বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) ভোর ৬টা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়ি এবং তার প্রতিকৃতি ঘিরে গোটা এলাকায় আছে কাঁটাতারের বেড়া। তবে ওই সড়কের মূল গেট, মেট্রো শপিংমলের সামনের অংশ, পশ্চিম পাশের গেটসহ আশপাশের সব রোডে ছোট ছোট লাঠি, বাঁশ, পাইপ নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। রাসেল স্কয়ার থেকে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর এবং প্রতিকৃতির দিকে যাওয়া দূরের কথা, কাঁটাতারের বেড়ার দিকেও কাউকে যেতে দিচ্ছেন না তারা।
এর আগে বঙ্গবন্ধু ভবনের পশ্চিম পাশের রোড হয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মূল গেটের দিকে যাওয়ার পথেও ছাত্র-জনতার বাধার মুখে পড়তে হয়। অন্তত প্রায় ১০ জনকে পরিচয়পত্র দেখিয়ে বলতে হয় আমি সাংবাদিক। তার পরও মূল গেটের পাশে যাওয়া সম্ভব হলো না। তবে মূল সড়কের ফুটওভার পাসে ওঠার সময় এ প্রতিবেদককে একজন বললেন কোনো ভিডিও ও ছবি তুলতে পারবেন না। পরে সেখানে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সহকর্মীদের। কিছুক্ষণ পর বিক্ষুব্ধদের পক্ষ থেকে হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়- ‘কোনো ছবি তোলা যাবে না, ভিডিও করা যাবে না।’ সড়কে ছাত্র-জনতার অবস্থানের ছবি তোলার সময় ডেইলি স্টারের এক সাংবাদিকের কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করতে বাধ্য করা হয়। সাংবাদিকদের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের আশপাশের বাসিন্দাদেরও ছবি-ভিডিও না তুলতে হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দেন তারা। মূল গেট ও সড়কের উভয় পাশই ছিল ছাত্র-জনতার দখলে। তাদের কঠোর বাধার কারণে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা গেল না।
বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্ন বা ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সেখানে অবস্থানকারী ছাত্র-জনতা ওই সব নেতা-কর্মীর মোবাইল ফোন তল্লাশি করেন। অনেককে ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গও করে দেন। শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে ধরে পাশের নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে আসে এবং তাদের উদ্ধার করে নিরাপদে চলে যেতে সহযোগিতা করে। এ ছাড়া দলটির ২২ নেতা-কর্মীকে হেনস্তা করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এর আগে সকাল ৭টার দিকে ওই বাড়িতে প্রবেশের সময়ই বাধার মুখে পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তার গাড়িসহ দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধরা। অপর গাড়িটি এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার। পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল না দিয়েই তাকে ফিরে যেতে হয়। আর গাড়ি ফেলেই পালিয়ে যান ওই নেতা। এ ছাড়া ওই বাড়ির পাশের সব রোডেই যিনি বা যারাই গেছেন, তাদের কেউই ভেতরে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি।
এর আগে শোক দিবসকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’ কর্মসূচি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে তাদের ওই কর্মসূচিকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে তা ঠেকাতে ১৪ আগস্ট দিবাগত মধ্যরাত থেকেই ওই বাড়ি ঘিরে চারপাশ দখল করে রাখেন ছাত্র-জনতা। ফোক গান বাজিয়ে তাদের উল্লাস করতে দেখা যায়।
কেমন ছিল আগের শোক কর্মসূচি
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোয় এবার অন্য রকম এক শোক দিবস উদযাপন করতে হলো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও ভক্তদের। কর্মসূচি পালনে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী এলেও দেখা যায়নি কোনো নেতাকে। অথচ প্রতিবছর এই দিনকে ঘিরে ভোররাত থেকেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে দেখা যেত শোকের মিছিল। আবাসিক এলাকার দিক থেকে প্রবেশ করতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সিনিয়র নেতারা। তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে চলে যাওয়ার পর রাসেল স্কয়ারের প্রবেশ পথটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হতো। এরপর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হতো।
বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন
তবে রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে আওয়ামী লীগসহ সর্বস্তরের মানুষ।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ বেদিতে ফুল দিয়ে আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা জানান জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান।
জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ, কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগ, মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
এ ছাড়া গোপালগঞ্জের পার্শ্ববর্তী জেলা বাগেরহাট, নড়াইল, বরিশাল ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শ্রদ্ধা জানান।
নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মেয়র আইভীর শ্রদ্ধা
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
সকাল ১০টায় নগরীর ২ নম্বর রেলগেট আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন মেয়র আইভী।
এ সময় তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর নামে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ফরিদপুরে সীমিত পরিসরে শোক দিবস পালিত
ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় সীমিত পরিসরে পালিত হয়েছে শোক দিবস। তবে জেলা শহরে কোনো কর্মসূচি পালন করেনি আওয়ামী লীগ। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতা-কর্মীরা।
ফরিদপুরের মধুখালীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে সকাল ৯টায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে আখচাষি কল্যাণ সংস্থা ভবনের সামনে জাতীয়, দলীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে কালো ব্যাজ ধারণ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন-পরবর্তী সংক্ষিপ্ত র্যালি করা হয়।
শরীয়তপুরে শোক দিবস পালিত
শরীয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুরে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে শোক দিবস পালিত হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মোবারক আলী সিকদারের নেতৃত্বে জাজিরায় কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে শোক র্যালি বের করা হয়। পরে মোবারক আলী সিকদারের বাড়িতে দোয়া ও গণভোজের আয়োজন করা হয়।
এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ শরীয়তপুর শহরের দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়। পরে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
একাই শ্রদ্ধা জানালেন সুনামগঞ্জের পৌর মেয়র
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে একাই পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত।
এদিন দুপুরে একাই জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্বা জানান তিনি। শ্রদ্ধা জানানোর পর ধুলা জমে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবি তিনি হাত দিয়ে মুছে দেন।
গাইবান্ধায় শোক দিবস পালিত
গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধায় শোক র্যালি বের করে আওয়ামী লীগ। সকাল ৮টার দিকে শহরের রেলগেটে দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয়, দলীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তারা। পরে দলীয় কার্যালয় থেকে একটি শোক র্যালি পৌর পার্ক হয়ে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।