কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ও পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়ি রাতের আঁধারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীর মিঞাপাড়ায় অবস্থিত বাড়িটির আঙিনায় এখন পড়ে আছে ইটের স্তূপ।
বুধবার (১৪ আগস্ট) রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসংলগ্ন এই স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার খবর পেয়ে রাজশাহীর চলচ্চিত্রকর্মীরা বাড়িটিতে ভিড় করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টসহ একদল তরুণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। তারা দাবি করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরা ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলে আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাগবিতণ্ডা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি পরিচালক ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মিঞাপাড়ায় অবস্থিত রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসংলগ্ন ওই বাড়ির কোনো চিহ্নই নেই। পুরো এলাকাজুড়ে পুরনো ইটের স্তূপ পড়ে আছে। শ্রমিকরা একতলা ভবনের ওই ইট এক জায়গায় জড়ো করছে।
ঋত্বিক ঘটকের যমজ বোন প্রতীতী দেবীর মেয়ে ও সাবেক সংসদ সদস্য আরমা দত্ত খবরের কাগজকে বলেন, ‘রাজশাহী হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল অনেক দিন ধরে। সরকার পতনের পরে সারা দেশে সহিংসতা হয়েছে; ভাঙচুর করা হয়েছে দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা আমার মামার বাড়িটি ভেঙেছে, নাকি কলেজ কর্তৃপক্ষ লোক লাগিয়ে ভেঙেছে, সেটি আমি নিশ্চিত নই।’
ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে সেখানে জড়ো হন রাজশাহীর চলচ্চিত্রকর্মীরা। এ সময় পাশের হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কিছু জানেন না বলে জানান। চলচ্চিত্রকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পাশে থাকা হোমিওপ্যাথিক কলেজের একটা কাচও ভাঙেনি। অথচ ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের ঐতিহ্য। এটা ভাঙার অধিকার কারও নেই। এটা জেলা প্রশাসন থেকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ সময় চলচ্চিত্রকর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।’
ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটিজ-রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদ হোসেন মাসুদ জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর সংস্কৃতিকর্মীরা ২০০৯ সাল থেকে এই বাড়িটিকে সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছেন। রাজশাহী জেলা প্রশাসক মারফত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে তারা একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। ২০২১ সালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তর গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দিয়ে ঋত্বিক ঘটকের আদি বাড়িটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানায়।’
মাসুদ জানান, বুধবার রাজশাহীর সংস্কৃতিকর্মীরা রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এই কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তদন্তের।