অলি আউলিয়ার মাজার, খানকাহ, দরগাহ শরীফে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো গর্হিত কাজ থেকে উগ্রবাদীদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের ইমাম আন্জুমানের সভাপতি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভান্ডারি।
তিনি বলেন, মাজারে হামলা করে সুন্নি সূফিবাদী জনতাকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না।
আর যেন উগ্রবাদীরা দেশের একটি মাজারেও হামলা করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়ার উদ্যোগে রাজধানীতে শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।
এরপর শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন্ আহমদ আল্-হাসানীর মাইজভান্ডারি নেতৃত্বে বেলা ১১টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে জশনে জুলুস রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
শোভাযাত্রায় নবীপ্রেমিক জনতার বিভিন্ন ইসলামিক হামদ, নাত ও শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে রাজপথ।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত অংশগ্রহণকারীদের হাতে কলেমা তৈয়াবা, জাতীয় পতাকা, আন্জুমানের পতাকা এবং বিভিন্ন বাণী ও শ্লোগান লিখিত ব্যানার ও ফেস্টুন দেখা যায়।
শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশ সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভান্ডারি বলেন, আমরা সুন্নি সূফিবাদী জনতা নবীপ্রেমিক উদার মুসলিম। আমরা উগ্রতা ও হটকারীতায় বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি ইসলাম কায়েম হয়েছে উদারতায়। সূফী সংস্কৃতি ও মাজারসমূহ হলো ইসলামের গৌরব ও মর্যাদার প্রতীক। অলি আউলিয়াগণই খানকাহর পাশাপাশি মাদরাসা ও মসজিদ নির্মাণ করে ইসলাম প্রচারে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন। আমি মনে করি একশ্রেণির উগ্রবাদীরা ধর্মের নামে উগ্রতা প্রদর্শন করে মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে মানুষকে ধর্মবিমূখ ও নাস্তিক্যবাদকে উসকে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, মাজার ভেঙে; সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা করে ধর্মকে অবমাননা করা হচ্ছে। সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যার যার মতকে প্রাধান্য দিন। কারো ভিন্ন মতের উপর জুলুম কিংবা জোর জবরদস্তি থেকে বিরত থাকুন।
ইসলাম মানুষকে সত্য, সুন্দর, শান্তি ও কল্যাণের পথ দেখায় বলেও উল্লেখ করেন।
অন্তবর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে সাইফুদ্দীন মাইজভান্ডারী বলেন, সারাদেশে যে সমস্ত মাজার, খানকাহ ভাঙা হয়েছে সেগুলো পূনঃনির্মাণ ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যারা এই অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী বলেন, মহানবীর (দ.) এই দুনিয়ায় শুভাগমন সমগ্র মানবজাতির জন্য আল্লাহ পাকের বিশেষ নেয়ামত ও অনুগ্রহ। ইসলাম ধর্মেই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার সুখ-সমৃদ্ধি শান্তি কামনা করা হয়েছে। এমন কোনো কাজ করতে বলা হয়নি যাতে করে ইসলামের অবমাননা করা হয়। কোরআনে বলা হয়েছে, কারও ওপর জোর জবরদস্তি করে যেন ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া না হয়। কারও ধর্মীয় স্বাধীনতা যেন বিনষ্ট না হয়।
সমাবেশে ও শোভাযাত্রা আরও উপস্থিত ছিলেন- গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান খান মিয়াজি, অধ্যাপক ড. শহীদ মনজু, আন্জুমান সাধারণ সম্পাদক খলিফা মো. আলমগীর খান মাইজভাণ্ডারী, মাওলানা মূফতী খাজা বাকীবিল্লাহ আল-আযহারী, মাওলানা রুহুল আমিন ভূঁইয়া চাঁদপুরী, মূফতী মাওলানা মাকসুদুর রহমান, শাহ্জাদা সৈয়দ মাহবুব-এ-মইনুদ্দীন, শাহ্জাদা সৈয়দ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন, বিএসপি মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ সরকার, অতিরিক্ত মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ, সাজ্জাদানশীন পীর, ওলামা-মাশায়েখ, আন্জুমান ও মইনীয়া যুব ফোরামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
শফিকুল ইসলাম/অমিয়/