চট্টগ্রামের শীর্ষ চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত আবদুন নবী লেদুর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৯১ টাকার সম্পদ থাকা ও সম্পদ বিবরণীতে ২৬ লাখ টাকার সম্পদ গোপন রাখার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুদক চট্টগ্রাম ২-এর সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মালেক বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
বিষয়টি খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম দুদকের উপরিচালক আতিকুল ইসলাম।
লেদু মহানগরের অক্সিজেন এলাকার শীর্ষ চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত। পড়াশোনা না জানা লেদু কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার হিসেবেও পরিচিত। এমনকি গোয়েন্দা পুলিশের তালিকায়ও তিনি কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার। কোনো পদ-পদবি না থাকলেও নিজেকে পরিচয় দিতেন আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে। দৃশ্যমান কোনো আয় না থাকলেও তিনি বহু সম্পদ ও অর্থের মালিক বনে গেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় তিনি জমি দখল আর চাঁদাবাজি করে বেড়াতেন। প্রতারণা, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অন্যের জমি দখল করাই ছিল তার মূল কাজ।
কথিত আওয়ামী লীগ নেতা লেদুর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট। ২০২২ সালের ৭ আগস্ট থেকে লেদুর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি তদন্ত শুরু করে দুদক। ওই তদন্তে ছিলেন দুদক কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক।
দুদক সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তার কাছে সম্পদ বিবরণী জমা করেন লেদু। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ২৬ লাখ ১৪ হাজার ১২৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন তিনি। এ ছাড়া তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৯১ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ মেলে দুদকের কাছে, যা অসাধু উপায়ে অর্জন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বায়েজিদ অক্সিজেন মোড়ে লেদুর রয়েছে বিলাসবহুল বহুতল ভবন। এ ভবনে একটি ব্যাংকের শাখাও রয়েছে। সেখানের পাঁচ তলায় তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম শহরে তার আছে চারটি বিলাসবহুল বাড়ি। তবে রহস্যজনক কারণে দুদকের অনুসন্ধানে তার এসব সম্পদের তথ্য আসেনি।
অতিসম্প্রতি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, “লেদু যে বাড়িতে বসবাস করে সেটি খালের ওপর অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। আমি অনেকবার চেষ্টা করেও বাড়িটি উচ্ছেদ করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাকে আমরা চিনি ‘লেদু গুন্ডা’ হিসেবে। এলাকায় তার অপকর্মের শেষ নেই।’’
গত জুলাই মাসে লেদুর বিরুদ্ধে বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশের কথিত সোর্স, হত্যা ও ধর্ষণ মামলার আসামি আনোয়ারকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সে সময় তার বিরুদ্ধে নগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই এলাকার ভুক্তভোগীরা।
দুদকের উপ-পরিচালক বলেন, ‘দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২৬ লাখ ১৪ হাজার ১২৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রদান করে এবং আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৯১ টাকার সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রাখার দায়ে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
এস এম ইফতেখারুল/জোবাইদা/অমিয়/