আবারও ফিরে আসছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারে কারা থাকছেন তার একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছে। দেশের ১৮ জন বিশিষ্ট সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির নাম ওই তালিকায় রয়েছে।
গতকাল সোমবার শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশত্যাগ করলে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিকেলে জাতির উদ্দেশে ভাষণে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার কথা বলেন।
এক দফা দাবিতে লাখ লাখ ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি বাস্তবায়নকালে গতকাল ঢাকার সব রাজপথ দখলে নিয়ে ‘গণভবন’ অভিমুখে যাত্রা শুরু করলে তাড়াহুড়ো করে শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশত্যাগ করেন।
এরপর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার ভাষণে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ঢাকা সেনা সদর দপ্তরে ডেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেনাপ্রধান জানান, বৈঠকে উপস্থিত সব রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। এরপর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারে কারা থাকছেন তার একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে চলে আসে।
এ তালিকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নাম প্রথমেই রয়েছে। আরও যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) দুই সাবেক মহাপরিচালক লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও লে. জে. (অব.) মো. মাইনুল ইসলাম, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জে. (অব.) হেলাল মুর্শেদ খান, সাবেক সচিব ফওজুল কবির খান ও ড. মাহফুজুল হক, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী, ড. শাহদীন মালিক, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক একরামুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, ইন্ডিপন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর প্রো-ভিসি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে চাকমা সার্কেল প্রধানের উপদেষ্টা রাণী ইয়ান ইয়ান।
গতকাল ওই তালিকায় থাকা নামগুলোর মধ্যে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘একটি তালিকায় আমার নাম আছে বলে আমি শুনেছি। অনেকেই আমাকে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। তবে আমি কোনো ডাক পাইনি। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে ডাকা হলে তার পর আমি প্রতিক্রিয়া জানাব।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কয়েকজন ওই তালিকাটি আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি তা দেখেছি। তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের আমি চিনি। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের কর্মজীবনে সততা ও বলিষ্ঠতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।’
এ রিপোর্ট লিখার সময়ে গতকাল রাত ৮টায় অপর মোট ১০ জনের নাম সংবলিত আরও একটি তালিকা ছড়িয়ে পড়ে। খবরের কাগজের হাতে এই দ্বিতীয় তালিকাটিও আসে। নতুন এ তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন ড. সলিমউল্লাহ খান, ড. আসিফ নজরুল, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রি জে এম সাখাওয়াৎ হোসেন, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, মতিউর রহমান চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন এবং ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামো আবারও ফিরে আসছে। ১৯৯৬ সালে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটাবস্থায় এই অন্তর্বর্তী বা কেয়ারটেকার সরকারের কাঠামো প্রয়োগ করে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার পদ্ধতি চালু হয়। এরপর ২০১১ সালের ১০ মে তারিখে সর্বোচ্চ আদালত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামো বাতিল করে দেন। ২০২৪ সালে এসে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আবারও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে সরকার পরিচালনার ধারণাটি সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা সম্মতি দিলেন।
সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়টি তিনি এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পরেই এ উদ্যোগ পূর্ণমাত্রায় এগিয়ে যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন। যতক্ষণ না অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সেনাপ্রধান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে ঘরে ফিরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতে অনুরোধ করেছেন।