
‘প্রায় সাড়ে ৫ মাস পরে আমার বুকের ধন, বুকের মানিক আমার কাছে ফিরে এসেছে। আজকের দিনটি আমার কাছে ঈদের মতো মনে হচ্ছে। জীবনের কোনো ঈদেও এত আনন্দ লেগেছে বলে আমার মনে পড়ে না। যতটুকু আমার ছেলেকে ফিরে পেয়ে পাচ্ছি। তাই তো ছেলের জন্য গরুর মাংস, শুঁটকি আর শিমের বিচি রান্না করে এনেছি। আমার ছেলে এগুলো খেতে খুবই পছন্দ করে।’
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টায় এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক এমভি জাহান মণিযোগে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি জেটিতে পৌঁছালে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার তানভির আহমেদকে জড়িয়ে ধরে কাঁধেন মা জোসনা বেগম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘ভাবিনি ছেলেকে ফিরে পাব। আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি। এ অনভূতি বলে প্রকাশ করার মতো না।’
তানভির আহমেদের বাড়ি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে। তিনি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চতুর্থ ইঞ্জিনিয়ার।
তিনি আরও বলেন, ‘ছোটবেলায় সিনেমায় দেখেছি অপরহণ করার কথা। মানুষকে জিম্মি করার কথা। মুক্তিপণ আদায়ের কথা। কখনো চোখে দেখিনি। জীবনে এ এক অন্য অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। কখনো ভাবিনি, কল্পনাও করিনি নিজের গর্ভের ছেলে জলদস্যুদের কবলে পড়বে। তাও আবার দেশের বাইরে। আমাদের এত চিন্তায় দিন পার করতে হবে, ভাবিনি।’
জোসনা বেগম আরও বলেন, ‘কিছুই করার ছিল না দোয়া করা ছাড়া। কারণ বিদেশের ব্যাপার। আর কী করব? দেশে হলে থানায় যেতাম, পুলিশে বলতাম। কিন্তু শত শত মাইল দূরে এই ঘটনা। কী অবস্থায় আছে, কেমন আছে, সেটিও জানার সুযোগ ছিল না। যখন দেখি, টিভিতে ও পত্রিকায় নিয়মতি এই খবর দেখানো হচ্ছে, তখন টিভির কাছ থেকে নড়তাম না। একটু খবর জানার জন্য টেলিভিশন খুলে বসে পড়তাম। তখন একটু হলেও স্বস্তি পেতাম।’
তানভির আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। দেশের জলসীমায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে অন্যরকম আনন্দ অনুভব করছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন আমরা চলেই এসেছি প্রিয়জনদের কাছে। এখন কাছ থেকে মাকে দেখে এত বেশি ভালো লাগছে, বলার অপেক্ষা রাখে না। মহান আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া।’
> মৃত্যুর মুখ থেকে স্বজনদের কাছে, আনন্দ উচ্ছ্বাস
> ‘আমাদের দিয়ে রান্না করিয়ে দস্যুরা খেয়ে ফেলত’
> জীবনটা অস্ত্রময় হয়ে উঠেছিল
> মেহেদিরাঙা হাতে ফুল ও কেক নিয়ে নুরকে বরণ করলেন স্ত্রী
> ‘মায়ের ছেলে মায়ের বুকে ফিরেছে’
> মৃত্যুর হুমকি ছিল, কিন্তু সাহস রেখেছি : এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন
> বাবাকে ছাড়তেই চাইছিল না দুই মেয়ে, বুকে জড়িয়ে থাকে বহুক্ষণ