বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলছেন, হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছেন।
প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুজনের মৃত্যুর যে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার করেছেন, তার বক্তব্যের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। কোনো রকম তথ্য যাচাই না করেই যুক্তরাষ্ট্রের এমন ভিত্তিহীন দাবি সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে।
ঢাকার কোটা আন্দোলন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবগত
ঢাকায় চলমান কোটা আন্দোলন নিয়ে স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে কথা বলেন। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ ঘটনা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অবগত এবং বিষয়টি তাদের নজরে আছে।
মিলারের কাছে একজন সাংবাদিক জানতে চান, ‘গত কয়েক দিন বাংলাদেশে হাজারও শিক্ষার্থী সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ চালুর দাবিতে বিক্ষোভ করছে। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীকে আহত করেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের হুমকি দেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের জরুরি সেবা ইউনিটে প্রবেশ করার সময়ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। বাংলাদেশে চলমান এই আন্দোলন বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?’
জবাবে মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা ঢাকায় বড় আকারে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সম্পর্কে অবগত এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ওপর নজর রাখছি। বিক্ষোভে হামলার শিকার হয়ে ২ জন নিহত ও ১০০ জন আহত হয়েছেন। মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার যেকোনো বিকাশমান গণতন্ত্রের অপরিহার্য ভিত্তিপ্রস্তর এবং আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানাই। যারা এই সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের প্রতি আমরা সহমর্মিতা জানাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভিত্তিহীন দাবি সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে: বাংলাদেশ
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুইজন নিহত হয়েছেন’ যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। কোনো রকম তথ্য যাচাই না করেই যুক্তরাষ্ট্রের এমন ভিত্তিহীন দাবি সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার বলেছে, ‘ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় গত ১৫ জুলাই একটি নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের একটি প্রশ্নের জবাবে আমরা অত্যন্ত হতাশ। যেখানে তিনি চলমান ছাত্র বিক্ষোভ থেকে কমপক্ষে দুটি মৃত্যুর অপ্রমাণিত দাবি করেছেন। এই ধরনের ভিত্তিহীন দাবি করার জন্য অযাচাইকৃত তথ্যের ব্যবহার সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে এবং অহিংস প্রতিবাদ বা আন্দোলনের অনুমতি দেওয়ার জন্যে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করতে পারে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আমাদের গণতন্ত্রের ভিত্তি। সরকার জনগণের সম্পত্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নাগরিকদের সেই অধিকারগুলোকে সমুন্নত রাখতে অবিচল থাকে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গণতন্ত্র ও রাজনীতিতে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবনের ওপর একটি ভয়াবহ হামলা প্রত্যক্ষ করেছি। এ ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ ধরনের সহিংসতা গণতন্ত্রের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে চলে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী পৃথকভাবে হামলার নিন্দা করেছেন এবং ট্রাম্প নিরাপদে আছেন এবং সুস্থ হয়ে উঠছেন জেনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নিন্দা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের হামলায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওই মানবাধিকার সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ফেসবুক পেজে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি পোস্ট করা হয়।
পোস্টে বলা হয়, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারা দেশের অন্যান্য ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এসব হামলায় শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।’
ওই পোস্টে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে যেসব শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়েছেন, তাদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়।