কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবিসহ ৭ দফা দাবি জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি জানান নিহতদের স্বজনরা।
বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ‘শহিদ পরিবার ও নিপীড়িত ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবি জানানো হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে নিহত আবদুল্লাহ আল মামুনের বোন বলেন, ‘আমাদের একমাত্র ভাইকে গত ৫ আগস্ট গাজীপুর আনসার একাডেমির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। মা দুপুরে ভাত বেড়ে রেখেছিল, আবদুল্লাহ এসে ভাত খাবে। কিন্তু তার কাছে পৌঁছাল ছেলের লাশ। আমার মা পাগলপ্রায়। আমার বাবা মাসে মাসে রেমিট্যান্স পাঠায়, কিন্তু এই দেশ তাকে উপহার দিয়েছে আমার ভাইয়ের লাশ।’
নিহত ইমন হোসেন আকাশের মা বেবী খাতুন বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তানকে তারা গুলি করে হত্যা করেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি পরে আজমত হসপিটালে আমরা তার লাশ পাই। আমার ছেলের লাশ এখনো চোখে ভাসে। এটা আমি নিতে পারছি না। আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা বলেন, ‘আমার ছেলে যখন গুলি খেয়েছে, তখন আমি রংপুরে আন্দোলনকারীদের সাহায্য করছি। মারা যাওয়া লোকগুলোর জন্য আমি কেঁদেছি। যখন আমার ছেলের লাশ পাওয়া গেল, তখন থেকে আমি আর কাঁদতে পারিনি। যারা মারা গেছে, তাদের জন্য আমরা দোয়া করব। কিন্তু এখন যেটা সব থেকে বেশি জরুরি, সেটা হলো যারা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে, তাদের জন্য এগিয়ে যাওয়া। আমার যদি সামর্থ্য থাকত, আমার এই অসুস্থ সন্তানদের চিকিৎসার ভার আমি নিতাম।’
মানববন্ধন চলাকালে ‘ছাত্র-জনতার রক্তের বিচার চাই’, ‘আবু সাঈদের রক্তের দাম দিতে হবে’, ‘হাসিনা স্বৈরাচারী’, ‘আওয়ামী লীগকে না বলুন’, ‘গুলির নির্দেশদাতাদের ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। এ ছাড়া হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন প্রদর্শন করা হয়।
কর্মসূচিতে তুলে ধরা দাবিগুলো হলো গণহত্যার হুকুমদাতা শেখ হাসিনাকে অতিদ্রুত দেশে এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার করতে হবে; ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের মধ্যে যারা ‘গণহত্যায়’ জড়িত, এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে এবং সরকারকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা দিয়েছে তাদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা; ‘গণহত্যায়’ জড়িত আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হামলা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করা; শহিদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশ করা, শহিদদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও মাসিক আর্থিক সহয়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা সরকারিভাবে করতে হবে; আন্দোলনে শহিদদের রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া; বৈষম্য প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর (আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগের) গুণগত পরিবর্তন এবং জাতিসংঘের অধীনে ‘গণহত্যার’ তদন্ত করে রিপোর্ট প্রকাশ করা।