সেনাবাহিনীকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে পুলিশকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছিলেন সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আগস্ট মাসে বিপ্লবী জনতার পাশে দাঁড়িয়ে আবারও প্রমাণ করেছেন তারা দেশ ও জনগণের পক্ষে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর মহাখালীতে রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে (রাওয়া) গত ‘জুলাই ও আগস্ট মাসে বিপ্লবে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান এবং বিপ্লবোত্তর ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) ও রাওয়া রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডি ফোরাম এই দুই সংগঠন এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনার শেষে উন্মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা তাদের মতামত তুলে ধরেন। এ ছাড়া গত ১৫ বছরে যেসব কর্মকর্তা সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা আলোচনায় যুক্ত হন।
আলোচনায় চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালসহ যে সেনা অফিসার দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন ও শেখ হাসিনার সরকারের অবৈধ কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করেছেন তাদের বিচারের দাবি জানানো হয়।
সেমিনারে অতিথি বক্তা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর দেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। অনেক মানুষের বুক থেকে পাথর নেমে গেছে। এই স্বপ্ন যারা দেখাল- তারা কারা? তারা হচ্ছে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। তাদের ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি।’
তিনি আরও বলেন, আগস্টে ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। কুচক্রী মহল পুলিশকে বিভিন্নভাবে উসকানি দিয়ে তাদের কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে, যাতে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। তারা আনসার সদস্যদের উসকানি দিয়েছে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা ডাক্তারদের মাঠে নামিয়ে চিকিৎসাসেবা থেকে সবাইকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করেছে। তারা এখন দেখছি, বিদ্যুৎ নিয়ে খেলা শুরু করেছে। তাদের সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুজ্জামান বলেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা জঙ্গি কায়দায় দেশ পরিচালনা করেছেন। তিনি নির্বাচনকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। জনগণের সব অধিকার হরণ করেছিলেন, শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য। কিন্তু ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মুখে তিনি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
অতিথি বক্তা ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘দেশের কিছু সুশীল সমাজের বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন, এত টাকা দিয়ে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর লালন-পালনের দরকার নেই। আমি তাদের বলব, তারা এখনো সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীতা বুঝতে পারেননি। সেনাবাহিনী বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি আবারও প্রমাণ হয়েছে ৫ আগস্টে। সেই দিন সেনাবাহিনী তাদের ভূমিকা না নিলে দেশের ভবিষ্যৎ কোন গন্তব্যে যেত তা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।’
মেজর (অব.) মো. শিবলী বলেন, ‘সাবেক ও বর্তমান সৈনিক থেকে সর্বস্তরের কর্মকর্তা এই সফলতার অংশীদার। অথচ ছাত্র-জনতার বিপ্লবের এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও আমরা অবহেলিত। আমাদের দাবি আদায়ে কোর্টে যাওয়ার অধিকারও নেই। অন্যান্য সেক্টরের মতো মেধাহীন পদোন্নতির মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছে।’
মেজর (অব.) নাসিম আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনার সরকার সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীও ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সশস্ত্র বাহিনীসহ সব জায়গায় মেধাহীন নিয়োগ দিয়ে নৈরাজ্য তৈরি করেছে। এখনো প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে। এই প্রতিবিপ্লবের নায়কদের নোয়াখালীর ভাসানচর পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আয়নাঘর থেকে ফিরে আসা লে. কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বলেন, ‘আমি আয়নাঘরের বিষয়ে কিছুই বলতে চাই না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আমাদের দেশ ও বর্তমান সরকারকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের আরেকটি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’
সভা পরিচালনা করেন লে. কর্নেল (অব.) মনীষ দেওয়ান। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. নাসিমুল গনি ও লে. কর্নেল (অব.) মোশাররফ।