স্বল্পমেয়াদি কমিশন গঠন করে আর্থিক খাতের উপ-খাত যথাক্রমে ব্যাংক, বিমা ও পুঁজিবাজার ব্যবস্থাপনা ও নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে সার্বিক সংস্কার করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
একই সঙ্গে সিপিডি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বিলুপ্তি চেয়েছে। সিপিডি জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্তিশালী করে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারবে। এতে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। পাশাপাশি বিমা ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকেও দক্ষ জনবলসহ ঢেলে সাজানোর কথাও বলা হয়।
সোমবার (১২ আগস্ট) ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনা, শিগগির কী করতে হবে’ শীর্ষক পর্যালোচনায় এসব পরামর্শ তুলে ধরে সিপিডি।
বেসরকারি এ গবেষণা সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এ সময় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজার যেমন অসুস্থ, বিকলাঙ্গ তেমনি বিমা খাতও অসুস্থ ও বিকলাঙ্গ। আমরা এতদিন দেখেছি, সরকারদলীয় বিবেচনায় ব্যাংক-বিমা কোম্পানির লাইসেন্স দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও সেবা দেওয়ার পরিবর্তে জনগণের অর্থ লুটপাটে ব্যস্ত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে আর্থিক খাতের উপ-খাত যথাক্রমে ব্যাংক, বিমা ও পুঁজিবাজার ব্যবস্থাপনা ও নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে সার্বিক সংস্কার করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আমি আহ্বান জানাই। দক্ষ লোকবল নিয়োগ দিয়ে পৃথক কমিশন করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার একা সব কাজ করতে পারবে না। এমন নয় যে, এসব কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। এসব কমিশন স্বল্পমেয়াদি হবে এবং তারা প্রয়োজনীয় কাজ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো কক্ষে বসে সম্পাদন করবে ও কাজ শেষে সুপারিশসহ জমা দিয়ে বিদায় নিবে। এসব কমিশন তিন মাস মেয়াদিও হতে পারে।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে লাইসেন্স পাওয়া তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের কিছু ব্যাংক মৃতপ্রায় হয়ে আছে। এদের চলৎশক্তি নেই। সরকার এদের জনগণের করের টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। এতে শুধু অর্থের অপচয় হয়েছে। এরা মরে যাক। বন্ধ হয়ে যাক এসব ব্যাংক।
তিনি বলেন, এ ছাড়াও কিছু ব্যাংকের পারফরম্যান্স খুবই খারাপ। আরেকটু ধাক্কা লাগলেই মরে যাবে। এগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে পরিচালনার চেষ্টা করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পুরো ব্যাংক খাত নিয়মনীতির বাইরে চলে গেছে। এত দিন বিশেষ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রসারে কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক দশকের বেশি সময় ব্যাংক খাতে ২৪টি বড় ধরনের কেলেঙ্কারি হয়েছে। এসব কেলেঙ্কারির পরিমাণ ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থের কথা চিন্তা করে নীতিমালা করেছে। দুই বছর ধরে দেশের মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে। দরকার ছিল সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু বিশেষ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর যাতে সুবিধা হয়, সে জন্য এত দিন সুদহার বাড়ায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন না যে তাদের স্বাধীনতা নেই। কিন্তু তারা এটা ব্যবহার করেনি।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আমি বলতে চাই ওদের ওই আন্দোলনে শুরু থেকেই সিপিডির নৈতিক সমর্থন ছিল।’