হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নিপীড়ন বন্ধ করে দ্রুত ৮ দফা দাবির বাস্তবায়নে অনড় অবস্থান নিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা৷
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে ‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন’-এর ব্যানারে তারা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন৷
সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে তারা ৮ দফা দাবি উত্থাপন করে বলছেন, এ দাবিগুলোর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন৷
‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন’-এর ৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-
১) সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।
২) সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।
৩) সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন।
৪) হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ‘হিন্দু ফাউন্ডেশন’-এ উন্নীতকরণ। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ।
৫) দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন।
৬) সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দ করা৷
৭) সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ডের আধুনিকায়ন।
৮) শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি। পাশাপাশি প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান।
এ প্রসঙ্গে সাধারণ হিন্দু শিক্ষার্থী আন্দোলনের সমন্বয়ক সুস্মিতা কর ও অর্থী দে জানান, সোমবার (১২ আগস্ট) বেলা ১১টায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন’-এর ১১ জন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের বৈঠক হয়েছে৷ বৈঠকে ৮ দফা দাবি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চান।
পরে সোমবার বিকেলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ তখন জানা যায়, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতারা বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন৷ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কয়েকজন প্রতিনিধি সেখানে যেতে পারেন বলে অনুমতি মেলে৷
কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সেই প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সেই আলোচনার টেবিলে যাদের বসার কথা, তারা সবাই বিভিন্ন দলীয় সংগঠনের সাথে যুক্ত অথবা বিতর্কিত লোক। ফলে আমাদের প্রতিনিধি তাদের এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে সম্মত হয়নি। আমরা পুনরায় দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, এই সব দলীয় মানুষজনের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসে আমরা আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারি না! যদি দলীয় সংগঠনের লোকজনের সঙ্গেই প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেন, সেক্ষেত্রে আমাদের প্রতিনিধিরা সেই বৈঠক বর্জন করবে এবং আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করছেন৷
জয়ন্ত সাহা/অমিয়/