গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সুদূরপ্রসারী সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার জরুরি বলে মন্তব্য করে বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই সংবিধান রেখে চিরস্থায়ীভাবে স্বৈরতন্ত্রের বিলোপ হবে না।
সোমবার (১২ আগস্ট) ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ: এখন কী করতে হবে’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারে এসব বিশ্লেষকরা এ কথা বলেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দেশে একটি অসহনীয় অবস্থা তৈরি হয়েছিল। তার ফল এই গণ-অভ্যুত্থান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে ক্রান্তিকালীন সরকার হিসেবে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য। এখন সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে। এই সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রয়োজন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘জন-আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার গঠিত হয়েছে। এই সংবিধান রেখে চিরস্থায়ীভাবে স্বৈরতন্ত্রের বিলোপ হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে জন-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে হবে। ১৫ বছরে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। কাঠামো ভেঙে পড়েছে। পুনর্গঠন করতে এত তাড়াহুড়া কেন, দেশ বদলাতে চান না?’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহুমুখী ঘটনা ঘটেছে। দায়ীদের জবাবদিহি করতে হবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের দাবি রাজনৈতিক দিক থেকে যৌক্তিক তবে ডকট্রিন অব নেসেসিটি থেকে এখনই তা কতটা যৌক্তিক এ নিয়ে ভাবতে হবে।’
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান বলেন, ‘এখন যে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলোর দাবি করা হচ্ছে, সেগুলোর ভিত্তি ২০০৭-০৮ সালে করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অনেক কিছু ধুয়েমুছে ফেলা হয়। গণতন্ত্র নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম. তামিম বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ আসতে পারে রাজনৈতিক দল থেকে। রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জন্য যেসব ব্যবস্থা আছে, সেগুলো তারা সহজে পরিবর্তন করতে চান না। ১৯৯১ ও ২০০৭-০৮ সালেও এ ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল; কিন্তু পরিবর্তন আসেনি। এর অন্যতম প্রধান কারণ বিচারহীনতা। অপরাধীদের বিচার করা যায়নি।’
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ, এখন কী করতে হবে’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।