডাক্তাররা এখন মেডিটেশনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ইদানীং প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে মেডিটেশন কাজ করে। আমেরিকার অধিকাংশ ডাক্তারই এখন রোগ প্রতিরোধ, রোগের প্রকোপ কমিয়ে আনা বা রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্যে মেডিটেশনকে সহায়ক ভাবছেন। বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা উপশম, হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ, উচ্চরক্তচাপ কমিয়ে আনা, চর্মরোগ, ক্যান্সার কিংবা বন্ধ্যাত্ব মোকাবেলায় মেডিটেশনের সাহায্য নিচ্ছেন।

হতাশা, অমনোযোগ, অস্থিরতা, অস্বাভাবিক আচরণ এসব মানসিক সমস্যা নিয়ে অনেক রোগী ডাক্তারের কাছে আসেন। বিশেষজ্ঞরা তাদের সুস্থতার জন্যে এখন মেডিটেশনকেই সফল ওষুধ হিসেবে মনে করছেন।

তথ্যসূত্র: কোয়ান্টামমেথড ডট ওআরজি ডট বিডি (quantummethod.org.bd)

 

বিশ্ব মেডিটেশন দিবস আজ

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম
আপডেট: ২১ মে ২০২৪, ১২:১৬ এএম
বিশ্ব মেডিটেশন দিবস আজ
ছবি : সংগৃহীত

‘ভালো মানুষ ভালো দেশ স্বর্গভূমি বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস মঙ্গলবার (২১ মে) পালিত হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দিবসটি উদযাপিত হবে।

মেডিটেশন দিবস উপলক্ষে সকাল ৬টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে উপস্থিত থাকবেন সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, গৃহিণীসহ বিভিন্ন বয়সী ও নানা পেশার মানুষ।

দিবসটি উপলক্ষে শিশুতোষ ছড়া ও গল্প প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। একই সঙ্গে কোয়ান্টাম থেকে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ বুলেটিন।

এ ছাড়া সকাল ৬টায় সারা দেশে এবং দেশের বাইরে ইউরোপ, আমেরিকা, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন স্থানে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ধ্যানমগ্ন হবেন।

 

ইজেনারেশনের মানবসম্পদ উন্নয়নে দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০৩ পিএম
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২১ পিএম
ইজেনারেশনের মানবসম্পদ উন্নয়নে দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ
ছবি : সংগৃহীত

স্ট্রেসমুক্তি, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও পেশাগত সাফল্য অর্জনে ইজেনারেশন লিমিটেডের কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ ওয়ার্কশপ।

শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর কোয়ান্টাম বনানী সেন্টারে 'মাইন্ডফুলনেস অ্যাট ওয়ার্ক : এলিভেটিং হ্যাপিনেস অ্যান্ড প্রোডাক্টিভিটি' শিরোনামে দিনব্যাপী এ ওয়ার্কশপ আয়োজন করে দেশের অন্যতম সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ইজেনারেশন। 

কর্মস্থলে স্ট্রেস থেকে মুক্তি, নিজের কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করার মধ্যদিয়ে পেশাগত সাফল্যের সহজ সূত্র অর্জনের এ আয়োজনে অংশ নেন ইজেনারেশনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

দৈনন্দিন কর্মজীবনে ইতিবাচকতার মধ্য দিয়ে চৌকস ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে করপোরেট ব্যবস্থাপনা, আত্মপর্যালোচনা, ইয়োগা, মেডিটেশন ও মান উন্নয়ন অ্যাসাইনমেন্টে সাজানো এ আয়োজনে উদ্বুদ্ধকরণ আলোচনা করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম সোহেল, রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সানাউল হক, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের অর্গানিয়ার ইঞ্জিনিয়ার প্রাণজিৎ লাল শীল, চিফ ইয়োগা ইন্সট্রাক্টর আহমেদ শরীফ ও কোয়ান্টাম বনানী সেন্টারের দায়িত্বশীল অর্গানিয়ার নাঈম আহমদ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান ইজেনারেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেসিসের সাবেক সভাপতি শামীম আহসান।

উল্লেখ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অফিসের কর্মীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে টোটাল ফিটনেস বিষয়ক সেমিনার সেবা দিয়ে আসছে কোয়ান্টাম।

এমএ/

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা দিনে ১৫টি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতিকর একাকিত্ব

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:৫২ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৭ এএম
দিনে ১৫টি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতিকর একাকিত্ব
ছবি : সংগৃহীত

ইঁদুরদৌড়ের জীবনে একাকিত্ব হলো অন্যতম সঙ্গী। সারা দিন পাহাড়প্রমাণ কাজের ভিড়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেও দিন শেষে একাকিত্ব গ্রাস করে অনেককেই। কেউ স্বেচ্ছায় একা, কেউ বাধ্য হয়ে। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে একাকিত্ব। একা থাকার এই অবসাদ যে শুধু মনের ওপর চাপ তৈরি করে, তা নয়। শরীরের ওপরেও প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি গবেষণা জানাচ্ছে, দিনে ১৫টি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতিকর হলো একাকিত্ব। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘আওয়ার এপিডেমিক অব লোনলিনেস ও আইসোলেশন’ নামে একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ হয়েছে। জাতিসংঘের এই সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, কোভিডের পর থেকে একাকিত্ব যেন জাঁকিয়ে বসেছে মানুষের মাঝে। মহামারির সময় লকডাউন, কোভিড আক্রান্ত হয়ে নিভৃতবাস (কোয়ারেন্টিন), সামাজিক দূরত্ববিধি- সব মিলিয়ে একা থাকাটা যেন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। তারপর গত দুই বছরে অনেকটাই কমে এসেছে কোভিডের প্রকোপ। কিন্তু রয়ে গিয়েছে একাকিত্ব। আর একা থাকার এই অবসাদ থেকেই বাড়ছে হৃদরোগ, ডিমেনশিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতার মতো রোগের ঝুঁকি।

যত দিন যাবে, এই সমস্যা ধীরে ধীরে অতিমারির আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষকরা। তাই এখন থেকেই রাশ টানতে হবে। একাকিত্বকে কিছুতেই মনের ওপর চেপে বসতে দেওয়া যাবে না। তার জন্য নিজের যত্ন নেওয়ার কথা বারবার মনে করাচ্ছে জাতিসংঘের এই সংস্থা।

কাজের চাপ, ব্যক্তিগত জটিলতা এবং অন্যের খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে যান অনেকেই। একাকিত্বের জন্ম নেয় সেখান থেকেই। সঙ্গীহীন জীবনেও নিজেকে ভালো রাখার রাস্তা খুঁজে নিতে হবে। নিজেকে ভালো রাখার পাশাপাশি সামাজিক মেলামেশা বাড়াতে হবে বলে মত স্বাস্থ্য সংস্থার। 

কোভিড-কাঁটা এখন আর নেই। ফলে যতটা সম্ভব নিজেকে সুরক্ষিত রেখে জনসংযোগে জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। একাকিত্ব কম বয়সে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সেই ঝুঁকি এড়াতে মনের যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এমএ/