প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রচারের পর সোমবার (৫ আগস্ট) দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কে নেমে আনন্দ-উল্লাস করেন সর্বস্তরের মানুষ। তারা নানা স্লোগান দিয়ে মিছিল বের করেন। এ ছাড়া এদিন বিক্ষুব্ধ জনতা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়র, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর বাড়িতে ও কার্যালয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাড়িতে, নাটোরে প্রতিমন্ত্রী পলক, নড়াইলে মাশরাফি, বরিশালে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও মাদারীপুরে শাজাহান খান, বাহাউদ্দিন নাছিমের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
খবরের কাগজের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় আগুন
রাজধানীর ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেছেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাজারও আন্দোলনকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন। এ সময় বাড়ির ভেতর থেকে ধোঁয়াও বের হতে দেখা যায়। এদিকে বিকেল ৪টার দিকে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
নাটোরে প্রতিমন্ত্রী পলকের বাড়িতে আগুন
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর প্রচারের পর নাটোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে আনন্দ-উল্লাস আর মিছিলে নেমে পড়েন সবস্তরের মানুষ। এ সময় ক্ষুব্ধ জনতা আইসিটি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকের সিংড়া শহরের বাড়ি ও সিংড়ার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌসের বাড়ি ভাঙচুর করেন। ভাঙচুর করা হয় সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়। একই সময় নাটোর-নলডাঙ্গা আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাড়ি ও তার ভাই সাগরের বাড়ি এবং জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
এ ছাড়া সদর উপজেলার উত্তরা গণভবনসংলগ্ন নৌকা মোড়ের নৌকা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ও দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে উত্তরা গণভবন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও থানাগুলোতে সেনাসদস্যরা পাহারায় রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা টহলও জোরদার করা হয়েছে।
নড়াইলে মাশরাফির বাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
শহরের মহিষখোলা এলাকায় হুইপ মাশরাফি বিন মুর্তজার বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছেন ক্ষুব্ধ জনতা। এ ছাড়া আলাদাতপুর এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুবাস বোসের বাড়ি এবং পুরোনো বাস টার্মিনালে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
সোমবার বিকেলে দফায় দফায় এসব হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবে তাদের বাড়িতে কথা বলার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি।
শাজাহান খান ও বাহাউদ্দিন নাছিমের বাসভবন ভাঙচুর
মাদারীপুরে শাজাহান খান ও বাহাউদ্দিন নাসিমের বাসভবন ভাঙচুর ও তাদের মালিকানাধীন বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বিক্ষুব্ধ জনতা মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে শাজাহান খানের ১০ তলা বাসভবন ভাঙচুর করছেন। এ সময় তারা ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভবনের গ্লাস ভাঙচুর করেন। তারা একযোগে সার্বিক ইন্টারন্যাশনাল হোটেল, সার্বিক ফুড ভিলেজ, সার্বিক হেয়ার কাট সেলুন ভবন, শাজাহান খান-সমর্থিত আওয়ামী লীগের কার্যালয়, সার্বিক গাড়ির কাউন্টার ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী, নারী ও পুরুষ একযোগে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তার বাসভবনের সামনে। খুব অল্প দূরত্বে মাদারীপুর সদর থানা থাকলেও কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখা যায়নি। তবে মাদারীপুর সরকারি কলেজে অবস্থান করা কয়েকজন সেনাবাহিনীর সদস্যকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করতে হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিতে দেখা গেছে। এ সময় ভিডিও করতে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা সাংবাদিকদের ওপরেও চড়াও হন।
এ ছাড়া ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিমের বাসভবন ও তার পারিবারিক মালিকানাধীন হোটেল ভাঙচুর করা হয়েছে। এদিকে জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ফারজানা নাজনীনের বাসভবন ও কিশোর গ্যাং নেতা নোবেল ব্যাপারীর মালিকানাধীন মোটরসাইকেল শোরুম ও বাড়ি পোড়ানো হয়। তা ছাড়া এক যুবলীগ নেত্রীর বাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং পুরোনো কোর্ট মোড়ে নবনির্মিত মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরটিও ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক বিক্ষোভকারীকে সিলিং ফ্যান, কম্পিউটারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুট করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এইচ এম সালাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নিজাম হাজারীর বাগানবাড়িতে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ
ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন উত্তেজিত জনতা। বেলা ৩টার দিকে শহরের মাস্টারপাড়া এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উত্তেজিত জনতা দুপুর থেকে মাস্টারপাড়ায় এমপি নিজাম হাজারীর ভোট কাছারী, পুরোনো বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করে। একপর্যায়ে শত শত জনতা বিলাসবহুল বাগানবাড়িতে ঢুকে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এর আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন নিজাম হাজারী।
এ ছাড়া শহরের বাঁশপাড়ায় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীলের কার্যালয়, পিটিআই স্কুল, ফেনী পৌরসভা, স্টেশন রোডের জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়, দাগনভূঞা-ছাগলনাইয়া থানা ও শহরের আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকসহ ১০ নেতা-কর্মীর বাড়িতে আগুন
বরিশালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকসহ ১০ নেতা-কর্মীর বাড়িতে আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। জানা যায়, বিক্ষুব্ধরা নগরীর সোহেল চত্বরে থাকা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়, বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের একটি সাবস্টেশন অফিস, বরিশাল সিটি করপোরেশন এক্সটেনশন (এনেক্স) ভবন, নবগ্রাম রোডের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বাসভবন, কালীবাড়ি রোডের বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াত সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবন ও বরিশাল সার্কিট হাউসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের নগরীর ব্রান্ডকম্পাউড ও বীর উত্তম ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
দুর্বৃত্তরা বরিশাল প্রেস ক্লাবে হামলা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যসহ ক্লাবের গ্লাস ভাঙচুর করে। অন্যদিকে বিবির পুকুরের পূর্ব পাড়ে রিপোর্টার্স ইউনিটিতে হামলা করে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ভাঙচুর করে।
লক্ষ্মীপুরে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন
বেলা ৩টা থেকে লক্ষ্মীপুর শহরে হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও ছাত্র-জনতা জাতীয় পতাকা ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে সড়কে নেমে আসেন। বিক্ষুব্ধ জনতার একাংশ শহরের রায়পুর রোডের লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরীর মালিকানাধীন লুবনা কটেজ নামের বাড়ি এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেলের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন।
এ ছাড়া বিকেলে শহরের পিংকী প্লাজায় উপজেলা চেয়ারম্যান এম কে এম সালাউদ্দিন টিপুর বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় হামলাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ প্লাজার নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, বাসা ও এনআরবিসি ব্যাংকের লক্ষ্মীপুর শাখায় ভাঙচুর ও বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যান।
পটুয়াখালীতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর ও আ.লীগ অফিসে আগুন
বেলা ৩টার দিকে শহর ও শহরতলি থেকে লাখ লাখ জনতা পটুয়াখালী শহিদ মিনারে মিছিল নিয়ে জড়ো হন। পরে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ভাঙচুর করেন এবং আগুন জ্বালিয়ে দেন। একটি গ্রুপ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালায়।
এমপি রমেশচন্দ্র সেনের বাড়িতে আগুন
ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশচন্দ্র সেনের বাসায় আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা।