অপরাধ-দুর্নীতিসহ জমি-বালুমহাল দখল, টেন্ডার-বাণিজ্য, সম্পত্তি দখল, অর্থ আত্মসাৎ, চাঁদাবাজিতে নিজস্ব স্টাইল প্রতিষ্ঠা করেছেন ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী। অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসা নিজাম হাজারী অল্প সময়ে হয়ে যান ফেনীর একক নিয়ন্ত্রণকর্তা। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর তার এসব অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। ফেনীর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে তার ছিল বিশ্বস্ত ১০ সহযোগী।
‘উড়ে’ এসে ‘জুড়ে’ বসেন নিজাম হাজারী
নিজাম উদ্দিন হাজারী। ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ফেনী পৌরসভার মেয়র হন। এরপর ২০১২ সালে জেলার রাজনীতির অঘোষিত অভিভাবক আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের হাত ধরে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ থেকে তিনি বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তার বাড়ির সামনে পুকুরঘাটে বসে তিনি নির্দেশ দিতে শুরু করেন বালুমহাল দখল, মাদক নিয়ন্ত্রণ, জমি দখলের।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজাম হাজারী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ভোট ডাকাতি করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, রাজনীতি, টেন্ডারবাজি, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে নিজাম হাজারীর থাকেননি। এর মধ্যে তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন জেলার একমাত্র নিয়ন্ত্রক হিসেবে।
রাজনীতিতে তিনি জয়নাল হাজারীর হাত ধরে এলেও উত্থান চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের মাধ্যমে। ২০০১ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে জয়নাল হাজারী সাম্রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যান। এতে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে ফেনী আওয়ামী লীগ। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে আওয়ামী রাজনীতির হাল ধরতে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী আসেন নিজাম হাজারী। তৈরি করেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। ফেনীতে ঢুকতে দেননি জয়নাল হাজারীকে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর এই সাম্রাজ্য ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান নিজাম হাজারী।
জুলুম, নির্যাতনে নিজস্ব ‘স্টাইল’
২০১৪ সালের ২০ মে প্রকাশ্যে ফেনী শহরের একাডেমি রোডে ফুলগাজীর একরামুল হক একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে নৃংশসভাবে হত্যা করে নিজ দলীয় ক্যাডাররা। সেই হত্যার অভিযোগ ওঠে নিজাম হাজারীসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। শুধু একরাম হত্যা নয়, ধর্মপুরের যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম, বালিগাঁওয়ের জয়নাল মেম্বার, দাগনভূঞা স্বেচ্ছাসবক লীগ নেতা ফখরুল, ফেনী পৌর ছাত্রলীগ নেতা ইফতি, ফেনী পৌর এলাকায় শাহ জালাল নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যাসহ নিজদলীয় ১৪ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। শুধু হত্যা নয়, রাজনৈতিক মাঠে যারা নিজাম হাজারীকে সমর্থন করতেন না তাদের মামলা-হামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন এবং এলাকা থেকে বিতাড়িত করতেন।
ছনুয়ার ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা কাশেম বলেন, ‘আমি নিজাম হাজারীর অনুসারী না হওয়ার কারণে আমাকে অস্ত্রসহ পুলিশে দেন নিজাম হাজারীর অনুসারীরা। বেশ কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আমি বিদেশ চলে যাই।’
সোনাগাজীর মুতিগঞ্জ ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতা আজিম উদ্দিন নীল বলেন, ‘নিজাম হাজারীর নির্দেশে আমাদের বাড়ি ভাঙচুর করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার ও ৮নং আমিরাবাদ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব নবী ফরহাদ। তারা আমাকে রীতিমতো হুমকি-ধমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে এবং আমার পরিবারকেও হুমকি দেয়। পরে আমি নিঃস্ব হয়ে প্রবাসে চলে আসি।’
শুধু কাশেম ও আজিম নয়, জেলার নবাবপুর ইউনিয়নের নাবিদ আল নাহিদ, দাগনভূঞার সংগ্রাম, বক্স মাহমুদ ইউনিয়নের সম্রাট, ধর্মপুরের আক্রামুজ্জামান বাপ্পী, নাহিদ, সুমন, রনি, মির মিরু, তুমিন মিয়াজীসহ প্রায় ১ হাজার ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বিদেশ চলে যান।
রহস্যঘেরা সেই বাগানবাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ
ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে ৬০০ মিটার দক্ষিণে প্রায় সাড়ে ৩০০ শতাংশ অন্যের জায়গা দখল করে গড়ে তোলেন বিলাসবহুল বাগানবাড়ি। এখানে ছিল হেলিপ্যাড, টেনিস কোর্ট, লেক, পুল, থিয়েটার, আলাদা গেস্ট রুম, পার্কিং, কিচেন, ঝরনা ও বড় সুইমিংপুল। প্রচার আছে আঙিনায় সুসজ্জিত বাগানের গাছ ও ঘাস মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয়েছে। তার বাসার আসবাব আনা হয়েছে তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া থেকে। এই বাগানবাড়ির বর্তমান বাজার মূল্য হিসাব করলে প্রায় হাজার কোটি টাকা।
এই বাগানবাড়ির জায়গা স্থানীয়দের কাছ থেকে জোর করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বাগানবাড়ির অধিকাংশ জায়গায় মানুষের কাছ থেকে জোর করে নিয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ নামমাত্র মূল্য পেয়েছেন। আবার কাউকে দলিল করার পর টাকা দিবে বললেও দেওয়া হয়নি। তবে যাদের জায়গা দখল করেছে তাদের কেউ ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, তার নিজ বাড়ির সব স্থায়ী সম্পদ বিক্রি করে সেখানে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করেন। নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে সেই জায়গা জোর করে দলিল করে নিয়ে তাকে উচ্ছেদ করা হয়। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর স্থানীয় ছাত্র-জনতা তার বাগানবাড়ি ভেঙে ফেলেন এবং আগুন লাগিয়ে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতার বাড়ি হবে রাজপ্রাসাদ। এটি চিন্তা করলে তার কর্মীরাও প্রাসাদের কথা চিন্তা করবে। সেটি রাজনীতির জন্য খারাপ উদাহরণ।
রয়েছে শখের খামারবাড়ি
নিজাম হাজারীর বিলাসবহুল বাগানবাড়ির উত্তর পাশে ৭৮ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলেন খামারবাড়ি। চারপাশে গরু, ছাগল, মহিষ ও মুরগির খামার মধ্যখানে পুকুর। খামারবাড়িতে প্রবেশের দক্ষিণ পাশে একটি ঘরে লিখা রয়েছে ‘তালতলা বাগানবাড়ি’।
মসজিদ-বিদ্যালয়ের নামে ভূমি জবরদখল
ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নূরুল আমিন। চাকরিকালীন নিজের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের টাকায় সংসারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এলাকায় ২৫ শতাংশ জায়গা কেনেন তিনি। তবে ক্ষমতা ও আধিপত্যের তোড়ে সেই স্বপ্নও টেকেনি বেশি দিন। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সেই স্বপ্নের জমিও কেড়ে নেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। এমন অভিযোগ শুধু নুরুল আমিনের নয় বালিগাঁও ইউনিয়নের সুন্দরপুর, ডোমরা ও মরুয়ারচর ২ হাজার ৫০০ শতাংশ জমিতে লাল পতাকা টানিয়ে শত শত মানুষের স্বপ্ন দখল করে নেন তিনি।
ফেনীতে সম্পদের পাহাড়
বিলাসবহুল বাগানবাড়ি ও খামারবাড়ি ছাড়াও নিজাম হাজারীর অনেক জায়গাজমি ও বাড়ি রয়েছে মাস্টারপাড়ায়। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, ৬টি ৭ তলাবিশিষ্ট বাড়ি, ১০টি ১ তলাবিশিষ্ট বাড়ি ও ২০০ বিঘা জায়গা রয়েছে তার। এর মধ্যে মাস্টারপাড়ায় জয়নাল হাজারীর বাসভবনের ১০০ মিটার পশ্চিমে দৃষ্টিনন্দন ৭ তলাবিশিষ্ট একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে তার। ঘাটলায় ভোট-কাচারি নামে ৭ তলা একটি বাড়ি রয়েছে তার। বাগানবাড়ির আগে ২টি, পরে ১টি ৭ তলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া খামার বাড়িতে ১০টি ১ তলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে।
বাগানবাড়ির সমানে রাস্তার পশ্চিম পাশে ৮০ বিঘা জমি, ঘাটলার সামনে ৩০ বিঘা জায়গা, কবরস্থানে ২০ বিঘাসহ আশপাশের মিলে প্রায় ২০০ বিঘা জমি রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এসব বাড়ি ও জায়গার বিষয়ে সত্যতা জানিয়েছেন বাড়ির দারোয়ান ও স্থানীয়রা। এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামে তার নামে-বেনাম মার্কেট ও ফ্ল্যাট রয়েছে বলে গুঞ্জন আছে।
বিশ্বস্ত ছিলেন ১০ সহযোগী
২০১২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান নিজাম উদ্দিন হাজারী। এরপর থেকে বিভিন্ন উপজেলার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে গড়ে তোলেন ক্যাডার বাহিনী। তার আশপাশে আওয়ামী লীগের ১০ জন জনপ্রতিনিধিকে দেখা যেত সব সময়। স্থানীয় মানুষ তাদের ১০ খলিফা হিসেবে চিনতেন।
তারা হলেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ওরফে স্বপন মিয়াজী, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান ওরফে খোকন হাজারী, জেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শরীফ উল্লাহ ওরফে শরীফ হাজারী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল জলিল ওরফে আদর, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শম্ভু বৈষ্ণব, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার ওরফে সোহেল চৌধুরী, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম ওরফে খোকন, ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন মজুমদার ওরফে লাল হারুন, জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন।
একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন এসব খলিফা।
এসব বিষয়ে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, গত ১৫ বছর বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী ঠিকাদারিকাজে সম্পৃক্ত নেই। ঠিকাদারি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন নিজাম হাজারী। ঠিকাদারি, বালুমহাল ও মাটির প্রতি তাদের আকর্ষণ ছিল বেশি। কারণ এগুলোতে ক্যাশ টাকা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, শুধু ঠিকাদারিতে পার্সেন্টেস নয়, জেলার সব কটি বালুমহাল, ইটভাটায় মাটি বিক্রি চলত তার নিয়ন্ত্রণে।
ফারুক হোসেন নামে এক ঠিকাদার জানান, সড়কের ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার একটি কাজের জন্য নিজাম হাজারীকে অগ্রিম ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এখন তিনিও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
‘চাঁদা’ আদায় ছিল নিয়মিত
সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যেমন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে কাজের বরাদ্দের ওপর নির্ভর করে ৭%, ১০% ও ১৫% পর্যন্ত অগ্রিম টাকা আদায় করতেন নিজাম হাজারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন গত কয়েক দিন শান্তিতে ঘুমাচ্ছি। পার্সেন্টেস দেওয়ার চিন্তা মাথা থেকে সরে গেছে। পার্সেন্টেস দেওয়া বন্ধ হলে সুনামের সঙ্গে কাজের মান ঠিক রাখতে পারব।
এ ছাড়া ফেনী শহরের সিএনজি অটোরিকশা থেকে পরিবহন নেতা হানিফ ও মানিকের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। মহীপালের বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন পরিবহন নেতা মোহাম্মদ আলী।
শহরের রাজাজি দীঘিরপাড়ে প্রায় ৩০০ দোকান অবৈধভাবে নির্মাণ করে প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন তারই চাচাতো ভাই পৌর যুবলীগ নেতা রুবেল হাজারী।
মহীপালে গণহত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’
গত ৪ আগস্ট মহীপাল ফ্লাইওভারের নিচে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিজাম হাজারীর নির্দেশে নির্বিচারে গুলি করে তার ক্যাডার বাহিনী। সেই গুলিতে ৭ জন নিহত হন। সেই হামলার নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজের দেখা যায় শুসেনের অনুসারী জিয়া উদ্দিন বাবলু পেশাদার কিলারের মতো গুলি ছুড়ছে। এ ছাড়া যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী, কাজীরবাগ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেঞ্চু করিম, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি জানে আলম, জেলা যুবলীগ নেতা ইকবাল বাহার ফয়সালকে গুলি করতে দেখা যায়।
ফেনী সদর উপজেলা পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার নিহত ওয়াকিল আহমেদ শিহাব (২১) পিতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিজাম হাজারী সেদিন নির্দেশ না দিলে আমার ছেলে মারা যেত না। আমার ছেলের মৃত্যুর দায়ভার সম্পূর্ণ নিজাম হাজারীকে নিতে হবে।’
এ বিষয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৮টি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা হয়েছে। তাকে ধরার জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া ৪ আগস্টের ঘটনায় কারা জড়িত তাদের তালিকা প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
স্ত্রীর নামেও ছিল অস্ত্রের লাইসেন্স
নিজাম উদ্দিন হাজারী ২০১৪ সালে বিনা ভোটে সংসদ সদস্য, নিজের নামে একটি করে পিস্তল ও রাইফেলের লাইসেন্স নেন। এর মধ্যে রাইফেলের লাইসেন্স নেন ২০১৬ সালে। পিস্তলের লাইসেন্স নেন ২০১৮ সালে। তার স্ত্রী নূরজাহান বেগমের নামেও ২০২০ সালে একটি রাইফেলের লাইসেন্স নেওয়া হয়। যদিও তিনি গৃহিণী।
নির্বাচনে ‘ফেনী স্টাইল’
গত ১৪ বছরে ফেনীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন। গত উপনির্বাচনে জেলার ৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৪২টিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপির মাত্র একজন নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ৫টি পৌরসভা একচেটিয়া আওয়ামী লীগের দখলে। এসব শুধু নিজাম হাজারীর একক নেতৃত্বের কারণে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল। তিনি বলেন, পুরো জেলায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করেছিলেন নিজাম হাজারী।
এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচনকে ঈদ মনে করেন নিজাম হাজারী। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেন তিনি।
এসব অভিযোগের বিষয় জানতে নিজাম হাজারী ও তার সহযোগীদের মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।