বিনোদন মাধ্যম ওটিটিতে প্রদর্শিত নাটক-সিনেমায় সম্প্রচার নীতি লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা- মানস। তাদের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ‘তুফান’সহ সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকটি বাংলা সিনেমা ওটিটিতে প্রচারিত অন্তত ৬০টি নাটক ও সিনেমায় নায়ক ২৮টিতে, নায়িকা ১৪টি এবং ৮টি খলনায়কের চরিত্রে ধূমপান ও মাদক গ্রহণের দৃশ্য দেখানো হয়েছে; যা আইন ও জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ধানমন্ডির বিলিয়া সেন্টারে ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ওটিটি নীতির প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতা’ কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। আলোচনায় নাটক ও সিনেমার প্রধান চরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ধূমপান ও মাদককে এভাবে উপস্থাপন এদেশের কিশোর-তরুণদের বিপদগ্রস্ত করছে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, এমন পরিস্থিতি জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই চলমান ওটিটি নীতিতে জনস্বাস্থ্য, নৈতিকতা ও আইনের পরিপন্থী বিষয়গুলো নিষিদ্ধ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা, বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বক্তারা।
অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপালসহ বিশ্বব্যাপী ১৪টি দেশ টিকটক নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের দেশেও এ ধরনের মিডিয়াগুলোতে অহরহ আইন লঙ্ঘনসহ অসামাজিক, নৈতিকতাপরিপন্থী বিষয়গুলো ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে, যা প্রভাবিত করছে কিশোর-তরুণদের। জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা রক্ষায় এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কোনো অ্যাপস, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যদি আইন লঙ্ঘন করে, প্রয়োজনে তাদের নিষিদ্ধ ও আইনের আওতায় আনা উচিত।’
মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন নাটক, সিনেমায় ও জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত কনটেন্টগুলোতে সেলিব্রেটিদের অযাচিতভাবে ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন তরুণদের ধূমপানসহ ক্ষতিকর মাদক সেবনে উৎসাহিত করছে। অতীতে অনেক সিনেমা ব্যবসাসফল হয়েছে যেগুলোতে ধূমপানের দৃশ্য ছিল না। ধূমপানের দৃশ্য ছাড়া কাহিনী দৃশ্যায়ন হয় না- এমন ভ্রান্ত ধারণা থেকে পরিচালক, প্রযোজকদের বেরিয়ে আসতে হবে। শিল্পীদের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে, সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এমন কিছু থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।’
মানস পরিচালিত গবেষণায় ৫টি ওটিটি চ্যানেলের ৬০টি প্রোগ্রামে পর্যবেক্ষণ করা ১৫টি হিন্দি সিনেমায়, ৯টি ইংরেজি সিনেমায়, ১৩টি বাংলা সিনেমায় এবং ৫টি নাটকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের চিত্র পাওয়া গেছে। তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে নাটক সিনেমায় ধূমপান ও মাদকের এ ধরনের দৃশ্য সংযোজনের পেছনে তামাক ও অ্যালকোহল কোম্পানির প্রভাব রয়েছে বলে অভিমত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
মানস-এর সি. প্রজেক্ট ও কমিউনিকেশন অফিসার আবু রায়হানের সঞ্চালনায় কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস-এর টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর আমিনুল ইসলাম সুজন ও ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রামস সৈয়দা অনন্যা রহমান।
এলিস/এমএ/