সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও অধিকারের ইস্যুতে আট দফা দাবিতে শাহবাগে অবস্থানরত সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন-এর কর্মীরা তাদের কর্মসূচি তিন দিনের জন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আট দফা দাবি পূরণের আশ্বাস মিলেছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী অর্থী দে। তাই কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে বৈঠকের পরে অর্থী দে ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন-এর সাধারণ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার, ডাক-টেলিযোগাযোগ -তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন তারা নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসনসহ অনেকগুলো কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছেন।’
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের পক্ষে অর্থী ছাড়াও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দীপ মোদক, সুস্মিতা কর, লিখন দত্ত, রাজিব কুমার সাহা, দীপঙ্কর সিংহ দীপ।
অর্থী জানান, দাবি পূরণের আশ্বাস মিলায় ১৪ আগস্ট (বুধবার) থেকে ১৬ আগস্ট (শুক্রবার) পর্যন্ত সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন-এর সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো কর্মসূচি দেবেন না। তিনি বলেন, ‘এখন যদি অন্য কোনো স্বার্থান্বেষী বা বিতর্কিত ব্যক্তিবর্গ সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো কর্মসূচি পালন করেন তবে তার জন্য আমরা দায়ী থাকবো না।’
সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়করা।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নিপীড়ন বন্ধ করে দ্রুত আট দফা দাবির বাস্তবায়নে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নিয়েছিল সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। এই আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন; সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন; সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন; হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ; দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন; দুর্গাপূজায় পাঁচ দিনের ছুটি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিকেলে তিনি বৈঠক করছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে। দুটি বৈঠকের একটিতে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের নেতাদের যুক্ত করতে চেয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। কিন্তু শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা আপত্তি জানিয়ে বলেন, এসব ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের রাজনৈতিক সংশ্রব থাকায় তাদের সঙ্গে বসে বৈঠক হতে পারে না। তারা আলাদাভাবে বৈঠক করার দাবি জানান।
পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদের সহযোগিতায় তারা আলাদাভাবে বৈঠকের সুযোগ পান
জয়ন্ত সাহা/এমএ/