![সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি: সকালে অবনতি বিকালে উন্নতি](uploads/2024/07/05/syl-1kk-1720191138.jpg)
আকাশে মেঘ আর সূর্যের মত লুকোচুরি খেলছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি। একদিন নদীর পানি কমে আবার আরেকদিন নদীর পানি বাড়ে। নদীর পানি বাড়া কমার এই দোলাচলে সকালে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে বিকালে হয় উন্নতি। সারা বর্ষাকাল সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির এমন দোলাচলে থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট আবহাওয়া অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি না হলে বা কম হলে সিলেটের সীমান্তবর্তী নদ নদীগুলোতে পাহাড়ি ঢলের পরিমাণ কিছুটা কমে। আবার চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলের পরিমাণ বেড়ে দ্রুত নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়।
সিলেটে ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) সিলেটের নদনদীর পানি দুয়েক সেন্টিমিটার কমেছে। তবে সুরমা কুশিয়ারা নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ৫ স্থানে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
সড়ক ডুবে যাওয়ায় পানির মধ্যেই বাড়ি ফিরছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। ছবিটি বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশার আমতৈল গ্রাম থেকে তোলা।-মামুন হোসেন
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৫.৬ মিলিমিটার। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪.৩ মিলিমিটার।
ভারতের হাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের মঙ্গলবারের তথ্য মতে, শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকাল ৬টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশিদ পয়েন্ট বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১০১ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস খবরের কাগজকে বলেন, আমাদের নদনদীর পানি বৃদ্ধি নির্ভর করে ভারতের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিপাতের উপর। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হলেই পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পায়। আবার এই বর্ষাকালে দুদিন বৃষ্টি হলে দুদিন রোদ উঠে। তাই একদিন সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আরেকদিন অবনতি হয়। এই বর্ষাকালে এমন পরিস্থিতি চলমান থাকবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ বন্যা আক্রান্ত হন। এরপর গত ১৭ জুন ঈদুল আজহার দিন থেকে আবারও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন সিলেটর ১৩টি উপজেলার ১০ লাখের উপরে মানুষ বন্যা আক্রান্ত হন। এই রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১ জুলাই থেকে আবারও সিলেট ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে চলমান বৃষ্টিপাতের কারণে সব নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ১ জুলাই রাতে সিলেট নগরী ও জেলার প্রায় ৬টি উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। অতি বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢল বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজন গত সোমবার বিকাল থেকেই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেন।
শাকিলা ববি/এমএ/